কী ছাড়া আমাদের চলেই না, এই প্রশ্নের উত্তরে অনেকেই একমত হবেন ফ্রিজের ব্যাপারে। কি শহর, কি গ্রাম—সবখানেই ঘরে ঘরে ফ্রিজ। বর্তমান সময়ে, বিশেষ করে নাগরিক জীবনে ফ্রিজ ছাড়া চলা প্রায় অসম্ভব। জীবনকে যা কিছু সহজ করেছে, তার মধ্যে অনেকেই প্রথম দিকে রাখবেন ফ্রিজকে। তবে হাতের কাছে যা পেলেন, তা–ই চট করে ঢুকিয়ে দিলেন ফ্রিজে, ব্যাপারটা তা নয়। অনেক কিছুই ফ্রিজে রাখা ঠিক না। যেমন? সেই আলাপ নিয়েই এই লেখা।
যেকোনো ধরনের শাক বা পাতা ফ্রিজে রাখা উচিত না। এগুলো অধিক পচনশীল। ফ্রিজে রাখলে যতক্ষণ ফ্রিজে থাকে ভালো থাকে। ফ্রিজ থেকে বের করলেই নেতিয়ে পড়ে। এগুলো টাটকা খেয়ে ফেলা উচিত। তুলসীপাতা ফ্রিজে রাখলে ওই পাতা ফ্রিজের অন্যান্য খাবারের ঘ্রাণ শুষে নেয়। তাই সেই তুলসীপাতা আর ব্যবহারযোগ্য থাকে না। ফুলের মতো বাটিতে পানি নিয়ে তাতে তুলসীপাতা রেখে কয়েক দিন সংরক্ষণ করা যেতে পারে। মরিচও স্বাভাবিক তাপমাত্রায় বেশি ভালো থাকে। মিষ্টিকুমড়াও ফ্রিজে রাখা ঠিক না।
কোনো ধরনের শাক বা পাতা ফ্রিজে না রাখার চেষ্টা করবেন
কাঁচা বা পাকা কোনো টমেটোই ফ্রিজে রাখবেন না। টমেটো কাঁচা হলে বাইরে এমন জায়গায় রাখুন, যেখানে আলো–বাতাস চলাচল করতে পারে। আর পাকা টমেটো হলে সালাদ করে, রান্না করে বা টমেটো কেচাপ বানিয়ে খেয়ে ফেলুন। এই বেলা বলে রাখি, টমেটো কেচাপও ফ্রিজে রাখবেন না। স্বাভাবিক তাপমাত্রাতেই তিন মাস ভালো থাকবে। তরমুজ, বাঙ্গি ফ্রিজে রাখবেন না। এতে এগুলোর অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট দ্রুত ভেঙে যায়। তবে তরমুজ কেটে চার ঘণ্টা পর্যন্ত ফ্রিজে রেখে খাওয়া যাবে। এর বেশি না রাখাই ভালো। মধুও স্বাভাবিক তাপমাত্রায় ভালো থাকে। ফ্রিজে রাখলে এর শ্বেতসার অধিক ঘন হয়ে জমে দানা দানা হয়ে যেতে পারে।
কাঁচা বা পাকা কোনো টমেটোই ফ্রিজে রাখবেন না
শর্করা–জাতীয় খাবারের মধ্যে অন্যতম আলুও ফ্রিজে রাখা যাবে না। রাখলে এর শ্বেতসার ভেঙে যায়, আলু নরম হয়ে পড়ে। ফলে আলুর স্বাদ নষ্ট হয় আর মুখে নিলে ‘বালু বালু’ লাগে। খোলা ঝুড়িতে স্বাভাবিক তাপমাত্রায় ছায়ায় আলু আর মিষ্টি আলু সংরক্ষণ করা যায়। আলুর মতো মিষ্টি আলুও ফ্রিজে রাখলে এর গঠন আর স্বাদে পরিবর্তন আসে। আলু তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যায়। ফলে সেখানে শর্করার পরিমাণও বেড়ে যায়।
আলুও ফ্রিজে রাখা যাবে না
কফি, পাউরুটি ফ্রিজে না রাখলেই ভালো। কফি বায়ুরোধী পাত্রে রাখতে হবে। ফ্রিজে রাখলে আর্দ্রতা ও স্যাঁতসেঁতে পরিবেশের কারণে কফি বিন বা পাউডার নষ্ট হয়ে যেতে পারে। বেকারি বিশেষজ্ঞরা পাউরুটি ফ্রিজে না রাখার পরামর্শ দেন। ফ্রিজে রাখলে ঠান্ডায় পাউরুটি শুকিয়ে যায় ও স্বাদ নষ্ট হয়ে যায়। পাউরুটি স্বাভাবিক তাপমাত্রায় দুই থেকে চার দিন ভালো থাকে। তবে ফ্রিজে ৭ থেকে ১৪ দিন গুণাগুণ অক্ষুণ্ন থাকে। যদিও খেতে ভালো লাগে না।
পাউরুটি ফ্রিজে না রাখলেই ভালো
যেকোনো পিঠা, মিষ্টি, কেক, কুকিজ ফ্রিজে রাখলে ঠান্ডায় এগুলোর স্বাদ নষ্ট হয়ে যায়। এসব খাবার বাইরে এয়ারটাইট বাক্সে রাখলে ভালো থাকে। শুকনো ফল বা ড্রাই ফ্রুটসও কখনো ফ্রিজে রাখা উচিত না। এতে শুকনো ফলগুলো নরম হয়ে স্বাদ হারিয়ে ফেলে। গুঁড়া মসলা ফ্রিজে রাখলেও দ্রুত নষ্ট হয়। গুঁড়া মসলা অন্ধকার আর শুষ্ক স্থানে স্বাভাবিক তাপমাত্রায় রাখলে ভালো থাকে।
পেঁয়াজ, রসুন ও আদা ফ্রিজে না রাখাই ভালো। কেননা এগুলো শুকনো জায়গায় ভালো থাকে। ফ্রিজের আর্দ্রতায় দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। বেটে ফ্রিজে রাখলেও ঘ্রাণ আর গুণাগুণ কমে যায়। তবে ভালো থাকে। আপেলের মিষ্টি ও রসাল স্বাদ অক্ষুণ্ন রেখে খাওয়ার জন্য বাইরে স্বাভাবিক তাপমাত্রায় রাখতে হবে। ফ্রিজে রাখলে স্বাদ নষ্ট হবে আর কচকচে ভাবটিও থাকবে না। কলা, আনারস, অ্যাভোকাডো ছাড়াও পিচ, চেরি, প্লুম, লেবু ও কমলার মতো সাইট্রাস–জাতীয় ফল ফ্রিজে রাখবেন না।
আপেলের মিষ্টি ও রসাল স্বাদ অক্ষুণ্ন রেখে খাওয়ার জন্য বাইরে স্বাভাবিক তাপমাত্রায় রাখতে হবে
রান্নায় ব্যবহৃত তেল স্বাভাবিক তাপমাত্রাতেই ভালো থাকে। তবে বাদামের তেল ফ্রিজে রাখতে হয়। আচারও স্বাভাবিক তাপমাত্রায় রাখলে স্বাদ, গন্ধ ও গুণাগুণ অক্ষুণ্ন থাকে। জ্যাম আর জেলির বেলায়ও একই কথা খাটে। কোনো ধরনের সালাদ ড্রেসিং ফ্রিজে রাখা ঠিক না।