দুধ একটি আদর্শ খাবার। এতে আয়রন ও ভিটামিন সি ছাড়া প্রায় সব খাদ্য উপাদানই রয়েছে। শরীরে ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণে চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদেরা দুধ খেতে বলেন। কারণ, আমাদের দৈনন্দিন খাবারে ক্যালসিয়ামের প্রধান উৎস দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার। ১০০ গ্রাম দুধে ক্যালসিয়াম থাকে ৯৫০ মিলিগ্রাম। দুধের ল্যাকটোজ থেকে উৎপন্ন ল্যাকটিক অ্যাসিড ক্যালসিয়াম পরিশোষণ বৃদ্ধি করে। তাই দুধের ক্যালসিয়াম সবচেয়ে বেশি শোষিত হয়।
তবে ল্যাকটোজ ইন্টলারেন্স, আইবিএস ও অন্য কোনো হজমজনিত সমস্যার জন্য অনেকেই দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার খেতে পারেন না। তাই আমাদের জানতে হবে, দুধের বিকল্প কোন কোন খাবার থেকে সমপরিমাণ ক্যালসিয়াম পাওয়া যেতে পারে। দুধ খেতে না পারলে বিকল্প এসব খাবার থেকেই দৈনিক ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণ করতে হবে।
সামুদ্রিক মাছ: চর্বিযুক্ত সামুদ্রিক মাছে ক্যালসিয়াম থাকে। প্রধানত স্যামন ও সার্ডিন–জাতীয় মাছে প্রচুর ক্যালসিয়াম থাকে। এ ছাড়া কাঁটাসহ যেকোনো মাছেই, যেমন মলা, কাঁচকি ইত্যাদি মাছ থেকেও ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়।
আমন্ড ও কাজুবাদাম: প্রোটিন, পটাশিয়াম, ভিটামিন ই এবং আয়রনের পাশাপাশি আমন্ড প্রতিদিনের ক্যালসিয়ামের চাহিদা অনেকাংশে পূরণ করতে সক্ষম।
কমলালেবু: ভিটামিন সি ও ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণে ভালো কাজ করে কমলালেবু। একটি কমলালেবু মানেই শরীরে ৬০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম।
সবুজ শাকসবজি: পালংশাক, বাঁধাকপি, ব্রকলি, শালগম, লেটুসপাতা, মাশরুম, ঢ্যাঁড়সসহ বিভিন্ন ধরনের শাকসবজিতে প্রচুর ক্যালসিয়াম রয়েছে। ঢ্যাঁড়স, ব্রকলিও উদ্ভিজ্জ ক্যালসিয়ামের খুব ভালো উৎস। এ ছাড়া কাঁচকলা, বিট, কচু, কচুর মুখী, মিষ্টি আলু, ওল, ধনেপাতা, মিষ্টিকুমড়া, বরবটি ইত্যাদিতেও ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়।
আমলকী: আমাদের ধারণা, আমলকী মানেই ভিটামিন সি। কিন্তু এতে ভালো পরিমাণে ক্যালসিয়ামও রয়েছে। ১০০ গ্রাম আমলকী থেকে ২৫ মিলিগ্রামের মতো ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়।
চিয়া সিড ও বেসিল সিড (তোকমা): আমরা অনেকেই চিয়া সিড ও তোকমাকে এক মনে করি। তোকমা হচ্ছে বেসিল সিড। ১০০ গ্রাম বেসিল সীডে ১৭৭ মিলিগ্রাম এবং ১০০ গ্রাম চিয়া সিডে ৬৩১ মিলিগ্রামেরও বেশি ক্যালসিয়াম থাকে।
সয়াবিনের তৈরি খাবার: সয়াবিন বা সয়াবিনের তৈরি খাবার ক্যালসিয়ামের খুব ভালো উৎস।
এ ছাড়া ১০০ গ্রাম পাবদা মাছে ৩১০ মিলিগ্রাম, শজনেপাতায় ৪৪০ মিলিগ্রাম, ট্যাংরা মাছে ২৭০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে। তিলেও প্রচুর ক্যালসিয়াম থাকে। আখরোট, শজনেপাতা, পুদিনাপাতা, শর্ষেশাক, কুমড়ার বীজ, সূর্যমুখীর বীজ, চিংড়ি শুঁটকি ইত্যাদি হলো উচ্চ ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার।
রান্নায় ব্যবহৃত আনুষঙ্গিক উপকরণও হতে পারে ক্যালসিয়ামের ভালো উৎস। যেমন ১০০ গ্রাম জিরায় ১ হাজার ৮০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে। ১০০ গ্রাম যোয়ানে ১ হাজার ৫২৫ মিলিগ্রাম, শুকনা নারকেলে ৪০০ মিলিগ্রাম, শর্ষেতে ৪৯০ মিলিগ্রাম, রাজমা ডালে ২৬০ মিলিগ্রাম, চানা ডালে ২০২ মিলিগ্রামের মতো ক্যালসিয়াম থাকে।
* লেখক: ফাহমিদা হাশেম | জ্যেষ্ঠ পুষ্টিবিদ, ল্যাব এইড কার্ডিয়াক হাসপাতাল, ঢাকা