ওয়ালাইকুমুস সালাম, মামা !
খুব ভোরে বর্ষিত হওয়া বৃস্টিতে শান্ত পরিবেশে চোখটা লেগে এসছিলো...ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখছিলাম, সবুজ প্রান্তরে ঢালু এক উপত্যকায় একা বসে আছি... দিগন্তের শেষ প্রান্তে পাহাড়ের সারি... দুরের সেই পাহাড়ের রং ধুসর হলেও কতোই না স্পস্ট... যেখানে আকাশের সাথে প্রকৃতি মিশেছে, সেই মিলন স্থল এখান থেকেও পরিস্কার দেখতে পাচ্ছি। দৃস্টি সীমায় ধুলো বালুর আস্তরণ কোনো বাঁধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে না। আকাশটা মনে হয় অনেক অনেক নীচে নেমে এসেছে। যেনো হাত বাড়ালেই ছোঁয়া যাবে... ঘাসের ফাঁকে ফাঁকে ফুটে থাকা ছোট্ট বর্ণীল ফুল থেকে উঠে আসছে এক মোহনীয় সুবাস। ঘাসের সাথে লেগে থাকা গোলাপী আর হলুদ সেই ছোট্ট ফুলের মাঝে মাঝেই মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে কিছু সাদা ডাঁটাওয়ালা ফুল। চোখের ঠিক বাম প্রান্তে যেন ঠিক হাতের নাগালে ঝুলে আছে মস্ত এক চাঁদ। এতো কাছে যে, চাঁদের সেই কলঙ্কময় গর্তগুলোও যেনো আমি দেখতে পাচ্ছি খুব স্পস্টভাবে... কি আশ্চর্য্য, চাঁদটা এতো কাছে ,অথচ সেটাকে ঠিক সাদা মনে হচ্ছে না। ঘোলাটে হলুদাভ সেই চাঁদের আলোর চেয়ে অনেক বেশী আলো আমার চারিপাশে... বুক ভরে শ্বাস নিচ্ছি এই নির্মল প্রকৃতির... হঠাতই কোথা থেকে এক মাছি এসে ভন ভন শব্দে কানের পাশ থেকে চোখের সামনে এসে স্থির হয়ে গেলো। আমার চোখের সাথে চোখ মিলিয়েছে সেই মাছি... ধীরে ধীরে বড় হয়ে যাচ্ছে মাছির সেই চোখ দুটো। সেই সাথে লাল হয়ে যাচ্ছে চোখ দুটো। আমি কিছুতেই সেই চোখ দুটো থেকে নিজের চোখ সরাতে পারছি না ! বড় হতেই থাকছে সেই চোখ দুটো। সেই সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে তার লাল হওয়া। আমার অস্বস্তি বাড়ছে ধীরে ধীরে... এক পর্যায়ে মাছির চোখ দুটো আগুনের মতো লাল হয়ে ফেটে যাবার মত অবস্থা হয়ে গেলো। যেনো চোখের ভিতরে টগবগ করে ফুটছে কোনো কিছু...খেয়াল করে দেখলাম- সেটি আর কিছু নয়, রক্ত !! রক্ত দেখার পর আমার অস্বস্তি চরমে উঠলো... শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুত থেকে দ্রুত হতে থাকলো। এতো সুন্দর পরিবেশ যেনো হঠাতই কুৎসিত হয়ে গেলো আমার কাছে। চারিদিকের এতো আলো যেনো ধীরে ধীরে কমতে কমতে অন্ধকার হয়ে আসতে লাগলো... শ্বাস যেনো এবার বন্ধই হয়ে যাবে... বুঝতে পারছি, চোখ দুটো আমার কোঠর থেকে ঠিকরে বেরিয়ে আসছে... তবুও মাছির সেই চোখ থেকে আমার চোখ সরাতে পারছি না। ছটফটিয়ে উঠছে সারা দেহ। কিছু একটা বলতে চাচ্ছি, কিন্তু গলা দিয়ে স্বর বেরোচ্ছে না। একটা শব্দও না। এমনকি গোঁ গোঁ শব্দটুকুনও না...
ঠিক তখনি বিবিজান ডেকে উঠলেন, কই গো, উঠো... সাতটার বেশি বেজে গেছে...