একবার বিছানা থেকে উঠে আয়নার সামনে দাড়িয়ে নিজেকে দেখলাম ভালো করে, খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে। জেরিন যা বললো, তা কি সত্যি? আসলেই কি আমার রুপ যৌবন কি অন্য রকম পর্যায়ের নাকি আর দশটা সাধারন মেয়ের মতই। নিজেকে নিজে যাচাই করে সেটা তেমন বুঝতে পারলাম না। মনে হলো যে, জেরিনের চেয়ে আমি হয়তো আরও বেশি ফর্সা, অনেক লম্বা, আমার বুক দুটি জেরিনের চেয়ে ও কিছু বড়, কিন্তু তার মানে এমন না যে, আমি একেবারে বিশ্বসুন্দরী। বিয়ের সময় সুমনের পাশে আমাকে দেখে অনেকে চুপিসারে মন্তব্য করেছে যে সুমনের সাথে আমাকে মানাচ্ছে না, সেটা হয়তো সুমন লম্বায় আমার চেয়ে কিছুটা ছোট বলেই মন্তব্য করেছে, কিন্তু আমি নিজে কোনদিন আমার রুপ, শরীর, আমার এই দিরঘাঙ্গি গঠন নিয়ে কোনদিন গর্ব করি নাই, আর মানুষের মুল্যায়ন আমি সব সময় মনকে দিয়েই করি, কার মন কেমন, কোনদিন মানুষের শারীরিক গঠনকে খাটো করা বা ওটাকেই উচুতে তুলে ধরাকে আমার বেশ নিচু শ্রেণীর কাজ বলে মনে হতো। তাই আমার শারীরিক সৌন্দর্যকে আমি কোনদিন খুব উচু নজরে দেখি নাই। আমার মনে হলো জেরিন হয়ত আমাকে ব্যবহার করার জন্যেই আমার রুপ সম্পর্কে এভাবে বাড়িয়ে বলছে, যেন ওর এই ঘৃণ্য নোংরা খেলার সাহায্যকারী করে নিতে পারে আমাকে।
রাতে বিছানাতে এসে আমি প্রথম আমার স্বামীকে জিজ্ঞেস করলাম, "আচ্ছা, সুমন, আমাকে একটা সত্যি কথা বোলোতো, আমি কি দেখতে অসাধারণ সুন্দর নাকি শুধু মাত্র চলনসই টাইপের?"
"আজ হঠাত এটা জানতে চাইলে যে?"
"আসলে আজ একজনে আমার রুপের খুব প্রশংসা করলো, তাই আমার মনে হলো, যে তোমার মুখ থেকেই শুনি, যদি ও তুমি কোনদিন আমাকে বোলো নাই আমার রুপ সম্পর্কে, তাই জানতে চাইছি, তুমি একদম সত্যি কথাই বলো, আমি মাইন্ড করবো না..."
সুমন নড়েচড়ে বসলো, কি বলবে তা বোধহয় গুছিয়ে নিচ্ছে, এর পরে বললো, "তুমি আসলেই এক অসাধারণ সুন্দরী নারী। আমি কোনদিন ও তোমার মত কোন নারীকে পাবো, এটা স্বপ্নে ও ভাবি নি। তোমার শরীরের প্রতিটি অংশই অতুলনীয়। আমাদের বংশের কারোর তো দুরের কথা, আমাদের এই পুরো শহরে ও তোমার শরীরের সাথে তুলনা করা যায়, এমন কোন মেয়ে নেই...যে তোমার রুপের প্রশংসা করেছে, সে সত্যি বলেছে, কিন্তু কে বলেছে, সেটা কি জানতে পারি?"
"পারো, সে হচ্ছে তোমার বোন..."-আমি হেসে বললাম।
"এখন মন দিয়ে শুন, আরও একটা কথা আছে, খুব কঠিন কথা, শুনেই তোমার মাথা ঘুরতে পারে, তাই মন দিয়ে শুন, আর অযথা উত্তেজিত হইয়ো না..."-আমি আবার নাটক করে বললাম।
"বলো, শুনছি..."-সুমন আমার চোখের দিকে তাকালো।
"জেরিন একটা লোকের সাথে প্রেম করে, তুমি হয়তি চিনবে, জয় সিং, জমিদার প্রতাপ সিং এর ছেলে...প্রেম পর্যন্ত তো ঠিকছিলো, কিন্তু এখন জেরিন প্রেগন্যান্ট আর ওই জয় সিং লোকটা তোমার বোনকে বিয়ে করতে চাইছে না, আর তোমার বোন ও বাচ্চা নষ্ট করবে না, এবং তাকেই বিয়ে করবে বলে জিদ ধরে আছে...এখন বলো কি করা উচিত আমাদের? বাবা মা কে জানাবো এসব কথা?"-আমি ধীরে ধীরে ঠাণ্ডা গলায় বললাম কথাগুলি। সুমনের চোখে মুখে ভয়ের স্পষ্ট ছাপ দেখতে পেলাম, এমন পরিস্থিতিতে কি করা উচিত এটার কোন ধারনাই নেই ওর, তাই ওর অবস্থা অনেকটা দিশেহারা লোকের মতই লাগলো আমার কাছে।
অনেকক্ষণ মাথায় হাত দিয়ে বসে রইলো সুমন, কিছু না বলে, এর পরে বললো, "জেরিন তা একদম ছোট বেলা থেকে এমন একগুয়ে, উড়নচণ্ডী, ওকে বাবা মা ও কোনদিন শাসন করে নাই, কিন্তু এখন সে যে কাণ্ড করেছে, কি বলবো আমি ওকে? জয় সিং কে আমি চিনি, সে খুব ক্ষমতাবান, আর জেদি টাইপের, সে যদি জেরিনকে বিয়ে করতে না চায়, তাহলে ওকে রাজি করানো আমার পক্ষে সম্ভব না...বাবা মা জেরিনের এসব কথা জানলে খুব কষ্ট পাবে। কিন্তু একটা হিন্দু লোকের সাথে কেন সে প্রেম করতে গেলো, আমি বুঝে পাই না..."
"তুমি ওকে ডেকে বুঝাও...তুমি বড় ভাই ওর, তুমি ওকে শাসন না করলে কে করবে?"-আমি পথ বাতলে দিলাম সুমনকে।
"তুমি বলো, আমার কথা শুনবে না জেরিন..."-মাথা নিচু করে বললো সুমন। আমি সুমনের এই কথায় আশ্চর্য হয়ে গেলাম, নিজের বোন এক অবৈধ বাচ্চা পেটে নিয়ে বসে আছে, সেই বোনকে ডেকে ধমকাতে ও পারবে না আমার স্বামী, জয় সিং কে কিছু বলতে পারবে না সে, সেটা না হয় বুঝলাম কিন্তু নিজের ছোট বোনকে কিছু বলার সাহস কেন নেই ওর, সেটা আমার মাথায় ঢুকলো না।
"আমি ওকে বলেছি, অনেক বুঝিয়েছি, যে বাচ্চা নষ্ট এখন ও করা যাবে, তাই ওটা নষ্ট করে জয় সিং কে ভুলে নতুন করে জীবন শুরু করতে, ওর এক কথা জয় সিং কে না পেলে সে আত্মহত্যা করবে...এখন বলো আমাদের কি করা উচিত ওর জন্যে...তুমি ওর বড় ভাই, তাই তোমাকেই আগে জানালাম আমি, যদি ও জেরিন জানে না যে, আমি তোমাকে এসব জানিয়েছি..."-আমি সুমনকে বললাম।
"আমার পক্ষে কিছু করা সম্ভব না..."-সাফ জানিয়ে দিলো সুমন। আমি আশ্চর্য হলাম, এটা কি সুমনের বিপদকে সামনা না করার চালাকি নাকি, আসলেই ও বুঝছে না যে ওর কি করা উচিত। জেরিন আমার সাথে কি এটা নিয়েই তর্ক করলো যে, ওর ভাই একটা কাপুরুষ, মেরুদণ্ডহীন লোক, জেরিন কি ঠিক বলেছে? আমার সন্দেহ হতে লাগলো।
"তাহলে জেরিন যদি আত্মহত্যা করে তখন কি করবে?"-আমি জিজ্ঞেস করলাম।
"সেটা ওর ব্যাপার...তুমি কি একবার জয় সিং এর সাথে দেখা করে কথা বলে দেখবে যে সে রাজি হয় কি না?"-সুমন চুপচাপ ওর পায়ের বলটাকে আমার দিকে ঠেলে দিলো, আমি শিউরে উঠলাম।
"তুমি ঘরের কর্তা হয়ে ওই লোকটার সাথে কথা বলতে ভয় পাচ্ছ, আর আমাকে বলছো ওর সাথে কথা বলতে?"--আমি আশ্চর্য হয়ে বললাম, সুমন আমার কথা শুনে মাথা নিচু করে বসে রইলো, আমার চোখের দিকে তাকানোর মত সাহস ও যেন নেই ওর। আমার খুব রাগ হলো সুমনের উপর, নিজের বোন বিপদে শুনে ওর ঝাঁপিয়ে পড়া উচিত, সেখানে ও এভাবে পিছটান দিচ্ছে। জেরিনের বলা কথাগুলিকেই এভাবে সত্যি হতে দেখতে আমার খুব খারাপ লাগছে। আমার সন্দেহ হতে লাগলো যে, সুমন কি ওই লোকটার চরিত্র সম্পর্কে জানে? ওর লুচ্চা নোংরা চরিত্রের খোঁজ কি জানে সুমন?
"আচ্ছা, আমাকে একটা কথা বলো, যে তুমি কেন জয় সিং এর সাথে কথা বলতে পারবে না এটা নিয়ে..."-আমি সুমনকে সহজে ছাড়তে রাজি হলাম না।
কিছু সময় চুপ করে থেকে সুমন বললো, "উনি অনেক বড় মানুষ, বড় ব্যবসায়ী, বড় রাজনৈতিক নেতাও, চাইলে আমাদেরকে কিনে ফেলতে পারেন, উনার কাছে গিয়ে আমি কিভাবে দাবী করি যে, আমার বোনের পেটে উনার সন্তান...আর জয় সিং যেমন বদমেজাজি লোক, সে হয়তো আমার কথা শুনবেই না, আমাকে ঘাড় ধরে বের করে দিবে ওর অফিস থেকে, আর ওর অনেক ক্ষমতা, আমাদের দিক থেকে কোন বিপদ আসতে পারে, এটা বুঝতে পারলেই, সে উল্টো আমাকে বিপদে ফেলে দিবে...এই উত্তরাঞ্চলের রাজনীতি ওদের পরিবারের কাছে জিম্মি..."
"আমাদের বিপদ তো একেবারে নগন্য নয়, তোমার বোনের জীবন, ওর পেটের সন্তানের জীবন, এই পরিবারের সম্মান সব কিছুই বিপদের সামনে পড়তে যাচ্ছে..."-আমি যুক্তি দিলাম।
সুমন চুপ করে রইলো, কেন সে জয় সিং এর সামনে আমাকে পাঠাতে চাইছে জানতে চাইলাম, বললো "তুমি মহিলা মানুষ, আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করতে পারে, তোমার সাথে হয়তো করবে না, তুমি যদি উনাকে বুঝিয়ে রাজি করাতে পারো, তাহলে জেরিনের জীবন, আমাদের বাড়ির সম্মান নষ্ট হবে না, তাই বললাম..."।
"উনার কি চরিত্র ভালো? মেয়েদের ব্যাপারে উনার কোন দুর্নাম আছে?"-আমি কৌশলে জানতে চাইলাম সুমনের কাছে, দেখি সে কিছু জানে কি না।
"উনার চরিত্রের ব্যাপারে দুর্নাম আছে শুনেছি, কিন্তু কতটুকু সত্যি সেটা জানি না..."-সুমন আমতা আমতা করে বললো, যেন সে এটা আমাকে জানতে দিতে চায় না, এমনটাই মনে হলো আমার কাছে।
"এমন লোকের কাছে নিজের সুন্দরী স্ত্রীকে পাঠাবে তুমি? তোমার ভয় করবে না?"-আমি একটু হালকা স্বরে জানতে চাইলাম।
"কিন্তু কি করবে? তুমি যদি একটু চেষ্টা করে উনাকে রাজি না করাও, তাহলে জেরিনের তো আর মরা ছাড়া আর কোন উপায় নেই...প্লিজ, তুমি একবার দেখা করো উনার সাথে..."-সুমন এইবার পুরো আমার দিকে তাকিয়ে যেন ভিক্ষা চাইছে এমন স্বরে আকুতি জানিয়ে বললো।
"ঠিক আছে, আমি ভেবে দেখি...আমি বললেই কি উনি রাজি হয়ে যাবে? উনি তো নিজের স্বার্থ দেখবে? আচ্ছা, আচ্ছা...উনি যে হিন্দু, নিজের বোনকে হিন্দু লোকের কাছে বিয়ে দিবে, এটা নিয়ে তুমি মোটেই চিন্তিত না?"-আমি সুমনকে জিজ্ঞেস করলাম একটু অবাক হয়ে।
"আমাদের এই এলাকায় অনেক হিন্দু লোক মুসলিমকে বিয়ে করেছে, আর অনেক মুসলিম লোক ও হিন্দুদের সাথে বিয়ে করছে, জয় সিং এর বাবা ও একবার একটা মুসলিম মেয়ে কে বিয়ে করেছে, পরে সেই বৌ মারা গেলে আবার হিন্দু একটা মহিলাকে বিয়ে করেছে শুনেছিলাম...আগের দিনের যারা জমিদার, তাদের মধ্যে এমন অনেক কিছুই শুনা যায়..."-সুমন হালকা স্বরে বললো, যেন এটা কোন ঘটনাই না।
"আর উনি যদি কিছু দাবি করে, তখন কি করবে?"-আমি একটা দীর্ঘশ্বাস চাপা দিয়ে বললাম।
"মানে?"-সুমন জানতে চাইলো।
"মানে হচ্ছে, আমি উনাকে রাজি করাতে গেলে উনি যদি যৌতুক হিসাবে কিছু চেয়ে বসেন, তাহলে কি করবে?"-আমি চোখে চোখ রেখে জানতে চাইলাম। সুমন নিজের চোখ সরিয়ে নিয়ে জবাব দিলো, "জেরিনকে বিয়ে করার বিনিময়ে উনি যা চাইবেন আমাদের কাছে, সেটা যাই হোক আমাদের তো সেসব দিতে হবেই..."।
"যাই চাইবেন?"- আমি আবার নিশ্চিত হতে চাইলাম, জানি না আমার স্বামী সেই প্রশ্নের অর্থ বুঝেছেন কি না।
"হুম, যাই চাইবেন...যা আমাদের আছে"-সুমন অন্যদিকে তাকিয়েই জবাব দিলো।
"যদি আমাকেই চেয়ে বসেন উনি, তখন কি করবে?"-আমি একদম স্পষ্ট করে জানতে চাইলাম সুমনের দিকে তাকিয়ে, সুমন যেন কেঁপে উঠলো আমার কথা শুনে, আমি কি বুঝাতে চাই, সেটা না বুঝার মত বোকা লোক সে নয়। কিন্তু চুপ করে থেকে অন্যদিকে তাকিয়ে সে আমার কথাকে উপেক্ষা করে গেলো, কোন জবাব দিলো না।
বিকালে জেরিনের সাথে নিজের স্বামীকে নিয়ে তর্ক করার পরে এই মুহূর্তে সুমনকে সব জানানোর পরে ও সুমন নিজে এই সব বিপদের মোকাবেলা না করে, আমাকে ঠেলে দিচ্ছে, এর মানে জেরিন ওর ভাই সম্পর্কে যা যা বললো, তা কি সবই সত্যি? আমার মনে এই একটাই প্রশ্ন বার বার উকি দিলো। যদি ও অন্যদিন প্রতি রাতেই আমাদের মধ্যে সেক্স হতো, কিন্তু আজ হলো না। সুমন কেন জানি নিজে থেকে ও কোন আগ্রহ প্রকাশ করলো না, আর আমি ও সুমনকে পরীক্ষা করার জন্যে ওকে কিছু বললাম না।
রাতে বিছানাতে এসে আমি প্রথম আমার স্বামীকে জিজ্ঞেস করলাম, "আচ্ছা, সুমন, আমাকে একটা সত্যি কথা বোলোতো, আমি কি দেখতে অসাধারণ সুন্দর নাকি শুধু মাত্র চলনসই টাইপের?"
"আজ হঠাত এটা জানতে চাইলে যে?"
"আসলে আজ একজনে আমার রুপের খুব প্রশংসা করলো, তাই আমার মনে হলো, যে তোমার মুখ থেকেই শুনি, যদি ও তুমি কোনদিন আমাকে বোলো নাই আমার রুপ সম্পর্কে, তাই জানতে চাইছি, তুমি একদম সত্যি কথাই বলো, আমি মাইন্ড করবো না..."
সুমন নড়েচড়ে বসলো, কি বলবে তা বোধহয় গুছিয়ে নিচ্ছে, এর পরে বললো, "তুমি আসলেই এক অসাধারণ সুন্দরী নারী। আমি কোনদিন ও তোমার মত কোন নারীকে পাবো, এটা স্বপ্নে ও ভাবি নি। তোমার শরীরের প্রতিটি অংশই অতুলনীয়। আমাদের বংশের কারোর তো দুরের কথা, আমাদের এই পুরো শহরে ও তোমার শরীরের সাথে তুলনা করা যায়, এমন কোন মেয়ে নেই...যে তোমার রুপের প্রশংসা করেছে, সে সত্যি বলেছে, কিন্তু কে বলেছে, সেটা কি জানতে পারি?"
"পারো, সে হচ্ছে তোমার বোন..."-আমি হেসে বললাম।
"এখন মন দিয়ে শুন, আরও একটা কথা আছে, খুব কঠিন কথা, শুনেই তোমার মাথা ঘুরতে পারে, তাই মন দিয়ে শুন, আর অযথা উত্তেজিত হইয়ো না..."-আমি আবার নাটক করে বললাম।
"বলো, শুনছি..."-সুমন আমার চোখের দিকে তাকালো।
"জেরিন একটা লোকের সাথে প্রেম করে, তুমি হয়তি চিনবে, জয় সিং, জমিদার প্রতাপ সিং এর ছেলে...প্রেম পর্যন্ত তো ঠিকছিলো, কিন্তু এখন জেরিন প্রেগন্যান্ট আর ওই জয় সিং লোকটা তোমার বোনকে বিয়ে করতে চাইছে না, আর তোমার বোন ও বাচ্চা নষ্ট করবে না, এবং তাকেই বিয়ে করবে বলে জিদ ধরে আছে...এখন বলো কি করা উচিত আমাদের? বাবা মা কে জানাবো এসব কথা?"-আমি ধীরে ধীরে ঠাণ্ডা গলায় বললাম কথাগুলি। সুমনের চোখে মুখে ভয়ের স্পষ্ট ছাপ দেখতে পেলাম, এমন পরিস্থিতিতে কি করা উচিত এটার কোন ধারনাই নেই ওর, তাই ওর অবস্থা অনেকটা দিশেহারা লোকের মতই লাগলো আমার কাছে।
অনেকক্ষণ মাথায় হাত দিয়ে বসে রইলো সুমন, কিছু না বলে, এর পরে বললো, "জেরিন তা একদম ছোট বেলা থেকে এমন একগুয়ে, উড়নচণ্ডী, ওকে বাবা মা ও কোনদিন শাসন করে নাই, কিন্তু এখন সে যে কাণ্ড করেছে, কি বলবো আমি ওকে? জয় সিং কে আমি চিনি, সে খুব ক্ষমতাবান, আর জেদি টাইপের, সে যদি জেরিনকে বিয়ে করতে না চায়, তাহলে ওকে রাজি করানো আমার পক্ষে সম্ভব না...বাবা মা জেরিনের এসব কথা জানলে খুব কষ্ট পাবে। কিন্তু একটা হিন্দু লোকের সাথে কেন সে প্রেম করতে গেলো, আমি বুঝে পাই না..."
"তুমি ওকে ডেকে বুঝাও...তুমি বড় ভাই ওর, তুমি ওকে শাসন না করলে কে করবে?"-আমি পথ বাতলে দিলাম সুমনকে।
"তুমি বলো, আমার কথা শুনবে না জেরিন..."-মাথা নিচু করে বললো সুমন। আমি সুমনের এই কথায় আশ্চর্য হয়ে গেলাম, নিজের বোন এক অবৈধ বাচ্চা পেটে নিয়ে বসে আছে, সেই বোনকে ডেকে ধমকাতে ও পারবে না আমার স্বামী, জয় সিং কে কিছু বলতে পারবে না সে, সেটা না হয় বুঝলাম কিন্তু নিজের ছোট বোনকে কিছু বলার সাহস কেন নেই ওর, সেটা আমার মাথায় ঢুকলো না।
"আমি ওকে বলেছি, অনেক বুঝিয়েছি, যে বাচ্চা নষ্ট এখন ও করা যাবে, তাই ওটা নষ্ট করে জয় সিং কে ভুলে নতুন করে জীবন শুরু করতে, ওর এক কথা জয় সিং কে না পেলে সে আত্মহত্যা করবে...এখন বলো আমাদের কি করা উচিত ওর জন্যে...তুমি ওর বড় ভাই, তাই তোমাকেই আগে জানালাম আমি, যদি ও জেরিন জানে না যে, আমি তোমাকে এসব জানিয়েছি..."-আমি সুমনকে বললাম।
"আমার পক্ষে কিছু করা সম্ভব না..."-সাফ জানিয়ে দিলো সুমন। আমি আশ্চর্য হলাম, এটা কি সুমনের বিপদকে সামনা না করার চালাকি নাকি, আসলেই ও বুঝছে না যে ওর কি করা উচিত। জেরিন আমার সাথে কি এটা নিয়েই তর্ক করলো যে, ওর ভাই একটা কাপুরুষ, মেরুদণ্ডহীন লোক, জেরিন কি ঠিক বলেছে? আমার সন্দেহ হতে লাগলো।
"তাহলে জেরিন যদি আত্মহত্যা করে তখন কি করবে?"-আমি জিজ্ঞেস করলাম।
"সেটা ওর ব্যাপার...তুমি কি একবার জয় সিং এর সাথে দেখা করে কথা বলে দেখবে যে সে রাজি হয় কি না?"-সুমন চুপচাপ ওর পায়ের বলটাকে আমার দিকে ঠেলে দিলো, আমি শিউরে উঠলাম।
"তুমি ঘরের কর্তা হয়ে ওই লোকটার সাথে কথা বলতে ভয় পাচ্ছ, আর আমাকে বলছো ওর সাথে কথা বলতে?"--আমি আশ্চর্য হয়ে বললাম, সুমন আমার কথা শুনে মাথা নিচু করে বসে রইলো, আমার চোখের দিকে তাকানোর মত সাহস ও যেন নেই ওর। আমার খুব রাগ হলো সুমনের উপর, নিজের বোন বিপদে শুনে ওর ঝাঁপিয়ে পড়া উচিত, সেখানে ও এভাবে পিছটান দিচ্ছে। জেরিনের বলা কথাগুলিকেই এভাবে সত্যি হতে দেখতে আমার খুব খারাপ লাগছে। আমার সন্দেহ হতে লাগলো যে, সুমন কি ওই লোকটার চরিত্র সম্পর্কে জানে? ওর লুচ্চা নোংরা চরিত্রের খোঁজ কি জানে সুমন?
"আচ্ছা, আমাকে একটা কথা বলো, যে তুমি কেন জয় সিং এর সাথে কথা বলতে পারবে না এটা নিয়ে..."-আমি সুমনকে সহজে ছাড়তে রাজি হলাম না।
কিছু সময় চুপ করে থেকে সুমন বললো, "উনি অনেক বড় মানুষ, বড় ব্যবসায়ী, বড় রাজনৈতিক নেতাও, চাইলে আমাদেরকে কিনে ফেলতে পারেন, উনার কাছে গিয়ে আমি কিভাবে দাবী করি যে, আমার বোনের পেটে উনার সন্তান...আর জয় সিং যেমন বদমেজাজি লোক, সে হয়তো আমার কথা শুনবেই না, আমাকে ঘাড় ধরে বের করে দিবে ওর অফিস থেকে, আর ওর অনেক ক্ষমতা, আমাদের দিক থেকে কোন বিপদ আসতে পারে, এটা বুঝতে পারলেই, সে উল্টো আমাকে বিপদে ফেলে দিবে...এই উত্তরাঞ্চলের রাজনীতি ওদের পরিবারের কাছে জিম্মি..."
"আমাদের বিপদ তো একেবারে নগন্য নয়, তোমার বোনের জীবন, ওর পেটের সন্তানের জীবন, এই পরিবারের সম্মান সব কিছুই বিপদের সামনে পড়তে যাচ্ছে..."-আমি যুক্তি দিলাম।
সুমন চুপ করে রইলো, কেন সে জয় সিং এর সামনে আমাকে পাঠাতে চাইছে জানতে চাইলাম, বললো "তুমি মহিলা মানুষ, আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করতে পারে, তোমার সাথে হয়তো করবে না, তুমি যদি উনাকে বুঝিয়ে রাজি করাতে পারো, তাহলে জেরিনের জীবন, আমাদের বাড়ির সম্মান নষ্ট হবে না, তাই বললাম..."।
"উনার কি চরিত্র ভালো? মেয়েদের ব্যাপারে উনার কোন দুর্নাম আছে?"-আমি কৌশলে জানতে চাইলাম সুমনের কাছে, দেখি সে কিছু জানে কি না।
"উনার চরিত্রের ব্যাপারে দুর্নাম আছে শুনেছি, কিন্তু কতটুকু সত্যি সেটা জানি না..."-সুমন আমতা আমতা করে বললো, যেন সে এটা আমাকে জানতে দিতে চায় না, এমনটাই মনে হলো আমার কাছে।
"এমন লোকের কাছে নিজের সুন্দরী স্ত্রীকে পাঠাবে তুমি? তোমার ভয় করবে না?"-আমি একটু হালকা স্বরে জানতে চাইলাম।
"কিন্তু কি করবে? তুমি যদি একটু চেষ্টা করে উনাকে রাজি না করাও, তাহলে জেরিনের তো আর মরা ছাড়া আর কোন উপায় নেই...প্লিজ, তুমি একবার দেখা করো উনার সাথে..."-সুমন এইবার পুরো আমার দিকে তাকিয়ে যেন ভিক্ষা চাইছে এমন স্বরে আকুতি জানিয়ে বললো।
"ঠিক আছে, আমি ভেবে দেখি...আমি বললেই কি উনি রাজি হয়ে যাবে? উনি তো নিজের স্বার্থ দেখবে? আচ্ছা, আচ্ছা...উনি যে হিন্দু, নিজের বোনকে হিন্দু লোকের কাছে বিয়ে দিবে, এটা নিয়ে তুমি মোটেই চিন্তিত না?"-আমি সুমনকে জিজ্ঞেস করলাম একটু অবাক হয়ে।
"আমাদের এই এলাকায় অনেক হিন্দু লোক মুসলিমকে বিয়ে করেছে, আর অনেক মুসলিম লোক ও হিন্দুদের সাথে বিয়ে করছে, জয় সিং এর বাবা ও একবার একটা মুসলিম মেয়ে কে বিয়ে করেছে, পরে সেই বৌ মারা গেলে আবার হিন্দু একটা মহিলাকে বিয়ে করেছে শুনেছিলাম...আগের দিনের যারা জমিদার, তাদের মধ্যে এমন অনেক কিছুই শুনা যায়..."-সুমন হালকা স্বরে বললো, যেন এটা কোন ঘটনাই না।
"আর উনি যদি কিছু দাবি করে, তখন কি করবে?"-আমি একটা দীর্ঘশ্বাস চাপা দিয়ে বললাম।
"মানে?"-সুমন জানতে চাইলো।
"মানে হচ্ছে, আমি উনাকে রাজি করাতে গেলে উনি যদি যৌতুক হিসাবে কিছু চেয়ে বসেন, তাহলে কি করবে?"-আমি চোখে চোখ রেখে জানতে চাইলাম। সুমন নিজের চোখ সরিয়ে নিয়ে জবাব দিলো, "জেরিনকে বিয়ে করার বিনিময়ে উনি যা চাইবেন আমাদের কাছে, সেটা যাই হোক আমাদের তো সেসব দিতে হবেই..."।
"যাই চাইবেন?"- আমি আবার নিশ্চিত হতে চাইলাম, জানি না আমার স্বামী সেই প্রশ্নের অর্থ বুঝেছেন কি না।
"হুম, যাই চাইবেন...যা আমাদের আছে"-সুমন অন্যদিকে তাকিয়েই জবাব দিলো।
"যদি আমাকেই চেয়ে বসেন উনি, তখন কি করবে?"-আমি একদম স্পষ্ট করে জানতে চাইলাম সুমনের দিকে তাকিয়ে, সুমন যেন কেঁপে উঠলো আমার কথা শুনে, আমি কি বুঝাতে চাই, সেটা না বুঝার মত বোকা লোক সে নয়। কিন্তু চুপ করে থেকে অন্যদিকে তাকিয়ে সে আমার কথাকে উপেক্ষা করে গেলো, কোন জবাব দিলো না।
বিকালে জেরিনের সাথে নিজের স্বামীকে নিয়ে তর্ক করার পরে এই মুহূর্তে সুমনকে সব জানানোর পরে ও সুমন নিজে এই সব বিপদের মোকাবেলা না করে, আমাকে ঠেলে দিচ্ছে, এর মানে জেরিন ওর ভাই সম্পর্কে যা যা বললো, তা কি সবই সত্যি? আমার মনে এই একটাই প্রশ্ন বার বার উকি দিলো। যদি ও অন্যদিন প্রতি রাতেই আমাদের মধ্যে সেক্স হতো, কিন্তু আজ হলো না। সুমন কেন জানি নিজে থেকে ও কোন আগ্রহ প্রকাশ করলো না, আর আমি ও সুমনকে পরীক্ষা করার জন্যে ওকে কিছু বললাম না।