তখনকার সময় আজকের মতো টিউবওয়েল ছিলো না। গ্রামের সবাই একটি কূয়ো থেকে পানি সংগ্রহ করে খেতো। সেই পানি তোলার কাজটি সাধারণত পরিবারের মেয়েদের উপরই ন্যাস্ত ছিলো। গ্রামের এক বউয়ের স্বামী ছিলো বেশ অকর্ম্যন্য ! সারাদিন ঘরে বসেই কাটাতো। কাজের প্রতি কোনো মনোযোগ ছিলো না। বউ পাশের বাড়িতে কাজ করে যা পেতো তা দিয়ে দুজনে চালিয়ে নিতো। কিছুদিনের মাঝেই তাদের ঘর আলো করে একটি শিশু সন্তান এলো। এবার আর বউয়ের একার রোজগারে সংসার চালানো খুব কঠিন হয়ে পড়লো। বউ তার স্বামীকে কাজের জন্য চাপ দিতে লাগলো। কিন্তু স্বামী বেচারা কিছুতেই কাজে বেরোতে চাইলো না। পাশের বাড়ির কাকীমা বউকে একদিন ডেকে বললো, এভাবে রোজ রোজ চাপ দিয়ে আর ঝগড়া করে তোর স্বামীকে কাজে পাঠাতে পারবি না। তাকে বুঝাতে হবে। বুঝাতে হবে সংসারের উন্নতির জন্য বিশেষ করে ছোট্ট শিশুটির জন্য তার কাজ করা উচিৎ ! কথা শুনে বউ বললো, আমি তো সেটিই তাকে বুঝাই। কাকীমা বললো, এভাবে না, তাকে প্রতিদিন একটু একটু করে বুঝা। দেখবি একদিন ঠিকই সে বুঝতে পারবে। "নিত্যির ঘষায় পাত্থরও ক্ষয় হয়" ! বউ কাকীমার কথাটি শুনলো বটে তবে মানতে পারলো না। তার ধারনা এতো ঝগড়া আর বকার পরও যে বুঝে না, তাকে প্রতিদিন অল্প অল্প করে বুঝালে আর কি এমন হয়ে যাবে ?
পরদিন একাকী দুপরে বউ গেলো কূয়ো থেকে পানি আনার জন্য।কূয়ো পাড়ে তখন কেউ ছিলো না। বউ কূয়োপাড়ে একাকী বসে বসে কাকীমার কথাটি ভাবতে লাগলো। ঠিক তখনি তার নজরে পড়লো শান বাঁধানো কূয়োর পাড়ে যেখানে মাটির কলস রেখে গ্রামের বউরা পানি সংগ্রহ করে সেখানে বেশ কিছুটা গর্তের সৃস্টি হয়েছে। আর এটি যে প্রতিদিন বউদের কলস রাখার কারনেই হয়েছে সেটি বুঝতেও তার সমস্যা হলো না। বউ মনে মনে ভাবলো, যদি প্রতিদিন মাটির কলসের এই সামান্য ঘষায় মাথর ক্ষয় হতে পারে তবে প্রতিদিন স্বামীকে বুঝালে কেনো কাজ হবে না ? কাকীমা তো ঠিক কথাই বলেছিলেন !
নিত্যির ঘষায় পাথরও ক্ষয় হয়...