হাসপাতালে ভালো হবার কি সুযোগ আছে ?
আমি করোনার কথা বলছি না, করোনাকে উপলক্ষ্য করে সরকারী হাসপাতাল সহ বিভিন্ন চিকিৎসা কেন্দ্র ও হাসপাতালে এখন স্বাস্থ্য সেবার যে চরম স্বেচ্ছাচারিতা চলছে সেটার কথা বলছি। আ,আর এক বন্ধুস্থানীয় লোক গতো বৃহস্পতিবার দুপরের দিকে হঠাতই অসূস্থ্য হয়ে পড়েন। ভদ্রলোকের আগে থেকেই হার্টের সমস্যা ছিলো। বুকে কৃত্রিম যন্ত্র লাগিয়ে দিয়েছে যাতে শ্বাস প্রশ্বাস স্বাভাবিকভাবে চলে। ওইদিন অসূস্থ্য বোধ করার সময় ঐ যন্ত্র লাগানোর আগে যেমন বোধ করেছিলেন ওরকমই লাগার কারনে কাল বিলম্ব না করে ওনাকে ঢাকাস্থ জাতীয় হৃদরোগ ইনিস্টিটিউটে নিয়ে যাওয়া হয়। ওখান থেকেই ঐ যন্ত্র ওনাকে লাগানো হয়েছিলও বিধায় ওই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়াই তারা সমীচীন মনে করেছেন। ওখানে নিয়ে যাবার পর টেস্ট সহ আনুসাঙ্গিক কার্য্যাদী সম্পন্ন করতেই বৃহস্পতিবারের বাকি সময়টা কেটে গ্যাছে। পরদিন শুক্রবার বলে ডিউটি ডাক্তার ছাড়া বড় কোনো ডাক্তারের আর দেখা পাওয়া যায়নি। এদিকে ডিউটি ডাক্তারও চিকিৎসা শুরু করতে পারছেন না। শুধুমাত্র স্বাভাবিক জরুরী কিছু ব্যবস্থাপত্র ছাড়া তাদের দ্ধারা মূল চিকিৎসা দেয়া নাকি সম্ভব নয়। ওনার সাথে ওনার স্ত্রী ছিলেন হাসপাতালে। কোনো রকমে শুক্রবারটা পার করার পর শনিবারদিন যথারীতি বড় ডাক্তার দেখতে এলেন।তিন থেকে ছয়ফুট দূরত্বে থেকে কথা বলার নিয়ম থাকলেও এখানে বারো ফুটেরও বেশী দূরত্ব বজায় রেখে ডাক্তারের সাথে কথা বলতে হলো ওনাকে। কথা বলা মানে কয়েকটা প্রশ্নের জবাব দেয়া আরকি। এর মাঝে ডাক্তারের একটা প্রশ্ন ছিলো, শরীরে জ্বর আছে কিনা ? জবাবে ওনি বলেছিলেন, এখন জ্বর নাই, তবে মাঝে মধ্যে আমার রাতে অল্প জ্বর আসে। ব্যস, হয়ে গেছে কারবার ! ডাক্তার সাহেব সটান ওনাকে করোনা ইউনিটে বদলী করে দিলেন ! সেই সাথে জানিয়ে দিলেন, ওখানে থেকেই ওনাকে আগে করোনা পরীক্ষা করে দেখতে হবে, যদি করোনা নেগেটিভ হয়, তবেই ওনাকে চিকিৎসা দেয়া হবে, নতুবা করোনা হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়া হবে। আরো জানিয়ে দেয়া হলো, করোনা টেস্টের রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত ওনাকে ওই ইউনিটে একা থাকতে হবে। সাথে ওই ইউনিটের অন্যান্য রুগী ছাড়া ওনার কোনো লোক থাকতে পারবে না। ডাক্তারের কথায় থ মেরে গেলেন আমার সেই লোক। ডাক্তারকে বুঝানোর চেস্টা করলেন যে যদি ওনার করোনা নাও হয়ে থাকে, তবে তো ঐ ইউনিটে থাকার কারনে ওনার করোনায় আক্রান্ত হবার শঙ্কা আছে। তদুপরী ওনাকে ওখানে একা একা থাকতে হবে, যেটা ওনার শারীরিক অবস্থায় প্রায় অসম্ভব ছিলো। সেক্ষেত্রে ঐ ইউনিটে বদলী না করে যেনো ওনাকে ব্যবস্থাপত্র দিয়ে দেয়া হয়, যাতে ওনি বাড়িতে ফিরে এসে সে ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী চিকিৎসা নিতে পারেন। কিন্তু ওনার সেই অনুরোধ ডাক্তার শুনেনি। ডাক্তার সেই এক কথা। চিকিৎসা বা ব্যবস্থাপত্র নিতে হলে আগে নিজেকে করোনা নেগেটিভ হিসাবে প্রমান করতে হবে। বাধ্য হয়ে সে লোক হাসপাতাল থেকে বাড়িতে চলে এসেছেন। এই ক'দিন বাড়িতেই নিজে নিজে স্থানীয় ডাক্তারদের পরামর্শ মোতাবেক হার্টের চিকিৎসা নিচ্ছেন। ইতিমধ্যে বেশ কিছুটা সূস্থ্যও হয়ে উঠেছেন মাশাআল্লাহ ! করোনার কোনো চিকিৎসা ওনার নেয়া লাগেনি। আসলে ওনার করোনা হয়ওনি। এই অবস্থায় একজন রুগী যে কতোটা অসহায় সেটা চিন্তা করে আমার শুধু খারাপই লাগেনি, দুঃখও লেগেছে প্রচুর।