[HIDE]
চলো না, চলো না’
‘ঠিক আছে দাড়াবো না কিন্তু, ওদিক দিয়েই তোমার বাড়ির দিকে হাঁটা দেবো।‘
আমি আর তুলি হাঁটতে শুরু করলাম, পুজোর হ্যাংওভারে রাস্তা প্রায় জনশুন্য। দু একটা রিক্সা যাচ্ছে এই যা। তুলি যথারিতি আমার হাত জড়িয়ে ধরেছে। ওর একটা মাই আমার পাঁজরে খোঁচা দিচ্ছে, আমাকে অন্যমনস্ক করে তুলছে। কিন্তু আমার জবাব চাই। কেন তুলি এরকম করলো। সবার সামনে এতগুলো ছেলের সাথে এরকম নির্লজ্জ ভাবে নাচানাচি কোরলো।
অক্টোবার মাসের মাঝামাঝি, হাওয়াতে একটা হিমেল ভাব এসেছে। মনে হচ্ছে একটা মোটা গেঞ্জি পরলে ভালো হোতো। তুলি আমার গায়ে লেপ্টে না থাকলেও একদম সেঁটে আছে। ওর শরীরের গরমে বেশ শারিরিক আর মানসিক আরাম হচ্ছে। ফিরে পাওয়া ধন বড় অমুল্য। ওর স্পর্শে আমার তাই মনে হচ্ছে।
সত্যি, একটা সময় আসে মানুষের জীবনে যখন নিজের মত করে কারো সঙ্গ পাওয়ার জন্যে মন আকুলিবিকুলি করে। মনে হয় সেই নিজের লোকের সাথেই নিজের দোষ, গুন, ভালোবাসা, দুঃখ, সুখ, আনন্দ সব ভাগ করে নি। একেই বোধহয় প্রেম বলে, যদিও আমার জীবনে অনেক দেরিতে এসেছে। তবুও সে থাকলে, ফুল ফোঁটে, সে থাকলে চাঁদ ভালো লাগে, কুৎসিতকে সুন্দর লাগে, মানুষ সহনশীল হয়। আর সেই সঙ্গ পেলে, তার থেকে সুখি বোধহয় কেউ হয়না। এই মুহুর্তে আমার নিজেকে মনে হচ্ছে এই পৃথিবীর রাজা, আমার রানিকে নিয়ে নৈশবিহারে বেড়িয়েছি। পথ চলতি অচেনা অজানা অল্প সংখ্যক মানুষ আমাদের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে, তাদের চোখে মুখে যেন, বাঃ বেশ সুন্দর জুড়ি তো।
কিন্তু হাবভাব তো দেখাতেই হবে। তাই একটু গম্ভির ভাবেই আছি। তুলি বার বার করে জিঘ্যেস করে চলেছে ‘কি হোল কথা বলছোনা কেন? এত চুপ কেন? রাগ করেছ, এতবার ফোন করেছি বলে?’
ঝিলের কাছে গিয়ে মুখ খুললাম, ‘তুমি এরকম কেন করলে?’
‘কি করলাম?’
‘এই যে ভাসানের দিন...।‘
‘ওঃ আরে দাদা এমন ভাবে ডাক দিলো যে আর আসতে পারলাম না তোমার কাছে’
মানে কি বলতে চাইছে ও , ও সেদিন সুদিপা মাগির সিঁদুর মাখানো খেয়াল করেনি? শুধু ওর দাদা পিছন থেকে ডেকেছে বলে চলে গেলো?
‘মানে দাদা ডাকলো আর তুমি চলে গেলে?’
‘হ্যাঁ।‘
‘আর এইযে এইভাবে সবার সামনে নাচ করলে সেটা কি ভালো দেখালো? তুমি জানোনা যে তোমার নাম এখন আমার সাথে জড়িয়ে গেছে আমার একটা প্রেস্টিজ আছে। তাও মানলাম যদি মেয়েরা মেয়েরা নাচতে, একটা কথা ছিলো, কিন্তু এতোগুলো ছেলের সাথে...এই ভাবে... ‘
আরে আমি কি করবো আমার ইচ্ছে ছিলোনা দাদা এমন করছিলো সিদ্ধি খেয়ে যে কি বলবো, এত খেয়েছে যে ঠিক মত দাড়াতে পারছিলোনা। আমাদের পাড়ায় তো খেয়েছে, তারপর তোমাদের পাড়ায় গিয়ে আবার খেয়েছে।‘
‘কোই, ওকে তো দেখলাম না, তোমাদের পাড়ার ভাসানে?’ গলায় অবিশ্বাস ফুটিয়ে তুলে বললাম।
‘তুমি দেখেছ আমাকে নাচতে, কই আমি তো খুজছিলাম তোমাকে দেখিনি তো? আমার খুব লজ্জা লাগছিলো জানোতো? বিশেষ করে তুমি আছো সেই ভেবে। দাদাটাও এমন করে...।‘
‘তুমি ক গ্লাস সিদ্ধি খেয়েছিলে যে আমাকে দেখতে পেলেনা, ছ ফুটের হাট্টাকাট্টা জোয়ান ছেলে দাঁড়িয়ে আছি ভিড়ের পিছনে, সবাই দেখলো আর তুমি দেখলে না?’
‘তুমি? তুমি দাঁড়িয়ে ছিলে?’
‘হ্যাঁ কালো পাঞ্জাবি পরে তোমার মনে পরছেনা? কি খেয়েছিলে সেদিন?’
‘কালো পাঞ্জাবি পরে তো দেখলাম তোমাকে, তারপর তুমি ডাকলে আমাকে, আমি তোমার দিকে আসলাম, দাদার ডাক শুনতে পেলাম, হুরমুর করে আবার চলে গেলাম, তারপর তো নাচ শুরু হয়ে গেল, কোই তুমি কোথায় ছিলে?’
তুলি নিজের মনে মনেই জোরে জোরে আওড়ালো সিকোয়েন্সগুলো। শেষটা আমাকে বেশ জোরেই জিঘ্যেস করলো।
তুমি এমন নাচছিলে যে আমাকে খেয়াল করোনি, আমি তোমাদের নাচের সামনেই দাঁড়িয়ে ছিলাম আর তোমাকে দেখে যাচ্ছিলাম, যে তুমি কেমন নাচো?’
তুলি এবার বেশ লজ্জা পেয়ে গেল। ‘তাই! আমি ভয়ে ভয়ে ছিলাম যে তুমি কি ভাববে, তাই ঠিক করে নাচতেও পারছিলাম না, কিন্তু সেই তুমি আমাকে দেখলে আর আমি তোমাকে দেখতে পেলাম না।‘
‘তা ভাবলেই যখন তো নাচলে কেন? যে তোমাকে জোর করলো তাকে তো দেখতেই পেলাম না?’
‘সেকি? দাদা তো আমার সাথেই নাচছিল, তুমি কি খেয়েছিলে যে দাদাকে দেখতে পেলে না?’
‘কোথায় ছিলো তোমার দাদা?’
“কেন যে অসুর সেজেছিলো?’
যাঃ বোকাচোদা, অসুর তো মুখে রংচং মেখে এমন ছিলো যে চিনবো কি করে, এহেঃ এতো সেমসাইড হয়ে গেলো।
তুলি কিছু চিন্তা করছে বুঝলাম, মুখটা বেশ চিন্তিত লাগছে ‘তুমি...।‘ আবার চিৎকার করে উঠলো ‘এ বাবা! এ বাবা! তাই বলি কে আমাকে এরকম ঝাড়ি মারছে, ভাবছিলাম ভাসান হলে তোমাকে গিয়ে ডেকে আনবো, তুমি সিঁদুর মেখে দাঁড়িয়ে ছিলে তাই না?’
আমি রাস্তাটা দেখে নিলাম, কেউ কোথাও নেই এক ঝটকায় তুলিকে কোলে তুলে নিলাম কোমর পেঁচিয়ে, গালে একটা চুমু খেয়ে বললাম ‘ভালোই নাচিস তো পুচকি’ তুলি লজ্জায় আমার গলা জড়িয়ে ধরলো।
এরপর ওকে বাড়ি পৌছে দিতে দিতে জানতে পারলাম, ও এসেছিলো, ভাসানের পরে আমাদের পাড়ায়, আমাকে জানাতে যে ও মামার বাড়ি যাবে বিজয়া করতে, আমি বাড়ি চলে গেছিলাম। তাই পাপ্পুকে বলে গেছিলো, আর আমার বাড়ির ফোন নম্বর নিয়ে গেছিলো।
পরশুদিন লক্ষ্মীপুজো, তাই আমাকে যেতে বলছে ওদের বাড়ি। ওর মা চায় যে আমি যেন আসি। কি আর করা শাশুড়ির ইচ্ছা, পুর্ন তো করতেই হবে
মা দেখলাম ভাল করে আমাকে খেয়াল করছে, এত মাঁঞ্জা দিয়ে কোথায় চললাম, বোঝার চেষ্টা করছে। চোখে মুখে একটু কৌতুক। মানে বুঝতে পারছে যে ছেলে কিছু ঘটিয়েছে। আয়না দিয়ে দেখছি যে আমার দিকে তাকিয়ে আছে আমার দিকে, সাথে মুচকি মুচকি হাসি। মায়ের চোখ কি আর এড়ানো যায়?
আমি ঘুরে দাঁড়িয়ে মাকে জিজ্ঞেস করলাম ‘কি হোলো এরকম করে কি দেখছো?’
‘দেখবোনা? তুই যা পরিপাটি হয়ে ঘুরছিস আজকাল, দেখতে তো হবেই নিজের সন্তান বলে কথা।‘ একটু ব্যাঙ্গাত্মক টোন। বুঝলাম ধরা পরে গেছি।
‘তা কোথায় নিমন্ত্রন?’
‘এই তো একটা বন্ধুর বাড়িতে।‘
‘আমি চিনিনা সেই বন্ধুকে? তাহলে কি সেদিন রাতে যে এসেছিলো?’
একদম মাথায় বন্দুক ধরেছে মা।
‘না যে আরেকটু হলে ফোন করে করে ফোনটা খারাপ করে দিতো।‘
আর কি লুকোবো বললাম ‘দুজন একই।‘
‘কে সেই মহারানী যে আপনার মত নিরস বস্তুতে আগ্রহ দেখালো?’
‘নিরস কেন?’
‘বাহঃ, আমাকেই জিজ্ঞেস করছিস তুই নিরস কেন?’
‘তুমিই তো বলছো, তোমাকেই তো জিজ্ঞেস করবো।‘
‘ও আমি একাই বলি, আর কেউ, মানে সে বলেনি?’
‘না তো।‘
‘বয়েস কত?’
‘1st ইয়ারে পরছে’
‘তাই বুঝতে পারেনি তোকে।‘
‘দুদিন যাক তোকে বুঝতে পারলে, টাটা করে চলে যাবে’
‘কেন এরকম বলছো?’
‘বলবো না? তোর সব কটা বন্ধু দেখি হই হই করে, কত গল্প করে আর তুই সবসময় গোমড়া মুখে বসে থাকিস দেখি। যেন তোর চারটে মেয়ে আছে, বিয়ে দিতে হবে।‘
আমি মার গলা জড়িয়ে ধরলাম ‘তুমি না, কোথায় আমার প্রসংশা করবে যে তোমার ছেলে এলাকার বেতাজ বাদশা, আমি গম্ভির থাকি বলেই ওরা হইচই করতে পারে, আর তুমি আমার নিন্দা করছো।‘
মা আমার চুল এলোমেলো করে দিয়ে বললো ‘সবাই তোর ঘারে বন্দুক রাখবে আর তুই এগিয়ে যাবি, আর নিজের বদনাম করবি। তোর বন্ধুরা কেউ ক্ষতিকর না আমি জানি, কিন্তু নিজের ভালোটা পাগলেও বোঝে। যেমন তোর বাবা, তেমন তুই হয়েছিস একই রকম বাউন্ডূলে। কবে পাড়ার গলিতে বোম ফেলেছে, আর পুলিশের হাত থেকে কি ভাবে পালিয়ে বেচেছে সেই গল্প এখনো করে। নেহাত সরকারি চাকরি পেয়ে গেছিলো তাই। আরে বাবা পুরুষ মানুষ এরকম ব্যোঁমভোলা হলে হয় নাকি। আরে কোথায় ভাল চাকড়ি বাকড়ি খুজবি, তা না, পাড়া, ক্লাব এসব করে ভালো ভালো সুযোগ ছেড়ে দিলি। দেখ্* সুজোগ যখন আসে তখন তোকে যাচাই করতে আসে যে তুই কত উপযোগী, যদি তুই সুযোগ না নিস, তাহলে পরে আর পাবিনা। তখন শুধু গল্পই করতে পারবি যে আমি এখানে চান্স পেয়েছিলাম, ওখানে আমার ডাক এসেছিলো, ব্যাস। আর লোকে তোর কথা শুনতে শুনতে ভাববে যে এর আর অন্য কিছু বলার নেই। একটা সময় পরে বন্ধু বান্ধব সবাই যে যার রাস্তা দেখে নেবে, আর তোর যোগ্যতা থাকা স্বতেও তুই পরে থাকবি এখানে। আরে তোর সামনে সারা পৃথিবী পরে রয়েছে, ঘুরে তো দেখ ভালো না লাগলে এই বাড়ি, এই সব, কিছু তো তোরই। আমাদের যা সম্পত্তি আছে তাতে তোর জীবনে সেরকম কিছু না করলেও চলে, তা বলে পুরুষ মানুষ হয়ে এরকম জীবনযাপন করবি ?’
‘তুমি কি চাও আমি তোমাদের থেকে দূরে চলে যাই?’
‘কোন মা বাবাই তা চায় না, কিন্তু তাতে যদি তোর ভালো হয় তাহলে আমরা বুকে পাথর চাঁপা দিয়ে সেটা হাসিমুখে মেনে নেবো।‘
‘কিন্তু মা আমার তো তোমাদের ছাড়া থাকতে ভাল লাগবেনা। আমি ভাবতেও পারিনা যে সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে তোমাকে দেখতে পাচ্ছি না।‘
আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে মা বলে উঠলো ‘ আরে একদিন তো আমাদের সবাইকে যেতে হবে এই পৃথিবী থেকে তখন কি করবি?’
আমি মার কোলে মুখ গুজে দিলাম। মনটা ভার হয়ে গেল। অপ্রিয় হলেও সত্যি কথা।
‘যা যা তোর দেরি হচ্ছে। তোর জন্যে অপেক্ষা করছে হয়তো ওরা।‘
‘তোমরা কোথাও যাবেনা?’
[/HIDE]
চলো না, চলো না’
‘ঠিক আছে দাড়াবো না কিন্তু, ওদিক দিয়েই তোমার বাড়ির দিকে হাঁটা দেবো।‘
আমি আর তুলি হাঁটতে শুরু করলাম, পুজোর হ্যাংওভারে রাস্তা প্রায় জনশুন্য। দু একটা রিক্সা যাচ্ছে এই যা। তুলি যথারিতি আমার হাত জড়িয়ে ধরেছে। ওর একটা মাই আমার পাঁজরে খোঁচা দিচ্ছে, আমাকে অন্যমনস্ক করে তুলছে। কিন্তু আমার জবাব চাই। কেন তুলি এরকম করলো। সবার সামনে এতগুলো ছেলের সাথে এরকম নির্লজ্জ ভাবে নাচানাচি কোরলো।
অক্টোবার মাসের মাঝামাঝি, হাওয়াতে একটা হিমেল ভাব এসেছে। মনে হচ্ছে একটা মোটা গেঞ্জি পরলে ভালো হোতো। তুলি আমার গায়ে লেপ্টে না থাকলেও একদম সেঁটে আছে। ওর শরীরের গরমে বেশ শারিরিক আর মানসিক আরাম হচ্ছে। ফিরে পাওয়া ধন বড় অমুল্য। ওর স্পর্শে আমার তাই মনে হচ্ছে।
সত্যি, একটা সময় আসে মানুষের জীবনে যখন নিজের মত করে কারো সঙ্গ পাওয়ার জন্যে মন আকুলিবিকুলি করে। মনে হয় সেই নিজের লোকের সাথেই নিজের দোষ, গুন, ভালোবাসা, দুঃখ, সুখ, আনন্দ সব ভাগ করে নি। একেই বোধহয় প্রেম বলে, যদিও আমার জীবনে অনেক দেরিতে এসেছে। তবুও সে থাকলে, ফুল ফোঁটে, সে থাকলে চাঁদ ভালো লাগে, কুৎসিতকে সুন্দর লাগে, মানুষ সহনশীল হয়। আর সেই সঙ্গ পেলে, তার থেকে সুখি বোধহয় কেউ হয়না। এই মুহুর্তে আমার নিজেকে মনে হচ্ছে এই পৃথিবীর রাজা, আমার রানিকে নিয়ে নৈশবিহারে বেড়িয়েছি। পথ চলতি অচেনা অজানা অল্প সংখ্যক মানুষ আমাদের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে, তাদের চোখে মুখে যেন, বাঃ বেশ সুন্দর জুড়ি তো।
কিন্তু হাবভাব তো দেখাতেই হবে। তাই একটু গম্ভির ভাবেই আছি। তুলি বার বার করে জিঘ্যেস করে চলেছে ‘কি হোল কথা বলছোনা কেন? এত চুপ কেন? রাগ করেছ, এতবার ফোন করেছি বলে?’
ঝিলের কাছে গিয়ে মুখ খুললাম, ‘তুমি এরকম কেন করলে?’
‘কি করলাম?’
‘এই যে ভাসানের দিন...।‘
‘ওঃ আরে দাদা এমন ভাবে ডাক দিলো যে আর আসতে পারলাম না তোমার কাছে’
মানে কি বলতে চাইছে ও , ও সেদিন সুদিপা মাগির সিঁদুর মাখানো খেয়াল করেনি? শুধু ওর দাদা পিছন থেকে ডেকেছে বলে চলে গেলো?
‘মানে দাদা ডাকলো আর তুমি চলে গেলে?’
‘হ্যাঁ।‘
‘আর এইযে এইভাবে সবার সামনে নাচ করলে সেটা কি ভালো দেখালো? তুমি জানোনা যে তোমার নাম এখন আমার সাথে জড়িয়ে গেছে আমার একটা প্রেস্টিজ আছে। তাও মানলাম যদি মেয়েরা মেয়েরা নাচতে, একটা কথা ছিলো, কিন্তু এতোগুলো ছেলের সাথে...এই ভাবে... ‘
আরে আমি কি করবো আমার ইচ্ছে ছিলোনা দাদা এমন করছিলো সিদ্ধি খেয়ে যে কি বলবো, এত খেয়েছে যে ঠিক মত দাড়াতে পারছিলোনা। আমাদের পাড়ায় তো খেয়েছে, তারপর তোমাদের পাড়ায় গিয়ে আবার খেয়েছে।‘
‘কোই, ওকে তো দেখলাম না, তোমাদের পাড়ার ভাসানে?’ গলায় অবিশ্বাস ফুটিয়ে তুলে বললাম।
‘তুমি দেখেছ আমাকে নাচতে, কই আমি তো খুজছিলাম তোমাকে দেখিনি তো? আমার খুব লজ্জা লাগছিলো জানোতো? বিশেষ করে তুমি আছো সেই ভেবে। দাদাটাও এমন করে...।‘
‘তুমি ক গ্লাস সিদ্ধি খেয়েছিলে যে আমাকে দেখতে পেলেনা, ছ ফুটের হাট্টাকাট্টা জোয়ান ছেলে দাঁড়িয়ে আছি ভিড়ের পিছনে, সবাই দেখলো আর তুমি দেখলে না?’
‘তুমি? তুমি দাঁড়িয়ে ছিলে?’
‘হ্যাঁ কালো পাঞ্জাবি পরে তোমার মনে পরছেনা? কি খেয়েছিলে সেদিন?’
‘কালো পাঞ্জাবি পরে তো দেখলাম তোমাকে, তারপর তুমি ডাকলে আমাকে, আমি তোমার দিকে আসলাম, দাদার ডাক শুনতে পেলাম, হুরমুর করে আবার চলে গেলাম, তারপর তো নাচ শুরু হয়ে গেল, কোই তুমি কোথায় ছিলে?’
তুলি নিজের মনে মনেই জোরে জোরে আওড়ালো সিকোয়েন্সগুলো। শেষটা আমাকে বেশ জোরেই জিঘ্যেস করলো।
তুমি এমন নাচছিলে যে আমাকে খেয়াল করোনি, আমি তোমাদের নাচের সামনেই দাঁড়িয়ে ছিলাম আর তোমাকে দেখে যাচ্ছিলাম, যে তুমি কেমন নাচো?’
তুলি এবার বেশ লজ্জা পেয়ে গেল। ‘তাই! আমি ভয়ে ভয়ে ছিলাম যে তুমি কি ভাববে, তাই ঠিক করে নাচতেও পারছিলাম না, কিন্তু সেই তুমি আমাকে দেখলে আর আমি তোমাকে দেখতে পেলাম না।‘
‘তা ভাবলেই যখন তো নাচলে কেন? যে তোমাকে জোর করলো তাকে তো দেখতেই পেলাম না?’
‘সেকি? দাদা তো আমার সাথেই নাচছিল, তুমি কি খেয়েছিলে যে দাদাকে দেখতে পেলে না?’
‘কোথায় ছিলো তোমার দাদা?’
“কেন যে অসুর সেজেছিলো?’
যাঃ বোকাচোদা, অসুর তো মুখে রংচং মেখে এমন ছিলো যে চিনবো কি করে, এহেঃ এতো সেমসাইড হয়ে গেলো।
তুলি কিছু চিন্তা করছে বুঝলাম, মুখটা বেশ চিন্তিত লাগছে ‘তুমি...।‘ আবার চিৎকার করে উঠলো ‘এ বাবা! এ বাবা! তাই বলি কে আমাকে এরকম ঝাড়ি মারছে, ভাবছিলাম ভাসান হলে তোমাকে গিয়ে ডেকে আনবো, তুমি সিঁদুর মেখে দাঁড়িয়ে ছিলে তাই না?’
আমি রাস্তাটা দেখে নিলাম, কেউ কোথাও নেই এক ঝটকায় তুলিকে কোলে তুলে নিলাম কোমর পেঁচিয়ে, গালে একটা চুমু খেয়ে বললাম ‘ভালোই নাচিস তো পুচকি’ তুলি লজ্জায় আমার গলা জড়িয়ে ধরলো।
এরপর ওকে বাড়ি পৌছে দিতে দিতে জানতে পারলাম, ও এসেছিলো, ভাসানের পরে আমাদের পাড়ায়, আমাকে জানাতে যে ও মামার বাড়ি যাবে বিজয়া করতে, আমি বাড়ি চলে গেছিলাম। তাই পাপ্পুকে বলে গেছিলো, আর আমার বাড়ির ফোন নম্বর নিয়ে গেছিলো।
পরশুদিন লক্ষ্মীপুজো, তাই আমাকে যেতে বলছে ওদের বাড়ি। ওর মা চায় যে আমি যেন আসি। কি আর করা শাশুড়ির ইচ্ছা, পুর্ন তো করতেই হবে
মা দেখলাম ভাল করে আমাকে খেয়াল করছে, এত মাঁঞ্জা দিয়ে কোথায় চললাম, বোঝার চেষ্টা করছে। চোখে মুখে একটু কৌতুক। মানে বুঝতে পারছে যে ছেলে কিছু ঘটিয়েছে। আয়না দিয়ে দেখছি যে আমার দিকে তাকিয়ে আছে আমার দিকে, সাথে মুচকি মুচকি হাসি। মায়ের চোখ কি আর এড়ানো যায়?
আমি ঘুরে দাঁড়িয়ে মাকে জিজ্ঞেস করলাম ‘কি হোলো এরকম করে কি দেখছো?’
‘দেখবোনা? তুই যা পরিপাটি হয়ে ঘুরছিস আজকাল, দেখতে তো হবেই নিজের সন্তান বলে কথা।‘ একটু ব্যাঙ্গাত্মক টোন। বুঝলাম ধরা পরে গেছি।
‘তা কোথায় নিমন্ত্রন?’
‘এই তো একটা বন্ধুর বাড়িতে।‘
‘আমি চিনিনা সেই বন্ধুকে? তাহলে কি সেদিন রাতে যে এসেছিলো?’
একদম মাথায় বন্দুক ধরেছে মা।
‘না যে আরেকটু হলে ফোন করে করে ফোনটা খারাপ করে দিতো।‘
আর কি লুকোবো বললাম ‘দুজন একই।‘
‘কে সেই মহারানী যে আপনার মত নিরস বস্তুতে আগ্রহ দেখালো?’
‘নিরস কেন?’
‘বাহঃ, আমাকেই জিজ্ঞেস করছিস তুই নিরস কেন?’
‘তুমিই তো বলছো, তোমাকেই তো জিজ্ঞেস করবো।‘
‘ও আমি একাই বলি, আর কেউ, মানে সে বলেনি?’
‘না তো।‘
‘বয়েস কত?’
‘1st ইয়ারে পরছে’
‘তাই বুঝতে পারেনি তোকে।‘
‘দুদিন যাক তোকে বুঝতে পারলে, টাটা করে চলে যাবে’
‘কেন এরকম বলছো?’
‘বলবো না? তোর সব কটা বন্ধু দেখি হই হই করে, কত গল্প করে আর তুই সবসময় গোমড়া মুখে বসে থাকিস দেখি। যেন তোর চারটে মেয়ে আছে, বিয়ে দিতে হবে।‘
আমি মার গলা জড়িয়ে ধরলাম ‘তুমি না, কোথায় আমার প্রসংশা করবে যে তোমার ছেলে এলাকার বেতাজ বাদশা, আমি গম্ভির থাকি বলেই ওরা হইচই করতে পারে, আর তুমি আমার নিন্দা করছো।‘
মা আমার চুল এলোমেলো করে দিয়ে বললো ‘সবাই তোর ঘারে বন্দুক রাখবে আর তুই এগিয়ে যাবি, আর নিজের বদনাম করবি। তোর বন্ধুরা কেউ ক্ষতিকর না আমি জানি, কিন্তু নিজের ভালোটা পাগলেও বোঝে। যেমন তোর বাবা, তেমন তুই হয়েছিস একই রকম বাউন্ডূলে। কবে পাড়ার গলিতে বোম ফেলেছে, আর পুলিশের হাত থেকে কি ভাবে পালিয়ে বেচেছে সেই গল্প এখনো করে। নেহাত সরকারি চাকরি পেয়ে গেছিলো তাই। আরে বাবা পুরুষ মানুষ এরকম ব্যোঁমভোলা হলে হয় নাকি। আরে কোথায় ভাল চাকড়ি বাকড়ি খুজবি, তা না, পাড়া, ক্লাব এসব করে ভালো ভালো সুযোগ ছেড়ে দিলি। দেখ্* সুজোগ যখন আসে তখন তোকে যাচাই করতে আসে যে তুই কত উপযোগী, যদি তুই সুযোগ না নিস, তাহলে পরে আর পাবিনা। তখন শুধু গল্পই করতে পারবি যে আমি এখানে চান্স পেয়েছিলাম, ওখানে আমার ডাক এসেছিলো, ব্যাস। আর লোকে তোর কথা শুনতে শুনতে ভাববে যে এর আর অন্য কিছু বলার নেই। একটা সময় পরে বন্ধু বান্ধব সবাই যে যার রাস্তা দেখে নেবে, আর তোর যোগ্যতা থাকা স্বতেও তুই পরে থাকবি এখানে। আরে তোর সামনে সারা পৃথিবী পরে রয়েছে, ঘুরে তো দেখ ভালো না লাগলে এই বাড়ি, এই সব, কিছু তো তোরই। আমাদের যা সম্পত্তি আছে তাতে তোর জীবনে সেরকম কিছু না করলেও চলে, তা বলে পুরুষ মানুষ হয়ে এরকম জীবনযাপন করবি ?’
‘তুমি কি চাও আমি তোমাদের থেকে দূরে চলে যাই?’
‘কোন মা বাবাই তা চায় না, কিন্তু তাতে যদি তোর ভালো হয় তাহলে আমরা বুকে পাথর চাঁপা দিয়ে সেটা হাসিমুখে মেনে নেবো।‘
‘কিন্তু মা আমার তো তোমাদের ছাড়া থাকতে ভাল লাগবেনা। আমি ভাবতেও পারিনা যে সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে তোমাকে দেখতে পাচ্ছি না।‘
আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে মা বলে উঠলো ‘ আরে একদিন তো আমাদের সবাইকে যেতে হবে এই পৃথিবী থেকে তখন কি করবি?’
আমি মার কোলে মুখ গুজে দিলাম। মনটা ভার হয়ে গেল। অপ্রিয় হলেও সত্যি কথা।
‘যা যা তোর দেরি হচ্ছে। তোর জন্যে অপেক্ষা করছে হয়তো ওরা।‘
‘তোমরা কোথাও যাবেনা?’
[/HIDE]