মা করুণ দৃষ্টি নিয়ে আমার দিকে তাকাল।
"আমি তোমার দুঃখ কষ্ট মনখারাপ সব কেড়ে নিতে চাই তোমার কাছে থেকে। তোমাকে হাসি খুশি দেখতে চাই মা"।
মা মাথা নাড়ল।
আমি বললাম, " এখন কয়েকদিন বাবা নিজের কাজে ব্যস্ত থাকবেন। তাই শুধু আমি আর তুমি এই মুহূর্ত গুলো একসঙ্গে থেকে উপভোগ করবো। আজ থেকে আমি তোমার বন্ধু। আর তুমি আমার বান্ধবী"।
মা হাসল।
জিজ্ঞেস করলাম, "রান্না হয়ে গেছে মা?"
মা বলল, " না রে মাছের ঝালটা এখনও বাকী আছে"।
আমি বললাম, "থাক না মা। আর ঝাল বানাতে হবে না। ভাজা মাছ দিয়েই ভাত খেয়ে নেবো"।
মা হাসল, "বা রে তুই যে বলতিস দাদাই মারা যাওয়ার পর সেদ্ধ সেদ্ধ খেয়ে তোর মুখে অরুচি ধরে গেছে"।
আমি বললাম, " থাক । আজ নয়। আজ দাদাইয়ের কথা উঠল যখন,দাদাইয়ের গল্পই শুনবো তোমার কাছে থেকে"।
"কি গল্প শুনবি বাবু?"
"তোমার গল্প মা। দাদাইয়ের গল্প। তোমার ছেলে বেলার গল্প… সব শুনবো"।
রান্নায় মনোযোগ দিয়ে মা বলল, "বেশ ভালো কথা। আগে স্নানটা করে আয়। তারপর দু'জন মিলে খেয়ে একসঙ্গে বসে আমার গল্প শোনাবো"।
মা'র কথা মতো আমি স্নানে গেলাম। কিছুক্ষণ পর বেরিয়ে দু'জনে খেতে বসলাম। আজ মা রান্না করেছিলো গাজর দিয়ে বাঁধাকপির তরকারী, মেথির শাক, বেগুণ ভাজা, মাছ ভাজা এবং মুসুর ডাল।
খাওয়ার আগে মা বাবাকে ফোন করে জেনে নিয়েছিলো যে তিনি খেয়েছেন কি না?
বাবা জানিয়েছিলেন যে তিনি খেয়ে নিয়েছেন এবং ফিরতে রাত হয়ে যাবে।
II ৬ II
খাওয়ার পর দুপুরবেলা মা সোফার মধ্যে বসে ছিল। আমি গিয়ে তাঁর কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লাম। মা আমার চুলের উপর হাত রাখল।
আমি তাঁর দিকে তাকিয়ে বললাম, "এবার বল না মা"।
"কি বলবো বাবু?" মা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে জিজ্ঞেস করলো।
"দাদাইয়ের গল্প"।
"কি গল্প বাবু?"
আমি সোফার মধ্যে উবুড় হয়ে শুয়ে পড়লাম। দু'হাত থুতনিতে রেখে মা'র দিকে চোখ মেলে তাকালাম, "তোমার কাছে দাদাই কেমন মানুষ ছিলেন মা?
মা হাঁফ ছেড়ে বলল, "তোর দাদাই আমার সব চেয়ে কাছের মানুষ ছিলেন। পথিকৃৎ যাকে বলে"।
আমি মনোযোগ দিয়ে মা'র কথা গুলো শুনছিলাম, "আচ্ছা। দাদা মশাই তো ভীষণ রাগী ছিলেন। গম্ভীর তাঁর ব্যক্তিত্ব ছিল। তিনি তোমাকে কড়া অনুশাসনে রেখে ছিলেন তাই না? হয়তো তুমি ভয় পেতে তাঁকে। ভুল করলে প্রহার দিতেন"। আমি হাসলাম।
মা সিলিঙের দিকে চেয়ে বলল, "না। তেমন কিছুই না। গোটা পৃথিবীর কাছে হয়তো বাবা কোঠর, রাগী, দাম্ভিক মানুষ ছিলেন। কিন্তু আমার কাছে তিনি সহজ সরল মানুষ ছিলেন। একজন পিতাপুত্রীর যেমন গভীর সম্পর্ক হয়। ঠিক সেই রকম"।
মা হাসল, "আর অনুশাসনের কথা বলছিস। ওটার জন্য ভয় দেখানোর প্রয়োজন হয়না। আমি ছোট থেকেই বাবা মায়ের অনুগত ছিলাম। শিক্ষক পরিবারে জন্ম বলে শিষ্টাচার হয়তো রক্তে ছিল। প্রহার, মারধর তো দূরের কথা। তোর দাদাই কোনদিন আমায় বকেছে বলে মনে পড়ছে না। রাঙা চোখ দেখিনি তাঁর কোনোদিনই। মুখে শুধু "মা" ছাড়া আর কোন শব্দ শুনিনি………। হ্যাঁ তবে তোর দিদা আমায় ভালোই শাসনে রাখতেন। পেটাতেন। বকতেনও খুব। তখন আবার বাবাই মা'কে বলতো আমাকে না বকতে। পরে একটা সময়ের পর অবশ্য তোর দিদাই আমার প্রিয় বন্ধু হয়ে দাঁড়ায়। আমার সুখ দুঃখ ভাগ করে নেওয়ার একমাত্র মানুষ"।
মা'কে বলতে দিচ্ছিলাম। মা যেন নির্দ্বিধায় সব কিছু বলে। প্রাণ খুলে মনের ভাব প্রকাশ করে। আমি শুধু শুনছিলাম।
জিজ্ঞেস করলাম, " দিদা কখন থেকে তোমার কাছে প্রিয় বান্ধবীর মতো হয়ে দাঁড়ায় মা?"
মা মুখ নামিয়ে স্বশব্দে হাসল, "প্রত্যেক মায়ে দেরই একটা সময়ের পর নিজ সন্তান দের কাছের মানুষ হয়ে দাঁড়াতে হয় বাবু। বিশেষ করে মেয়ের মা দের"।
আমি অবাক হলাম। তিন্নির কথা গুলো মনে পড়লো। মা মেয়ের অবাধ বন্ধুত্বের কথা। বুঝছিলাম অনেক কিছু।
"কেন মা? ছেলে আর মেয়ের মধ্যে কি তফাৎ আছে? মায়ের তো ছেলে মেয়ে উভয়ের ভালো বন্ধু হওয়া উচিৎ। এক্ষেত্রে মেয়েরা কেন বেশি অগ্রাধিকার পাবে?"
মা আবার হাসল, "ওটারও একটা ব্যাপার আছে বাবু। মেয়েদের বেড়ে ওঠা আর ছেলেদের বেড়ে ওঠা এক জিনিস নয়। মেয়েদের একটা বিরাট পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। সে সময় মেয়েদের মনের অবস্থা অনেক টাই উতলা সাগরের মতো হয়"।
"আমি ঠিক বুঝলাম না মা"।
মা আমার দিকে ঘাড় ঘোরালো, "সে সময় আমিও ঠিক বুঝতে পারিনি বাবু। তোর দিদাও হেঁয়ালির মতো কথা গুলো বলছিল সব"।
"কি কথা মা?"
মা মৃদু হেসে, "সে বলেছিল ঈরা, পিঙ্গলা, সুষুম্নার সংযোগ স্থলে যখন জোয়ার আসবে তখন আমায় জানাবি"।
আমি অবাক হলাম, "কীসব বলছো মা? ওগুলো আবার কি?"
মা হাসল, "আমিও সে সময় বুঝিনি। আর মা'কে প্রশ্নও করিনি। তারপর একদিন। ক্লাস সেভেন কি এইটে পড়ি। সত্যিই সেখানে জোয়ার আসে। রক্তের জোয়ার। তাও আবার স্কুলের মধ্যে। ভীষণ ভয় পেয়ে যায়। ঘরে এসে তোর দিদাকে জানাই। তোর দিদা তো রীতিমত চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলো। আমাকে বকেও ছিল। কেন আমি তাঁকে আগে জানাই নি। আমিও তোর দিদাকে বলেছিলাম তুমি তো বলনি এই বিষয় নিয়ে কোনোদিন। দিদা ভেবেছিলো আমি নাকি জানি। তাই সাংকেতিক অর্থে বলেছিলেন। পরে ব্যপারটা জানায় তিনি তাঁর উপযুক্ত ব্যবস্থা নেন। এবং পরে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের মা,মেয়ের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক তৈরি হয়"।
আমি কৌতূহল নিয়ে, "মা তুমি কি মেন্সটুরেশন নিয়ে বলছো কি?"
মা উত্তর দিলো, "হ্যাঁ। সাধারণ ভাষায় যাকে বলে পিরিয়ড"।
আমি ন্যাকা গলায় বললাম, "দিদারও যতসব। সোজা ভাষায় বললেই হয়"।
মা হাসল, "শুরুর দিকে সবকিছু অতো সহজে বলা যায় না বাবু। মেয়ে মানুষের সহজাত চিন্তাই হল গোপনতা। যদিও সে'বয়সে শারীরিক যে পরিবর্তন হয় তা লক্ষ্যনীয়। তাসত্ত্বেও"।
"আমি বুঝতে পারছি মা। তুমি ঠিক বলেছো। ছেলেদের সেই পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়না। তাই হয়তো বাপ ব্যাটার মধ্যে সেই বন্ধুত্বটা তৈরি হয়না। যেটা মা মেয়ের মধ্যে হয় কি বল?" আমি হাসলাম।
মা একটু ভেবে বলল, "হ্যাঁ তা হয়তো ঠিক। তবে পুরোপুরি ঠিক না। সে'সময় মেয়েদের একটা সীমিত পরিসরের মধ্যে থাকতে হতো। জ্ঞান অর্জনের এখনকার মতো বিস্তীর্ণ মাধ্যম ছিল না। স্বভাবতই একজন অভিজ্ঞ মানুষের প্রয়োজন থাকতো সব সময়"।
"ক্লাস সেভেনে পড়ার সময় তোমার প্রথম পিরিয়ড স্টার্ট হয় তাহলে? মা?"
আমার কথা শুনে মা, "হুম" বলে চুপ করে রইল। আমার কৌতূহল আরও বাড়ল। মা আমাকে আজ উচিৎ যৌন শিক্ষা দিয়েই থাকবে।আজ মা'কে খুবই খোলামেলা দেখছি।
"বল না মা। কি হয়েছিলো সেদিন। তোমার অনুভূতিই বা কি রকম ছিল? শুনেছি নাকি খুব ব্যথা হয় পেটে?"
মা একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলা শুরু করলো, "সেদিন ক্লাসের বেঞ্চে বসেছিলাম। সাদা শাড়ি পরতাম তখন। রক্তের দাগ দেখে ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম কোথাও আঘাত পেয়েছি হয়তো। বাড়িতে মা'কে বলতে ভয় পাচ্ছিলাম। পরে সেদিন'ই দেরী করে কথাটা জানায়। মা ধমক দেন। পরে ব্যপারটা বুঝতে পেরে আমাকে অভয় দেন। সে সময় এখনকার মতো স্যানিটারি ন্যাপকিন ছিল না। সুতির কাপড় ব্যবহার করতে দেন"।
মা'র কথা গুলো শুনে কোথায় হারিয়ে গিয়েছিলাম। মনোযোগ দিয়ে শুনছিলাম। সেই সময়ে মায়ের কষ্টটা বোঝার চেষ্টা করছিলাম।
"এতে তোমার ভালোই হয়েছিলো মা। দিদার মতো বান্ধবী পেয়েছিলে তুমি"।
মা অন্যমনস্ক হয়ে হাসল। তারপর খানিক চুপ করে রইল। আমিও তাঁর মুখ পানে চেয়ে ভাবতে লাগলাম আর কি প্রশ্ন করা উচিৎ। আমাদের ছেলে মানুষ দের মধ্যে একটা স্বভাব প্রচণ্ড রূপে থাকে। তা হল প্রিয় মানুষ টির অতীত জানার কৌতূহল। তাই একটু আড়ষ্ট ভাব নিয়েই জানার চেষ্টা করলাম।
"মা তোমার কোন প্রেমিক হয়নি? অথবা কাউকে তুমি প্রেম করেছো। এমন কেউ?"
মা হেসে আমার গালে আলতো করে একখানা চাটি মারলো, "মা'র প্রেম কাহিনী জানার বড় ইচ্ছা ছেলের……! প্রেম তো আমি একজন কেই করেছি বাবু। আর সে হলেন মিস্টার অনুপম মুখোপাধ্যায়"।
আমি মাথা নাড়লাম, "না না এটা তো ডিপ্লোম্যাটিক আনসার হয়ে গেলো মামণি। আমি তোমার বিবাহ পূর্ব প্রেমিকের কথা জানতে চাইছিলাম"।
মা আবার হাসল, "তিনিই আমার বিবাহ পূর্ব প্রেম সোনা"।
আমি ভ্রু কপালে তুলে জিজ্ঞেস করলাম, "আর তুমি যে বল তোমাদের দেখাশোনা করে বিয়ে?"
মা মাথা নেড়ে উত্তর দিলো, "হ্যাঁ তাতে কি হয়েছে? দেখাশোনা করে বিয়ে করলে প্রেম করতে নেই বুঝি?"
মা'র খাপছাড়া কথা এবং উত্তরের মধ্যেই বোঝা যাচ্ছিলো মা কিছু লুকাচ্ছে অথবা বলতে চান না। এদিকে আমি এটা জানা সত্ত্বেও যে যদি মা'র কোন পুরনো সম্পর্ক থেকে থাকে,সেটা শুনলে আমার হৃদয় ছিন্নভিন্ন হয়ে যাবে। কিন্তু মন মানতে চাই ছিল না। মা'র যদি কোন অতীত সম্বন্ধ না থাকে তাতেই আমি ভীষণ খুশি হবো। এটা অনেকটা জেনে বুঝে নিজেকে আঘাত করার মতো ব্যপার হচ্ছে। অথচ আমি পিছু পা হচ্ছি না। আমি জানতে চাই মা শুধু আমার। তাঁর শরীর মনের উপর রাজত্ব কেবল আমারই তাতে সে অতীত হোক অথবা বর্তমান। আমি জেনে নিতে চাই মা'র জীবনের সময় রেখার প্রত্যেকটা পর্যায়ে শুধু আমি ছাড়া আর দ্বিতীয় মানুষ কেউ থাকবে না। থাকতে পারে না।
"আহ মা। ওভাবে উত্তর দেওয়া যায় না"। আমি গলা ঝাড়লাম, "ইয়ে মানে তোমার সৌন্দর্যতার অ্যাডমাইরার তো কেউ ছিল। যিনি তোমার রূপের প্রশংসা করতেন। যিনি তোমার রূপের দ্বারা আহত হয়েছিলেন। যেমন তোমার জিবে জল এনে দেবার মতো সুগঠিত পাছা দেখে কুপোকাত হয়ে পড়ে ছিল এমন কেউ?"।
আমি হাসলাম।
মা আমার কথা শুনে সজোরে একখানা থাপ্পড় মারল আমার ডান কাঁধে।
সে হেসে উত্তর দিলো, "ধ্যাৎ! অসভ্য কোথাকার। মা'র প্রেম নিয়ে এতো জানার কি আছে? বলবো না যাহ্"।
আমার ডান হাত তাঁর বাম ঊরুর উপর রাখলাম, "আহ মা। প্লিজ এমন করো না। ভালোই তো চলছিলো। তোমাকে এই ভাবে খোশ মেজাজে দেখে আমার খুব ভালো লাগছে…। বল না। আমি তোমার বন্ধুই তো"।
মা একটু দম নিয়ে পুনরায় বলা শুরু করলো, "সৌন্দর্যতার প্রশংসক পুরুষ মানুষের থেকে মেয়ে মানুষ বেশি ছিল আমার জীবনে"। মা হাসল, "আর নারীর সৌন্দর্যতা কি তাঁর একটা অঙ্গ থেকে হয় নাকি পাগল! নারীর সর্বাঙ্গ রূপ, তাঁর আচরণ, শিক্ষা, তাঁর বুদ্ধিমত্যা সব মিলে তাঁকে সুন্দরী বানায়। কোন একটা বিশেষ গুণ তাঁকে অনন্যা বানায় না"।
আমি মৃদু হাসলাম, "হ্যাঁ তা তুমি ঠিক বলেছো মা। আর কারা তোমার রূপের কমপ্লিমেনট দিতো শুনি?"
মা বলল, "অনেকেই। বান্ধবী, আত্মীয় স্বজন। কেউ বলতো আমার চুল এতো গোছালো কেন? কেউ বলতো ত্বক এতো উজ্জ্বল কেন? কি লাগাই? এইসব। পরে তোর দিদাকে এসে বলাতে তিনি কড়া নির্দেশ দিতেন,আমার মেয়েকে নজর দেওয়া হচ্ছে। কাউকে কিছু বলবি না। তোর দিদা তো কাঁচা হলুদ, ব্যাসন, আর ঘৃতকুমারী ছাড়া কিছু লাগাতেই দিতেন না"।
আমি থুতনি তে হাত রেখে, "হুম" শব্দ করে মা'র কথা গুলো মনোযোগ দিয়ে শুনছিলাম।
ওই দিকে মনে মনে কি ভেবে মা একবার হাসল। তারপর বলল, "আর তুই যেমন প্রশংসা শুনতে চাইছিস সেটা বোধয় একবারই পেয়েছিলাম। বাকী গুলো সব হয় মস্করা অথবা ঈর্ষা"।
বললাম, "কেমন প্রশংসা শুনি"।
মা আবার অতীতে ফিরে গেলেন, "তখন আমি এম.এ দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। বয়স তখন কুড়ি একুশ। ভরা যৌবন যাকে বলে"। মা দাঁত বের করে হাসল, "তবে যৌন চেতনা তখনও পূর্ণতা পায়নি।বা সেটা নিয়ে মাথা ঘামাতাম না। নিজের শিক্ষার উপর মনোনিবেশ থাকতো চব্বিশ ঘণ্টা"।
বললাম, "হ্যাঁ তারপর?"
মা বলল, "ইচ্ছা ছিল শিক্ষিকা হবার। তোর দাদাইয়ের মতো। বাড়িতেও তাঁর পূর্ণ সহমত ছিল"।
বললাম, "হ্যাঁ বাবা যখন টিচার ছিলেন। মেয়ের তা হওয়াটাই স্বাভাবিক"।
মা আমার মাথায় হাত বোলালো, "তো সেই সময়। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বার সঙ্গে সঙ্গেও বেসিক টিচার্স ট্রেনিং টাও করে নিচ্ছিলাম। আর সপ্তাহে দুই দিন করে আমাদের ভিন্ন ভিন্ন স্কুলে গিয়ে ছাত্র ছাত্রী দের পড়াতে হতো। যেমন স্কুল টিচার্স রা করেন। সেই সময় আমার একজন স্কুল শিক্ষিকা দিদির সঙ্গে আলাপ হয়েছিলো। মিঠুদি।আমাকে অনেক ভালবাসতেন। অনেক সময় আমরা স্টাফরুমে একসঙ্গে বসতাম। যখন ক্লাস থাকতো না। তিনিই আমাকে বারবার দেখতেন। আপাদ মস্তক"।
"হুম" বলে পুনরায় তাঁর কথায় মন দিলাম।
মা বলল, "এখন থেকে বছর কুড়ি আগে। বোঝায় যায়। তখনকার রূপ আর এখনকার রূপের মধ্যে পার্থক্য থাকবে। যদিও তখনও আমার শরীর ভরাটই ছিল।যোগ ব্যায়ামের মধ্যে থাকতাম। এখনকার মতো মোটা হয়ে যাইনি"।
কল্পনার মধ্যে কুড়ি বছর বয়সী মা'র কথা মনে করতে লাগলাম। মা'র পুরাতন ছবি, বিয়ের ছবি, এখনকার রূপ, এখনকার কুড়ি বছরের মেয়েদের চলন গঠন মিলিয়ে মনে একটা রূপের আকার দিলাম। মা'র শুভ্র গায়ের রং এবং তাঁর মাথার ঢেউ খেলানো চুল দিয়ে যা আমার কল্পনায় ভেসে উঠল তাঁর রূপ কোন অংশেই বাগদেবীর থেকে কম নয়। সাদা শাড়ি পরে হাত দিয়ে বুকে বই জড়িয়ে ক্লাস রুমের দিকে হেঁটে যাচ্ছে।
মা বলে যাচ্ছিলো, " তিনিই একদিন টিফিন আওয়ারে একলা পেয়ে আমায় জিজ্ঞেস করলেন। এতো সুন্দর পরিপাটি করে কে শাড়ি পরিয়ে দেয়? আমি অবাক হয়ে বলেছিলাম।কেন আমি নিজেই পরি। তিনি হাসলেন। বললেন বাহ শাড়ির কুচিটা বেশ সুন্দর করে তৈরি করেছো। আর চুলও খুব সুন্দর বাঁধতে জানো। তাঁর প্রশংসায় আমি মৃদু হেসে ছিলাম। তিনি বললেন, আসলে তুমি সত্যিই সুন্দরী। আমার কোন ভাই থাকলে তাঁর জন্য তোমাকে বউ করতাম।স্বামী সুখী হবে তোমাকে পেয়ে। আমি একটু লজ্জা পেয়েছিলাম। কারণ বিয়ের ব্যপারে বাড়িতে তখনও কোন আলোচনা শুরু হয়নি। আমি মুখ নামিয়ে ছিলাম। তিনি বললেন তোমার বুক, পেছন সব ভরাট। তাই শাড়ি পরলে বেশ মানায়। বিশেষ করে মেয়েদের ভারী পেছন না হলে শাড়িতে মানায় না। আমি লজ্জার হাসি দিয়েছিলাম। তিনি নিজের দিকে দেখিয়ে বললেন এই দ্যাখো না। আমার শরীর কেমন বেঢপ বানিয়ে ফেলেছি। বুক ঝুলে পড়েছে আর পেছন সমতল। পেটও বেড়ে গেছে। এতে কি আর শাড়ি মানায় বল দেখি"।
আমি বললাম, "হ্যাঁ মা। তিনি ঠিকই বলেছিলেন। শাড়িতেই নারী সুন্দরী। আর তোমার বুক পেছন নিয়ে তো কোন সংশয় নেই"।
মা আবার আমার মাথার চুলে মুঠি ধরল।
"আহ ছাড়ো মা! তুমি বলো। বেশ শিক্ষিকার মতো বলছো তুমি"।
"আমার আর কিছু বলার নেই বাবু। আমি এবার উঠি। বেলা হতে চলল। যাই ছাদে মেলা কাপড় গুলো নিয়ে আসি"।
আমি মা'র বাম হাত চেপে ধরলাম, "অনেক টাইম আছে মা। আরও গল্প বলো আমি শুনছি"।
"আর কিছু বলার নেই বাবু। সব গল্পই তো বলে দিলাম তোকে"।
II ৭ II
আমি মায়ের হাত ধরে তাঁকে পুনরায় সোফায় বসতে বললাম। তারপর কোলে মাথা দিয়ে তাঁর মুখের দিকে তাকালাম। মা আমার চুলে তাঁর ডান হাতের আঙুল ঢুকিয়ে চিরুনির মতো বুলিয়ে যাচ্ছিলো।
"মা তুমি আসল গল্প টাই তো বললে না"।
মা নিজের হাত থামাল, "কি আসল গল্প রে বাবু?"
"ওই যে তোমার প্রেমের গল্প। সেটাই তো শোনালে না"।
মা আমার চুলের মুঠি শক্ত করে ধরল।তাতে আমি আরাম পাচ্ছিলাম। মা ভাবুক মূর্তি ধারণ করলো। আবার হয়তো সে অতীতের সাগরে ডুব দেবে। আমি তাঁর চোখ পানে তাকিয়ে অপেক্ষা করলাম। ভয়ও হচ্ছিলো। মা স্মৃতি মন্থন করে কোন দুঃস্বপ্ন না নিয়ে আসে। খানিক ভাবার পর মা মুখ নামালো। আমার চোখের দিকে তাকাল। মা'র চোখ আর আমার চোখ অনেকটাই এক। আমার শারীরিক গঠন শুধু বাবার মতো। লম্বা।
মা বলা শুরু করলো, "তুই যদি জানতে চাস মা'র অতীতে কোন প্রেম ছিল কি না? তাহলে বলবো হ্যাঁ ছিল। তোর মা'ও প্রেম করেছিলো। মন দিয়েছিল কাউকে। তোর মায়েরও মন ছিল। আর পাঁচটা মেয়েদের মতো তোর মা'ও প্রেমের স্বাদ পেয়েছিলো"।
মা'র আবেগ ভরা কথা শুনে আমার বুকটা কেঁপে উঠল। পরক্ষনেই নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম, "হ্যাঁ আর মানুষটি ছিলেন অনুপম মুখোপাধ্যায়। আমার বাবা"।
মা বোমা ফাটালো, "না! তিনি তোর বাবা ছিলেন না। অন্য পুরুষ ছিলেন তিনি"।
কথাটা শোনা মাত্রই আবার আমার বুকে দামামা বাজতে শুরু করলো। কাঁদতে ইচ্ছা করছিলো। যেটা শুনতে চাইছিলাম না সেটাই কানে এলো। কিন্তু উপায় নেই। যখন জানা শুরু করেছি তখন পুরটাই জানবো।হৃদয়ে আঘাত লাগিয়েও এগিয়ে যাবো।
অস্পষ্ট গলায় বললাম, "কে ছিল মা? আমাকে খুলে বল"।
মা বলা শুরু করলো, "যেটা আগে তোকে বলেছিলাম। ইউনিভার্সিটির ফাইনাল ইয়ার। উনিশশো বিরানব্বই সাল। নিজের পড়াশোনায় মগ্ন এক ছাত্রী। বাবা মায়ের অনুগত কন্যা। যার শিক্ষিকা হওয়ার লক্ষ্য ছিল জীবনে। যৌনতা, প্রেম, বিনোদন থেকে যে দূরে থাকতো। সেই মেয়ে একজনের প্রেমে হাবুডুবু খেয়ে সবকিছু ভুলে গিয়েছিলো। অথবা সেকি আদৌ প্রেম ছিল?"
নিজের মধ্যেই মা প্রশ্ন করলো।
আমি বললাম, "সে কে ছিল মা?"
মা বলল, "অনির্বাণ চৌধুরী। ইউনিভার্সিটির নবাগত সহকারী অধ্যাপক। বয়স তিরিশের কাছাকাছি। বুদ্ধিদীপ্ত চেহারা। উষ্ণ রক্ত। এবং সুদর্শন রূপ।উজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব। লিটারেচারের ক্লাস নিতেন। মাথার চুল বড়বড়। গাল ভরা দাড়ি।খাদির পাঞ্জাবী পরতেন আর ব্লু জিন্স। যখন ক্লাস রুমে ঢুকতেন, ছেলে মেয়ে নির্বিশেষ পিন ড্রপ সাইলেন্ট হয়ে যেতো। যদিও তিনি ছাত্র দের সঙ্গে বন্ধুত্ব সুলভ আচরণ করতেন। তাসত্ত্বেও ছেলে মেয়েদের মধ্যে তাঁর প্রতি একটা শ্রদ্ধা ভাব বজায় ছিল। মোটর সাইকেল টার নাম ভুলে গেলাম। ওটা নিয়ে ক্যম্পাস দিয়ে পেরিয়ে গেলে তার শব্দে সবাই জানতে পারতো তিনি এসেছেন"।
জিজ্ঞেস করলাম, " কি বাইক মা? বুলেট? রয়্যাল এনফিল্ড?"
মা বলল, "না না। ওই যে প্রচুর শব্দ হতো। কালো রঙের মোটর সাইকেল ছিল।"
আমি ভেবে বললাম, " ওহ আচ্ছা রাজদূত?"
মা বলল, "হ্যাঁ হ্যাঁ ওটাই। নাম টা খালি ভুলে যাই"।
"যাইহোক তুমি কনটিনিউ করো"।
মা পুনরায় শুরু করলো, "তাঁর ক্লাস করতে ভালো লাগতো আমার। মনোযোগ দিয়ে তাঁর পড়া শুনতাম। ক্লাসে বেশ কয়েকবার চোখাচুখি হয়েছিলো। তাঁর গভীর চোখ দুটো দেখে হৃদয় চঞ্চল হয়ে উঠত। এমন তো নয় যে আমি কলেজের সেরা সুন্দরী ছিলাম। কিন্তু তাসত্ত্বেও তাঁর চোখ আমার দিকে থাকতো। আমি অজান্তেই হারিয়ে যেতাম। তিনি একবার হঠাৎ করেই আমাকে প্রশ্ন করে বসেন। কি প্রশ্ন ছিল সেটা আজও আমার মনে নেই। স্বভাবতই তার উত্তর দিতে পারিনি। তিনি আমায় প্রচুর বকেছিলেন। আর ক্লাসে মেধাবী ছাত্রী হিসাবে পরিচিতি ছিল আমার। এইভাবে সবার সামনে আপমান সহ্য করতে পারিনি। মুখ নামিয়ে কাঁদতে শুরু করে দিয়েছিলাম। তিনি সেটা দেখতে পেয়ে নিজের ভুল বুঝতে পেরেছিলেন। তিনি একটা বিড়ম্বনায় পড়ে গিয়েছিলেন। ক্লাস শেষ হবার পর তিনি আমার সঙ্গে একান্তে কথা বলেছিলেন। নিজে ভুলের ক্ষমা চেয়েছিলেন। একজন শিক্ষক। যিনি আমাদের গুরুজন তিনি ক্ষমা চাইবেন এটাও আমার পক্ষে গ্রহণ যোগ্য ছিল না। আমি নিজের দিক থেকে গ্লানিমুক্ত হতে চেয়ে ছিলাম।আমিও ক্ষমা চেয়েছিলাম। তারপর থেকে একটু একটু করে আমাদের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক তৈরি হতে শুরু করে।
মাঝে মধ্যেই তিনি কোন বাহানায় আমার সঙ্গে কথা বলতে চাইতেন। আমিও তাঁর কথার মধ্যে ডুবে যেতাম।
একদিন ক্যাম্পাসের মধ্য দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলাম। তিনি হঠাৎ আমায় প্রশ্ন করলেন, "এম.এ পাশ করার পর কি করবে ভেবে রেখেছো দেবশ্রী?"
আমি তাঁর দিকে চোখ মেলে উত্তর দিয়েছিলাম, "বেসিক ট্রেনিং করছি স্যার। ভবিষ্যতে শিক্ষিকা হবার ইচ্ছা আছে"।
তিনি মুচকি হেসে বলেছিলেন, "না মানে। বিয়ের ব্যপারে কিছু ভেবে রেখেছো? বাড়িতে আলোচনা হয় এই বিষয়ে? প্রস্তাব ,সম্বন্ধ আসে তোমার?"
আমি লজ্জা পেয়ে বলেছিলাম, "আজ্ঞে না। এখন তো সেরকম কিছু হয়নি। আর বাড়িতে সেরকম আলোচনাও হয়না"।
তিনি হাসিমুখে নির্দ্বিধায় বলেছিলেন, "যদি তোমার বাড়িতে আমার বাবা মা'কে পাঠাই। কিছু মনে করবে তুমি? বা তোমার বাবা মা?"
আমি নিরুত্তর ছিলাম। মুখ নামিয়ে কিছু না বলেই এগিয়ে গিয়েছিলাম। বাড়িতে বাবা মা শুনলে হয়তো রাগ করবেন। মেয়েকে কলেজ পাঠিয়েছি আর মেয়ে কি না প্রেম করে বেড়াচ্ছে। ভেবেই ভয়ে গলা শুকিয়ে গিয়েছিলো। আমার নিরুত্তর মানে আমার দিক থেকে না'ই ছিলো একপ্রকার। কিন্তু তিনি আমার না'কে হ্যাঁ ধরে বসবেন কে জানতো। হ্যাঁ একদিন সত্যিই অকস্মাৎ তাঁরা এসে হাজির হলেন। স্যারের বাবা মা। বাড়িতে আমার বাবা মা তাঁদেরকে দেখে অবাক।
স্যারের বাবা মা খুবই ভালো মানুষ ছিলেন। তিনি আমাকে দেখলেন। পছন্দও করলেন। আমাদের তাঁদের বাড়ি যেতে আমন্ত্রণ করলেন। তোর দাদাই প্রথমে একটু অসহজ ছিলেন। তারপর দেখলেন সম্বন্ধ পক্ষও শিক্ষক পরিবার। পাত্র একটা নাম করা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। তখন তিনি মেনে নেন। পরে আমার বাবা মা'ও তাঁদের বাড়ি যান। তাঁদের প্রস্তাব মেনে নেন। মেয়ের শিক্ষা পূর্ণ হলেই তাঁদের বিয়ে দেওয়া হবে। অনির্বাণ এবং আমি দুজনেই ভীষণ খুশি হয়েছিলাম। তবে আমরা দু'জন কে কথা দিয়েছিলাম যে এই বিষয় নিয়ে কলেজে কেউ জানতে না পারেন। এতে তাঁর সমস্যাও হতে পারে। লোকের মধ্যে বলাবলি শুরু হবে এইসব নিয়ে।
আমরা কলেজে আগের মতোই আচরণ করতাম। তিনি আমার শিক্ষক। আমি তাঁর একজন সাধারণ ছাত্রী।
সময় গড়িয়ে যাচ্ছিলো। বিয়ে হতে হয়তো আরও দেড় দুই বছর সময়। আমরা খুশিই ছিলাম। ব্রহ্মচর্য থেকে গৃহস্থের দিকে অগ্রসর হচ্ছিলাম। যৌনতার খেয়াল আসতো মাথায়। আগে বান্ধবীদের যৌন কৌতুক শুনতে বিরক্ত লাগতো। পরে সেগুলোই ভালো লাগতে শুরু করল আসতে আসতে। ওদের উদ্ভট কথা গুলোকে যৌনতার জ্ঞান মনে করতাম।
"শুনছিস বাবু?" মা আমাকে নাড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো। আমি বর্তমানে ফিরে এসে মা'কে বললাম, "হ্যাঁ গো শুনছি মা। আমি হারিয়ে গিয়েছিলাম একটু। তুমি বলতে থাকো"।
মা আমাকে সতর্ক করলো, "গল্প একটু গভীর হবে কিন্তু। আমি তোকে পুরটাই শোনাতে চাই।"
"তুমি বলে যাও মা। আমি শুনবো"।
মা পুনরায় তাঁর কলেজ জীবনে আমায় ফিরিয়ে নিয়ে গেল। মা বলল, "মেয়েদের হা হা হি হির মধ্যে ছেলেদের যৌনাঙ্গ নিয়ে টিপ্পনী গুলো কেও আমার জ্ঞান মনে হতো। তখনকার দিনে যৌনতা এতো মুক্ত ছিল না। আর সস্তাও ছিল না হয়তো। যৌনতা নিয়ে একটা রাখঢাক বজায় থাকতো সর্বদা। শৌখিন ব্যক্তিরা বড় বড় দামী পাঠ্যপুস্ত্বকের সাহায্যে যৌন শিক্ষা গ্রহণ করতেন। সেই শিক্ষা যদিও আমি একজনের কাছে থেকে গ্রহণ করি…"।
"কার থেকে মা?" জিজ্ঞেস করলাম।
মা বলল, "পরে বলবো। এখন যেটা বলছি, শোন"। মা হাসল, "সেই সময় মেয়েরা বলতো নাকি ছেলেদের বিরাট যৌনাঙ্গ মেয়েদের বুকের মধ্যে রেখে আদর করতে হয়। পতি সুখ নাকি সেভাবেই পাওয়া যায়। আর আমি পুরুষাঙ্গ'ই কেমন হয় তা'ই দেখিনি"।
আমি হাসলাম, "কেন ছোট দের দেখনি?"
মা বলল, "বড় দের কথা বলছিলাম। তার দৈর্ঘ প্রস্ত উচ্চতা সম্বন্ধে ধারণা ছিল না। ওরা যা বলতো তাই মেনে নিতাম। তবে পরে তার কৌতূহল বাড়তে থাকে। মনে মনে বলতাম এখন তো পড়াশোনাও শেষ হয়ে যাবে। সুতরাং এখন সে বিষয় নিয়ে রুচি রাখবো না তো আর কখন রাখবো"।
আমি মা'র কথা গুলো শুনছিলাম। মা কতো সাবলীল ভাবে বলে যাচ্ছিলো নিজের কথা গুলো। আর আমি মন্ত্রমুগ্ধের মতো করে শুনছিলাম তাঁকে।
II ৮ II
ঢোক গিলে মা বলা আরম্ভ করলো, "ধীরে ধীরে দিন পেরতে লাগলো। আমার আর তাঁর দেখা সাক্ষাৎ ওই ক্যাম্পাসের মধ্যেই সীমিত ছিল। সে সময় প্রেম বিবাহ ভালো নজরে দেখা হতো না। কেউ করলেও তাঁর চরিত্রের উপর প্রশ্ন উঠতো। ছেলে মেয়ে রাস্তায় একান্তে কথা বললে লোকে বাঁকা দৃষ্টতে তাকাতো।বাড়িতে কড়া নির্দেশ ছিল। যা হবে বিয়ের পর। বিয়ের আগে দেখা সাক্ষাত সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। সুতরাং আমাদের মেলামেশা বিয়ে অবধি বন্ধ। শুধু ক্যাম্পাসের মধ্যে গুরু শিষ্যার যা আলাপ হয় ওই টুকুই।তবে আমাদের চাওয়া পাওয়ার ব্যবধান দিন দিন কমতে থাকে। তাঁকে মনে মনে নাম ধরে ডাকা শুরু করেছিলাম। তাঁর হাত ধরে ঘুরতে চাই ছিলাম। দীর্ঘক্ষণ একসঙ্গে কথা বলে সময় পার করতে চেয়েছিলাম।
আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে বসন্ত উৎসবের পালা এসে পৌঁছয়। বিরাট সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সঞ্চালন করতে হয়। প্রায় সব ছাত্র ছাত্রী নিজের পছন্দ মতো বিষয় নিয়ে পারফর্ম করে থাকে। আমি নিয়েছিলাম নাচ এবং আবৃতি।কবি ঠাকুরের লেখা নাটক এবং গানে নৃত্য এবং তাঁরই কবিতা পাঠ।
ক্যাম্পাসের মধ্যে অডিটরিইয়ামে আমাদের নাটক, নৃত্য এবং আবৃতির অনুশীলন চলতো। ক্লাস শেষ করে আমরা সেখানে যেতাম এবং সন্ধ্যা নামার আগে বাড়ি ফিরতাম। আমাদের অনুষ্ঠানের পরিচালনায় ছিলেন অনির্বাণ স্যার। তিনিই চেয়ারে সবার অনুশীলন পর্যবেক্ষণ করতেন। সেদিন আমি রবীন্দ্র নৃত্য নাট্যর জন্য পোশাক পরে গিয়েছিলাম। আমায় দেখে তিনি বিস্মিত হয়ে পড়েছিলেন। তা তাঁর চোখের মধ্যে ধরা দিচ্ছিল।
বসন্ত উৎসব অতি নিকটে আসায় আমাদের অনুশীলনের সময় সীমা বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিলো। সেদিন অনেক দেরীও হয়ে গিয়েছিলো। সবাই নিজের কাজ পূর্ণ করে বাড়ি ফিরছিল। আমার কাজ সব চেয়ে শেষে দেখা হবে বলে চিন্তিত ছিলাম। অনির্বাণ স্যার বললেন তিনি আমায় বাড়ি পৌঁছে দেবেন। এবং একটা টেলিফোন করে আমার বাড়িতে জানিয়ে দেওয়া হবে যে আমার দেরী হবে। বাড়িতে যেন চিন্তা না করে। আমি তাঁর কথায় আশ্বস্ত হয়েছিলাম। তিনি সবার অভিনয়, নৃত্য, এবং আবৃতি দেখছিলেন। বোঝায় যাচ্ছিলো এই বিষয়ে তাঁর অগাধ রুচি আছে। তাঁর লেকচার, কথাবার্তার মাধ্যমেও ধরা দিতো যে তিনি নাচ,গান, অভিনয় ভালোবাসেন।
সন্ধ্যা সাতটা বেজে গিয়েছিলো। সব সহপাঠী তখন হয়তো ঘর পৌঁছে গিয়ে থাকবে। আমার নৃত্য শেষ হবার পর স্যার সেদিনের মতো অনুশীলন বন্ধ করতে বললেন। আমরা ক্যাম্পাসের রাস্তার মধ্য দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলাম। তিনি আমার সঙ্গে ছিলেন। তিনি আমায় জিজ্ঞেস করলেন আমার জল তৃষ্ণা অথবা বাথরুমের প্রয়োজন আছে কিনা? আমি মাথা নামিয়ে উত্তর দিয়েছিলাম, "বাথরুম যাওয়ার ছিল"।
তিনি তা শুনে আমাদের সাহিত্য বিভাগের বিল্ডিঙের কাছে এলেন। দারোয়ানের কাছে চাবি চেয়ে নিলেন। বললেন যে চাবি তাঁর কাছেই থাকবে। আগামীকাল তিনি সবার আগে এসে বিভাগের গেট খুলবেন। সুতরাং দারোয়ান বাড়ি ফিরে যেতে পারেন। দারোয়ান স্যারের কথা মতো মাথা নাড়িয়ে চলে গেলেন।
স্যার গেট খুলে আমায় ভেতরে আসতে বললেন। রাতে একলা ভেতরে যেতে আমি ভয় পাচ্ছিলাম। তিনি আমার পেছনে ছিলেন। মেয়েদের বাথরুমের দিকে আমি অগ্রসর হলাম। অবাক হলাম তিনিও আমার সঙ্গে বাথরুমের ভেতরে এলেন। বুক টা কেমন দুরু দুরু কাঁপছিল। ঘাম ঝরছিল আমার মাথা দিয়ে। এমনিতেই নাচের কারণে প্রচুর ঘেমে গিয়েছিলাম। বাহুমূল সিক্ত হয়ে পড়ে ছিল। তাঁকে দেখে আমি একটু ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। আমাদের মধ্যে অপ্রকাশিত প্রেম থাকলেও মনে ভীষণ লজ্জা ছিল। তিনি আমার অতীব নিকটে এলেন। যেন বুক স্পর্শ করবে একে ওপরের। আমি তাঁর মুখের দিকে চাইতে পারছিলাম না। কিন্তু তাঁর গম্ভীর নিঃশ্বাসের শব্দ পাচ্ছিলাম। আমারও শ্বাস ঘন হতে শুরু করে দিয়েছিলো। এমন আজব অনুভূতি আগে কখনও হয়নি। এটাই বোধয় নারীর পুরুষের সংস্পর্শের অনুভূতি।গলা শুকিয়ে আসছিলো আমার। বাথরুমের বেগ ভুলে গিয়েছিলাম। অবশেষে নীরবতা তিনিই ভেঙ্গেছিলেন।
"তোমার বাথরুম যাবার প্রয়োজন ছিল দেবশ্রী"।
আমি থতমত খেয়ে মাথা নাড়লাম, "হুম"।
"আমি এখানে দাঁড়িয়ে আছি। ভয় নেই তুমি নিশ্চিন্তে যাও"।
আমি মাথা নেড়ে শারিবদ্ধ কক্ষের মধ্যে একটাতে ঢুকে পড়লাম। বেরিয়ে এসে দেখলাম তিনি বাথরুমের মুখ্য দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছেন। আমার মুখের দিকে চাইলেন।
"কোন অসুবিধা নেই তো?"