প্রথম পর্ব-
গোধুলিবেলায় প্রতিদিন পশ্চিমদিকের বারান্দায় দাঁড়ানো একপ্রকার অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে নীলিমার।সূর্যাস্তের সময় হাল্কা কমলা রঙের আকাশটা ওকে প্রতিদিন হাতছানি দিয়ে ডাকে। ডুবন্ত সূর্যেরশেষ মায়াবী রঙটা গায়ে মাখতে অন্যান্য দিনের মতো আজও ঠিক সময়েই বারান্দাতে হাজির হয়ে গেছিল ও। চোখের সামনের দৃশ্যটা প্রতিদিন একই থাকলেও ওর চোখে নতুনভাবে ধরা দেয়। সূর্যাস্তআর তারপর সি-বিচে বেড়াতে আসা হাজারো মানুষের ঢল দেখতে দেখতে কখন যে সন্ধ্যা হয়ে যায় অনেকদিন খেয়ালই থাকেনা এর। আসলে সমুদ্র ওর খুব ভাল লাগে। তাই ওর ভাল লাগার কারণেইদামী হওয়া সত্ত্বেও সুমিত এই ফ্ল্যাটটা কিনেছিল।
সুমিতের সঙ্গে নীলিমার বিয়েটা দেখাশোনা করেই হয়েছিল।প্রায় মাস আষ্টেক হতে চলল ও আর সুমিত মুম্বাইয়ের এই বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে শিফ্ট করেছে। সুমিত একটি বড় মাল্টি ন্যাশানাল কোম্পানীতেউঁচু পদে কাজ করে। ছোটবেলা থেকেই মুম্বাইয়ে বড় হওয়া, পড়াশোনা, চাকরী। বিয়েটা কিন্তু বঙ্গললনাকেই করেছে। সুমিতের মায়েরও সেই রকমই ইচ্ছা ছিল। ক্যান্সারে আক্রান্ত সুমিতের মায়েরএকমাত্র ইচ্ছা ছিল সুন্দর দেখে একটি মেয়ের সঙ্গে ছেলের বিয়ে দেবেন। অবশেষে আত্মীয়স্বজনের সাহায্যে সুদূর পশ্চিমবঙ্গে নীলিমার সন্ধানপ্রাপ্তি এবং শুভ পরিণয়। সুমিতও এই বিয়েতে রাজী হয়েযাওয়ায় ব্যাপারটা খুব সহজেই মিটে গেছিল। বিয়ের দু'মাসের মাথায় সুমিতের মা মারা যান মুম্বাইয়েরই একটি নার্সিংহোমে। এরপর শ্রাদ্ধশান্তি মিটে যাবার পর সুমিত ওদের পুরানো বাড়ি ছেড়ে দিয়েনীলিমাকে নিয়ে এই ফ্ল্যাটে থাকতে শুরু করে। বাবা অনেকদিন আগেই মারা গেছিল। মাও মারা যাওয়ায় পুরানো ফ্ল্যাটটি বেচে দিয়ে নতুন ফ্ল্যাট কেনে সুমিত।
প্রথম দেখাতেই ফ্ল্যাটটা পছন্দ হয়ে গেছিল নীলিমার। তার প্রথম ও প্রধান কারণ ওই সমুদ্র।সারাদিন সমুদ্রের ঢেউ দেখতে পাবে এটা ভেবেই আনন্দে সুমিতের গলা জড়িয়ে ধরে চুমু খেয়েছিল ও। আসলেযার কাছে সমুদ্র বলতে দীঘা, আরবসাগর যে তার মনে আনন্দের ঢেউ তুলবে এ তো বলাই বাহুল্য। অন্যান্য দিনের মতোই সমুদ্রের নিস্তরঙ্গ ঢেউ দেখতে ব্যস্ত নীলিমার মনটাকে বাস্তবে এনে ফেলল হাতেধরা মোবাইলটার তুচ্ছ ম্যাসাজ টোন। চোখ মোবাইলের পর্দায় এনে ফেলতেই নজরে এল One Message Received বার্তা। অনিচ্ছা সত্ত্বেও ম্যাসাজটি খুলতে যেতেই হোঁচট খেল ও। কোনও Private Number থেকে ম্যাসাজ আসাটা ওর কাছে নতুনত্ব বইকী। আলগা কৌতুহলে ম্যাসাজটা পড়ল। প্রথমবারে পড়ার পরেও বিশ্বাস না হওয়ায় দ্বিতীয়বার আবার পড়ল ম্যাসাজটা। অবাক চোখে নীলিমাদেখল তার মোবাইলের নীলচে স্ক্রিনে ফুটে উঠেছে বার্তাটি। "You're looking hot in this blue saree. I like it."