What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

অন্তর্বর্তী শূণ্যতা (2 Viewers)

গল্পটা আমার কাছে অসাধারণ ভালো লেগেছে। একটু তাড়াতাড়ি বেশি করে আপডেট দিবেন।
 
পরিচ্ছদ ৩ - কথোপকথন

অনুরাধা – খাওয়া হয়ে যাওয়ার পরে বাবান একটু মোবাইলে গেম খেলে ঘুমিয়ে পড়ে। সু-ও খাওয়া হয়ে গেলেই বিছানায় শুয়ে মোবাইল ঘাঁটতে থাকে। ও শুতে এলে তবে ঘুমাতে যায়। তবে এত সুখ ওর কপালে নেই। খাওয়া শেষ হলে এঁটো থালাবাসনগুলোকে কিচেনে এককোণে নিয়ে গিয়ে রাখতে হয়। তারপর ডাইনিং টেবিল পরিষ্কার করে কিচেন গোছাতে হয়। এসবকিছু হয়ে গেলেও ওর ছুটি নেই। শাশুড়িকে একপ্রস্থ পেচ্চাপ করিয়ে, ওষুধ খাইয়ে তারপরে এর ছুটি। তাও আবার এক একদিন টুকরো কাজ থাকে। সেসব মিটিয়ে তবে শুতে আসার সময় পায় ও। এসব করতে করতে এগারোটা-সাড়ে এগারোটা বেজে যায়। তারপর চুল-টুল বেঁধে, সামান্য প্রসাধনী সেরে যখন বরের পাশে বিছানায় পিঠটা পাতে তখন ঘড়ির কাঁটা মধ্যরাতের দরজায় টোকা দিচ্ছে। আবার যেদিন সু-এর ইচ্ছা হয়, সেদিন ঘুমাতে রাত হয় আরো। একদিকে অবশ্য সুবিধা আছে। এই ইচ্ছাটা খুব কম হয় সু-এর। সপ্তাহে এক কি দুবার। কিম্বা মাসে গুণে তিন থেকে চারবার। তার বেশী কখনও হয় না। আবার তার মাঝে ওর পিরিয়ডস হলে তো কথাই নেই। সংখ্যাটা আরো কমে যায়। বিয়ের প্রায় এক যুগ কেটে যাওয়ার পর এখন আর সত্যিই এসব ভালো লাগে না। নেহাতই সু-এর যেদিন ইচ্ছা হয়, সেদিন জোর করে হলেও ওকে করতে হয়। মুখ ফুটে না বলতে ভালো লাগে না। অবশ্য ওরও যে ইচ্ছা হয় না, তা নয়। তবে সু-কে মুখ ফুটে বলতে পারে না। আসলে বয়স যতই বাড়ছে, ততই যে একটা দূরত্ব বাড়ছে দুজনের মধ্যে সেটা ও ভালো করেই বুঝতে পারছে। কিন্তু কয়েক বছর আগেও এরকম কিন্তু ছিল না। বাবানের বছর চারেক বয়স পর্যন্তও ওরা সপ্তাহে তিন থেকে চারদিন করেছে। তারপর থেকেই আস্তে আস্তে এসব কমতে শুরু করেছে। আর বছর কয়েক গেলেই বোধহয় একেবারেই বন্ধ হয়ে যাবে। তবে প্রথম থেকেই সু-এর এনার্জী কিন্তু অনেক বেশী। এখনও অনেকক্ষণ ধরে করতে পারে। ওর মনে আছে বিয়ের পরে একবছর সু-এর শরীরের তলায় নিজের পা দুটোকে ছড়িয়ে রাখতে রাখতে ওর কোমরে যন্ত্রণা ধরে যেত। ওর মুখ দিয়ে ক্রমাগত গোঙানী বের হত। দু হাত দিয়ে বিছানার চাদরটাকে শক্ত করে আঁকড়ে ধরে নিজের তলপেটের গর্তটায় সু-এর মাঝারী আকৃতির বাঁড়াটাকে নিতে নিতে ও হাঁফিয়ে যেত। তবুও সু থামত না। আসুরিক শক্তিবলে নিজেকে বউয়ের গুদে চালান করে দিতে থাকত। তারপর একসময় তার গতি হত দ্বিগুণ। অবশেষে ভলকে ভলকে বমি করে ওর গুদ ভাসিয়ে দিয়ে থামত সু। মানা করলেও শুনত না। বিয়ের পরে প্রথম কয়েক মাস অবশ্য বাহারী ফ্লেভারের ডটেড কন্ডোম আনত সু। কিন্তু তারপরে ধীরে ধীরে সেটা বন্ধ করে দেয়। বাবান পেটে আসার পরেও প্রথম মাস তিনেক চুটিয়ে সেক্স করেছে ওরা। তারপর ওসব বন্ধ। ডেলিভারীর পর মাস পাঁচেক বাপের বাড়িতে কাটিয়ে যেদিন প্রথম ও আবার শ্বশুরবাড়িতে আসে, সে রাতে সু একপ্রকার ঝাঁপিয়ে পড়েছিল ওর উপরে। ব্যথা হয়ে গিয়েছিল ওর গুদটা। তবুও সু ছাড়েনি। ও-ও ছাড়তে চায়নি। সেসব দিন গেছে বটে এক একটা। কিন্তু আজ সেসব কিছুই নেই। তখন সেক্সের মধ্যেও একটা প্রেম খুঁজে পেত ও। এখন পায় কেবলই বাধ্যবাধকতা। আর নিয়ম। প্রেমটা বোধহয় অনেক আগেই চুকে বুকে গেছে। আজও ওদের কলেজের দিনগুলো মনে পড়ে গেলে মনটা খারাপই হয়ে যায়। কেবল পাগল, উদ্দাম আর বাঁধনহারা ছিল ওরা দুজনে। কলেজে চুটিয়ে প্রেম করেছে ওরা। সিনেমাহল থেকে শুরু করে ভিক্টোরিয়ার বাগান। গঙ্গার ঘাট থেকে শুরু করে অ্যাপার্টমেন্টের ছাদ। কোথায় না ওরা সেক্স করেছে! এখন সেসব কথা ভাবলে লজ্জা লাগে। কিন্তু তখন এসবের তোয়াক্কাই করেনি ওরা। কি উদ্দামই না ছিল সেসব দিন।

প্রথম সু ওকে কিস করে সিনেমাহলে। শরীরে পাগলপারা একটা স্রোত খেলে গিয়েছিল ওর শরীর জুড়ে। এর আগে হিন্দী সিনেমায় হিরো-হিরোইনের ঠোঁটবদ্ধ কিস দেখেছিল ও। আর তার অনুভব পেয়েছিল সেদিন সেই অন্ধকারের মধ্যে। ঠোঁটের উপরে সু-এর ঠোঁটদুটো যেন জমাট বেঁধে আছে। সু-এর একটা হাত ওর কোমরটাকে শক্ত করে ধরে রেখেছে। ওর নরম বুকদুটো ক্রমাগত ঘষা খাচ্ছে সু-এর বুকে। কিন্তু চেষ্টা করেও সু-এর থেকে নিজেকে ছাড়াতে পারছে না ও। আসলে চাইছেও না। নিজে থেকে চোখ দুটো বুজে এসেছিল আবেশে। চোখ বন্ধ করেই অনুভব করছিল। ওর নীচের ঠোঁটটাকে লাগাতার চুষে যাচ্ছে সু। সেই সাথে জিভটাকে ঠেলে ঢুকিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে ওর মুখের ভিতরে। সু যে এতো ভালো কিস করতে পারে, সেটা এর আগে ওর জানাই ছিল না। আজই প্রথম জানল। হঠাৎ করেই আরো একটা স্পর্শ টের পেল নিজের শরীরে। সু-এর আরেকটা হাত এতক্ষণ রাখা ছিল ওর থাইয়ের উপরে। হঠাৎ করেই সেই হাতটা সচল হয়ে উঠল। সু হাতটাকে নিয়ে গিয়ে রাখল ঠিক ওর বুকের উপরে। এবারে একটু হলেও বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে সেটা ও বুঝতে পারল। কিন্তু সু-কে বারণ করার অবস্থায় এখন ও নেই। ঠোঁটদুটো তো অনেক আগেই বন্ধ করে রেখেছে সু। তাই হাত দিয়েই ইশারায় ওকে বারণ করতে লাগল। কিন্তু সু শুনলে তো। সু ধীরে ধীরে হাতটাকে নিয়ে গিয়ে রাখল ওর বুকের উপরে। এরকম অবাধ্য এর আগে সু কোনোদিন হয়নি। আজই প্রথম হল। ভালোও লাগছে। আবার ভয়ও করছে। আবেগের বশে কোনো ভুল করে ফেলবে না তো? কিন্তু ওর বারণ আর শুনছে কে? ধীরে ধীরে সু-এর হাতটা জমাট বাঁধছে ওর বুকের ডানদিকটা ঘেঁষে। চুড়িদারের তলায় ব্রা আছে। কিন্তু তা সত্তেও সু-এর হাতের স্পর্শ যেন ও সরাসরি নিজের শরীরে টের পাচ্ছে। ধীরে ধীরে সু-এর হাতের চাপ বাড়ছে। কেমন যেন একটা অস্বস্তিকর অনুভব। তবুও ভালোই লাগছে। সু-এর ঠোঁট কিন্তু এখনও স্থানচ্যুত হয়নি। লাগাতার পালা করে চুষে চলেছে ওর ঠোঁটদুটোকে। আবার সেই সাথে বুকের উপরেও ওর হাতের মোক্ষম চাপ। আর সহ্য করা যাচ্ছে না। শরীরটা কেমন যেন একটা করছে। বুকের মধ্যে উথাল পাথাল হচ্ছে। সেটা বুঝতে পেরেই কি সু ছেড়ে দিল ওর শরীরটাকে? আজও ও জানে না। তবে মাঝখানে প্রায় মিনিট দশেকই হয়তো কেটেছিল। কিন্তু ওর মনে হচ্ছিল যেন কতটা সময় পেরিয়ে গেছে ওর মাঝে। জামাকাপড় ঠিক করে যখন আবার সিনেমার পর্দায় চোখ রাখল, তখন বুকটা ঢিপঢিপ করছে ভয় আর উত্তেজনায়। কোথায় গেল সেসব দিন?


"জানো, তপতী আবার কনসিভ করেছে।" রাত্রিবেলায় ড্রেসিং টেবিলের সামনে চুল বাঁধতে বাঁধতে বলল ও। একটু দূরে বিছানায় আধশোয়া হয়ে শুয়ে রয়েছে সু। হাত আর চোখ দুটোই ফোনে। এক মনে ফোন ঘাঁটছে। রোজই ঘাঁটে। এত কি আছে বাপু ফোনে জানে না। বউয়ের থেকেও কি ফোন দামী? ও কথা বলছে, কিন্তু সু-এর সেদিকে মন নেই। ফোনই এখন ওর ধ্যান-জ্ঞান। দিনে যতটুকু সময় ঘরে থাকে, ততটুকুই ছেলে-বউকে সময় না দিয়ে, ঐ ফোনটাকেই দেয়। ফোন তো নয়, যেন ওর সতীন! বিরক্তি সত্তেও ও সু-কে ডাকল, "কই গো, শুনছো, আমি কি বলছি?" সু ফোনের দিকে তাকিয়ে ঘাঁটতে ঘাঁটতেই উত্তর দিল, "বলো, শুনছি।"

"না। তুমি শুনছো না। ফোনটা রাখবে? নাকি জানলা দিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দেবো ওটাকে?" এবারে খেঁকিয়ে বলল ও।

যথারীতি ওষুধে কাজ হল তৎক্ষণাৎ। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ফোনটা রেখে ওর দিকে তাকিয়ে সু বলল, "বলো, কি বলছিলে?"
  • "বলছিলাম, তপতী আবার কনসিভ করছে।" ও চুলে বিনুনি করতে করতে বলল।​
  • "কে?" ভ্রু দুটোকে সামান্য হলেও তুলে জিজ্ঞাসা করল সু।​
  • "আরে তপতী। আমার বন্ধু। ঐ যে, কসবার ওদিকে থাকে।" তপতীর পরিচয় দিয়ে বলে।​
  • "যার বর ফাইনান্সে কাজ করে?" আবার জিজ্ঞাসা করল সু।​
  • "হ্যাঁ গো।"​
  • "ওর একটা মেয়ে আছে না?" সু বলল।​
  • "আছে তো। আমাদের বাবানের থেকে বছর খানেকের বড়ো।" ও বলল।​
  • "এত বছর পর আবার ইস্যু নিচ্ছে?" সু লম্বা হয়ে শুতে শুতে বলল।​
  • "তবে আর বলছি কি? আমিও তো ওকে একই কথা বললাম।" বিনুনি বাঁধা শেষ করে ঘাড়ে, গলায় পাউডারের পাফটা ঘষতে ঘষতে বলল ও।​
  • "বড়লোকেদের কথা ছাড়ো। ওরা দুটো কেন চারটে ইস্যুও নিতে পারে ইচ্ছে হলে।" সু পাশ ফিরে শুলো।​
প্রসাধনী শেষ করে ঘরের বড়ো আলোটাকে নিভিয়ে দিয়ে নাইট ল্যাম্পটাকে জ্বেলে দিল। আবছা নীল রঙের একটা আলো ছড়িয়ে পড়ল গোটা ঘরে। বেশ একটা মনোরম আলো ছায়ার খেলা হচ্ছে গোটা ঘর জুড়ে। বাবানটাকে একপাশে একটুখানি সরিয়ে দিয়ে বরের গা ঘেঁষে শুয়ে পড়ল। তারপর প্রায় ফিসফিস করে বলল, "কি গো, ঘুমিয়ে পড়লে নাকি?" সামান্য হলেও ঘুম জড়ানো গলায় সু বলল, "না। বলো।" নিজের মুখটাকে বরের পিঠে বার দুয়েক অকারণেই ঘষে দিয়ে বলল, "আমরাও একটা নেবে?"
  • "কি?" সু-এর গলাটা যেন আরেকটু জড়ানো।​
  • "কি আবার! বলছি আরেকটা ইস্যু নেবে?" বরের কানের লতিটাকে একবার চেটে দিয়ে জিজ্ঞাসা করল।​
  • "ঘুমিয়ে পড়ো, রাই। অনেক রাত হয়েছে।" কানের কাছটা হাতটা দিয়ে একবার মুছে নিয়ে সু জবাব দিল।​
  • "বলো না। নেবে আরেকটা ইস্যু?" বরের বুকে আঙুল দিয়ে আলপনা কেটে দিয়ে বলল।​
  • "আমার প্রচন্ড ঘুম পাচ্ছে। কাল সকালে আবার উঠতে হবে। এখন ঘুমাতে দাও।" বুক থেকে ওর হাতটা ঠেলে সরিয়ে দিয়ে পাশবালিশটা আঁকড়ে ধরে শুয়ে পড়ল সু।​
নিরাশ হয়ে চিৎ হয়ে শুলো ও। একটু পরেই মনে হল সু ঘুমিয়ে পড়েছে। কিন্তু ওর চোখে ঘুম কই? সারাটাদিন যে উত্তেজনায় কেটেছে ওর, তাতে তো বিছনায় শুয়েই ঘুমিয়ে পড়ার কথা। কই, তাহলে ঘুম আসছে না কেন? শুয়ে শুয়ে সারাটাদিনের চর্বিতচর্বণ করতে লাগল ও। বিশেষ করে দুপুরের পর থেকে। দুপুরে অ্যাপটায় প্রথমবার লগ ইন করার পর প্রথমেই ব্যাফোমেট বলে একজন ওকে রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছিল। অনেক দোনামনা করে ও তাকে অ্যাকসেপ্টও করে নিয়েছিল। তারপরেই সে ওকে চ্যাট পাঠিয়েছিল, "Hi, sexy. This is Baphomet. Wanna chat with you." এতটাই আচমকা মেসেজটা এসেছিল যে প্রথমে ও ভয়ই পেয়ে গিয়েছিল। কি করবে প্রথমে ও ভেবেই পায়নি। উত্তর দেবে? নাকি চুপ করে থাকবে? অবশেষে চুপ করে থাকাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে ভেবে ও তাড়াতাড়ি অ্যাপটা থেকে লগআউট হয়ে গেল। ফোনটা রেখে ও ভাবতে শুরু করল। ও যেটা করছে, সেটা কি ঠিক করছে? এর বেশী কি আর এগোনো উচিত হবে? এইসব অ্যাপের কোনো বিশ্বাস নেই। যদি খারাপ কিছু একটা হয়ে যায়, তাহলে সু-কে মুখ দেখাবে কি করে? সু জানতে পারলে রেগেমেগে কি করবে, তার ঠিক নেই। তার চেয়ে দরকার নেই এসব ঝামেলার। যত তাড়াতাড়ি পারে অ্যাপটাকে ডিলিট করে দিলেই ভালো। মনস্থির করে ফোনটাকে হাতে নিয়েও কিছু করতে পারল না। বরং মনটা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে গেল নিমেষের মধ্যে। একটা ভাগ যেমন ওকে অ্যাপটাকে ডিলিট করার পরামর্শ দিচ্ছিল, ঠিক তেমনই আরো একটা ভাগ ওকে বোঝাতে শুরু করল। এখনই অ্যাপটাকে ডিলিট করে কি লাভ? কোনো ক্ষতি তো হয়নি? আর ক্ষতির সম্ভাবনা থাকলে তপতী কি ওকে এটা ব্যবহার করতে বলত? আর তাছাড়া বুঝেশুনে ব্যবহার করলে কোনো জিনিসই মারাত্মক হয় না। ডিলিট করার বদলে অ্যাপটাকে বুঝেশুনে ব্যবহার করলেই হল। আর লোকের সাথে চ্যাট করলেই কি ও খারাপ হয়ে যাবে? আর এখানে যে সবাই খারাপ, সেটাই বা ও আগেভাগে ভেবে নিচ্ছে কেন? ও নিজেও তো আছে এই অ্যাপে। ও নিজে কি খারাপ? তাহলে ওর মত তো আরো অনেকেই থাকতে পারে এই অ্যাপে। যারা কেবল মাত্র অন্যদের সাথে বন্ধুত্ব করার জন্যই হয়তো এই অ্যাপে এসেছে। যেমন ও নিজে এসেছে। শুধু চ্যাট করলে ক্ষতি কি? বাড়াবাড়ি কিছু না করলেই হল। বলাবহুল্য এই যুক্তি মনে লাগল ওর। অনেক ভেবে অ্যাপটাকে ডিলিট করল না। এই দোলাচলে বিশ-পঁচিশ মিনিট পেরিয়ে গেছে। ফোনটা হাতে নিয়ে যখন ও আবার নিজের চ্যাটবক্সে ঢুকল ততক্ষণে ব্যাফোমেট ইনঅ্যাকটিভ হয়ে গেছে। কারণ তার নামের পাশের সবুজ বৃত্তটা নিভে গেছে। মনটা সামান্য হলেও খারাপ হয়ে গেল। কি বোকা মেয়ে ও। তপতী ওকে হাঁদি বলে ডাকে কি এমনি! সে যেই হোক, সে তো শুধু ওর সাথে কথা বলতে চেয়েছিল। কথা বললে কি এমন মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যেত? তা না করে বোকার মত চুপ করে রইল। সে কি ওর উত্তরের জন্য সারাদিন অপেক্ষা করে থাকবে? তার কি আর কোনো কাজ নেই? নিজেকেই নিজে বকতে লাগল ও। কিন্তু এখন আর কিছুই করার নেই। পরে আবার দেখা যাবে খন। এরকম বোকামি আর কিছুতেই করা চলবে না। মনের মধ্যে আফসোস নিয়ে ফোনটাকে রেখে দিতে যাচ্ছিল, ঠিক তখনই আরো একটা নোটিফিকেশন ঢুকল ওর ফোনে। ও প্রথমে ভাবল ঐ ব্যাফোমেট না কি নাম যেন, সে-ই বোধহয় মেসেজ করেছে। তাড়াতাড়ি অ্যাপটা খুলে দেখল, না, ওর ধারণা ভুল। কোনো চ্যাট নয়, বরং আরো একটা পার্টনার রিকোয়েস্ট এসেছে। খুলে দেখল নাম হচ্ছে Himeros07। নামটা কোনদেশী ও বুঝতে পারল না। আগের নামটাও বুঝতে পারেনি। কিসব খটোমটো নাম দেয় সকলে! ওর মত সহজ সরল নাম দিতে পারে না? যাই হোক। এবারে আর আগের মত ভুল করল না। তৎক্ষণাৎ রিকোয়েস্ট অ্যাকসেপ্ট করে নিল। ভেবেছিল এ-ও বোধহয় ওর সাথে কথা বলবে। কিন্তু কিছুক্ষণ অপেক্ষা করেও যখন সে কোনো মেসেজ পাঠাল না, তখন বাধ্য হয়েই ফোন রেখে দিল ও। নিজে থেকে যেচে কথা বলার ইচ্ছে এখন ওর নেই।

সারাটা দুপুর কেটে বিকেল, বিকেল কেটে সন্ধ্যে হল। সন্ধ্যে পেরিয়ে রাত। এর মাঝে আবার অন্য এক নাটক। ভর সন্ধ্যেবেলায় সু ছাঁইপাঁশ গিলে ঘরে এল। ওর সঙ্গে একটু রাগারাগিও হল। যদিও সু কোনো উত্তর দিল না ওর মুখের উপরে। কোনোদিনই দেয় না। আজও দিল না। চুপচাপ শোওয়ার ঘরে চলে গেল। মনটা আরো একবার খারাপ হয়ে গেল। দিনটাই কেমন ওলট পালট খেয়ে চলছে আজকে। রাতের খাবার তৈরী করতে করতে ন'টা বেজে গেল। এইসময় প্রতিদিন ও পরপর দুটো সিরিয়াল দেখে। তারপরে খেতে দেয়। হাতের কাজ শেষ করে এসে বসল সোফায়। টিভিটা চালিয়ে দিল। কিন্তু আজ ওর মন সিরিয়ালে নেই। বারবার মনটা চলে যাচ্ছে পাশে পড়ে থাকা ফোনটায়। অ্যাপটা একবার খুলে দেখার ইচ্ছা হচ্ছিল। কিন্তু সু এখন বাড়িতে আছে। যদি দেখে ফেলে? কেলেংকারী হয়ে যাবে। ঘাড় ঘুরিয়ে দেখল ন'টা বেজে বাইশ মিনিট। সু অনেকক্ষণ শোওয়ার ঘরে গেছে। সোফা থেকে উঠে পা টিপে টিপে ওদের শোওয়ার ঘরের দরজার সামনে দাঁড়াল। ভিতর থেকে পাখার আওয়াজ আসছে। দরজাটা হাত দিয়ে ঠেলল আস্তে করে। ভিতর থেকে বন্ধ! সু রাগ করে শুয়ে রয়েছে মনে হয়। নিজের উপরে আরো একবার রাগ হল ওর। কেন এমন করল ও? এক আধদিন কি আর সু ওসব খেতে পারেনা? সত্যিই ও বাড়াবাড়ি করে ফেলেছে আজকে। থাক। এখন আর ওকে ঘাঁটাবে না। রাগ পড়ুক আগে, বাবুর। রাতে সুদে আসলে সব উসুল করে দেবে আজকে। মুচকি হেসে আবার সোফায় ফিরে এল। টিভিটা আগের মতই চলতে থাকল। ও ফোনটাকে হাতে তুলে নিল। অ্যাপটা খুলল ধীরে সুস্থে। তারপর সোজা চলে গেল চ্যাটবক্সে। ব্যাফোমেট এখনও ইনঅ্যাকটিভ। সে-ও কি সু-এর মত রাগ করেছে নাকি? তারও রাগ ভাঙ্গাতে হবে? আরো একবার মুচকি হেসে ও টাইপ করল, "Hi, this is Lilith." সেন্ড করে ও অপেক্ষা করতে লাগল। কতক্ষণ করতে হবে ও জানে না। কিন্তু করতে লাগল। অবশ্য খুব বেশীক্ষণ অপেক্ষা করতে হল না ওকে। মিনিট দেড়েকের মাথাতেই জবাবী উত্তরটা এল ওপাশ থেকে। আরো একবার মুচকি হাসল ও। এই হচ্ছে ছেলেদের স্বভাব। এতক্ষণ ইনঅ্যাকটিভ ছিল, যেই একটা মেয়ে নিজে থেকে চ্যাট করতে শুরু করল, সঙ্গে সঙ্গে অ্যাকটিভ হয়ে গিয়ে চ্যাটের উত্তরও দিয়ে দিল। তাহলে সে-ও কি ওর চ্যাটেরই অপেক্ষা করছিল? কি জানি। হবে হয়তো। অত কিছু না ভেবে ও আবার চ্যাটটা খুলল। দেখল লেখা আছে, "Are you active now?" আবারও মুখ টিপে হাসল ও। এ আবার কি প্রশ্ন? অ্যাকটিভ না হলে ও চ্যাট করছে কি করে? ও উত্তরে শুধু লিখল "Yes." এরপর অল্প একটু অপেক্ষা করতেই আবার চ্যাট এল একটা ওপাশ থেকে। "Are you Bengali?" প্রশ্নটা পড়ে বুকটা একবার হলেও ধড়াস করে উঠল। এই রে! এটা জিজ্ঞাসা করছে কেন? "Yes. But why?" এরপরে যে উত্তরটা ওপাশ থেকে এলো, সেটা পড়ে ওর মুখে আরো একটা হাসি খেলে গেল। কারণ এবার আর ইংরেজীতে নয়, বরং গোটা গোটা বাংলায় লেখা আছে, "তাহলে এখন থেকে বাংলায় কথা বলব। ইংরেজীতে কথা বলে ঠিক পোষাচ্ছে না।"


রাত এখন কটা বাজছে কে জানে। হাল্কা হলেও একটা তন্দ্রা মত এসে গেছে। হঠাৎ করে বালিশের পাশে রাখা ফোনটা ভাইব্রেট করে উঠল একবার। তন্দ্রাটা কেটে যেতে একমুহুর্ত সময়ও লাগল না। তাড়াতাড়ি বিছানায় উঠে বসে ফোনটা হাতে নিল। স্ক্রিণের উপরে নোটিফিকেশনটা ফুটে উঠেছে। কিন্তু এখানে খোলা সম্ভব নয়। সু জেগে গেলে মুশকিল হয়ে যেতে পারে। কি করা যায়? ফোনটা হাতে নিয়ে আলতো করে বিছানা থেকে নামল। তারপর পা টিপে টিপে দরজাটা খুলে বাইরে বের হয়ে এল। ডাইনিং-এর ঘড়িটায় চোখ পড়তে বুঝতে পারল দুটো বাজতে যাচ্ছে প্রায়। এতরাতে ব্যাফোমেট আবার চ্যাট পাঠাল নাকি? এইতো দশটা পর্যন্ত চ্যাট করেছে ওরা দুজনে? আবার এখন কেন? ওকে বারণ করে দিতে হবে। প্রতিদিন যেন এরকম না করে। সোফায় বসে অ্যাপটা খুলল। দেখল ওর ধারণা ভুল। ব্যাফোমেট ওকে চ্যাট পাঠায়নি। পাঠিয়েছে হিমেরস। সামান্য বিরক্তি নিয়েই চ্যাটটা খুলল। দেখল লেখা রয়েছে। "Hey, sweety. Do I wake you up?" উত্তরে ও বাংলাতেই লিখল, "আমি এতদিন জানতাম রাতটা ঘুমের জন্যই।" উত্তর এল সাথে সাথেই। এবং বাংলাতেই। "কিন্তু আমি যে জানি, রাতে ঘুম ছাড়াও আরো একটা কাজ হয়।"
  • "আর সেটা কি?" চোখ থেকে বর্তমানে ঘুমের শেষ বিন্দুটুকুও মুছে গেছে। সোফায় আয়েশ করে বসে জবাবটা লিখল।​
  • "ঐ যে সেইটা।"​
  • "হেঁয়ালি না করে, যেটা বলতে চাইছেন সেটা বলুন।" জবাবী উত্তরটা লিখল। এখন আর মনে বিরক্তি নেই।​
  • "সব কথা কি আর মুখে বলা যায়?" বেশ দার্শনিক টাইপের কথা।​
  • "কেন? বলা যায় না বুঝি?" মুচকি হেসে টাইপ করল।​
  • "উঁহু। বুঝে নিতে হয়।"​
  • "তাই বুঝি?"​
  • "অবশ্যই।"​
  • "তাহলে বলুন তো আপনার সঙ্গে চ্যাট করা বাদে আমি এখন কি করছি?"​
  • "তোমার বয়ফ্রেন্ড আছে?" এ আবার কেমন প্রশ্ন?​
  • "ধরুন আছে।" হেরে যাওয়ার পাত্রী ও নয়।​
  • "ধরবো কেন? খোলসা করে বলো।"​
  • "আছে।"​
  • "সে কি তোমার কাছেই আছে?"​
  • "এত রাতে কি আমার কাছে থাকতে পারে?"​
  • "থাকলে ক্ষতি কি?"​
  • "থাকলে আমি কি আর আপনার সঙ্গে চ্যাট করতে পারতাম?" সময় জ্ঞান ভুলে গেছে ও।​
  • "ঠিকই। তাহলে তুমি এখন কি করছো? ঘুমাচ্ছিলে?"​
  • "না। ঘুম পাচ্ছে না।"​
  • "কেন?"​
  • "খুব গরম লাগছে। মনে হচ্ছে..."​
  • "কি মনে হচ্ছে?"​
  • "মনে হচ্ছে সব জামাকাপড় খুলে ফেলি। তারপর..." অতি দ্রুত টাইপ করতে লাগল।​
  • "তারপর?"​
  • "তারপর..."​
একবার শোওয়ার ঘরের বন্ধ দরজাটার দিকে তাকিয়ে নিয়ে, মুচকি হেসে ফোনের কি বোর্ডে ঝড় তুলল অনুরাধা। অ্যাপটায় টিকে থাকার মূলমন্ত্র ও এখন পরিষ্কার বুঝে গেছে।
 
আয়ুষ – পাক্কা এক ঘন্টা লাগাতার বকার পরে ফোনটা ছাড়ল তিতির। মাথাটা ধরে গেছে। কি করে যে এত বকতে পারে স্বয়ং ভগবানও বোধহয় জানে না। আজ সারাদিনে কলেজে কি হয়েছে তার খুঁটিনাটি সমস্ত তথ্য জানাল এক এক করে। অথচ একবারও জানতে চাইল না কেন ও আজ কলেজ যায়নি। এক্কেবারে এক নম্বরের পাগলী একটা! আর এই কারণেই ওকে এত ভালো লাগে ওর। তিতির নিজের মতো বক বক করে যায়। আর ও বাধ্য শ্রোতার মত শুনে যায় চুপচাপ। আজও ফোন ধরে একতরফাই বক বক করে গেল তিতির। ও কেবল 'হুঁ', 'হাঁ', 'আচ্ছা', 'ঠিক আছে' ছাড়া বিশেষ কিছু বলল না। আসলে বলার সুযোগই পেল না। তিতির যদি একবার বকতে শুরু করে, তাহলে তাকে থামানো এককথায় দুঃসাধ্য ব্যাপার। শুধু যে বকতে পারে তা নয়, মেয়েটা যাকে বলে এককথায় আনপ্রেডিক্টেবল। কখন কি বলবে, আর কখন কি করবে তার কোনো ঠিক নাই। এই যেমন আগের সপ্তাহে দুপুরে ক্লাস শেষ করে কলেজ থেকে বেরিয়েছে দুজনে। হঠাৎ রণরণে দুপুরবেলায় তিতির বলল, "চ্ কোথাও একটা বসে চা খেয়ে আসি।" ও কপাল কুঁচকে বলেছিল, "চা!? এই দুপুরবেলায়?"
  • "কেন? কোন বইয়ে লেখা আছে যে দুপুর বেলায় চা খেতে নেই।" গলার স্বরেতেই বোঝা গেল কথা বাড়ালে সেটা ঝগড়ার পর্যায়ে পৌঁছে যেতে পারে। সেই রিস্কটা একদমই না নিয়ে ও বোঝানোর সুরে বলল,​
  • "তা নয়। আমি বলতে চাইছি এই দুপুর বেলায় চা না খেয়ে চল্ ঠাণ্ডা খাই।"​
  • "কেন, এখন চা খেলে কি হবে? আর তাছাড়া আমার যখন চা খেতে ইচ্ছে হচ্ছে তখন চা-ই খাবো। শুধু শুধু ঠাণ্ডা খেতে যাবো কেন? আমার এখন চা খেতে ইচ্ছে করছে, চা-ই খাবো। তোর ঠাণ্ডা খাওয়ার ইচ্ছে হলে, তুই ঠাণ্ডা খা। আমাকে খেতে বলছিস কেন?" তিতিরের কথা শুনেই ও বুঝতে পারল ও মহা ভুল করে ফেলেছে। ও তাড়াতাড়ি হাত জোড় করে বলল, "আমার ভুল হয়ে গেছে, ক্ষমা করে দে। তুইও চা খা। আমিও চা-ই খাবো। চ্।"​
ওদের 'তুমি' সম্বোধনটা সেই প্রথম দিনের জন্যই ছিল। 'তুই' টা ঠিক তার পরের দিন থেকেই শুরু হয়ে যায়। শুরুটা অবশ্য তিতিরই করেছিল। তারপর তার দেখাদেখি ও-ও 'তুই' বলতে শুরু করে। প্রায় ওরই বয়সী একটা মেয়েকে 'তুই' করে কথা বলতে কেমন যেন অস্বস্তি হত প্রথম প্রথম, কিন্তু ধীরে ধীরে তা ঠিক হয়ে যায়। যাইহোক সেদিন কিন্তু এই চায়েতেই সব ঘটনা শেষ হয়ে যায় না। বরং শুরু হয় বলা যেতে পারে। ওদের কলেজের ঠিক উল্টো দিকের চায়ের দোকানটায় গিয়ে বসল ওরা দুজনে। টিফিন টাইমে সামান্য হলেও ভীড় ছিল। ও গিয়ে দুটো চা আর টোস্টের ওর্ডার দিল। প্রথমে দিয়ে গেল টোস্ট। তারপর চা। ধোঁয়াওঠা, জিভ-জ্বলানো নির্দ্বিধায় দুটো মাঝারী আকারের চুমুক দিয়ে বলল, "বাঃ। বেশ করেছে তো চা-খানা। টোস্টটাও মন্দ করেনি। এবার থেকে দুপুরে এখানেই চা আর টোস্ট খাবো।"
  • "কেন? তুই তো রোজ টিফিন আনিস।" সাবধানে নিজের কাপে চুমুক দিয়ে বলল।​
  • "কাল থেকে আর আনবো না। মাকে বারণ করে দেবো। আমি এখন স্কুলে পড়ি নাকি, যে প্রতিদিন ব্যাগে করে বয়ে টিফিন আনবো?" দিব্যি গরম চায়ে চুমুক দিতে দিতে বলল তিতির।​
  • "প্রতিদিন এই বাটার টোস্ট খেলে কি হবে জানিস?" ও চায়ে আরেকটা চুমুক দিয়ে বলল।​
  • "থাক। তোর ঐ বস্তাপচা ফিটনেস জ্ঞান দিতে আসিস না আমায়। আমি বেশ আছি আমার ফ্যাট নিয়ে।" ট্রাফিক সার্জেনের মতো ওকে হাত দেখিয়ে থামিয়ে দিয়ে বেশ সিরিয়াস গলায় বলল তিতির। ওর রোগা শরীরটার দিকে তাকিয়ে ও হেসে ফেলল। ওকে হাসতে দেখেই তিতির বলল, "অ্যাই, তুই হাসলি কেন রে?"​
  • "এমনি।" এই রে, হেসে ভুল করে ফেলেছে। এবার যাহোক কিছু একটা বলে ম্যানেজ করতে হবে। তা নাহলে কপালে দুঃখ আছে।​
  • "এমনি এমনি কেউ হাসে নাকি? তুই কি পাগল?" তিতির জিজ্ঞাসা করল।​
  • "আরে, সব কথার কি মানে থাকে নাকি? আমি এমনিই হাসলাম।" ও বলল ভয়ে ভয়ে। এরপর তিতির আর কিছু বলল না বটে, তবে ওর মুখের দিকে কিছুক্ষণ একদৃষ্টে তাকিয়ে রইল। তারপর চা আর টোস্ট গলাধঃকরণ করে বলল, "দুটো সিগারেট নে তো।" চা-টা সটান ওর শ্বাসনালীতে গিয়ে আটকাল। আর তাতেই বিষম। সামান্য কেশে নিজেকে সামলে নিয়ে জিজ্ঞাসা করল, "সিগারেট দিয়ে কি হবে?"​
  • "সিগারেট দিয়ে কি হয়? খাবো।" নির্দ্বিধায় বলল তিতির।​
  • "তুই সিগারেট খাবি?" ও জিজ্ঞাসা করল।​
  • "কেন? খেতে পারি না? মেয়ে বলে আমি সিগারেট খেতে পারি না?"​
  • "আমি তা বলিনি।"​
  • "তাহলে কি বলছিস?"​
  • "আমি বলছি, তুই আগে কখনও সিগারেট খেয়েছিস?"​
  • "না। তা খাইনি। তবে আজকে খাবো। তুই কেন।"​
ও আর কথা বাড়াল না। ওর মাথায় যখন ভূত চেপেছে। তখন খেয়েই ছাড়বে। অগত্যা ও দুটো সিগারেটও কিনল। ও বুবলাকে দেখেছে লুকিয়ে লুকিয়ে সিগারেট খেতে। অবশ্য মাকে লুকিয়ে। মা জানতে পারলে কেলেংকারী কান্ড হয়ে যাবে। ও মাকে কিছু বলেনি এই বিষয়ে। তবে ও যা ভয় পেয়েছিল তাইই হল। সিগারেটটা ধরিয়ে প্রথমেই একটা জোরে টান দিল তিতির। আর অভ্যেস না থাকলে যা হয়, ধোঁয়া সোজা ফুসফুসে। বিষম। কাশি। চোখে জল। ঠাণ্ডা হওয়ার পরে ও বলল, "দেখলি, এই কারণেই তোকে মানা করেছিলাম। তুই শুনলি না। বেশি পাকামো করলে যা হয়।" ও ভেবেছিল তিতির হয়তো রেগে যাবে ওর কথা শুনে। কিন্তু তা হল না। চোখে জল নিয়েই ও মুচকি হাসল। তারপর হাতের আধপোড়া সিগারেটটা ফেলে দিয়ে বলল, "আমিও জানতাম খেতে পারবো না। কেবল টেস্ট করার জন্য খেলাম একবার। তবে এরকম অখাদ্য খেতে হবে জানলে খেতাম না।" তারপর একটু থেমে ওর দিকে তাকিয়ে আবার মুচকি হেসে বলল, "এর থেকে চুমু খাওয়া অনেক ভালো।" তারপর আবার একটু থেমে তিতির আবার বলল, "তুই কখনো চুমু খেয়েছিস?"



সারাদিন অপেক্ষা করার পরে যখন লিলিথের মেসেজটা এল তখন রাত ন'টা পেরিয়ে গেছে। ওর "Are you Bengali" এর উত্তরে লিলিথ লিখে পাঠিয়েছিল, "Yes. But Why?" এই উত্তরটা দেখে ওর ভালোই লেগেছিল। ওর মনে হয়েছিল এই প্রোফাইলটা কোনো বাঙ্গালী মেয়েরই হবে। সেটা মিলে গেছে দেখে ওর ভালোই লাগল। ও নিশ্চিত ধীরে ধীরে ওর সব ধারণাগুলোই হয়তো মিলে যাবে। কিন্তু তার জন্য একদম তাড়াহুড়ো করা চলবে না। ও জবাবে লিখল, "তাহলে এখন থেকে বাংলায় কথা বলব। ইংরেজীতে কথা বলে ঠিক পোষাচ্ছে না।" ফিরতি উত্তরটা আসতে একটু দেরী হল। "আপনিও বাঙ্গালী?" ও এবার একটু ঘুরিয়ে উত্তর লিখল, "কলকাতায় থাকি। তাহলে তো বাঙ্গালী হবোই। তাই না?"
  • "তার কোনো মানে নেই। কলকাতায় অনেক অবাঙ্গালীরা থাকে। তারা জন্ম থেকেই এখানে থাকে। তাদের অনেকের বাঙলা আমাদের থেকে অনেক বেশী ভালো।" মেয়েটা বেশ গুছিয়ে কথা বলতে পারে তো। এর সঙ্গে কথা বলে শান্তি পাওয়া যাবে।​
  • "তা আপনি কী? বাঙ্গালী? নাকী অবাঙ্গালী?" ও জিজ্ঞাসা করল।​
  • "আপনার কী মনে হয়?" জবাব উড়ে এল ওপাশ থেকে। মেয়েরা সোজা কথার সোজা উত্তর দিতে পারে না কেন কে জানে।​
  • "আমার অনেক কিছুই মনে হয় আপনার সম্পর্কে।" রহস্যের গন্ধ মাখিয়ে উত্তর দিল।​
  • "কিরকম?"​
  • "সবই কি একেবারে জেনে যাবেন? জানাবো। কিন্তু পরে। একটু একটু করে।" মুচকি হেসে জবাবটা টাইপ করল।​
  • "আপনি নিশ্চিত যে, আমি আপনার সাথে এইভাবে কথা বলবো প্রতিদিন?" প্রশ্নটা পড়ে ও আরো একবার মুচকি হাসল।​
  • "উত্তরটা আপনি নিজেই দিয়ে দিয়েছেন। আমার দেওয়ার আর প্রয়োজন নেই।"​
  • "আপনি খুবই স্মার্ট। তাতে কোনো সন্দেহ নেই।" জবাব এল।​
  • "ধন্যবাদ। তবে এই কথাটা এই প্রথম আপনিই বললেন।"​
  • "কেন? কেউ বলেনি এর আগে?" জবাব এলো সঙ্গে সঙ্গেই।​
  • "না। কেউ বলেনি। আপনিই প্রথম।"​
  • "আপনার গার্লফ্রেন্ডও বলেনি?" প্রশ্নটা তীরের মত এসে বিঁধল।​
  • "আপনি কি নিশ্চিত যে আমার গার্লফ্রেন্ড আছে?"​
  • "কেন? নেই?" মনে হল যেন একটু হলেও ল্যাজে খেলানোর চেষ্টা করছে ওকে। এটা দেখেও ওর ভালো লাগল।​
  • "আপনার কি মনে হয়?" এবার ও-ও ল্যাজে খেলানোর চেষ্টা করল।​
  • "আমারও আপনার সম্পর্কে অনেক কিছুই মনে হয়। কিন্তু এখন বলব না। পরে বলব। একটু একটু করে।" লেখাটা পড়ে ওর হাসিটা একটু চওড়া হল।​
  • "আচ্ছা বেশ। শোধবোধ।"​
  • "বলছেন?"​
  • "বলছি।"​
  • "আচ্ছা, আপনি এই অ্যাপে এসেছেন কেন?" হঠাৎ এই প্রশ্নটা মেয়েটা কেন করল সেটা ও বুঝতে পারল না।​
  • "মানে?"​
  • "মানে, আপনি এই অ্যাপে কেন এসেছেন? আপনার তো গার্লফ্রেন্ড আছে? তাহলে?"​
  • "আমি কখন বললাম আছে?"​
  • "আপনি বলেননি। কিন্তু আমি বুঝতে পেরেছি। কিন্তু এইটা বুঝতে পারছি না, আপনি এখানে কেন এসেছেন?"​
  • "আপনি কেন এসেছেন?" পাল্টা প্রশ্ন করল ও।​
  • "প্রশ্নের পাল্টা প্রশ্ন করতে নেই। আগে আপনি বলুন, তারপর আমি বলছি।" জেদী, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।​
  • "আচ্ছা বেশ। বলছি। হ্যাঁ। আমার গার্লফ্রেণ্ড আছে। তবুও আমি এই অ্যাপে এসেছি। বন্ধুত্ব করতে।" ও কিছুটা হলেও সত্যি লিখল।​
  • "বুঝলাম না। একবার বলছেন আপনার গার্লফ্রেণ্ড আছে। আবার বলছেন এখানে এসেছেন বন্ধুত্ব করতে?" ওর কথার প্যাঁচটা কিন্তু সে সহজেই ধরে ফেলেছে। বুদ্ধিমতি তাতে সন্দেহ নেই। আর আন্ডারএস্টিমেট করাটা ঠিক হবে না।​
  • "হ্যাঁ। কেন? গার্লফ্রেন্ড থাকলে অন্যের সাথে বন্ধুত্ব করা যায় না?"​
  • "কে বলল যায় না? যায়। তবে এরকম অ্যাপে নয়, নিশ্চয়।"​
  • "কেন? এই অ্যাপে কি খারাপ আছে?"​
  • "আপনি জানেন না, কি খারাপ আছে?"​
  • "সবই কি আর খারাপ? আপনি তো ভালো।" সামান্য হলেও ফ্লার্ট করার চেষ্টা করল ও।​
  • "আপনি নিশ্চিত আমি ভালো? বাকীদের মতো নই?"​
  • "আপনার সাথে কথা বলে তো তাইই মনে হচ্ছে। যাক ছাড়ুন। আপনার সম্পর্কে কিছু বলুন।"​
  • "কি বলবো?"​
  • "আপনি কেমন? কি করেন? ইত্যাদি।"​
  • "আমি একটি মেয়ে। আপাতত কিছুই করি না। আপনার মতো আমিও বন্ধুত্ব করতে এখানে এসেছি। দেখুন, প্রথমেই আপনার সাথে বন্ধুত্ব হয়ে গেল।"​
  • "আপনার বিয়ে হয়েছে?" প্রশ্নটা ও ইচ্ছা করেই করল।​
  • "না। এখনও হয়নি।" উত্তরটা প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই এল ওপাশ থেকে।​
  • "আচ্ছা। কেমন ছেলে পছন্দ আপনার?"​
  • "যদি বলি আপনার মতো?" মজা করল কিনা বোঝা গেল না।​
  • "আপনার কি বয়ফ্রেন্ড আছে?"​
  • "যদি বলি নেই, তাহলে কি করবেন?"​
  • "কিছুই করব না।"​
  • "আপনি আসলে ভীতু।" মজা করে বলল কিনা বোঝা গেল না।​
  • "ভীতু কেন?"​
  • "আমার বয়ফ্রেন্ড নেই জেনেও আপনি কিছু করতে চাইছেন না। তার মানে আপনি আপনার গার্লফ্রেন্ডকে ভয় পান।"​
  • "হতে পারে। কিন্তু আমি আর কি করতে পারি বলুন। আপনি কে, সেটাই তো জানি না।"​
  • "জানলে কি করবেন?"​
  • "কি করবো মানে?"​
  • "মানে, ধরুন যদি বলি, এখন আমি বাড়িতে একা আছি। সঙ্গে কেউ নেই। শুধু আমি। আপনাকে আমি আমার বাড়ির ঠিকানা দিলাম, আপনি আসবেন?" কি বলতে চাইছে, ও বুঝতে পারল না। কথাগুলো কি সে মজা করে বলছে, নাকি ইচ্ছে করে, সেটাও ও বুঝতে পারল না।​
  • "সেটা নির্ভর করছে আপনার উপর। আপনি চাইলে আমি যেতেই পারি।" ও-ও কথা চালিয়ে যেতে লাগল।​
  • "বেশ। ধরুন। আপনি কলিংবেল বাজালেন। আমি এসে দরজা খুললাম। দরজা খুলতে আপনি দেখলেন..." কথাটা অসম্পূর্ণ রেখে মেসেজটা পাঠিয়ে দিয়েছে ওপাশ থেকে।​
  • "কি দেখলাম?" অধীর আগ্রহে ও জিজ্ঞাসা করল।​
  • "এখন থাক। পরে বলব, কি দেখলেন।"​


হঠাৎই প্রোফাইলটা ইনঅ্যাকটিভ হয়ে গেল। ফোনের স্ক্রিণের দিকে তাকিয়ে দেখল ইতিমধ্যে দশটা পেরিয়ে গেছে। এরইমধ্যে এতটা সময় যে কিভাবে পেরিয়ে গেল সেটা ও বুঝতেই পারেনি। যাই হোক। মেয়েটা বুদ্ধিমতি, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এই কথাগুলো ওকে যে পরীক্ষা করার জন্যই করেছে। তাতেও সন্দেহ নেই। এর সাথে একটু হলেও মেপে কথা বলতে হবে।



ফোনের স্ক্রিণে সময় দেখাচ্ছে দুটো বেজে বারো মিনিট। এত রাত অবধি ও এর আগে জেগে থাকেনি। ইদানিং জাগছে। মা জানলে কুরুক্ষেত্র হয়ে যাবে। যাই হোক, ও গতকালও জেগেছিল। আর আজও জেগে আছে। গতকালের ব্যাপারটা অবশ্য আলাদা ছিল। আজকের ব্যাপারটাও আলাদা। যেমন আজকের জেগে থাকার কারণ হচ্ছে অবশ্যই ঐ অ্যাপ। আজই সন্ধ্যেবেলায় লিলিথের সাথে চ্যাট করেছে। আর এখন? এখন চ্যাট করছে অ্যাফ্রোডাইটের সাথে। এত রাতে ওকে অ্যাকটিভ দেখে ও অবাকই হয়ে গেছিল। ও সরাসরি তার চ্যাটবক্সে লিখে পাঠাল, "এত রাতে জেগে আছেন?" উত্তর এল, "তুমিও তো জেগে আছো?" ওর 'আপনি'র বদলে যে ওপাশ থেকে 'তুমি'তে উত্তর এল সেটা ওর নজর এড়াল না। ও-ও তার মতই 'তুমি'তে প্রবেশ করল। "আমার কথা বাদ দাও। তুমি কেন জেগে আছো, সেটা বলো।"
  • "যদি বলি, তোমার সঙ্গেই কথা বলবো বলে, জেগে আছি, তাহলে কি করবে?" জবাবটা যে অতি ঝাঁঝালো, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।​
  • "বিশ্বাস করব না।"​
  • "কেন বিশ্বাস করবে না?"​
  • "তুমি আমার আগেই অ্যাকটিভ ছিলে। আমি পরে হয়েছি। তাই।"​
  • "আমি তোমার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম।"​
  • "তুমি জানতে, আমি এই সময় আসবো?"​
  • "জানতাম বলব না। তবে মনে হয়েছিল। তোমাদের মত ছেলেরা রাত জেগেই থাকে।" কথাটা খট করে কানে লাগল।​
  • "তুমি কি করছো?" কথা পাল্টে ও জিজ্ঞাসা করল।​
  • "শুয়ে শুয়ে তোমার সাথে চ্যাট করছি। তুমি কি করছো?" চটজলদি উত্তর এল।​
  • "তোমার সাথে আড্ডা মারবার চেষ্টা করছি।"​
  • "তাহলে চলো। গল্প করা যাক। আগে তোমার বিষয়ে আমাকে কিছু বলো। তুমি কি করো। কোথায় থাকো। পড়াশোনা করো নাকি। ইত্যাদি।" উফ! এই মেয়ে তো দেখছি মহা পাকা! যেন ওর গার্জেন! এসব কথা এই অ্যাপে কেউ জিজ্ঞাসা করে নাকি? জুতসই একটা উত্তর ভেবে নিয়ে ফোনে টাইপ করতে শুরু করল আয়ুষ।​
 
দূর্নিবার – খাওয়া শেষ করে নিজের ঘরে এসে চুপচাপ চোখ বুজে শুয়ে পড়ল ও। কিন্তু চোখে ঘুম আসছে না কিছুতেই। অবশ্য ও ঘুমাতেও চাইছে না। একটু আগের কিছু কথা বারবার ভেসে ভেসে আসছে মনের মধ্যে। কিছুতেই যেন মনের মধ্যে শান্তি পাচ্ছে না খুঁজে। মনটা বারবার কেমন জানি একটা করছে। আর থাকতে না পেরে উঠে বসল বিছানার উপরে। বালিশের পাশে পড়ে থাকা ফোনটাকে তুলে নিয়ে এসে দাঁড়াল ব্যালকনিতে। সাথে সিগারেটের প্যাকেট আর দেশলাইটাকেও নিয়ে আসতে ভুলল না। ব্যালকনিতে এসে প্রথমেই পিছনের কাঁটের স্লাইডিং ডোরটাকে টেনে বন্ধ করে দিল। ওদের বেডরুম আর ব্যালকনির মাঝে এই একটাই আগল রয়েছে। ইতু যেকোনো সময় শুতে চলে আসবে। এখন ও কিচেনে হাতের কাজ সারছে। এরপর সোজা বিছানায় শুয়ে নিশ্চিন্তের ঘুম দেবে। ওর সবকিছুই একদম ঘড়ির কাঁটায় কাঁটায় মাপা। এক চুলও এদিক ওদিক হওয়ার নয়। যদিও ও এখন কোথায়, কি করছে, কার সঙ্গে কথা বলছে – এসব নিয়ে ও একদমই ভাবিত হবে না। তবুও সাবধানতাবশত ও কাঁচের স্লাইডিং ডোরটা টেনে দিল। এই অল্প পরিসরে ও এখন সম্পূর্ণ একা। হাতের প্যাকেটটা থেকে একটা সাদা কাঠি বের করে ধীরেসুস্থে সেটাকে জ্বালালো দেশলাই দিয়ে। তারপর গাল ভরা একটা ধোঁয়া ছাড়ল। একটু আগের কথাগুলো আবার ধীরে ধীরে ফিরে আসতে লাগল মনের গলি ধরে। মনটা আরো একটা আনচান করে উঠল। হাতের ফোনটাকে ধরে অ্যাপটাকে আরো একবার খুলল। সোজা চলে গেল এইসেথের প্রোফাইলে। প্রোফাইলটা আগের মতই ইনঅ্যাকটিভ দেখাচ্ছে এখনও। ছোট্ট একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে অ্যাপটা থেকে বেরিয়ে এল। তারপর সোজা চলে গেল Call অপশনে। তনিমার নামটা খুঁজে ডায়াল করল। সঙ্গে সঙ্গেই রিং হতে শুরু করল। কিন্তু না। ওদিক থেকে কেউ ফোনটা রিসিভ করল না। বেজে বেজে কেটে গেল লাইনটা। "যে ব্যক্তিকে আপনি কল্ করছেন, তিনি এখন উত্তর দিতে পারছেন না। অনুগ্রহ করে পরে চেষ্টা..." বিরক্ত হয়ে কলটা কেটে দিল ও। দরকারের সময় যদি কাউকে পাওয়া যায়! আঙুলের ফাঁকে ধরে থাকা আগুনটায় আরো একবার টান দিল। পিছনে একটু আওয়াজ হল। ঘাড় ঘুরিয়ে দেখল ইতু বিছানা ঝাড়ছে। একবার ওর দিকে তাকিয়ে আবার বিছানা ঝাড়তে লাগল। তারপর আলোটাকে নিভিয়ে দিয়ে শুয়ে পড়ল বিছানায়। একবারও জানতে চাইল না ও শোবে কিনা। বা কখন শোবে। নিজের অজান্তেই আরো একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এল ওর নাক ও মুখ দিয়ে। তবে এবারেরটা একটু বেশীই লম্বা। ইতুর সঙ্গে ওর বিয়েটা দেখাশোনা করেই হয়েছিল। প্রেম করে নয়। অবশ্য প্রেম করার ধক যে ওর নেই, সেটা ও ভালো করে জানে। অথচ ওর নিজের মায়ের পেটের ভাই কি সুন্দর প্রেম করে বিয়ে করেছে। তবে ইতুর সঙ্গে বিয়েটা দেখাশোনা করে হলেও প্রেম কি ওদের মধ্যে একটুও ছিল না? সেটা অবশ্য ও বুক ঠুকে বলতে পারবে না। আর সবার মতোই বিয়ের প্রথম কয়েক বছর ছিল বৈকি। ইতু কিন্তু প্রথম থেকেই সিরিয়াস টাইপের একজন মেয়ে। খুবই বুদ্ধিমতি আর পড়িয়ে। পড়াশোনায় ওর চাঁড় দেখেই বাবা ওকে কলেজে ঢুকিয়ে দিয়েছিল। গ্রাজুয়েশন শেষ হতে না হতেই জমজ ছেলের মা। তবুও ইতু দমেনি। দুই ছেলেমেয়েকে সামলে, ওকে সামলে, সংসারকে সামলে নিজের মাস্টার্স, পি.এইচ.ডি কমপ্লিট করেছিল। তারপরে কলেজের চাকরী। সবই করেছে একা হাতে। করেছে কেন? এখনও করে চলেছে। কিন্তু ধীরে ধীরে ওর প্রতি একটা দূরত্ব তৈরী হয়েছে – এটা মেনে নেওয়া ছাড়া উপায় নেই। ছেলে, মেয়ে দুজনেই বড়ো হয়েছে। কলেজে পড়ছে। ওদের দুজনেরও বয়স বেড়েছে পাল্লা দিয়ে। ওর নিজের মাথা জোড়া টাক দেখা দিয়েছে অনেকদিনই। ইতুরও চুলে এদিক ওদিক রূপোলী রেখা দেখা যাচ্ছে। শরীরটাও ভারী হয়েছে কিছুটা। তবুও প্রতিদিন যোগা, ফ্রি-হ্যান্ড এক্সারসাইজ সবই করে। তবুও ওর শরীরের মেদাধিক্য চোখে পড়ার মতই। এত কিছুর পরেও ওর চোখে ইতুকে পারফেক্টই বলা চলে। অন্তত এতদিন তো তা চলত। ইদানিং সেই ধারণা সামান্য হলেও টাল খেয়েছে। অ্যাপটা যেদিন থেকে ও ইনস্টল করেছে সেদিন থেকেই ইতুর সম্পর্কে ওর ধারণাটা পাল্টাতে শুরু করে দিয়েছে। অ্যাপটার কথা মনে আসতেই, একে একে মনে এল একটু আগের কথা। আর সেই সাথে মনে এল তনিমার কথাও। মেয়েটা ফোনটা ধরছে না কেন? ফুরিয়ে আসা আগুনটাতে শেষ কয়েকটা টান দিয়ে ফেলে দিয়ে আবার ওকে কল করল। এবার বার তিনেক রিং হতেই ফোনটা রিসিভ করল তনিমা। "হ্যা...হ্যালো স্যার...ব...বলুন?" কেমন যেন হাঁফাতে হাঁফাতে জিজ্ঞাসা করল তনিমা। গলাটাও কেমন যেন একটু ফ্যাঁসফ্যাঁসে টাইপের। হল কি মেয়েটার? শরীর খারাপ নাকি? উদ্বিগ্ন স্বরে ও জিজ্ঞাসা করল, "তোমার গলাটা এরকম লাগছে কেন? শরীর খারাপ নাকী?"
  • "না, ...না। আ...মি ঠিক আ...ছি।" আগের মতই হাঁফ ছাড়তে ছাঁড়তে তনিমা বলল।​
  • "তাহলে তোমার গলাটা এরকম শোনাচ্ছে কেন?"​
  • "ও কিছু নয়। আপনি বলুন।" এতক্ষণে ওর গলাটা একটু হলেও স্বাভাবিক শোনাল।​
  • "তোমার সঙ্গে আমার কিছু কথা ছিল?" এবার ও ভণিতা না করে সরাসরি বলল।​
  • "এক্ষুণি?!" তনিমা জিজ্ঞাসা করল।​
  • "হ্যাঁ। কেন? কোনো অসুবিধা আছে?" পাল্টা প্রশ্ন করল ও।​
  • "আসলে। আমরা এখন লাইভে আছি।" ফিস ফিস করে বলল তনিমা।​
  • "লাইভে...!?" প্রশ্নটাকে অর্ধোচ্চারিত করে থেমে গেল ও। তনিমা কি বলতে চাইছে ও বুঝে গেল। সেই সাথে একটু আগে ওর হাঁফানোর কারণটাও পরিষ্কার হয়ে গেল।​
  • "স্যার। আমরা কাল কথা বলি? অফিসে?" তনিমা একটু তাড়া লাগিয়ে বলল।​
  • "হ্যাঁ। হ্যাঁ। কালকেই কথা বলব। You carry on." ও তাড়াতাড়ি বলল।​
  • "বেবি! এবার এসো। দেরী হয়ে যাচ্ছে। কাম অন!" তনিমার ফোন থেকে অন্য আরেকজনের গলা শুনতে পাওয়া গেল। সম্ভবত ওর বয়ফ্রেন্ড।​
  • "থ্যাঙ্ক ইউ স্যার। গুড নাইট।" এর পরের গলাটাই তনিমার। ওকে দ্বিতীয়বার আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই কেটে দিল ফোনটা।​
কলটা কেটে যাওয়ার পর অল্প কিছুক্ষণ একভাবে স্থানুর মতো দাঁড়িয়ে রইল। তারপর কিছু একটা চিন্তা করে একবার পিছন ফিরে তাকাল। ইতু ওর দিকে পিছন করে ঘুমাচ্ছে। ঘাড় ঘুরিয়ে হাতের ফোনটার দিকে তাকাল একবার। অ্যাপটায় ঢুকল নতুন করে। সোজা চলে গেল তনিমার প্রোফাইলটায়। সবুজ রঙের জ্বলেজ্বলে বৃত্তটার পাশেই আরো একটা অপশন এই মুহুর্তে অন হয়ে আছে। Watch Her Live Video অপশনটায় বার দুয়েক আঙুলটা বোলাল। তারপর ক্লিক করল। নীলচে বৃত্তটা একবার ঘুরেই থেমে গেল। লেখা উঠল। Send Her Stars. নীচে বেশ কয়েকটা অপশন। যেমন – পনেরো মিনিটের জন্য দশটা স্টার। আধঘন্টার জন্য কুড়িটা স্টার। একঘন্টার জন্য চল্লিশটা স্টার। আর ফুল টাইমের জন্য – পঞ্চাশটা স্টার। এছাড়াও আরো অনেক অপশন আছে। বিভিন্ন রিকোয়েস্ট আছে। তার জন্য আলাদা আলাদা করে স্টার দেওয়ার অপশনও আছে। আজকে দুপুরেই তনিমার কাছে জেনে নিয়ে গোটা তিরিশেক স্টার কিনে রেখেছিল ও। এখনই সবকটাকে খরচ করার ইচ্ছা ওর হল না। তাই পনেরো মিনিটের অপশনটাতেই ক্লিক করল করল। সাথে দশটা স্টার কমে গিয়ে লেখা উঠল, Your request has been sent. Please be patient. বেশীক্ষণ অপেক্ষা করতে হল না। অ্যাপের পর্দায় Your request has been accepted. লেখাটা ফুটে উঠেই মিলিয়ে গেল। তারপর ওর ফোনের স্ক্রিণে ফুটে উঠল একটা ছবি। ছবি নয় ভিডিও। ও ভালো করে তাকিয়ে দেখল ক্যামেরা থেকে একটু দূরেই একটা বিছানা দেখা যাচ্ছে। বিছানার ওপাশে একটা দেওয়াল কেবল। আর কিছু দেখা যাচ্ছে না। হ্যাঁ। দেখা যাচ্ছে। দুটো শরীর। বিছানার উপরে দুটো শরীর। একটা ছেলের। আর অন্যটা একটা মেয়ের। দুজনেরই মুখ দেখা যাচ্ছে না। দুজনেরই মুখ ব্লার করা। তবে মেয়েটা যে তনিমাই সেটা বুঝতে ওর কোনো অসুবিধা হল না। ঢোঁক গিলে ফোনের স্ক্রিণটার দিকে আরো কিছুটা ঝুঁকে পড়ল ও। নগ্ন শরীরদুটো যে কোন খেলায় মত্ত তা বুঝতে একটুও অসুবিধা হওয়ার নয়।



রাত এখন ক'টা বাজে কে জানে। মিনিমাম দুটো তো বাজবেই। ঘুমটা একবার ভেঙ্গে গেলে আবার আসতে সময় লাগে। কখনও কখনও আবার আসেও না। তখন চোখ বুজে, চুপ করে শুয়ে থাকা ছাড়া আর কোনো কাজ থাকে না। কিন্তু আজকে চুপচাপ শুয়ে থাকতেও ইচ্ছা করছে না। জানালার বাইরে থেকে কিছুটা চাঁদের আলো পিছলে ঘরে ঢুকছে। পাশে ইতু ঘুমিয়ে কাদা। অথচ ওর চোখে ঘুম নেই। আজ শুতে ওর অনেকটাই দেরী হয়ে গেছে। প্রায় সাড়ে বারোটা বেজে গেছিল। সাধারণত এত রাত্রি করে ও শোয় না। ইতু মোটামুটি এগারোটা বাজলেই শুয়ে পড়ে। ঘুমিয়েও পড়ে। ও তার পরে পরেই শুয়ে পড়ে। একটু অপেক্ষা করলে চোখের পাতায় ঘুমের পেপারওয়েটটাও চাপা পড়ে যায়। কিন্তু আজ যায় নি। তার কারণ, প্রথম শুতে যাওয়ার অনেকটাই দেরী হওয়া। আর দ্বিতীয়ত, একটা নীরব উত্তেজনা। অবশ্য ঘুম না আসার কারণ হিসাবে দ্বিতীয় কারণটাই যে মুখ্য সেটা ও মনে মনে ভালো করেই জানে। প্রথমত এইসেথের সাথে ঐরকম উত্তেজক বার্তালাপ। তারপর তনিমার লাইভ পারফরমেন্স। সব মিলিয়ে যে বদহজম হয়ে গেছে এখন সেটা ও ভালো করেই বুঝতে পারছে। একদিনেই এতটা উত্তেজনা ওর শরীর সহ্য করতে পারছে না। তাই এপাশ ওপাশ করেও ঘুমের দেখা পাচ্ছে না। নিদ্রাদেবী রাগ করে বোধহয় আজকের মত বিদায় নিয়েছেন। আবার চুপচাপ শুয়ে থাকাটাও কেমন জানি একটু অস্বস্তিকর। বারবার চোখের পর্দায় তনিমা আর তার বয়ফ্রেন্ডের লাইভ পারফর্মেন্সের কিছু কিছু ক্লিপ ভেসে উঠছে। আর শরীরটা ততবার আইঢাই করে উঠছে। আর ঠিক ততবারই ওকে পাশ ফিরে শুতে হচ্ছে। কিন্তু কিছুতেই শান্তি পাওয়া যাচ্ছে না। আজকে তনিমার লাইভ পারফরমেন্স দেখার পর ও একটা জিনিস উপলব্ধি করতে পেরেছে। ও এই অ্যাপটাকে আর পাঁচটা সস্তা আর বাজারচলতি ডেটিং ও সেক্স অ্যাপ ভেবে ভুল করেছিল। এই অ্যাপটি মোটেও সেরকম নয়। তাদের থেকে অনেক অনেকটাই বেশী ডার্ক। আর সেই সাথে বোল্ডও। তা নাহলে তনিমার পারফরমেন্সের সময় লাইভ চ্যাটে যেসব রিকোয়েস্ট আসছিল তা দেখেই ওর চক্ষু ছানাবড়া হওয়ার জোগাড়। পনেরো মিনিটের শো-এর রিকোয়েস্ট পাঠিযে শেষপর্যন্ত প্রায় সওয়া এক ঘন্টা ও কাটিয়েছে তনিমার পারফরমেন্স দেখে। এবং সেই সাথে ও এটাও বুঝেছে মেয়েটি মোটেও সহজ সরল নয়। তার থেকে এককাঠি উপরে। ইতুর সঙ্গে ও লাস্ট কবে সেক্স করেছিল, সেটা এখন ভাবতে বসলে অনেক দেরী হয়ে যাবে।। হয়তো বা এক বছর। কিম্বা। দুই বছর। তিন বছর বা তার বেশী হওয়াও আশ্চর্যের নয়। কিন্তু আজকে যা ও দেখল সেটা যে কেবল সেক্স নয়, এটা ও পুরোপুরি নিশ্চিত। আর এটা যদি সেক্স হয়, তাহলে বিয়ের পর থেকে যেটা ও ইতুর সঙ্গে করে এসেছে, তা নিতান্তই ছেলেখেলা ছাড়া আর কিছুই নয়। এই অ্যাপে যারা উপস্থিত আছে, তারা যে এই বিষয়টা যে একপ্রকার গুলে খেয়েছে, সেটাতেও ও নিশ্চিত। সবার কাছে নিজেকে বাচ্চা ছেলে বলে মনে হচ্ছিল নিজেকে। তনিমার কাছে আরও ক্লাস নিতে হবে এই বিষয়ে। কিন্তু এখন ঘুমের কি করা যায়? একবার ঘাড় ঘুরিয়ে পাশে শুয়ে থাকা ইতুর দিকে তাকাল। ওর দিকে পিছন ফিরে মড়ার মতো ঘুমাচ্ছে। যাক, একদিকে নিশ্চিন্তি। বালিশের পাশ থেকে সিগারেটের প্যাকেট, দেশলাই আর ফোনের মত দরকারী জিনিসগুলোকে আলগোছে তুলে নিয়ে চুপিসাড়ে বিছানা থেকে উঠে পড়ল। তারপর সন্তর্পণে আরো একবার ব্যালকনিতে এসে দাঁড়াল ও। একটা সিগারেট ধরিয়ে অ্যাপটায় আরো একবার লগ ইন করল। তনিমা যে আজকে আর অ্যাকটিভ হবে না, সেটা ও জানতো। ঠিক তাই। তনিমার নিষ্প্রভ প্রোফাইলটা থেকে বেরিয়ে এইসেথের প্রোফাইলটায় ঢুকল। না। এখনও মেয়েটা ইনঅ্যাকটিভ হয়ে আছে। মনটা কেমন জানি একটু খারাপ হয়ে গেল। সেই সাথে একটু দুশ্চিন্তাও হল মেয়েটার জন্য। ও "Are you alright? If you want, I can hear you." এক লাইনে লিখে পাঠিয়ে দিল এইসেথকে। অন্যপাশ থেকে চট করে উত্তর এলো না। আসার কথাও নয়। তার কারণ এখনও সে ইনঅ্যাকটিভ হয়ে আছে। এইসেথের প্রোফাইলটা থেকে বেরিয়ে অ্যাপেতেই এদিক ওদিক ঘুরতে লাগল ইতস্তত। বেশ খানিকটা সময় কেটে গেল এইভাবেই। হঠাৎই ওকে চমকে দিয়ে একটা মেসেজ ঢুকল ওর প্রোফাইলে। তাড়াতাড়ি চ্যাটবক্সটা খুলল ও। যা ভেবেছিল ঠিক তাইই। এইসেথই ওকে মেসেজ পাঠিয়েছে। তাকিয়ে দেখল লেখা আছে, "Thanks. Can we meet?" লেখাটা পড়ে মনটা আরো একবার কেমন জানি হয়ে গেল। এটা আবার কোনো ফাঁদ নয়তো? নাকি মেয়েটা সত্যি করেই কোনো বিপদে পড়ে ওর কাছে সাহায্য চাইছে? যদি তাইই হয়, তাহলে এরকম সাহায্য? সরাসরি সেক্সের কথা? নাকি বয়ফ্রেন্ডের সাথে ঝগড়া হয়েছে? কিম্বা ব্রেক আপ? এখন এসব জলভাত। আকছার হচ্ছে। হতেও পারে। ঝোঁকের মাথায় লিখে ফেলেছে। তবুও ও লিখে পাঠাল, "Of course. Tell me where?" লেখাটা পাঠিয়ে একটু অপেক্ষা করল ও। ভাবল মেয়েটা নিশ্চয়ই কোনো উত্তর পাঠাবে। কিন্তু না। মেসেজটা সেন্ড করার অল্পক্ষণ পরেই প্রোফাইলটা আবার আগের মত ইনঅ্যাকটিভ হয়ে গেল। না। আজকালকার মেয়েদের মন বোঝা সত্যিই দায়ের। কখন কি বলতে চায়, আর কখন কি করতে চায়, তা বোঝা ভগবানের পক্ষেও অসাধ্যকর। আর ও তো একজন সাধারণ মানুষ। যাক, পরে এই নিয়ে চিন্তা করা যাবে। ছোট্ট একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ও সিগারেটটায় শেষ একটা টান মেরে এইসেথের প্রোপাইলটা থেকে বের হয়ে এল।



এরপর ইচ্ছা ছিল ঘরে এসে ঘুমের চেষ্টা করা। কিন্তু অদৃষ্টে মনে হয় আজ সেটা নেই। ঘরের দিকে পা বাড়িয়েও হঠাৎ করেই লিলিথের কথা ওর মনে ভেসে উঠল। একবার ট্রাই করে দেখা যাক। প্রোফাইলটায় ঢুকে দেখল সেটাও বর্তমানে ইনঅ্যাকটিভ। কিন্তু ওর পূর্বাভিজ্ঞতা বলছে, এটা যেকোনো সময় অ্যাকটিভ হতেই পারে। বুক ঠুকে লিখল, "Hey, sweety. Do I wake you up?" ইচ্ছে করেই শুরুটা ফ্লার্ট করেই করল। দেখাই যাক না, উত্তর কি দেয়। খুব বেশীক্ষণ অপেক্ষা করতে হল না ওকে। আরো একবার ওর ধারণা সত্যি হতে দেখে ও মনে মনে খুশীই হল। সত্যি করেই লিলিথের প্রোফাইলটা অ্যাকটিভ হয়ে গেল। আজকালকার ছেলেমেয়েরা সবাই নিশাচর। উত্তর এল, "আমি এতদিন জানতাম রাতটা ঘুমের জন্যই।" দুটো কারণে উত্তরটা ওর কাছে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ মনে হল। প্রথমটা অবশ্যই তার বাংলায় উত্তর লেখা। আর দ্বিতীয়টা তার উত্তরের মধ্যেই লুকানো ব্যাঙ্গের খোঁচাটা। খোঁচাটাকে অক্লেশে হজম করে নিয়ে ও ফিরতি উত্তর লিখে পাঠাল, "কিন্তু আমি যে জানি, রাতে ঘুম ছাড়াও আরো একটা কাজ হয়।" ও ইচ্ছা করেই এটা লিখে পাঠাল। দেখা যাক, এই উত্তর কি আসে। উত্তর অবশ্য এল সাথে সাথেই। "আর সেটা কি?" কথাবার্তা কোন দিকে এগোতে পারে ও সেটা এখন থেকেই আন্দাজ করে নিতে পারল। এর সাথে নির্দ্বিধায় কথা চালানো যেতে পারে। ও সামান্য ধাঁধা সহকারে লিখল, "ঐ যে সেইটা।" উত্তর এল সঙ্গে সঙ্গেই। ওপাশের জন কি বিরক্ত। উত্তরে একটু হলেও বিরক্তির ছোঁয়া আছে বইকি। "হেঁয়ালি না করে, যেটা বলতে চাইছেন সেটা বলুন।" ও আরেকটু তাতাবার জন্যই লিখে পাঠাল, "সব কথা কি আর মুখে বলা যায়?" ফিরতি জবাবটাও ওর মতই রসালো। "কেন? বলা যায় না বুঝি?" এর সাথে কথা বলে আরাম পাওয়া যাবে। "উঁহু। বুঝে নিতে হয়।" ইচ্ছে করেই উহ্য রেখে কথাটা বলল। বেশ সাবলীল একটা জবাব এল ওপাশ থেকে। "তাই বুঝি?" ও-ও সাবলীলভাবেই লিখল, "অবশ্যই।" এবার একটা প্রশ্ন ছুটে এল ওপাশ থেকে। অবশ্য সেটাকে চ্যালেঞ্জও বলা যেতে পারে। "তাহলে বলুন তো আপনার সঙ্গে চ্যাট করা বাদে আমি এখন কি করছি?" ও চ্যালেঞ্জটাকে গায়ে না মেখে পাল্টা প্রশ্ন করল, "তোমার বয়ফ্রেন্ড আছে?" ও ইচ্ছা করেই প্রশ্নটা করল। একবার বাজিয়ে দেখা দরকার। অবশ্য সত্যি কথাই যে বলবে তার কোনো গ্যারান্টি নেই। তবুও। যাক, উত্তর এল, "ধরুন আছে।" উত্তরের ধোঁয়াশাটা ওর নজর এড়ালো না। এ আবার কেমন উত্তর? বলছে না? নাকি বলতে চাইছে না? "ধরবো কেন? খোলসা করে বলো।" স্রেটকাট উত্তর এল, "আছে।" যদিও ওর বিশ্বাস হল না। "সে কি তোমার কাছেই আছে?" জবাব এল, "এত রাতে কি আমার কাছে থাকতে পারে?" সত্যি কথা। কিন্তু হেরে গেলে চলবে না। "থাকলে ক্ষতি কি?" কথাবার্তা এখন বেশ স্মুদলী চলছে। কটা বাজে সেটা এখন আর ওর খেয়াল নেই। উত্তর এল। "থাকলে আমি কি আর আপনার সঙ্গে চ্যাট করতে পারতাম?" ঠিকই তো। কথায় যুক্তি আছে। মেনে নিয়ে লিখল, "ঠিকই। তাহলে তুমি এখন কি করছো? ঘুমাচ্ছিলে?" জবাব এল, "না। ঘুম পাচ্ছে না।" মনের প্রশ্নটাই লিখে পাঠাল ও, "কেন?" জবাবে লেখা রয়েছে, "খুব গরম লাগছে। মনে হচ্ছে..." ও তাড়াতাড়ি লিখল, "কি মনে হচ্ছে?" জবাবে সে লিখে পাঠাল, "মনে হচ্ছে সব জামাকাপড় খুলে ফেলি। তারপর..." উফ্। মেয়েটার সত্যি করেই রসবোধ আছে। না হলে এই জায়গায় কেউ থামে? "তারপর?" এরপর লম্বা একটা মেসেজ এল, "তারপর ল্যাংটো হয়ে বাথরুমে গিয়ে শাওয়ার খুলে দাঁড়িয়ে থাকি।" ও উত্তরে লিখল, "তুমি কি বাড়িতে সব সময় ল্যাংটোই থাকো?" কি ভাবল কে জানে। উত্তরে লিখল, "একপ্রকার তাইই।"
  • "কেন? বাড়িতে জামাকাপড় পরতে ভালো লাগে না?"​
  • "না। ব্যাপারটা সেরকম নয়। আসলে আমার বয়ফ্রেন্ড এলে আমাকে জামাকাপড় বিশেষ একটা পরতে দেয় না। তাই।" এটাও মিথ্যে কথাই মনে হচ্ছে।​
  • "তুমি কি বাড়িতে একলা থাকো?"​
  • "আপনি কিভাবে জানলেন?"​
  • "তোমার কথা থেকেই।"​
  • "হ্যাঁ। আমি একাই থাকি।"​
  • "তোমার বয়ফ্রেন্ড তোমার সাথে থাকে না কেন?"​
  • "সে সবসময় আমার সাথে থাকতে যাবে কেন? তার ফ্যামিলি নেই? অবশ্য আমি একবার ডাকলেই চলে আসে।"​
  • "কখন আসে?"​
  • "আমার যখনই ইচ্ছা হয়। সকালে। কিম্বা দুপুরে। কিম্বা রাতে।"​
  • "তোমরা একলা ঘরে কি করো?"​
  • "হা ডু ডু খেলি।" ব্যঙ্গটা পরিষ্কার বোঝা গেল।​
  • "আঃ ইয়ার্কি না মেরে বলোই না, কি করো।"​
  • "আপনি আপনার গার্লফ্রেন্ডের সাথে যা করেন, সেও আমার সাথে তাই করে।"​
  • "তুমি কি করে জানলে, আমার গার্লফ্রেন্ড আছে?"​
  • "আপনার কথা থেকেই।"​
  • "আচ্ছা। টিট ফর ট্যাট। তার মানে তোমরা সেক্স করো তাই তো?"​
  • "সে আর বলতে। সুযোগ পেলেই করি।"​
  • "কিভাবে করো?"​
  • "তার ফিরিস্তি আপনাকে দিতে যাবো কেন? আপনি আমায় বলেছেন আপনি কিভাবে সেক্স করেন?"​
  • "তুমি জানতে চাইলেই, আমি বলবো।"​
  • "আচ্ছা বেশ। তাহলে বলুন।"​
সময়ের জ্ঞান ভুলে গিয়ে মোবাইলের কিপ্যাডে দ্রুত আঙ্গুল চালাতে লাগল দূর্নিবার।
 
ইন্দুমতি – শরীরটা আজ খুবই ক্লান্ত লাগছে। সেই সাথে মনটাও। ওদের আর দোষ কী। সকাল থেকে কম ধকল গেল ওদের উপরে। শারীরিক ক্লান্তির থেকেও মানসিক ক্লান্তিটা যেন আজ ওকে বেশীই ভোগাচ্ছে। কিচেনে দিনের শেষ টুকিটাকি কাজগুলো সামলাতে সামলাতে এই কথাগুলোই বারবার ওর মনে হচ্ছিল। হাঁটুটা বেশ ব্যাথা লাগছে। একটু বাম ঘষতে পারলে হতো। সেটাও তো লাগিয়ে দেওয়ার কেউ নেই। বর আর ছেলে দুজনেই খেয়ে দেয়ে সটান শুতে চলে গেল যে যার ঘরে। এখন গিয়ে দেখবে বর দিব্যি ঠোঁটের কোণে সিগারেট ঝুলিয়ে মোবাইল ঘাঁটছে! এই বুড়ো বয়সে যে কিসের এই ফোনের প্রতি মোহ ও সেটা বুঝতে পারে না। ও লক্ষ্য করে দেখেছে ইদানিং মোবাইল ঘাঁটার বদঅভ্যেসটা কর্তার মধ্যে বেশ জাঁকিয়েই বসেছে। সেই সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে সিগারেট ফোঁকাটাও। লোকটার চিরকাল সবই উল্টো কীর্তি! লোকে বয়স বাড়লে সিগারেট খাওয়া কমিয়ে দেয়। এনার দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে। দিনের শেষে বসে যে বউয়ের সাথে একটু কথা বলবে, গল্প করবে সেসবের বালাই নেই। খালি ফোন আর সিগারেট! সিগারেট আর ফোন! এইভাবেই গোটা জীবনটাতো কাটিয়ে দিল। না আছে কোনো দায়িত্ব। আর না আছে কোনো কান্ডজ্ঞান। সংসারে যে শুধু কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা রোজগার করলেই হয় না, তার সাথে যে একটু সাংসারিক জ্ঞানও থাকা দরকার, সেটা আজও ও কর্তার মগজে ঢোকাতে পারল না। অবশ্য মগজ থাকলে তো ঢুকবে! সেসবেরও কোনো বালাই নেই! যাকে বলে ওয়ার্থলেস! মনের মধ্যে বরের প্রতি রাগটাকে চিবোতে চিবোতে আর সামান্য খোঁড়াতে খোঁড়াতে ডাইনিং টেবিলের সামনে এসে দাঁড়াল। খাবারগুলোকে টেবিলের উপরে পর পর সাজিয়ে রেখে প্রতিটার উপরে ভালো করে চাপা দিল। যাতে কিছুতে মুখ না দিতে পারে। অবশ্য এ খাবার তাদের নয়। ওর, বরের আর ছেলের তিনজনের রাতের খাওয়া হয়ে গেছে। এটা বুবলার জন্য। অর্থাৎ ওর মেয়ের জন্য। তার বাড়ি ফেরার কোনো কালেই ঠিক থাকে না। এই যেমন আজকে। খাবারগুলোকে রেখে সোজা হয়ে উঠে দেওয়াল ঘড়িটার দিকে তাকালো। রাত প্রায় এগারোটা বাজতে যাচ্ছে। মেয়ের এখনও বাড়ি ফেরার সময় হল না। কোথায় কি রাজকার্য করছে কে জানে। কোন সভ্য, শিক্ষিত আর ভদ্রবাড়ির মেয়ে এত রাত করে বাড়ি ফেরে? অথচ দেখো, বাপের কোনো হুঁশ আছে এই বিষয়ে? খেলো দেলো, হাত ধুয়ে সিগারেট ফুঁকতে আর মোবাইল ঘাঁটতে চলে গেলো। এখন যদি এই বিষয়ে কিছু বলতে যায়, তো উল্টে বলবে, সবেতেই নাকি ওর বাতিক! এটা কোনো কথা? উঠতি বয়সের মেয়ে, কেন এত রাত করে বাড়ি ফিরছে, সেটা দেখতে হবে না? ওনাকে দিয়ে যদি একটা কাজ হয়! ছেলেটাও হয়েছে বাপের মতই। হাঁদা, গঙ্গারাম। জিন আর যাবে কোথায়? শরীরে তো একই রক্ত বইছে! নিরাশায় মাথা নাড়তে নাড়তে আবার কিচেনের দিকে হাঁটা দিল ও।

হাতের আর হেঁশেলের কাজ শেষ করে যখন অবশেষে বেডরুমে এল, তখন ঘড়ির কাঁটা এগারোটা পেরিয়ে গেছে। ঘরের মধ্যে কোথাও কর্তাকে দেখতে পেল না। রুমে যখন নেই, তখন নির্ঘাত গেছে ব্যালকনিতে। ওখানেই তো আড্ডা। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ওখানে সিগারেট ফোঁকে আর মোবাইল ঘাঁটে। ঐ মোবাইলে যে কিসের মোক্ষ বাপু ও জানে না। আর জানতেও চায় না। মোবাইলের একটা অ্যাপেতেই ওর যা হাঁশফাঁশ অবস্থা। এর বেশী কিছু ওর পক্ষে জানা সম্ভব নয়। ইচ্ছেও নেই। আজকালকার ছেলেরা তো ঐ করেই গেল রসাতলে! ঘাড় ঘুরিয়ে দেখল, ও যা ভেবেছে ঠিক তাই। বাবু ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দিব্যি সিগারেট ফুঁকছে আর মোবাইল ঘাঁটছে! একটু যদি লজ্জা-শরম থাকে শরীরে! দেখে ওর গোটা শরীর রাগে রি রি করে উঠল। একবার ইচ্ছে হল গিয়ে দু চার কথা শুনিয়ে দিয়ে আসি। কিন্তু এত রাতে আর সিন ক্রিয়েট করতে ভালো লাগছে না। যা পারে করুক। বিছানার কাছে এসে বিছানাটা ঝাড়তে শুরু করল। শোওয়ার আগে বিছানাটা না ঝাড়লে শুয়ে আর ঘুমিয়ে শান্তি হয় না ওর। বর বলে এটাও নাকি ওর একটা বাতিক। ম্যানিয়া। যে যা বলে বলুক। বিছানা ঝাড়া হলে একবার ব্যালকনির দিকে তাকালো। দেখলো বর এতক্ষণ ওর দিকেই তাকিয়েছিল। যেই চোখাচোখি হল ওমনি মুখ নীচু করে আবার মোবাইলের দিকে তাকালো। একে নিয়ে ঘর করা এককথায় অসম্ভব। তাড়াতাড়ি ঘরের আলো নিভিয়ে শুয়ে পড়ল। যতক্ষণ মন চায় ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হাওয়া খাক, সিগারেট খাক আর মোবাইল ঘাঁটুক। কিন্তু শুয়ে পড়লেও চোখে যে চট করেই ঘুম চলে এল এরকম নয়। বরং চোখ দুটো বন্ধ করতেই আজকের সন্ধ্যের পর থেকে ঘটে যাওয়া প্রত্যেকটা ঘটনা এক এক করে ওর মনে পড়ে যেতে লাগল। এরকম এর আগে ওর সাথে কখনও ঘটেনি। ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও ঐ অ্যাপটাকে ও ইন্সটল করেছে। আবার শুধু যে ইন্সটল করেছে তাইই নয়, সেই সাথে ব্যবহারও করেছে। অ্যাপটাকে এককথায় নরক বললেও কম বলা হয়। নোংরামীর চূড়ান্ত। এমন সব জিনিস যা দেখে শুনে ও অবাক হয়ে গেছে। তা এতে ওর কি স্বার্থ? কিছুই নেই। কলেজের ছেলেমেয়েরগুলোও তো ওর নিজের ছেলেমেয়ের মতোই। যদি আজ ওর নিজের পেটের ছেলে-মেয়ে এই অ্যাপের পাল্লায় পড়ে গোল্লায় যাওয়ার রাস্তা খোঁজে, তাহলে মা হিসাবে কি ওর কোনো দায়িত্ব থাকবে না? বসে বসে চোখের সামনে নিজের ছেলে-মেয়েদুটোকে রসাতলে যেতে দেখবে? সেটা ও পারবে না। শিক্ষিকা মানে তো একপ্রকার মা। যে যাই বলুক, ও ওর কলেজের ছেলেমেয়েদেরকে এই চোরাবালি থেকে উদ্ধার করবেই। তার জন্য ওকে যা করতে হতে পারে, ও করবে। ও করছেও। কিন্তু এখানে একটাই অসুবিধে। এখানে কে যে কে, সেটাই বুঝতে পারা যাচ্ছে না। যার সঙ্গে কথা বলছে, সে যে ওরই ছাত্র কিনা সেটাও বোঝার কোনো উপায় নেই। কিভাবে তাদেরকে খুঁজে বের করা যায়, সেটাও ওর এইমূহুর্তে জানা নেই। আবার থেমে গিয়ে হাত গুঁটিয়ে বসে থাকাটাও অর্থহীন। যতদিন না একটা প্ল্যান মাথায় আসছে এভাবেই চালাতে হবে। এছাড়া আর উপায় কী? এই যেমন আজকেই। রাত তখন ন'টা বাজবে হঠাৎ করেই কিউপিড নামের একটা প্রোফাইল থেকে ওর সাথে চ্যাট করতে শুরু করল। সে কে, ওরই কোনো ছাত্র কিনা সেটা বাজিয়ে দেখার জন্যই ও খেজুরে আলাপ করতে শুরু করল। এই কদিন এইভাবেই খেজুরে আলাপ চালাবে বলে ও ঠিক করেছে। সে যাই হোক। ঠিক সেই সময়েই বর অফিস থেকে ঘরে এল। তার সামনে এসব করা একদমই ঠিক হবে না, ভেবে নিয়ে ও তৎক্ষণাৎ কথাবার্তা থামিয়ে দিল। মনে মনে একটু ভয় ছিল, এতে আবার রাগ করে ওকে বাদ দিয়ে দেবে না তো? যাই হোক বর চা-জলখাবার খেয়ে বেডরুমে ঢুকে পড়তেই ও জাঁকিয়ে বসল। চশমাটা আবার চোখে এঁটে কিউপিডকে লিখে পাঠাল, "Now I am free. We can talk freely." মনের আশাটা সঙ্গে সঙ্গেই পূরণ হয়ে যাবে, সেটা ও ভাবেনি। যতই হোক পুরুষ মানুষ তো। ছোঁকছোঁকানি স্বভাব আর যাবে কোথায়! মেয়ে দেখতে না দেখতেই কথা বলার জন্য উন্মুখ হয়ে আছে। এক সেকেন্ডের মধ্যেই জবাব এলো, "বাংলায় কথা বলা যেতে পারে?" সে আর বলতে, তোমার মত অশিক্ষিত যে বেশীক্ষণ ইংরেজী চালাতে পারবে না, সেটা বলাই বাহুল্য। আর শুধু তুমি কেন, এখানে যারা যারা আছে, তারা প্রত্যেকেই যে কমবেশী অশিক্ষিত সেটা আর বলে দিতে হয় না। অশিক্ষিত না হলেও রুচির যে বড়োই অভাব, সেটা তো পরিষ্কার। যাই হোক, মনের রাগ মনের মধ্যেই পুষে রেখে ও উত্তরে লিখল, "অবশ্যই যেতে পারে। আমি বাংলাতেই কথা বলতে চাই তোমার সঙ্গে।" এতেই গলে জল হয়ে গেল। সামনে থাকলে মনে হয় গড়িয়ে পায়ের উপরেই পড়ে যেত। লিখে পাঠিয়েছে, "আমিও তোমার সাথে কথা বলতে চাই।" মরণ নেই আর কি!
  • "তুমি কোথায় থাকো? কলকাতায়?" এর বেশী খেজুরে আলাপ করার সময় ওর নেই। তাই তাড়াতাড়ি কাজের কথায় চলে এল।​
  • "হ্যাঁ। আর তুমি?" লিখে পাঠাল ছেলেটা।​
  • "আমিও কলকাতাতেই থাকি।" এটুকু সত্যি কথা লেখা যেতেই পারে। না হলে সন্দেহ করতে পারে। এর সাথে যোগ করল, "তুমি কি করো? পড়াশোনা?"​
  • "না। আমি কাজ করি।"​
  • "কাজ করো! কি কাজ করো?" এবার ওর কেমন যেন একটু সন্দেহ হল। যতদূর মনে আছে এর বয়স লেখা ছিল ২৩। এখন মনে হচ্ছে সব ভুয়ো।​
  • "অফিসে কাজ করি। কেন?"​
  • "তোমার বয়স লেখা আছে ২৩। তোমার এখন তো পড়াশোনা করার কথা। আর তুমি বলছো অফিসে কাজ করো। এটা ঠিক বুঝতে পারলাম না।" ফোনে একটানা টাইপ করা যে কতটা কষ্টের কাজ সেটা আজ ও বুঝতে পারল। আঙুল, ঘাড় আর চোখ তিনটেতেই যন্ত্রনা হচ্ছে। কিন্তু থেমে গেলে হবে না। উত্তরটা আসতে একটু দেরীই হল।​
  • "আসলে আমি পড়শোনাই করতাম। কয়েক মাস আগে বাবা মারা গেছে। তাই সংসার চালাতে আমাকে কাজ করতে হচ্ছে। আর অফিসে কাজ করি মানে, তেমন কিছু নয়। ঐ পিওন গোছের।" লেখাটা পড়ে সম্পূর্ণ বিশ্বাস হল না। জল তো এর মধ্যে নিশ্চিত আছে। সে যাই হোক, এ মোটেও ওর ছাত্র হতে পারে না। তাহলে লাভ কিছুই হল না। মনটা একটু খারাপ হয়ে গেল। দেখল এরই মধ্যে আরও একটা মেসেজ পাঠিয়েছে ছেলেটা। খুলে দেখল,​
  • "কি হল? কথা বলবে বলে চুপ করে গেলে যে?"​
  • "না। এমনি।" ও লিখল। ছেলেটা ওর ছাত্র না হতে পারে। কিন্তু ভদ্র তাতে সন্দেহ নেই। কথা বলতে খুব একটা খারাপ লাগছে না। এর সাথে কথা চালানো যেতেই পারে। কে জানে, হয়তো ভবিষ্যতে ওর কোনো কাজে লেগে যেতেও পারে। দেখাই যাক না। ও লিখল, "তুমি এখন কি করছো?"​
  • "আমি একটু আগে অফিস থেকে ফিরেছি।" ছেলেটা লিখল।​
  • "তোমার বাড়িতে কে কে থাকে?" এমনিই জিজ্ঞাসা করল ও।​
  • "কেন?" প্রশ্নেই ভয়ের ছাপ স্পষ্ট। এতে ভয় পাওয়ার কি আছে? ভীতুর ডিম একটা! মনে মনে না হেসে পারল না। আজকালকার ছেলেদের মতো মোটেও নয়।​
  • "ভয় পেও না। আমি এমনিই জিজ্ঞাসা করলাম।" ও বুঝিয়ে বলল।​
  • "ভয় পাইনি। তবে তুমি এমন হঠাৎ করে জিজ্ঞাসা করলে আমি চমকে গেলাম।" ওহঃ বাবু নাকি ভয় পায়নি। খালি মিছে কথা।​
  • "ভয় যদি না পেয়ে থাকো, তাহলে বলো বাড়িতে কে কে আছে।" মনে মনে আবার একচোট হাসল।​
  • "বাড়িতে মা আছে। দাদা আছে। একটা ছোটো বোন আছে।"​
  • "তাই নাকি? দাদা কি করেন?" এবারও এমনিই জিজ্ঞাসা করল। ছেলেটার সব কথা কেন জানি জানতে ইচ্ছে করছে। এরকম সরল মনের ছেলের সঙ্গে ও অনেকদিন কথা বলেনি।​
  • "দাদা! দাদার একটা দোকানে কাজ করে।"​
  • "ও। আর বোন?"​
  • "ও পড়াশোনা করে। ওর লেখাপড়াটা ছাড়াই নি।" বেশ অকপট স্বীকারোক্তি। এই কারণেই ছেলেটাকে ওর ভালো লাগছে। কিন্তু ও কিকরে এইরকম একটা অ্যাপে এলো, সেটা জানতে খুব ইচ্ছে করছে। কিন্তু এখনই জানলে হবে না। ধৈর্য ধরতে হবে।​
  • "বাঃ এটা ভালো করেছো। ওর পড়াশোনাটা যেন ছাড়িয়ে দিও না।"​
  • "না। ও খুব ভালোবাসে পড়তে।" তারপর একটু থেমে আবার একটা মেসেজ পাঠালো ছেলেটা। "তখন থেকে তো শুধু আমাকেই প্রশ্ন করে যাচ্ছো। এবার নিজের কথা একটু বলো।"​
  • "বলো, কি জানতে চাও?" ও তাড়াতাড়ি লিখল। এবার কিছু একটা বানাতে হবে।​
  • "সব কিছুই। তুমি কোথায় থাকো। কি করো, বাড়িতে কে কে আছে, এই সব।" এবার একটু সময় নিল ও। মনের মধ্যে মিথ্যে গুলো একের পর এক সাজিয়ে নিয়ে ও টাইপ করতে শুরু করল, "বলছি একে একে। আমি..."​
রাত এখন কটা বাজে কে জানে। ঘুমটা কেন ভাঙ্গল সেটাও বুঝতে পারছে না। ঘরটা অন্ধকার ঠিকই তবে একদিক দিয়ে কিছুটা আলো ঘরে ঢুকছে। তার মানে ব্যালকনিটা খোলা। এখনও বাবুর শুতে আসার সময় হল না! বালিশের পাশ থেকে চশমাটা নিয়ে পড়ল। তারপর হাতড়ে মোবাইলটাকে হাতে তুলে নিল। দুটো বেজে দশ! এখনও ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে কি করছে! উঠে বসতে গেল তখনই ওর চোখে পড়ল ফোনে কিছু নোটিফিকেশন এসেছে। তাড়াতাড়ি বিছানায় উঠে বসে অ্যাপটা খুলল। বেশ কয়েকটা প্রোফাইল থেকে ইতিমধ্যে ওর কাছে পার্টনার রিকোয়েস্ট এসেছে। এসব নিয়ে কাল ভাবা যাবে মনে করে ফোনটা রাখতে যাবে, ঠিক সেই সময়েই একটা মেসেজ ঢুকল ওর প্রোফাইলে। খুলে দেখল মেসেজটা এসেছে ব্যাফোমেট নামের একটা প্রোফাইল থেকে। মনে পড়ে গেল একেই আজ বিকালে অ্যাকসেপ্ট করেছে সেই কানাগলিটার ভিতরে দাঁড়িয়ে। এতরাতে সে কি পাঠিয়েছে? তাড়াতাড়ি খুলে দেখল, লেখা আছে, "এত রাতে জেগে আছেন?" মানে? একথার অর্থ কী? ও তাড়াতাড়ি লিখল, "তুমিও তো জেগে আছো?" উত্তর এল, "আমার কথা বাদ দাও। তুমি কেন জেগে আছো, সেটা বলো।" ন্যূনতম ভদ্রতাটাও জানে না। এদের যে কি হবে কে জানে। ততক্ষণে চোখ থেকে ঘুমের শেষ রেশটুকুও মুছে গেছে। বরের কথা ভুলে গিয়ে বিছানায় বাবু হয়ে বসল। তারপর টাইপ করল, "যদি বলি, তোমার সঙ্গেই কথা বলবো বলে, জেগে আছি, তাহলে কি করবে?" জবাব এলো, "বিশ্বাস করব না।" কোথাকার কোন খাঞ্জা খাঁ এলো রে, যেন ওকে বিশ্বাস করানোর দায় ওর। লিখল, "কেন বিশ্বাস করবে না?" ছেলেটা মহা চালিয়াৎ সেটা ওর উত্তরেই টের পাওয়া গেল, "তুমি আমার আগেই অ্যাকটিভ ছিলে। আমি পরে হয়েছি। তাই।" একে ল্যাজে খেলানো ছাড়া উপায় নেই। ও তাড়াতাড়ি লিখল, "আমি তোমার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম।" সঙ্গে সঙ্গে উত্তরও চলে এল, "তুমি জানতে, আমি এই সময় আসবো?" নিজেকে গোয়েন্দা ভাবছে। ভাবাচ্ছি। মনে মনে রাগটাকে ধরে রেখে টাইপ করল, "জানতাম বলব না। তবে মনে হয়েছিল। তোমাদের মত ছেলেরা রাত জেগেই থাকে।" এবার একটা মনের মতো উত্তর দেওয়া গেছে। "তুমি কি করছো?" ওর এককথাতেই সুর নরম গেছে। ও লিখল, "শুয়ে শুয়ে তোমার সাথে চ্যাট করছি। তুমি কি করছো?" উত্তর এল, "তোমার সাথে আড্ডা মারবার চেষ্টা করছি।" এতো দেখছি মহা ফাজিল ছেলে। একে সাবধানে ট্যাকল করতে হবে। না হলেই মুশকিল। ও লিখল, "তাহলে চলো। গল্প করা যাক। আগে তোমার বিষয়ে আমাকে কিছু বলো। তুমি কি করো। কোথায় থাকো। পড়াশোনা করো নাকি। ইত্যাদি।" কিন্তু এ একদমই অন্য ঘাঁটি। ছেলেটা লিখল, "আমার কথা পরে হবে। আগের তোমার সম্পর্কে কিছু বলো। তারপরে আমি বলবো।" আর বেশী কথা না বাড়িয়ে মনের মধ্যে মিথ্যেগুলোকে আরো একবার সাজিয়ে নিয়ে ধীরে সুস্থে ফোনের কিবোর্ডে টাইপ করতে লাগল ইন্দুমতি।
 
সুনির্মল – রাতের খাওয়া হয়ে গেলেই আর বসে থাকতে ইচ্ছা করে না। মনে হয় কখন গিয়ে বিছানায় শোবো। আবার সটান গিয়ে শুয়ে পড়লে চট করে ঘুম আসতে চায় না। তাই কিছুক্ষণ ফোন ঘেঁটে একটা বা আধটা সিগারেটে সুখটান দিয়ে তবে শুতে যায়। এই একটা সিগারেট হয় নিজের ইচ্ছেয় আর আধটা অবশ্যই রাইয়ের নির্দেশে। রাই ওর সিগারেট খাওয়া একদমই পছন্দ করে না। তাই বাধ্য হয়েই আগের থেকে অনেকটাই কমিয়ে দিয়েছে নিজের সুখটানের সংখ্যাটা। বাড়ির বাইরে থাকলে তবু দু-একটা খায়, কিন্তু বাড়িতে থাকলে সংখ্যা আক্ষরিক অর্থেই এক- আধটায় নেমে আসে। কারণ রাইয়ের খবরদারী সব সময় ভালো লাগে না ওর। কেমন যেন মাত্রাতিরিক্ত বলেই মনে হয়। এই যেমন আজকের সন্ধ্যের ঘটনাটার কথাই ধরা যাক। কোনো কারণই ছিল না এইরকম একটা সিন ক্রিয়েট করার। তবুও করল। ও ভেবেছিল আজকের রাতটা কিছু খাবে না। রাগ দেখিয়ে শুয়ে থাকবে। শেষপর্যন্ত অবশ্য তা পারেনি। খাবার বাড়ার পরে বার তিনেক ডাকার পরেও ও খেতে যায়নি, তখনই রাই বুঝতে পেরেছিল ও ভুল করেছে। তাই প্রথমে বাবানকে দিয়ে ডাকতে পাঠিয়েছিল। যখন সেই অস্ত্রেও কাজ হয়নি, তখন নিজে এসেছিল ওকে খেতে ডাকতে। প্রথমে মুখের উপরে মানা করে দিয়েছিল খাবে না বলে, কিন্তু রাই যখন বলল ও না খেলে, সে-ও খাবে না, সারারাত উপোস করে থাকবে তখন আর না গিয়ে উপায় থাকে না। খেয়ে দেয়ে এসে বিছানায় শুয়ে মোবাইলটা ঘাঁটতে শুরু করল। তারপর বাবানকে বকে ঘুম পাড়াল। আজকে আর সিগারেট খেতে ইচ্ছে করছে না। মাথাটা একটু ধরে আছে। বাবান একটু পরেই ঘুমিয়ে পড়ল। রাইয়ের কাজ সেরে শুতে আসতে এখনও অনেকটাই সময় বাকী। এই সময়টুকুকে কাজে লাগানোই যেতে পারে। বিছানায় আধশোয়া হয়ে একবার দরজার দিকে তাকালো। এখন আর বন্ধ করার উপায় নেই। তাহলেই রাইয়ের সন্দেহ হবে। আর তাহলেই মুশকিল। এখন হাজারটা প্রশ্নের মুখোমুখি হওয়ার একদমই ইচ্ছা নেই। দরজার দিকে ভালো করে তাকিয়ে দেখে নিল। রাই এখন আশেপাশে নেই। হয় কিচেনে হেঁশেলের কাজ গোছাচ্ছে। কিম্বা মায়ের ঘরে আছে। একপ্রকার নিশ্চিন্ত হয়ে মোবাইলের অ্যাপটাকে খুলল। প্রথমেই গেল অ্যাফ্রোডাইটের প্রোফাইলে। বর্তমানে সেটা ইনঅ্যাকটিভ। সেখান থেকে বেরিয়ে এসে গেল এইসেথের প্রোফাইলে। কিন্তু সেটাও ইনঅ্যাকটিভ দেখে মনটা একটু খারাপ হয়ে গেল। যদিও মন খারাপের আদৌ কোনো কারণ আছে বলে ওর নিজেরই মনে হল না। একটু আগে পর্যন্তও ও অ্যাফ্রোডাইটের সঙ্গে আড্ডা মেরেছে। এবং সে এটা বুঝছে মেয়েটা ওর সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে সবিশেষ আগ্রহী। যদিও কারণটা ও এখনও বুঝে উঠতে পারেনি। সেটা আশা করি দিন কয়েকের মধ্যে পেরে যাবে। কিন্তু একটা জিনিস পরিষ্কার মেয়েটা ওর সঙ্গে কথা বলে ইমপ্রেসড হয়ে গেছে। অবশ্য এর জন্য দায়ী তাপস। হ্যাঁ, এটা ঠিক যে তাপস ওর হয়ে কথা বলেনি ঠিকই, কিন্তু কতকটা তাপসেরই শেখানো বুলি ও আউড়ে গেছে। ফলও পেয়েছে হাতে হাতে। মেয়েটা কথা দিয়েছে ও আবার কাল রাত নটার সময় ওর সাথে কথা বলবে। ইনফ্যাক্ট প্রতিদিন রাতেই নটার পরে ওর সাথে আড্ডা দেবে। তাপসকে কি একবার ফোন করে থ্যাঙ্কস জানানো উচিত? সেটা কি এত রাতে ঠিক হবে? শালা, কি অবস্থায় আছে তার ঠিক নেই। তার চেয়ে বরং কাল অফিসে গিয়েই কথা হবে। তবে শালা, মাতাল হলেও তালে ঠিক আছে। বারবার ওকে বলে দিয়েছিল, "শোন গান্ডু, বিয়ে না করতে পারি, তবে মেয়েদের বিষয়ে তোকে একটা জ্ঞান দিই।"
  • "কি জ্ঞান?" রঙিন তরলে এক চুমুক।
  • "সেটা হল, মেয়েরা কখনই ওভার স্মার্ট ছেলেদের পছন্দ করে না।"
  • "ওভার স্মার্ট?!" আরেক চুমুক।
  • "হ্যাঁ। ঐ বাংলায় যাকে বলে পোঁদপাকা, বুঝেছিস?"
  • "বুঝেছি।"
  • "হ্যাঁ, মানে মেয়েরা আজকালকার ঐ পোঁদপাকা, ডেঁপো ছেলেদের একদম পছন্দ করে না।"
  • "তাহলে কেমন ছেলে পছন্দ করে?"
  • "এই আমার মতো লালুভুলু ছেলেদের।"
  • "তুই? আর লালুভুলু?" চুমুকে চুমুকে গ্লাসের তরল প্রায় শেষ।
  • "সেটাই তো বলছি। মন দিয়ে শোন না, গান্ডু। তোকে লালুভুলু হতে হবে, সেটা বলছি না। তোকে লালুভুলু সাজতে হবে।"
  • "মানে!?"
  • "জানতাম বুঝতে পারবি না। শোন মেয়েদের কাছে সবসময় লালুভুলু টাইপের সেজে থাকবি। আর পারলে মাঝে মাঝে সেন্টু দিবি। আবার সেন্টু বুঝিস তো?" তাপসের প্রশ্নের উত্তরে ও কেবল একবার ঘাড়টা নাড়ল। তাপস খুশী হয়ে আবার বলতে শুরু করল, "গুড। তারপর শোন। যখন কথা বলবি তখন বুঝেশুনে, মেপে কথা বলবি। যেন ওরা তোর আসল চেহারাটাকে বুঝতে না পারে।"
তাপসের কথা ও অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলেছে। কিন্তু প্রথমেই হোঁচট খেতে হয়েছিল ওকে। মেয়েটা বুদ্ধিমতি তাতে সন্দেহ নেই। ও ভুল করে অফিসের কথা বলে ফেলেছিল। টপ করে সেটা ধরে ফেলেছে। সামাল দিতে হাজারটা মিথ্যে কথা বলতে হয়েছে। তাতে বিশেষ আফসোস কিছু নেই। মেয়েটার সাথে বন্ধুত্ব তো হয়ে গেল। এবার থেকে শুধু ওর সঙ্গেই নয়, সবার সঙ্গেই এই অ্যাপে সাবধানে কথা বলতে হবে। তবে অ্যাফ্রোডাইটের বিষয়েও ও অনেক কিছু জানতে পেরেছে। তার বয়স ২৩ আর কলকাতায় থাকে সেটা তো ওর প্রোফাইল থেকেই জানতে পারা গেছিল। এছাড়াও আরো অনেক কিছুই জানতে পেরেছে। যেমন মেয়েটা কলেজে পড়ে। যদিও কলেজের নামটা বলেনি। বাড়িতে মা-বাবা আর ভাইয়ের সঙ্গে থাকে। ভাই স্কুলে পড়ে। ইত্যাদি আরো অনেক কিছুই। একবার ওর ইচ্ছা হয়েছিল বাড়ির ঠিকানাটা জানার, কিন্তু সাহসে কুলায় নি। প্রথম দিনেই বাড়ির ঠিকানাটা জানতে চাওয়াটা বোকামি হয়ে যেত। সেই ভেবেই আর চায় নি। যাই হোক যা যা ইনফরমেশন পাওয়া গেছে, তাতেই যথেষ্ট।



বিছানায় আধশোয়া হয়ে যখন ও ফোনে ওর আর অ্যাফ্রোডাইটের চ্যাটগুলো পড়ছিল, তখনই রাই ঘরে ঢুকল। ওকে ঘরে ঢুকতে দেখে চমকে গিয়েছিল ঠিকই কিন্তু মূহুর্তের মধ্যে নিজেকে সামলে নিল। রাইকে দেখে ফোনটা রেখে দিলেই সন্দেহ করতে পারে ভেবে ফোনটা হাতেই ধরে রাখল। সুখের থেকে শান্তি অনেক, অনেকটাই ভালো। সে যাই হোক। রাই কিন্তু অতশত লক্ষ্য করেনি। ও সোজা হাত-পা-গলা মুছে বসে পড়ল ড্রেসিং টেবিলের সামনে। এখন ও চুল আঁচড়াবে। তারপর শুতে আসবে। রাই এখন ওর দিকে পিঠ করে বসে আছে। সাহস একটু বাড়ল। অল্পক্ষণ অ্যাপটায় এদিক ওদিক ঘুরল। ঠিক এই সময় রাই কিছু একটা কথা বলল। ওর মন ওদিকে না থাকায় কথাটা ও শুনতে পেল না। রাই আবার আগের মতোই বলল, "কই গো, শুনছো, আমি কি বলছি?" এবারে কথাটা ওর কানে ঢুকল। কিন্তু ফোন থেকে চট করে চোখটা সরাতে পারল না। সেইভাবেই ও উত্তর দিল, "বলো, শুনছি।" ওর এই কথাতে রাই কেন যে এত রেগে গেল ও বুঝতে পারল না। রাই তৎক্ষণাই চুল আঁচড়ানো থামিয়ে দিয়ে পিছন ফিরে ওর দিকে তাকিয়ে একপ্রকার খেঁকিয়ে উঠে বলল, "না। তুমি শুনছো না। ফোনটা রাখবে? নাকি জানলা দিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দেবো ওটাকে?" এরপর আর বিপদ বাড়ায় কোন বোকা? ও-ও বাড়াল না। সুবোধ বালকের মত অ্যাপটা থেকে বেরিয়ে এসে ফোনটাকে বিছানায় রেখে দিয়ে রাইয়ের দিকে তাকিয়ে ভালো মানুযের মত গলা করে বলল, "বলো, কি বলছিলে?" রাই এবার খুশী হল। মুচকি হেসে আবার ওর দিকে পিছন ফিরে চুলে বিনুনি করতে শুরু করল। তারপর বলল, "বলছিলাম, তপতী আবার কনসিভ করছে।" কথাটা শুনে ও প্রথমে বুঝতে পারল না, রাই আসলে কার কথা বলছে। ও একটু ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞাসা করল, "কে?" রাই আগের মতই চুলে বিনুনি করতে করতেই জবাব দিল, "আরে তপতী। আমার বন্ধু। ঐ যে, কসবার ওদিকে থাকে।" হ্যাঁ, এইবার মনে পড়েছে। উফ্! আবার ঐ মহিলা! রাইয়ের একমাত্র বন্ধু। যেমন ন্যাকা, আর ঠিক তেমনই গায়েপড়া। দেখলেই গা জ্বলে যায়। সেকথা আবার রাইকে একদম বলা যাবে না। ঐ তপতী না কি, ও হচ্ছে রাইয়ের প্রাণের বন্ধু। বরের হাজারটা নিন্দে মুখ বুজে সহ্য করে নেবে, কিন্তু বন্ধুর আধখানা নিন্দেও সহ্য করবে না। উল্টে চারখানা কথা শুনিয়ে দেবে। তো, সে কনসিভ করছে, তাতে ওর কি? রাইয়ের সবেতেই আদিখ্যেতা। কিন্তু সেকথা ওকে বুঝতে দিলে চলবে না। তাহলেই অনিবার্য কুরুক্ষেত্র। স্বাভাবিক স্বরেই ও জিজ্ঞাসা করল, "যার বর ফাইনান্সে কাজ করে?" রাই ঘাড় নেড়ে কনফার্ম করে বলল, "হ্যাঁ গো।" কাজ নেই আর! মুখটা একটু বেঁকিয়ে ও আবার প্রশ্ন করল, "ওর একটা মেয়ে আছে না?" রাই আবার আগের মতই ঘাড় নেড়ে উত্তর দিল, "আছে তো। আমাদের বাবানের থেকে বছর খানেকের বড়ো।" এই কথাবার্তা আর ওর ভালো লাগছে না। ও বিছানায় শুতে শুতে বলল, "এত বছর পর আবার ইস্যু নিচ্ছে?" রাইয়ের এতক্ষণে চুল বাঁধা শেষ। এখন ও ঘাড়ে, গলায় পাউডার মাখছে। এত রাতে এত সাজার কি দরকার ও বুঝতে পারছে না। যাই হোক রাই আবার আগের মতই জবাব দিল, "তবে আর বলছি কি? আমিও তো ওকে একই কথা বললাম।" বিরক্তিকর কথাবার্তা! ও পাশ ফিরে শুয়ে পড়ল। এবার একটু ঘুমের নাটক করতেই হবে। তা নাহলে রাইয়ের হাত থেকে নিস্তার নেই। বকবক করে মাথা খারাপ করে দেবে। তাই কথাটা একপ্রকার শেষ করার জন্যই ও পাশ ফিরে শুয়ে পড়ে বলল, "বড়লোকেদের কথা ছাড়ো। ওরা দুটো কেন চারটে ইস্যুও নিতে পারে ইচ্ছে হলে।" কিন্তু বিধি বাম! এত সহজে রাই চুপ করার মেয়ে নয়। সাজাগোজা শেষ করে ঘরের বড়ো আলোটাকে নিভিয়ে দিয়ে নাইট ল্যাম্পটাকে জ্বেলে দিল। ও চোখ বন্ধ করে ঘুমের ভান করে শুয়ে রইল। কিন্তু কপাল আজ নেহাতই খারাপ। এত সহজে রেহাই দেবে না রাই। ওর পাশে এসে শুলো। অন্যদিন বাবানকে মাঝে দিয়ে নিজে অন্য ধারে শোয়। হাত ধরে টানলেও কাছে আসেনা। আজ আবার ন্যাকামো করে বাবানকে সরিয়ে দিয়ে নিজে ওর পাশে শুলো। তারপর মুখটাকে ওর কানের কাছে এনে ফিস ফিস করে বলল, "কি গো, ঘুমিয়ে পড়লে নাকি?" উফ্ কি জ্বালাতন! এখন একদম বকবক করার ইচ্ছে নেই। কিন্তু কথা না বলেও উপায় নেই। তাই ইচ্ছে করেই গলাটাকে একটু ঘুমের মত জড়িয়ে বলল, "না। বলো।" হঠাৎ করেই ও টের পেল রাই ওর পিঠে নিজের মুখটা ঘষছে। কি করতে চাইছে ও? তারপর বলল, "আমরাও একটা নেবে?" এইটাই ভয় পেয়েছিল ও। মেয়েছেলের বুদ্ধি আর কি হবে? চিরকাল পরের দেখে নেচে এসেছে। আজও তাই। ও আরও ঘুম জড়ানো গলা করে বলল, "কি?" এতেও শেষ নেই। রাই এবার ওর শরীরের উপরে উঠে এল প্রায়। অন্যদিন ওকে কত সাধ্যসাধনা করতে হয়। আর আজ দেখো? হঠাৎ নিজের কানের লতিতে একটা ভেজা ভেজা স্পর্শ টের পেল। রাই কি ওর কানের লতিটা চাটল? হবে হয়তো। কিন্তু না। ওর ফাঁদে একদম পা দেওয়া যাবে না। আগে জানলে ফেরার পথেই কিনে আনত। আজ বেশ সুযোগ। কিন্তু ঘরে একটাও স্টকে কন্ডোম নেই। রিস্ক নেওয়াটা বোকামি হয়ে যাবে। যখন রাই নিজে থেকে এতটা ডেসপারেট হয়ে আছে। "কি আবার! বলছি আরেকটা ইস্যু নেবে?" রাই আবার কানের কাছে মুখ নিয়ে এসে বলল। এবার আর এসব বাড়তে দেওয়া যায় না। ও হাত দিয়ে কানটাকে একবার মুছে নিয়ে বলল, "ঘুমিয়ে পড়ো, রাই। অনেক রাত হয়েছে।" কিন্তু সবই ওর কপাল। এত সহজে এসব থামার নয়। রাই এবার সরাসরি ওর বুকে হাত রাখল। আঙুল দিয়ে ওর বুকে দাগ কাটতে কাটতে বলল, "বলো না। নেবে আরেকটা ইস্যু?" আর নয়। এবার রাইকে থামাতেই হবে। তা নাহলে ও নিজেকে থামাতে পারবে না। আর রাই ঠিক এটাই চাইছে। কিন্তু ও কিছুতেই এটা হতে দেবে না। নিজের বুক থেকে রাইয়ের হাতটা ঠেলে সরিয়ে দিল ও। তারপর পাশবালিশটাকে শক্ত আঁকড়ে ধরে বলল, "আমার প্রচন্ড ঘুম পাচ্ছে। কাল সকালে আবার উঠতে হবে। এখন ঘুমাতে দাও।"



হঠাৎ করে কেন যে ঘুমটা ভেঙ্গে গেল প্রথমে ও বুঝতেই পারল না। কেনই বা ভাঙ্গল সেটাই শুরুতে বুঝতে পারল না। পাশ ফিরে দেখল বাবান অকাতরে ঘুমাচ্ছে। কিন্তু রাই কোথাও নেই। তাহলে কি বাথরুমে গেছে? হবে হয়তো। কি মনে হতে ফোনটা একবার হাতে নিল। অ্যাপটা ইন্সটল করার পর থেকেই কেমন যেন একটা নেশার মত হয়ে গেছে। লকস্ক্রিণে চোখ পড়তে দেখল দুটো বেজে তেত্রিশ। অনেকটাই রাত হয়ে গেছে। অ্যাপটা একবার খুলল। কি মনে হতে সোজা চলে গেল এইসেথের প্রোফাইলে। দেখল সে এখন অ্যাকটিভ আছে। কথা বলার লোভটা সামলাতে পারল না। চ্যাটে লিখে পাঠাল, "এত রাতেও ঘুমাও নি?" তড়িৎগতিতে জবাব এল, "আমি না ঘুমালে কার কি?" কথাটার মধ্যে কেমন যেন একটা অভিমানের গন্ধ পাওয়া গেল না। এমন মাছই তো ছিপে গাঁথা দরকার। ও তাড়াতাড়ি লিখল, "কারোর কিছুই না হতে পারে। কিন্তু তোমার নিজের তো অনেক কিছুই।"
  • "তুমি নিজেও তো এখনও ঘুমাওনি, আবার আমাকে জ্ঞান দিচ্ছো?" উফ্ কি মেয়ে রে বাবা! কি চ্যাটাং চ্যাটাং বুলি!
  • "জ্ঞান দিচ্ছি না, তোমার ভালো চাই, তাই বললাম।" নিজেকে গুড বয় প্রমাণ করার চেষ্টা করল।
  • "তুমি আমাকে চেনো?" সরাসরি এই প্রশ্নে হোঁচট খেল ও।
  • "না। তা চিনিনা।"
  • "তাহলে আমার সম্পর্কে ভাবতে তোমাকে কে বলেছে? আমার সম্পর্কে কাউকে কিচ্ছু ভাবতে হবে না। I am strong enough to fight alone." কথাতেই স্পষ্ট কিছু একটা হয়েছে।
  • "তুমি কি কিছু বিষয়ে ডিস্টার্বড?" প্রশ্নটা না করে ও পারল না।
  • "কেন বলোতো?" মেয়েটা উত্তর কিন্তু দিয়ে যাচ্ছে। ছাড়ছে না।
  • "না। তোমার কথা থেকে এমনটাই মনে হচ্ছে।" কয়েক মূহুর্তের নীরবতা। তারপর জবাব এল,
  • "হ্যাঁ। আমি একটু ডিস্টার্বড। But You don't need to bother about this at all."
মনে মনে একটু হলেও খুশীই হল ও। মেয়েটার কথা থেকেই পরিষ্কার কিছু একটা হয়েছে। এটাই সুযোগ। সিমপ্যাথি দেখিয়ে বন্ধুত্বটা পাতাতেই হবে। বাহ্যজ্ঞান ভুলে গিয়ে ফোনের স্ক্রিণের উপরে ঝুঁকে পড়ে টাইপ করতে লাগল সুনির্মল।
 
গল্প কোন ক্যাটাগরি জানালে পাঠকদের আগ্রহ আরও বেড়ে যেত আশা করি। রোমান্টিক,এডাল্টারি,কাকওল্ড নাকি ইনসেস্ট?
 
গল্প কোন ক্যাটাগরি জানালে পাঠকদের আগ্রহ আরও বেড়ে যেত আশা করি। রোমান্টিক,এডাল্টারি,কাকওল্ড নাকি ইনসেস্ট?
এটা Adultry ক্যাটেগরির গল্প। কিভাবে জানাবো সেটা যদি বলে দেন ভালো হয়।
 
আয়ুষী – প্রচন্ড জোরে খিদে পাচ্ছে। খিদের চোটে মাথাটা পর্যন্ত ধরে আছে। সেটাও কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। ও বুঝতে পারছে না, এই মূহুর্তে ওর ঠিক কি করা উচিত। সন্ধ্যে থেকে তিন্নিকে বার বার ট্রাই করে যাচ্ছে তার ফোনে। কিন্তু বারবার সুইচড অফ আসছে। শেষ পর্যন্ত হাল ছেড়ে দিয়েছিল ও। কিন্তু শেষবার আরো একটা ট্রাই করে দেখলে হতো না? ফোনটা হাতে নিয়েও সেটাকে রেখে দিতে বাধ্য হল ও। ভুলেই গিয়েছিল চার্জ শেষ হয়ে গিয়ে ওর নিজের ফোনটাই সুইচড অফ হয়ে গিয়েছে। বিছানা থেকে উঠে গিয়ে ফোনটাকে চার্জে বসাল। তারপর আবার ফিরে এসে বসল বিছানায়। খিদেটা এবার সত্যিসত্যিই মাত্রাছাড়া মনে হচ্ছে। না খেলেই নয়। অনিচ্ছা সত্তেও বিছানা থেকে আরো একবার উঠে গিয়ে রুমের বাইরে গেল। ডাইনিং টেবিলে ওর খাবার ঢাকা আছে অন্যান্য দিনের মতই। চুপচাপ গিয়ে বসল। তারপর একটার পর একটা ঢাকা খুলে খাবার খেতে শুরু করল। খেতে ইচ্ছে করছে না যদিও, তবুও জোর করে খাচ্ছে। খাবারগুলো যেন ওর গলার মধ্যে দলা পাকিয়ে যাচ্ছে। কষ্ট করে গিলতে হচ্ছে খাবারগুলোকে। তবুও ও কিন্তু খাওয়া থামাল না। খেতে খেতে ওর মনে পড়ে যাচ্ছিল এক একটা ঘটনা।

গঙ্গার ঘাটের সেদিনের সেই ঘটনার পরে কেটে গেছে বেশ কিছুটা সময়। ওরা দুজনেই একই কলেজে ভর্তি হয়েছে। সেদিনের সেই ঘটনা নিয়ে ওর কেউ কোনো কথা বলেনি। তিন্নির মত ছটফটে একটা মেয়েও এই ঘটনাটাকে যেন বেমালুম ভুলে গিয়েছিল। সেদিনের পর থেকে ওর কিন্তু আর ঘনিষ্ঠ হয়নি। বা বলা ভাল ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুযোগ পায়নি। এই ভাবেই টুকটুক করে কেটে যাচ্ছিল ওদের দিনগুলো। পড়াশোনা, কলেজ, টিউশনি, গান, প্রোগাম, খুনসুটি, আনন্দ সব কিছুই চলছিল পূর্ণগতিতে। সেইদিনটার কথা ওর আজও পরিষ্কার মনে আছে। দিনটা ছিল দোলের দিন। ও ছোটোবেলা থেকেই দোল খেলতে যেত তিন্নিদের বাড়িতেই। ছোটোবেলায় কেবল ওরা দুজনেই খেলত। পরে অন্যান্য বন্ধুরাও জড়ো হত এক এক করে। এখন ওদের ব্যান্ডের অন্য বন্ধুরাও যোগ দেয় ওদের সাথে। সারাদিন রঙ খেলা, চুটিয়ে আনন্দ, এর ওর পিছনে লাগা, খাওয়া, আড্ডা, ঘুম সবই হয়। সেবারেও দোলের দিন সকাল সকাল ও তিন্নিদের বাড়ি পৌঁছে গিয়েছি। তারপর এক এক করে অন্যান্য বন্ধুরাও হাজির হল তিন্নিদের বাড়িতে। শুরু হল রঙ খেলা। এরকম আনন্দ আর উচ্ছাস এর আগে কোনো দিন হয়নি। সব কিছুই ঠিক মত চলছিল। বাধ সাধল একটা জায়গায়। তিন্নির দাদা তমাল ওদের সবার জন্য লুকিয়ে নিয়ে এল ভাং-এর সরবত। এই জিনিলটির কথা ও আগেই শুনেছিল। তাই ও প্রথমে খেতে রাজী হয়নি। কিন্তু বন্ধুরা সবাই যখন জোর করল তখন না বলে আর থাকতে পারল না। তার উপরে তিন্নি সরবত ভরা গ্লাসটা প্রায় ওর ঠোঁটের কাছে ধরে বলল, "খা না, একগ্লাসে কিস্যু হবে না। এই দ্যাখ, আমি খাচ্ছি।" বলে তিন্নি নিজের গ্লাসটায় চুমুক দিল। ওর দেখাদেখি এবং বাকীদের জোরাজুরিতে ওকেও গ্লাসের ঠান্ডা সরবতে চুমুক দিতে হল। প্রথম প্রথম খেতে বেশ ভালোই লাগছিল। কিন্তু মুশকিল হল খাওয়ার একটু পর থেকেই। মাথাটা প্রথমে জোরে জোরে ঘুরতে শুরু করল। গাটা প্রচন্ড গোলাতে আরম্ভ করে দিল। মনে হতে লাগল পেটের নাড়িভুঁড়িগুলো সবশুদ্ধ যেন পাক খাচ্ছে। ও আর নিজেকে সামলাতে পারল না। হড় হড় করে বমি করে দিল। পেট থেকে সবটা বেরিয়ে যাওয়ার পরেও শরীরটা কেমন যেন আনচান করতে লাগল। ততক্ষণে ওকে নিয়ে হুলস্থূল পড়ে গেছে। তিন্নি ওর চোখে মুখে ঘাড়ে জল ঢালছে। বাকী বন্ধুরা ওকে সামলাতে ব্যস্ত। অবশেষে তিন্নি একাই ওকে সামলাল। ধরে ধরে নিজের ঘরে নিয়ে গিয়ে ওরই বিছানায় শুইয়ে দিল। তিন্নি যখন চলে আসছে ও তখন খপ করে ওর হাতটা ধরে জড়ানো গলায় বলেছিল, "আমায় একা ছেড়ে যাস না, তিন্নি।" তিন্নিও পাল্টা ওর হাতটা শক্ত করে ধরে বলেছিল, "আমি এখানেই আছি। তোর কাছে। আমি কোত্থাও যাচ্ছি না।" তিন্নির কথাটা শুনে ও পরম শান্তিতে চোখ বুজেছিল।

চোখ যখন খুলল, তখন বেলা গড়িয়ে বিকেল। মাথাটা ভারী হয়ে আছে এখনও। প্রথমে বুঝতে পারেনি, ও এখন ঠিক কোথায়। বিছানার উপরে বসে কপালের দুপাশে রগটাকে দু আঙুলে করে শক্ত করে ধরল। মাথাটা একবার টনটন করে উঠল। ঘরের চারপাশে চোখ বুলিয়ে বুঝতে পারল না, এটা কোথায়। ঠিক তখনই ওর পিছন থেকে দরজা খোলার শব্দ হল আর তারপরেই শোনা গেল, "তাহলে ঘুম ভাঙ্গল মহারাণীর?" তিন্নির গলা শুনতে পেয়ে ও পিছন ফিরে তাকাল। সত্যি করেই তিন্নি ঘরে ঢুকছে। হাতে একটা চাপা দেওয়া বড় বাটির মত কিছু একটা। সেটাকে টেবিলের উপরে রেখে ওর পাশে এসে বসল তিন্নি। তারপর মুচকি হেসে ওকে বলল, "উফ্ খেল দেখালি বটে, একটা। পেন্নাম করি তোকে। আর যদি কখনও তোর সাথে দোল খেলি। হাড়ে হাড়ে শিক্ষা হল একটা।" দোলের কথা বলতেই এক এক করে সব কথাই মনে পড়ে গেল ওর। লজ্জাও লাগল একটু। ওর জন্য বন্ধুদের, বিশেষ করে তিন্নির দোলের আনন্দটা মাটি হয়ে গেছে, এটা ভেবেই ওর মনে লজ্জা হল একটু হলেও। কিন্তু এতে ওর তো কিছু করার নেই। খসখসে গলায় বলল, "কটা বাজে রে এখন?"
  • "দেড়টা বাজতে যাচ্ছে।" তিন্নি উত্তর দিল।​
  • "তোর চান হয়ে গেছে?" জিজ্ঞাসা করল।​
  • "কখন। তোর ওরকম হওয়ার পরেই বাবা জানতে পেরে ছুটে এল। তারপর দাদাকে কি বকুনিটাই না দিল। তে দেখে বাকীরাও সব সুড় সুড় করে কেটে পড়ল। আমি আর কি করি, চান সেরে খেয়ে নিলাম।" একটানা বক বক করে থামল তিন্নি। তারপর অল্প একটু নিঃশ্বাস নিয়ে আবার বলতে শুরু করল, "মা তোর জন্য একটু স্টু করে দিয়েছে। পাঁউরুটি দিয়ে খেয়ে নে। তার আগে চান করে নে।"​
  • "ভাল লাগছে না।" বলে আরো একবার বিছানায় গা এলিয়ে দিল ও।​
  • "ভাল লাগছে না মানে? চানটা করে নে, দেখবি ফ্রেশ লাগবে। গায়ে আবীর লেগে রয়েছে। চান করে নে। তারপর স্টু টা খেয়ে নে।" তিন্নি একটানে বলল।​
  • "তোর কাছে সিগারেট হবে?" বালিশে মাথা রেখে জানালার বাইরে চোখ রেখে বলল ও।​
  • "কি?!" তিন্নি এমন চোখ গোল গোল করে ওর দিকে তাকাল যেন ও সিগারেট নয়, বিষ চাইছে।​
  • "সিগারেট। আছে?" শান্ত কণ্ঠে জিজ্ঞাসা করল ও।​
  • "না নেই। তুই এখন ওঠ তো। চানটা করে নে। স্টু টা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।" তিন্নি অযথাই তাড়া লাগাল।​
  • "নীচে থেকে তোর বাবার প্যাকেট থেকে একটা নিয়ে আয়। দেশলাইটা আনতে ভুলিস না যেন।" তিন্নির দিকে পাশ ফিরে আলস্য জড়ানো গলায় বলল ও।​
  • "এঃ কেমন রাণীর মত অর্ডার করছে দেখো। আমি পারবেো না। বাবা জানতে পারলে চাবকে আমার পিঠের ছাল তুলে দেবে।" তিন্নি গাল ফুলিয়ে বলল।​
  • "দেরী করিস না। তাড়াতাড়ি যা।" এবার ও পাল্টা তাড়া লাগাল।​
তিন্নি গজগজ করতে লাগল। কিন্তু ঠিক উঠে নিচে চলে গেল। ও জানত তিন্নির ওর কোনো কথাই ফেলতে পারে না। একটু পরেই আবার ফিরে এল ও। ঘরে ঢুকেই আগে দরজাটা বন্ধ করে দিল। তারপর ওর দিকে সিগারেট আর দেশলাইয়ের প্যাকেটটা ছুঁড়ে দিয়ে বলল, "তাড়াতাড়ি এসব করে চান টা করগে যা। তোর পায়ে পড়ি।" ও কিন্তু তাড়া দেখাল না। বরং উল্টে ধীরে সুস্থে বিছানায় উঠে বসে সিগারেটটা ধরাল। তারপর একরাশ ধোঁয়া ছেড়ে তিন্নির দিকে তাকিয়ে বলল, "টানবি?" তিন্নি মুখ ঘুরিয়ে বলল, "আমি তো আর তোর মত খেপে যাইনি।" ও উত্তরে কিছু বলল না। নীরবে সিগারেটটা টানতে লাগল। তারপর একসময় সেটাকে শেষ করে জানালা দিয়ে বাইরে ছুঁড়ে ফেলে দিল। তিন্নি এবারে বলল, "হয়েছে? এবার দয়া করে চানটা করে নে।" ও এবারও কোনো উত্তর দিল না। কেবল ওর দিকে তাকিয়ে রইল। তিন্নি অস্থির হয়ে বলল, "কি?!" উত্তরে ও তিন্নির একটা হাত ধরে নিজের দিকে টানল। তিন্নির পাতলা শরীরটা অনায়াসে ওর উপরে এসে পড়ল। আর কোনো ভণিতা না করেই, সরাসরি নিজের ঠোঁটদুটোকে মিশিয়ে দিল তিন্নির নরম ঠোঁটদুটোর সাথে। তিন্নি যে খুব একটা বাধা দিল, সেটা অবশ্য বলা যায় না। বরং দুটো শরীর অনায়াসে একে অন্যের সাথে মিশে গেল।



খাওয়া শেষ করে হাত মুখ ধুয়ে আবার নিজের ঘরে ফিরে এল। মনটা এখনও শান্ত না হলেও, খাওয়া হতেই শরীরটা কিন্তু অনেকটাই শান্ত হয়ে গেছে। চার্জ থেকে ফোনটা খুলে নিয়ে আরো একবার তিন্নির নাম্বারটা ডায়াল করল। কিন্তু না। এখনও সেটা সুইচড্ অফই বলে যাচ্ছে। এমনও হতে পারে, ওর নাম্বারটা ব্লক করে দিয়েছে। সম্ভাবনা অনেক। কিন্তু বাস্তব কোনটা সেটা ও এই মূহুর্তে বুঝতে পারল না। মনটা আগের মতই খারাপ রইল। অনেক রাত হয়েছে। এবার একটু বিশ্রাম নেওয়া উচিত। শরীরটা খুবই ক্লান্ত লাগছে। ফোনটাকে রেখে দিতে গিয়েও পারল না। কিছু একটা মনে করে সোজা অ্যাপটায় লগইন করল। রাত্রি আড়াইটে পেরিয়ে গেছে। এইসময় কারোর সাথে গল্প করার মানসিকতা ওর নেই। কেবলই একবার কৌতুহলবশত অ্যাপটায় ঢুকল। আর ঠিক তখনই হঠাৎ করে একটা মেসেজ ওর অ্যাপে ঢুকল। কিছুটা অনিচ্ছা আর বাকীটা বিরক্তি নিয়েই চ্যাটটা খুলল ও। দেখল কিউপিড ওকে একটা মেসেজ পাঠিয়েছে। খুলে দেখল লেখা রয়েছে, "এত রাতেও ঘুমাও নি?" অতি সাধারণ একটা প্রশ্ন। কিন্তু ওর মনে হল এই কিউপিড কি ওকে স্টক করছে? হতেও পারে। এই ওঁচাটে ছেলেগুলোর আর কাজই বা কি আছে। এত রাতেও শান্তি নেই। মেয়ে দেখলেই গায়ে পড়ে কথা বলতে ছাড়ে না। এখন ওর উত্তর দেওয়ার একদমই ইচ্ছা ছিল না। তা সত্তেও ও লিখল, "আমি না ঘুমালে কার কি?" কথাটা কেন লিখল ও নিজেও জানে না। তিন্নির সঙ্গে আজকের এই ঘটনাটা ঘটার কারণে কি ও একটু বেশীই ইমোশনাল হয়ে পড়েছে? এই কথাটাই ও চিন্তা করছিল। কিন্তু আরো একটা মেসেজ এসে ওর চিন্তার জালটাকে শতচ্ছিন্ন করে দিল। আনমনা হয়েই ও দেখল লেখা রয়েছে, "কারোর কিছুই না হতে পারে। কিন্তু তোমার নিজের তো অনেক কিছুই।" আজ দেখছি সবাই ওকে জ্ঞান দিতে উঠে পড়ে লেগেছে। সবাই কি ওকে এতটাই অ্যাভয়েলেবল ভেবে নিয়েছে? মাথাটা চট করেই গরম হয়ে গেল। এর উত্তর না দিতে পারলে শান্তি পাবে না ও। কড়া করে উত্তরটা লিখে পাঠাল, "তুমি নিজেও তো এখনও ঘুমাওনি, আবার আমাকে জ্ঞান দিচ্ছো?" ও ভেবেছিল এতেই কাজ হবে। কিন্তু না। হল না। ছেলেটা আবারও একটা মেসেজ পাঠিয়েছে। "জ্ঞান দিচ্ছি না, তোমার ভালো চাই, তাই বললাম।" পড়েই গোটা গা জ্বলে গেল! ভালো চাই! সবাই ওর ভালো চায়। কিন্তু একজন ছাড়া। মাথাটা আবারও টিপটিপ করে ব্যথা হতে শুরু করেছে। রগদুটোকে আরো একবার শক্ত করে টিপে ধরেও শান্তি পেল না। তাড়াতাড়ি টাইপ করল, "তুমি আমাকে চেনো?" প্রায় সাথেসাথেই উত্তর এল, "না। তা চিনিনা।" ঝড়ের গতিতে টাইপ করল, "তাহলে আমার সম্পর্কে ভাবতে তোমাকে কে বলেছে? আমার সম্পর্কে কাউকে কিচ্ছু ভাবতে হবে না। I am strong enough to fight alone." নিজের মনের বিষবাষ্পটাকে মেসেজে লিখতে পেরে ভালো লাগল একটু হলেও। কিন্তু কপাল এতটাও ভালো নয় ওর। এ ছেলে পিছু ছাড়ার নয়। এতকিছু লেখার পড়েও হার মানেনি। উল্টে লিখে পাঠিয়েছে, "তুমি কি কিছু বিষয়ে ডিস্টার্বড?" লেখাটা পড়ে এক মূহুর্তের জন্য হলেও থমকাল ও। সে কি করে বুঝতে পারল ও ডিস্টার্বড? "কেন বলোতো?" সামান্য হলেও ভণিতা করে ও লিখল। উল্টো দিক থেকে জবাব এল, "না। তোমার কথা থেকে এমনটাই মনে হচ্ছে।" ও আর পারল না। শরীর আর মন দুটোই একইসাথে জবাব দিয়ে দিল। শ্রান্ত আঙুলে ও লিখল, "হ্যাঁ। আমি একটু ডিস্টার্বড। But You don't need to bother about this at all." ছেলেটা লিখে পাঠাল, "দেখো, তুমি আমাকে চেনোনা। আমিও তোমাকে চিনিনা। তবুও যদি তুমি আমাকে তোমার বন্ধু বলে মনে করো, তাহলে খুলে বলতে পারো।" লেখাটা পড়ে এক মূহুর্তের জন্য মনটা এলোমেলো হয়ে গেল। আজ পর্যন্ত কোনো ছেলেকেই ও বিশ্বাস করেনি। বন্ধুত্বও করেনি মন থেকে। তিন্নিকেই ও নিজের একমাত্র বন্ধু বলে মেনে এসেছে এতদিন। ভালবেসে এসেছে মন থেকেই। জানে না এটা ভালো, নাকি খারাপ। পাপ, নাকি পূণ্য? কিন্তু এই ছেলেটার সঙ্গে কথা বলে মনে হচ্ছে একে বিশ্বাস করা গেলেও যেতে পারে। ইচ্ছে করছে এর কাছে সব কিছু খুলে বলতে। কিন্তু বাধ সাধছে ওর মন। ওর শরীর। ওর চিন্তা। আর পারল না। হাল ছেড়ে দিল ও। ক্লান্ত আঙু্লে টাইপ করল ও, "আজ থাক। অন্য একদিন বলবো। সব খুলে বলবো তোমায়। তবে আজ নয়। খুব ক্লান্ত লাগছে। বাই।" প্রায় সাথে সাথেই উত্তর এল, "বাই। গুড নাইট।" উত্তরটাকে ইগনোর করে আয়ুষী বেরিয়ে এল অ্যাপটা থেকে। ফোনটাকে সুইচড অফ করে অনাদরে ছুঁড়ে ফেলে দিল বিছানার একপাশে। তারপর ক্লান্ত শরীরটাকে এলিয়ে দিল বিছানার উপরে। শারীরিক আর মানসিক ক্লান্তি চোখদুটো বুজে এল নিজে থেকেই। অবশেষে আরো একটা অভিশপ্ত, ক্লান্তিকর আর একঘেয়ে দিনের পরিসমাপ্তী ঘটল এভাবেই। নীরবে। নিশ্চুপে। অনাদরে। অপমানে। অভিমানে।

~ অত্র তৃতীয়োৎধ্যায়ঃ সমাপ্তঃ ~
 

Users who are viewing this thread

Back
Top