এক কর্তব্যপরায়ণ বধু
সুচনা/প্রারম্ভ
অপরাধবোধ এমন একটা ধীর গতির বিষ যেটা মানুষের জীবন আর সম্পর্কের এমন ক্ষতি করে যে মানুষ ধীরে ধীরে ক্ষয় হতে থাকে, ভিতরে ও বাইরে, তখন মাঝে মাঝে এভাবে তিলে তিলে মরার চেয়ে ও একবারে মরে যাওয়াকেই ভালো মনে হয়। এই বিষকে চুমুকে চুমুকে পান করে যাচ্ছি আমি এক যুগের ও বেশি সময় ধরে, ইচ্ছায় নয় অনিচ্ছায়, কেউ যেন আমার হাতের শরবতের পেয়ালা কেড়ে নিয়ে সেখানে এই বিষের পেয়ালা ধরিয়ে দিয়েছে, সেই পেয়ালার বিষকেই শরবত ভেবে চুমুকে চুমুকে পান করে যাচ্ছি আমি দীর্ঘ ১৪ বছর ধরে...সজ্ঞানে, জেনে বুঝে। বুকটা মাঝে মাঝে হঠাত এমন ব্যথা করে মনে হয় এই বিষে আমার সারা শরীর নীল হয়ে গেছে, গলাটা কেউ চেপে ধরেছে, নিঃশ্বাস নিতে পারছি না, বুকটা ভেঙ্গে যাচ্ছে। এই অপরাধবোধ আমার ভিতর থেকে কখনও যাবে না মনে হয়, এটাকে কখনও নিঃশেষ করা যাবে না, আমাকে তিলে তিলে এভাবেই লাঞ্ছিত, উপহাসিত আর সত্যের মুখোমুখি হওয়া থেকে বঞ্চিত করে এভাবেই আমার ভিতরে রয়ে যাবে এটা মৃত্যু পর্যন্ত।
অনেকবারই আমি সাহস সঞ্চয় করেছি আমার স্বামীর সামনে আমার এই অবধারিত অন্যায় নোংরা অপরাধের দলিল মেলে ধরার জন্যে, কিন্তু পর মুহূর্তেই এমন কিছু কথা বা এমন কোন পরিস্থিতি হঠাত করে আমার সামনে এসে এমনভাবে গলা চেপে ধরেছে যে সেই সাহসকে আমি গলাধকরন করে নিতে বাধ্য হয়েছি। একবার নয়, বার বার এমন ব্যর্থ চেষ্টার পরে আমার মনে হয়েছে যে এটা বোধহয় আমার জন্যে লিখা, উপরওয়ালারই নিয়তি যে, এই অপরাধের বোঝা মাথায় নিয়েই আমাকে মরতে হবে কোন এক দিন। আমার স্বামীকে আমি খুব ভালবাসি, ওকে কোনদিন আমি আঘাত দিতে চাই নি, কিন্তু শরীরে না হোক মনের দিক থেকে, আত্মার দিক থেকে। কিন্তু আমি এমন এক অপরাধ করে ফেলেছি আমার স্বামীর সাথে, যে নরকে ও বোধহয় আমার জায়গা হবে না। আমি এক ব্যভিচারী নারী, আমি আমার স্বামীর সাথে প্রতারনা করেছি, একবার নয়, বহুবার, বার বার, জেনেশুনে, কখনো বাধ্য হয়ে, কখনও নিজের শরীরের সুখের জন্যে, কখনও আমার স্বামীর ইচ্ছাকে সম্মান দিতে গিয়ে, যদি ও এর সব দায় আমার একার ছিলো না কখনও। ভাবতে বিস্ময় লাগে আমার যে, বা এই কথা বললে আপনাদের কাছে ও অবাকই লাগবে মনে হয়, যে আমার স্বামীই বোধহয় এমন অপরাধের বোঝা আমার মাথায় চাপাতে চেয়েছিলো, সজ্ঞানে অথবা ওর নিরব নিশ্চুপ আচরণ দিয়ে, কখনও ওর বলা ছোট ছোট কথার ধাক্কা দিয়ে আমাকে খুব সুক্ষভাবে এই পথে ঠেলে দেয়ার জন্যে, কখনও একদম খোলাখুলি ভাবে কিন্তু এমন সূক্ষ্মভাবে একটা আড়াল রেখেছে যেন ও সব কিছু জেনে ও জানে না।
মনে হয় আমার এই দ্বিচারিতা, ব্যভিচারী জীবনের গল্পটা আমার প্রথম সন্তানের জন্মের পর থেকে শুরু করাই উচিত ছিলো। কিন্তু ঘটনার শুরুটা আরও আগে, আমার বিয়ের ৬ মাস পরের থেকে অল্প অল্প করে শুরু, আমার সুন্দর নিরব সুখী জীবনে রাহুর আগমনের। ডাইরিতে লেখা তারিখগুলি দেখলে পাঠকরা হয়তো কিছুটা আন্দাজ করতে পারবেন কোনটা আগে বা কোনটা পরে, কিন্তু আমার মনে ঘটনাগুলি একদম সাজিয়ে ক্রমান্বয়ে আসছে না, যখন যেটা আসছে, সেটাই বলছি আপনাদের কাছে, আমার জীবন কাহিনী। যেহেতু কাহিনির শুরু সেই ১৪ বছর আগে, তাই সব কথা ধারাবাহিকভাবে মনে করা ও কঠিন এই মুহূর্তে আমার কাছে।
আমি কামিনী চৌধুরী, আমার বাবা খুব কামিনী ফুলের ভক্ত, তাই নিজের মেয়ের নাম রেখেছেন ফুলের নামে, কামিনী। আমি বিবাহিত, ৬ টি সন্তানের গর্বিত মা, আমার স্বামীর ভালবাসার মানুষ আমি, বিবাহিত জীবনের ১৪ টি বসন্ত ধরে আমরা এক সাথে কাটাচ্ছি। আমাদের বাড়ি বাংলাদেশের বৃহত্তর উত্তরবঙ্গ এর ছোট একটি জেলা শহর দিনাজপুর, এই শহরটা এক সময় বড় বড় জমিদার গোত্রের লোকদের আবাসস্থল ছিলো, আমাদের বাড়িটা ও জমিদারি এলাকার ভিতরেই। জমিদারি বংশের রক্ত আমার শরীরে, আমার দাদার বাবা ছিলেন ছোট খাটো একজন জমিদার। আমার দাদি ছিলেন সেই আমলের অখণ্ড ভারতের এক হিন্দু রাজপুত নারী, যাকে পরে মুসলমান করে আমার দাদা বিয়ে করেছিলেন, সেই দাদির রক্ত আমার আর আমার ছোট বোনের শরীরে বয়ে গেছে বেশ পাকাপোক্তভাবেই। আমার অন্য চাচাতো, মামাতো, খালাতো, ফুফাতো ভাই বোনদের চেয়ে আমাদের দুই বোনের দীর্ঘাঙ্গী একহারা গড়ন আর টকটকে গোলাপি আভার ফর্সা ত্বক, সেটাই প্রমান করে।
আমার স্বামী ও আমি দুজনেই এই দিনাজপুরের মাটিতেই বড় হয়েছি, লেখাপড়া করেছি। আমার বাবা কলেজের প্রফেসর, এলাকায় বেশ সম্মানী লোক। আমাদের আর্থিক অবস্থা বেশ সচ্ছল, যদি ও খুব বড় ধনী নই আমরা। আমার স্বামী বেশ সফল ব্যবসায়ী, আমি ও স্থানীয় একটা স্কুলে পার্ট টাইম পড়াতাম এক সময় কিন্তু ইদানীং আমাদের ছেলেমেয়েরা বড় হচ্ছে, আমাদের পরিবার ও বেশ বড় হয়ে গেছে, তাই ওদের পিছনে বেশ সময় ব্যয় হওয়ার কারনে আমাকে চাকরীটা ছেড়ে দিতে হয়েছে। আমাদের সন্তানদের মধ্যে ৪ জন মেয়ে আর ২ জন ছেলে, বড় মেয়ের বয়স ১২, এর পরে বড় ছেলের বয়স ১০, পরের ৩ মেয়ের বয়স যথাক্রমে ৯, ৭, ২ আর আমাদের একদম ছোট ছেলের বয়স এখন ১ বছর চলছে, যদি ও আমার পেট আবার একটু একটু করে ফুলতে শুরু করেছে, কারন আমাদের সপ্তম সন্তান এখন আমার পেটে বড় হচ্ছে।
যদি ও এখন আমাদের পরিবারে আমি, আমার স্বামী আর সন্তানরা আর আমার স্বামীর এক চিরকুমার চাচা ছাড়া আর কেউ নেই, কিন্তু আমার বিয়ের সময়ে এই পরিবারটা একদম একটা পুরো যৌথ পরিবারের মতোই ছিলো। আমার শ্বশুর, শাশুড়ি ছাড়াও, আমার ননদ, আমার স্বামীর এক বিধবা চাচি ও ছিল এই পরিবারে মুল সদস্য। মাঝে মাঝে কিছু কাছের আত্মীয়, আমার স্বামীর চাচাতো ভাই বোনরা ও এসে যেতো, কারণ সবাই বেশ কাছেই থাকে। আমার ননদ ও বিয়ের পরে বেশ কিছুদিন এই বাড়িতেই ছিলো, পরে ওর প্রথম সন্তানের জন্মের পরে ও স্বামীর বাড়ি চলে গেছে, যদি ও ওদের বাড়ির দূরত্ব আমাদের বাড়ি থেকে একদম কম। আমার শাশুড়ি মারা যান আমাদের বিয়ের ২য় বছর পরেই, আর আমার শ্বশুর মারা যান গত বছরে, উনার চিরকুমার ভাই এখন ও আমাদের বাড়িতেই থাকেন। উনি আমার শ্বশুরের সবচেয়ে ছোট ভাই, তাই উনার বয়স খুব বেশি না, এখন ৫০ এর কোঠা পার হয়েছে মাত্র, আমার শ্বশুরের আরেক ভাই ও থাকেন আমাদের বাড়ির কাছেই। উনাদের সাথে ও আমাদের সব সময়ই আসা যাওয়া আছে, আর আমার ননদ তো সপ্তাহে একবার আমাদের বাড়ীতে আসবেই, ওর ৩ টি ছেলে মেয়ে, বড় ছেলের বয়স ১৩ আরেকটির বয়স ১০, আর সবচেয়ে ছোট মেয়েটির বয়স ৬। আমার ননদ জেরিনের বিয়ে হয়েছে বেশ বড় অবসথাসম্পন্ন রাজনৈতিক পরিবারে। ওর স্বামীর নাম জয় সিং। সে ও আমাদের মতোই এই অঞ্চলের এক উচু প্রভাবশালী জমিদার পরিবারের সন্তান।
আমার স্বামীর নাম সুমন। স্বামী হিসাবে ও সন্তানের পিতা দুই জায়গাতেই সে অসাধারণ, অতুলনীয়। আমাদের সন্তানদের পিছনে সে যেই সময় ও শ্রম ব্যয় করে, সেটা দেখে যে কেউ আশ্চর্য হবে, আমাদের সন্তানদের যেই রকম মমতা আদর, ভালোবাসা ও সঠিক দিক নির্দেশনা দেয় সে, সেটা দেখে কেউ ভাবতেই পারবে না যে, আমাদের ৬ টি সন্তানের একটির ও সে প্রকৃত অর্থে পিতা নয়। সুমন নিজে ও জানে সেটা, কিন্তু সেই কারনে কোনদিন তাকে আমি নকল পিতার সাজে দেখিনি আমার সন্তানদের সামনে, সব সময় সে ওদেরকে এমনভাবেই লালন করছে এই ১৪ টি বছর ধরে, যেন সবগুলি সন্তান ওর ঔরসেরই। একটা সময় আমি মনে মনে ভাবতাম যে অন্তত আমার বড় মেয়েটা মানে আমাদের প্রথম সন্তানটা মনে হয় আমার স্বামী সুমনেরই, কিন্তু মেয়ে বড় হতে শুরু করার পর থেকে ওর শরীরের গঠন অবয়ব দেখে যে কেউ বলে দিতে পারে যে এটা কিছুতেই সুমনের সন্তান হতে পারে না।
বছরের পর বছর ধরে ধীরে ধীরে সুমনের মনের ভাব বুঝার সক্ষমতা আমার এমন বেড়েছে যে, সুমনের চোখের দিকে তাকিয়েই আমি এখন বুঝতে পারি যে সে কি চায়। আমাদের সম্পর্কের সব সত্যগুলি তার জানা আছে, কিন্তু সে সব সময় এমন একটা খোলস ওর মুখে চেপে রাখতে চেষ্টা করে যে, যেন সে কিছুই জানে না। আমার প্রতারনা, আমার বিশ্বাসঘাতকতা, আমার দিনের প্র দিন, রাতের পর রাত, পর পুরুষ গমনের কোন কিছুই যেন জানে না সে, আমি যেন তার বিয়ে করে সতী সাধ্বী পবিত্র চরিত্রের স্ত্রী আজও। আমার মাঝে মাঝে ইচ্ছা করে এক টানে সুমনের মুখের সামনের মুখোশটা কেড়ে নিয়ে ওকে আয়নার সামনে দাড় করিয়ে দিতে। কিন্তু স্বামীকে কটু কথা বলে কষ্ট দেয়া আমার স্বভাবে নেই, শুধু স্বামীকেই না, যে কোন লোককেই আমি কটু কথা বলতে পারি না। যেহেতু সে সব জেনে ও আমার সামনে সেটা স্বীকার না করে নিজেকে একটা পর্দা দিয়ে আড়াল করে রাখতে চায়, তাই আমার ও কাছে ও মনে হয়, কোনদিন এইসব কথাগুলি ওকে মুখোমুখি বললে ও, ওই জানা থাকা সত্যগুলি আমার মুখ থেকে স্পষ্ট ভাষায় শুনলে সে খুব কষ্ট পাবে। তাই সব কথা আমার বুকের গভীরে চাপা দিয়ে এক কর্তব্যপরায়ন বধুর মতোই সংসারের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি আমি।
আমাদের বিয়ের এই এতগুলি বছরে ও কোনদিন আমার স্বামীর সাথে আমার একটা ও কথা কাটাকাটি বা উঁচু স্বরে কটু কথার সময় আসে নি আজ ও। স্বামী কোন কিছু বললে, আমার যদি সেই ব্যপারে কোন মতামত থাকে, তাহলে আমি নম্র স্বরে ওকে সেটা বলি, কিন্তু তারপর সে যে সিদ্ধান্তই দেয় সেটাই পালন করি। এমনই আমাদের দুজনের মাঝের ভালবাসা ও বোঝাপড়ার পরিমান।
আপনারা পাঠকরা হয়তা ভাবতে পারেন যে, আমার স্বামী সুমনের হয়ত স্পারম কাউন্ট কম বা যৌনতার দিক থেকে সে দুর্বল, তাই আমার ৬ টি সন্তানের একটি ও ওর বীর্যের না।
কিন্তু বাস্তবতা আসলে একদম ভিন্ন, কিছুটা ব্যতিক্রম ও, অনেকটা অস্বাভাবিক ও বটে। আমরা দুজনে কোনদিন প্রকাশ্যে এই সত্যগুলি নিয়ে আলোচনা করি নাই, কিন্তু মনে মনে আমরা হাজার বার জেনেছি যে এটাই সত্য, এই সত্য আমরা দুজনেই জানি, বিশেষ করে ডায়েরি লিখার অভ্যাস আমার স্বামীর অনেক দিনের। ওর ডায়েরী চুরি করে লুকিয়ে পড়ার অভ্যাস ও আমার অনেক পুরনো, আর সেই ডায়েরী পড়েই আমি জানি যে, আমার স্বামী জানে আমার প্রতারনা সম্পর্কে, সে জানে সব, একদম ধ্রুব সত্যের মতোই জানে। আরও আশ্চর্যের বিষয় হলো, এই জানাতে ওর ভিতরে বিস্ময় কিছুটা আছে, কিছুটা হতাসাও আছে কিন্তু একটু ও কষ্ট নেই, আমাকে হারানোর ব্যথা নেই, নিজের প্রেয়সীকে অন্যের অঙ্কশায়িনী হতে দেখার ক্ষোভ নেই। আমাকে কোন এক পর পুরুষের অঙ্কসায়িনি হতে দেখে ওর ভিতরটা গুমরে কেঁদে উঠে না, ওর মনটা ভেঙ্গে চুরচুর হয় না, ওর চোখ ফেটে একটি অশ্রু কনা জমাট বাধে না, একটা ক্রোধের স্ফুলিঙ্গ ও তৈরি হয় না। সে যেন মেনে নিয়েছে এটাই হওয়ার কথা ছিলো, এটাই হওয়ার ছিলো, এটাই স্বাভাবিক, এমনভাবে। চাঁদ বা সূর্যকে যেমন কেউ অস্বীকার করে না, তেমনি যেন, আমার মত নারীর জীবন ও এমনই হওয়ার কথা, এটাকেই সে বুঝে নিয়ে মেনে নিয়েছে। ওর বুকের ভিতরের বোবা সেইসব কষ্টের একটা লাইন ও আমি পাই নাই ওর ডায়েরিতে। আমাদের স্বামী স্ত্রী সম্পর্কের এটাই হলো অস্বাভাবিক দিক, যেটা অন্য যে কাউকে বুঝানো খুব কঠিন।
আমি ও বিয়ের ৫ বছর পর থেকে ডায়েরী লিখা শুরু করি, আর আমার লেখা সেই ডায়েরি ও যে মাঝে মাঝে সুমন লুকিয়ে পড়ে, সেটা ও জানি, কিন্তু প্রকাশ্যে আমরা কোনদিন একজনের ডায়েরী অন্যজন পড়ি নাই, কারণ বিয়ের সময় কথা ছিলো যে, আমি ওর ডায়েরী কোনদিন পড়বো না, লুকিয়ে ও না। সেই চুক্তিকে আমরা আজ ও প্রকাশ্যে সম্মান করে যাচ্ছি। কিন্তু আমি বিশেষ করে স্বামীর সাথে প্রথমবার প্রতারনা করার পরই স্বামী এসব কিছু জানে কি না, সেটা নিয়ে সন্দেহ করে স্বামীর ডায়েরী পড়া শুরু করি লুকিয়ে। অনেকবার এমন হয়েছে, আমরা দুজন কফির কাপ সামনে নিয়ে বসেছি, ধিরে ধিরে ধীরে চুমুক দিচ্ছি, আর একজন অন্যের দিকে চোরা নজর দিচ্ছি, যখন আমি ওর দিকে তাকাচ্ছি, তখন সে অন্যদিকে চোখ ফিরিয়ে রাখছে, আবার সে যখন আমার দিকে তাকাচ্ছে তখন আমি আমার চোখ অন্যদিকে সরিয়ে রেখে চুপচাপ আমার স্বামীকে আমার চোখের ভাষা পড়তে দিচ্ছি। আমি জানি ওই সব মুহূর্তে আমার স্বামী আর আমার দুজনের চোখের ভাষা একটাই কথা বলে, সেটা হচ্ছে আমার এই বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক, আমার এই ব্যভিচারী জীবন, এটাকে সে কিভাবে দেখে, এটা কি ওর মনে ক্রোধ তৈরি করে কি না, সেটা জানার অনেক চেষ্টাই করেছি আমি...চোখ দিয়ে, ছোট ছোট অনর্থক প্রশ্ন দিয়ে, সেক্সের সময়ের আচরন দিয়ে, কিন্তু সব সময়ই যেন অতি সূক্ষ্মভাবে আমার স্বামী সেই সব ইঙ্গিত বুঝে ও না বুঝার ভান করে ওর মনের ভাব আমার কাছ থেকে লুকিয়ে রাখতে পেরেছে, আর শেষে সেই সব কথা ডায়েরী পাতায় একটু একটু করে জমা করেছে, যেগুলি আমি পরে জেনেছি।
মানুষ দেখে আশ্চর্য হয়, যে এই আধুনিক যুগের মানুষ হয়ে ও ৬ টি সন্তানের পিতামাতা হওয়ার পরে ও আমি এখন আমাদের সপ্তম সন্তান ধারন করেছি। অবশ্য, এটা ও সুমনেরই দোষ। ওর জেদের কারনেই আমি সপ্তম সন্তান ধারন করেছি, নাহলে আমি ৬ টার পরেই লাইগেশন করিয়ে নিজেকে এইসব ঝামেলা থেকে চিরতরে মুক্ত করতে চাইছিলাম। কিন্তু আমার ভিতরে মাতৃত্বকে, আমার স্বামী এমন তীব্রভাবে ভালবাসতে শিখেছে যে, আমার পেট ফুলা না থাকলেই ওর যেন অস্বস্তি হয়। পাঠকরা এই কথাটা খেয়াল করবেন, আমি বলেছি যে "আমার স্বামী আমার মাতৃত্বকে ভালবাসতে শিখেছে"। এর মানে অনেক গভীর। বড় মনোবিজ্ঞানী বা Extreme cuckold কোন লোক ছাড়া আমার এই কথার মানে আপনারা বুঝতে পারবেন কি না জানি না আমি।
আমার স্বামী শুধু যে আমাকে ভালবাসে, তাই না, আমার পেটের ভিতর অন্য পুরুষদের বীর্যের ফসলকে চোখের সামনে বাড়তে দেখে ও সে আনন্দ পায়, সুখ পায়, এক রকম তৃপ্তি কাজ করে ওর মনে। এই মানসিক অবস্থার নাম যে কি, তা হয়ত কোন বড় মনস্তাত্ত্বিক বিজ্ঞানী বলতে পারবেন, আমি জানি না। কিন্তু এটাই সত্যি, প্রতিবার আমার সন্তান জন্মের পরে, আবার ও আমার মাসিক বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত, মানে আমার পেটে পরবর্তী সন্তান না আসা পর্যন্ত সে খুব ভয়ে থাকে, যদি আমার সাথে আমার স্বামীর সেক্স এর ফলে ওর বীর্যের সন্তান আমার পেটে চলে আসে, এই ভয় কাজ করে ওর মনে। যখন সে শুনে যে আমার মাসিক বন্ধ হয়ে গেছে, আমি আবার ও মা হতে চলেছি, তখন সে যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচে, ওর আঁটকে রাখা নিঃশ্বাস ফেলতে পেরে এক অনির্বচনীয় সুখের ছায়া ভেসে উঠে ওর মুখের উপর। আর এই সুখের ছায়া কোন মেকি বা জাল অনুভুতি নয়। সত্যিই সে খুব সুখ পায়, যখন প্রতিবার সে শুনে, যে আমার পেটে আবার ও কোন এক অবৈধ বীর্যের সন্তান বেড়ে উঠতে শুরু করেছে।
১৪ বছরের বিবাহিত জীবনের যে কোন স্বামী স্ত্রী এর চেয়ে আমাদের যৌন জীবন এখন ও অনেক বেশি সক্রিয়, বিয়ের পর থেকে আজ পর্যন্ত আমাদের যৌন মিলনের বিরতি খুব একটা পড়ে নাই। আমাদের বয়সী অন্য সব যুগলরা যেখানে সপ্তাহে হয়ত ১/২ বার এর বেশি সেক্স করতে পারে না, সেখানে আমরা এখন ও প্রতি সপ্তাহে ৩/৪ বার মিলিত হওয়ার চেষ্টা করি। আর এটাও আমাদের জন্যে কম, কারন এতো বড় সংসারে সবাইকে সময় দিয়ে আমাদের নিজেদের জন্যে সময় বের করা বেশ কঠিন, নাহলে হয়ত এখনও আমাদের মধ্যে যৌন মিলন আরও বেশি ও হতে পারতো। পাঠকরা হয়ত ভাবতে পারেন যে, এতোবার স্বামীর সঙ্গে যৌন মিলনের পর ও কেন আমার একটা সন্তানের পিতা ও আমার স্বামী নয়? আপনারা যদি ৫ বছর আগে আমাকে এই প্রশ্ন করতেন, তাহলে আমি হয়ত জবাব দিতে দ্বিধা করতাম, আমার পক্ষে হয়ত জবাব দেয়া সম্ভবই হতো না, কিন্তু এখন আমি এর জবাব দেয়ার জন্যে মানসিকভাবে ও শারীরিকভাবে তৈরি। আমি নিজেও হয়ত এই প্রশ্নের জবাব এক যুগ আগেই বুঝে গেছি, কিন্তু মানুষ এর বুঝে যাওয়া আর মেনে নেওয়ার মাঝে সময় লাগে, নিজেকে সেই বুঝা জিনিষকে মেনে নেয়ার জন্যে মানসিকভাবে প্রস্তুত করতে হয়, সেই জন্যেই এখন আমি প্রস্তুত এই প্রশ্নের জবাব দিতে। এতগুলি বছর পরে এখন আমি সেই জানা সত্যকে মেনে নিতে পেরেছি, নিজের জীবনে গ্রহণ করে নিতে শিখেছি।
এর উত্তরে এক কথায় বলতে হয় যে, একমাত্র সক্ষম বীর্যবান শক্তিশালী পুরুষ (ইংরেজিতে বলে Alfa Male) দ্বারাই আমার বাচ্চা হতে হবে, অন্য কারো দ্বারা নয়, এটাই আমার নিয়তি, কেউ যেন অদৃশ্য হাতে আমার জন্যে এটা নির্ধারিত করে দিয়েছেন। পশুদের জগতের জন্যে যেমন এই নিয়ম খাটে, তেমনি, আমার পরিবার ও এর ব্যাতিক্রম নয়। আর আমার ননদ এর স্বামী জয় সিংই হচ্ছেই সেই সক্ষম শক্তিশালী বীর্যবান পুরুষদের মধ্যে অন্যতম (Alfa Male), আমাদের পরিবারের, আমার ননদ এর জন্যে ও আমার জন্যে ও। আমাদের মাঝের যেই সম্পর্ক, সেটার পরিনতি হিসাবে এটাই সঠিক ও সময় উপযোগী ছিলো, হয়ত আমি মানুষের অনেক রটনা তখন বিশ্বাস করতাম না, কিন্তু সেটাই ঠিক ছিলো। প্রতিটি সঙ্কট মুহূর্তে সুমন আমাকে এক রকম ঠেলে দিয়েছে জয় সিং এর সামনে। হয়ত প্রথমে অবচেতন মনে কোন উপায় না পেয়েই, জয় সিং এর বিশাল ব্যক্তিত্বকে মোকাবেলা করার সামর্থ্য বা সাহস কোনটাই আমার স্বামীর ছিলো না, সেই জন্যেই হয়তো। প্রথম আমি সেটা অতো ভালো করে বুঝতে পারতাম না, যে কেন আমার স্বামী নিজেকে আড়ালে রেখে সব সময় সব ঝামেলা মোকাবেলার জন্যে আমাকে সামনে রাখতো, এটা কি আমাকে প্রাধান্য দেয়ার জন্যে নাকি ওর নিজের দুর্বলতা ঢাকার জন্যে, সেটা আমি বহু পরে ধিরে ধিরে বুঝতে পেরেছি।
অবশ্য শুধু যে জয় সিংই আমাদের পরিবারে একমাত্র সক্ষম বীর্যবান পুরুষ, তা নয়। সে ছাড়া ও যে এই পরিবারে আরও সক্ষম শক্তিশালী বীর্যবান পুরুষ আছে, সেটা আমার বিয়ের প্রথম বছর আমি একদমই বুঝতে পারি নি। ওরা ছিলো আমার চারপাশে, ওদের সঙ্গে আমার সময় কাটতো, ওদের সেবা ও করতাম আমি। কিন্তু বুঝতে পারি নি যে, আমি ওদের কাছে এমন কামনার বস্তু। সেটাও আমার ননদ আর আমার স্বামীই আমাকে হাতে ধরে একটু একটু করে বুঝিয়েছে, যে, ওর পরিবারে ও আমার সঙ্গে মিলন আগ্রহী অনেক পুরুষই আছে, তাদেরকে ও আমার সুযোগ দেয়া উচিত, আমাকে গর্ভবতী করানোর জন্যে। ওদের কথা আপনারা ধীরে ধীরে জানতে পারবেন, আমার জীবন কাহিনির ফাঁকে ফাঁকে।
আমার ননদ কিন্তু ওর বড় ভাইকে খুব ভালো করে বুঝতে পেরেছে প্রথম থেকেই, সেই আমাকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে সেই সব সত্যকে, যেগুলি ওই সময়ে আমি মানতে মোটেই প্রস্তুত ছিলাম না। এমনকি জয় সিং যখন আমার আশেপাশে থাকতো, ওই সব সময়ে সুমন আমার সাথে যৌন মিলন থেকে ও নিজেকে বিরত রাখার জন্যে প্রানান্ত চেষ্টা করতো, যার ফলশ্রুতিতে জয় সিং দ্বারা আমার গর্ভ সঞ্চার এর প্রথা শুরু হলো আমাদের পরিবারে। এবং সুমন এই কাজটা করে গেছে বার বার, প্রতিবারই, একইভাবে একই রকম কথার দ্বারা, যার ফলে আমার মনে আর বিন্দুমাত্র অবিশ্বাস ছিলো না যে, সুমনই চায় আমার উর্বর গর্ভে শুধুমাত্র জয় সিং এরই সন্তানই আসুক। আমাদের প্রথম দুটি সন্তানের পিতা জয় সিং, ওদের জন্মের পরে আমার স্বামীই আমার সামনে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে ওদের পরিবারের অন্য সক্ষম বীর্যবান শক্তিশালী পুরুষদের, যাদের সঙ্গে যৌন সঙ্গম করা ও যে এই বাড়ির বৌ হিসাবে আমার একটি দায়িত্ব, এই কথা ও আকারে ইঙ্গিতে সেইই আমাকে বুঝিয়েছে, ফলশ্রুতিতে, আমাদের বাকি সন্তানগুলি জয় সিং এর দ্বারা না হয়ে বাকি অন্য পুরুষদের দ্বারা হতে শুরু করে। সবাই, প্রতিটি পুরুষই চায় আমাকে গর্ভবতী করতে। সবাই চায় যেন, আমি তার একটি হলে ও সন্তান আমার পেটে ধারন করি, এমনকি আমার স্বামী ও চায়। সেই সব কথা সে তার ডায়েরিতে স্পষ্ট অক্ষরে লিখে ও রেখেছে।