গ্লুটেন নামটি যেন একটা নেতিবাচক শব্দে পরিণত হয়েছে। অনেকে আবার খাবারে ‘গ্লুটেন’ আছে শুনলেই আঁতকে ওঠেন। দিন দিন জনপ্রিয়তা পাচ্ছে গ্লুটেনমুক্ত খাবার। যে খাবারগুলোতে প্রাকৃতিকভাবে গ্লুটেন থাকে, সেগুলোও গ্লুটেনমুক্ত করে কিনতে পাওয়া যাচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে, গ্লুটেনে কী এমন সমস্যা?
গ্লুটেনের সঙ্গে অ্যালার্জির যোগসাজেশ আছে বলে শোনা যায়। কার যে কিসে অ্যালার্জি আর সেই অ্যালার্জির কী রূপ, অ্যালার্জি হলে কী হয়, সেসব জানাও এক বিরাট মুশকিল। অনেকেরই আবার গ্লুটেনে অ্যালার্জি। কিন্তু তিনি জানেনই না গ্লুটেন কী। তাই দিনের পর দিন সঙ্গী হয়ে থাকে অ্যালার্জি। এ রকম উদাহরণ আছে বড় বড় তারকার বেলায়ও। জেনে নেওয়া যাক গ্লুটেন আর গ্লুটেনের অ্যালার্জি সম্পর্কে।
ময়দামুক্ত জীবন যাপন করেন জাস্টিন বিবার
গ্লুটেনে অ্যালার্জি জাস্টিন বিবারের, ছবি: ইনস্টগ্রাম হ্যান্ডল
গ্লুটেন মূলত একধরনের জটিল প্রোটিন। এর কাগুজে নাম প্রোলামিন। গম, রাই, বার্লিতে থাকে। গ্লুটেন একধরনের আঠালো পদার্থ, যা খাবারটিকে বেক করার সময় ফুলে উঠতে সাহায্য করে। মূলত রুটি, পাউরুটি, পাস্তা, কেক, চিপস, সস, বিয়ার—এসব খাবার ও পানীয়ে গ্লুটেন থাকে। গ্লুটেনমুক্ত খাবারের তালিকায় রয়েছে তাজা ফল, সবজি, ডিম, মাংস, মাছ ও দুগ্ধজাত দ্রব্য। কানাডীয় সংগীততারকা জাস্টিন বিবার ২০১৯ সালের অক্টোবরে ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করেন, তাঁর নাকি গ্লুটেনে অ্যালার্জি। তাই তিনি বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডায় হোক কিংবা রেস্তোরাঁয় খেতে গিয়ে নতুন রেসিপি চেখে দেখার আগে খুব সতর্ক থাকেন। যে খাবারে আটা–ময়দা থাকে, সেটি সবার আগে চোখের সামনে থেকে সরিয়ে রাখেন।
মাইলি সাইরাসের কাছে গ্লুটেন আর বিষ্ঠা একই
মাইলিরও আছে গ্লুটেন অ্যালার্জি, ছবি: ইনস্টগ্রাম হ্যান্ডল
মার্কিন গায়িকা মাইলি সাইরাস হঠাৎ ওজন হারালেন। আর সেই ওজন হারানোর কারণ অ্যালার্জি। আর সেই অ্যালার্জির কারণ গ্লুটেন আর ল্যাকটোজ। মাইলির ভাষায়, ‘ওজন কমে যাওয়াটা কোনো সমস্যা না। কিন্তু শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে যাওয়া, ওজন হারানোর ফলে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা হারানো, এগুলো আরও নতুন নতুন সমস্যা তৈরি করেছিল। এক, অ্যালার্জি শরীরটা খেয়ে ফেলছিল। অনেক পরে গিয়ে ডাক্তার ধরতে পারলেন এটা একটা বিশেষ ধরনের অ্যালার্জি। যেটা গ্লুটেন আর ল্যাকটোজে হয়। এখন তো গ্লুটেন আর বিষ্ঠা আমার কাছে একই। সবার উচিত এক সপ্তাহ গ্লুটেন না খেয়ে শরীরের ভেতরের, চামড়ার ও মনের পরিবর্তন লক্ষ করা। আমি নিশ্চিত, সে রকম একটি এক সপ্তাহ পার করলে আপনি আর কখনোই গ্লুটেন খাবেন না।’
গ্লুটেন ভালো, গ্লুটেন মন্দ
তারকারা বা মডেলরা গ্লুটেন শুনলেই নাক সিঁটকান। গ্লুটেন ছাড়া তাঁরা নাকি খুবই ফিট থাকেন। তবে যেসব খাবারে গ্লুটেন থাকে, সেসব খাবারে প্রয়োজনীয় নানা পুষ্টিও থাকে। তাই যাঁদের সিলিয়াক রোগ নেই বা গ্লুটেনে অ্যালার্জি নেই, তাঁদের গ্লুটেন–জাতীয় খাবার না ছাড়াই ভালো। কেননা, তারকারা পুষ্টিবিদের পরামর্শ অনুযায়ী গ্লুটেনযুক্ত খাবারের পুষ্টি অন্যকিছু দিয়ে পূরণ করে নেবেন। সাধারণ মানুষ যদি কেবল তাঁদের দেখে গ্লুটেন ছাড়ে, তাহলে পুষ্টির অভাবে নানা জটিলতা হতে পারে। মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. আ ফ ম হেলালউদ্দিন জানান, গ্লুটেন আসলেই কোনো ব্যক্তির শরীরে ক্ষতি করছে কি না, সেটা জানা জরুরি। অনেকের শিশুকাল থেকেই গ্লুটেন সেনসিটিভিটিও দেখা যায়। তখন রুটি ও গমের তৈরি খাবার এড়িয়ে চলতে হয়। বিশেষ অসুবিধা ছাড়া গ্লুটেনযুক্ত খাবার বন্ধ করার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া ভালো।
যাঁদের সিলিয়াক রোগ আছে, গ্লুটেনযুক্ত খাবারে তাঁদের ক্ষুদ্রান্ত্রের আস্তরণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে খাবার থেকে পুষ্টি পাওয়া যায় না। আবার হজমে অসুবিধা হয়। এটি একধরনের অটো ইমিউনঘটিত অসুস্থতা। গ্লুটেনে অনেকের অ্যালার্জি না থাকলেও গ্লুটেনে সংবেদনশীলতা থাকে। পেটের তলদেশে ব্যথা, ডায়রিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য, সাময়িক চুলকানি, মাথাব্যথা ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়।
গ্লুটেনফ্রি অপশনগুলো কী?
গ্লুটেনফ্রি খাবারগুলোও আমাদের খাদ্যতালিকাতেই আছে। যেমন ধরুন, চাল, ভুট্টার আটা দিয়ে তৈরি রুটি বা চা–পাতিজাতীয় জিনিসও খাওয়া যায়। বিস্কুটের বদলে চিড়া, মুড়ি, কর্নফ্লেক্স খেতে পারেন। ইদানীং গ্লুটেনফ্রি পাউরুটিও মেলে।