তাইলে শিশির ঘোষেরে খুঁইজ্যা বাইর করেন।
১৯৮৬ সালে ঢাকার প্রথমবিভাগ ফুটবল লীগের শেষ খেলায় মুখোমুখি হয়েছিলো মোহামেডান আর আবাহনী। দু'দলের সামনেই শিরোপার হাতছানি। মোহামেডান জিতলে তারা অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হবে। অপরদিকে ম্যাচটি ড্র করতে পারলেই চ্যাম্পিয়ন হয়ে যাবে আবাহনী। সারাদেশে টান টান উত্তেজনা বিরাজ করছে। সমর্থকদের মাঝে চলছে নানা ধরনের গুঞ্জন। নতুন করে কোনো ফরেন প্লেয়ার যোগ দিতে পারবে না, যদি না সে প্লেয়ার পূর্বে থেকে ক্লাবে রেজিস্ট্রেশন করিয়ে না থাকে। মোহামেডান শিবির মোটামুটি সন্তুষ্ট। তাদের ফরেন প্লেয়ার স্ট্রাইকার ইব্রাহীমের সাথে মিডফিল্ডার এমেকা খেলবে। আর ঘরের ছেলে স্টপার গনেশ থাপা তো আছেই। সেই তুলনায় আবাহনী শিবিরে কিছুটা হতাশা বিরাজ করছিলো। গোলরক্ষক চন্দ্রসিঁড়ির বর্তমান পারফরমেন্স খুবই বাজে হচ্ছিলো। পাকির আলী যদিও রক্ষন ব্যুহ আগলে রাখতে পারবে তার স্বভাবজাত দক্ষতায়। কিন্তু স্ট্রাইকার আসলামের সাথে যোগ্য কোনো সাথী না থাকায় স্ট্রাইকিং পজিশনে বেশ কিছুটা দূর্বলতা রয়েই গেছে। আবাহনী কর্মকর্তাদের দৌড়াদৌড়ির কোনো শেষ নেই। ফেডারেশনের বোর্ড রুমে তাদের কয়জনকে সব সময়ই বসে থাকতে দেখা যাচ্ছিলো। ইতিমধ্যে খবর রটে গেছে আবাহনীর বিশেষ দূত কলকাতা গেছেন বিশেষ কিছু প্লেয়ার কালেকশন করার উদ্দেশ্যে। খেলার ঠিক আগের দিন হঠাত করেই ফেডারেশন ঘোষনা দিলো, শেষ খেলার জন্য কোনো দল যদি ধারে কোনো বিদেশী খেলোয়াড় আনতে চায় তবে সেটা ফেডারেশন অনুমতি দিবে। খেলার দিন সকালবেলা কলকাতার ইস্টবেঙ্গলের স্ট্রাইকার চিমা ওকোরি, গোলরক্ষক অতনু ভট্টাচার্য্য, আর সুযোগ সন্ধানী তুখোড় স্টাইকার শিশির ঘোষকে নিয়ে আবাহনীর সেই দূত দেশে ফিরলেন। মোহামেডান সমর্থরা ফেডারেশনের এহেন হঠকারী সিদ্ধান্তের কারনে ক্ষোভে ফেটে পড়লো। ফেডারেশনের পূর্ব ঘোষনা অনুযায়ী নতুন কোনো আনরেজিস্টার্ড খেলোয়াড় শেষ ম্যাচে অংশগ্রহণ করতে পারবে না বলে মোহামেডান যেখানে বাইরের কোনো প্লেয়ারের দিকে তাকালো না। সেখানে একদিনের নোটিশে আবাহনী তিন তিন ফুটবলার নিয়ে হাজির। ক্ষোভের পাশাপাশি সমর্থরা বেশ চিন্তায়ও পড়ে গেলো। বিশেষ করে সুযোগ সন্ধানী স্ট্রাইকার শিশির ঘোষের ব্যাপারে সবাই বেশ শঙ্কিত। সুযোগের শতভাগ কাজে লাগায় এই শিশির ঘোষ সেটা প্রায় সবারই জানা। নির্দ্ধারিত সময়ে খেলা শুরু হলো। প্রথম পনেরো মিনিটেই সুযোগ সন্ধানী শিশির ঘোষ সুযোগের সন্ধান পেয়ে গেলেন। আর যা হবার তাই হলো... আবাহনী ১-০ তে এগিয়ে গেলো...
যদিও শেষ পর্যন্ত মোহামেডান ঐ খেলায় ৩-১ গোলে জয়লাভ করে, কিন্তু এই জয়ে শিশির ঘোষের সেই সুযোগ সন্ধানী খেতাবটিতে কিন্তু ম্লান করতে পারেনি। শিশির ঘোষের শেষ খেলা পর্যন্ত ঐ খেতাবটি অক্ষুন্ন থাকে। ফুটবলমোদি সবাই শিশির ঘোষের নামের আগে "সুযোগ সন্ধানী " কথাটা জুড়েই তার নাম নিতো...
সেই কারনেই মামা আপনাকে বলেছি। সুযোগের সন্ধানের জন্য শিশির ঘোষকে খুঁজে বের করার জন্য !!