বাবা তখন জীবিত, কিন্তু বিছানাগত। একেবারে বিছানাগত বললে ভুল হবে, মুটামুটি হাটাচলা করতে পারেন কিন্তু ঘরের বাইরে যাওয়ার বা সিঁড়ি ভেঙ্গে নিচে নামা বা উঠার সাহস করে উঠতে পারেন না। উনার বিছানার সাথে একটা জানালা আছে, মাথা উঁচু করলেই উনি দেখতে পেতেন কেও বাইরে যাচ্ছে কিনা বা কেও বাড়িতে আসল কিনা। আমি যখন বাইরে যেতাম তখন উনি মাথা উঁচিয়ে জিজ্ঞাসা করতেন "বাবা কই যাও? এই অসময়ে?"
আমি এই কথাটাকে বড় ভয় পেতাম, বাবাকে তেমন একটা কাছে পাইনি। তাই ভয় পেতাম, ভয়ে বলতে পারতাম না আমি আড্ডা দিতে যাচ্ছি। আর মিথ্যে আমাকে দিয়ে বলানো সহজ ছিল না। কিন্তু তার এই জিজ্ঞাসা আর আমার এই লুকিয়ে পালিয়ে বাইরে যাওয়ার ভেতর যে কতটুকু ভালবাসা লুকিয়ে ছিল তা বুঝতে বাবাকেই হারাতে হয়েছে। এখন বাড়ী গেলে অকারনেই চোখটা ওই জানালায় চলে যায়, আর চোখাটা ভিজে যায়। আর কেও জিজ্ঞাসা করে না "বাবা কই যাও?
নির্জনমেলা অনেক পথ পাড়ি দিয়ে আজ আজকের অবস্থানে এসেছে। আমি যখন এই ফোরামের শিশু ছিলাম, অনেক সময় দিতাম আর অধির আগ্রহে বসে থাকতাম কখন @monipuri মামা, @Yuvrajj মামা, @dipu মামা, @arn43 মামা, @dukhopakhi মামা, @sany13 মামা, @robinhood মামা সহ আরো অনেক মামারা আমার করা থ্রেডের রিপ্লাই দিবেন। তখন যে কি ভাল লাগত! মনি মামার সাথে আমার লড়াই হত সবার আগে হাজিরা দিতে গিয়ে, প্রায় প্রতিদিনই আমি হেরে যেতাম। উনি নাকি টিভির সংবাদ দেখতে গিয়ে এই হাজিরা দিতেন, আর আমি প্রতিদিনই তার এক সেকেন্ড পর হাজিরা দিতাম, কিন্তু লড়াই ঠিকই চালিয়ে যেতাম। এই কিছুদিন আগেও সকালে হাজিরা দিয়ে অপেক্ষা করতাম মনি মামা কখন কোন একটা শব্দের তরজমা বা শল্য চিকিৎসা করবেন। আজ না বলে পারছি না, মনি মামাকে হারিয়েও আমার অবস্থাটা সেই বাবা হারানোর মতই হয়। সানি মামা, রবিন মামা, রাজপুত্র সহ আরো অনেকে যাদের হারানোর ব্যাথা সর্বদাই অন্তরে লাগে।
আমি ছোটভাই, ফোরামটা আমার নাড়ীর মত, যার টান আমি ছাড়লেও সে ছাড়ে না। প্রতিদিনই ফোরামের আড্ডার পাতাটা সারাদিনই খোলা থাকে, যার ৬০% পড়িও। কিন্তু রিপ্লাই সবগুলিতে দেয়া হয়ে ওঠে না। ভালবাসা কমে নাই বরং বেড়েছে।
মিস ইউ ওল!
এতো সুন্দর করে অনুভুতি প্রকাশ শুধুমাত্র ছোটম মামার দ্ধারাই সম্ভব...
লেখাটা এনিয়ে কয়েকবার পড়লাম। প্রতিবারই চোখ ঝাপসা হয়ে এসেছে। বাবা-ছেলের ভালোবাসার কথাটা যখনই পড়তে যাই আর এগোতে পারি না।