৭
প্রায় সপ্তাখানেক হয়ে গেছে অনিক বাড়িতে এসেছে । যত দিন যাচ্ছে ততো বোর হচ্ছে অনিক , কারন করার মতো কিছুই খুঁজে পাচ্ছে না আনিকা আজকাল বেশিরভাগ সময় নিজের ঘরেই কাটাচ্ছে । ইভাও গত দুই দিন যাবত আসছে না , কারন পাশের গ্রামে কিছু লোকের সংক্রামণ এর খবর ছড়িয়ে পড়েছে । তাই বাইরে বেরুনো সবাই কমিয়ে দিয়েছে । আর বন্ধুদের সাথে চ্যাট করে কত সময় ব্যায় করা যায় । কিছুক্ষন চ্যাট করার পর আর ভালো লাগে না । NETFLIX এ একটা আকাউন্ট খুলে নিয়েছে যদিও , তবে বেশিক্ষণ সেটাও ভালো লাগছে না । বাইরে যেতে হবে আড্ডা দেয়া অনিকের অভ্যাস । কিন্তু এখন বাইরেও বেশি যাওয়া যাচ্ছে না । গ্রামে কিছু পুরনো বন্ধু আছে , যদিও তাদের সাথে তেমন যোগাযোগ নেই , তাদের সাথে যে একটু আড্ডা দেবে সেটাও হয়ে উঠেছে না । অনিক ভেবেছিলো শহরের মতো এতো কড়াকড়ি গ্রামে হবে না , কিন্তু এখন উল্টো চিত্র দেখা যাচ্ছে , গ্রামের মানুষ আরও বেশি সচেতন ।
কি করা যায় , বসে বসে যখন এই ভাবছে ঠিক তখনি , মোবাইলের নোটিফিকেশন এর টোন বেজে উঠলো , অনিক মোবাইল হাতে নিয়ে স্ক্রিন অন করতেই ওর মনটা একটু ভালো হয়ে গেলো । ইভা টেক্সট করেছে সুধু মাত্র একটা ছোট “হাই” লেখা আর তেমন কিছুই নেই । এই প্রথম টেক্সট করলো ইভা , যদিও অনেক আগেই ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করেছে , কিন্ত অনিক ও কোন টেক্সট করেনি ইভাও করেনি । হয়ত ইভাও অনিক এর মতো অপেক্ষা করছিলো , ভেবেছিলো অনিক আগে কিছু একটা করবে ।
“হাই” লিখে সেন্ড করে দিলো অনিক , মনে মনে ভাবল অনেক হয়েছে , একটু কথা বললে এমন কি দোষ হবে । প্রেম না করলেই হলো।
“ কি করছো”
“শুয়ে আছি , খুব বোরিং লাগছে”
“ হা হা হা বলেছিলাম আগেই , থাকতে পারবে না”
“ বন্দি দশার জন্য বোরিং লাগছে , এমনি তো ঠিক আছে সব”
“ আমদের বাড়ি চলে আসো , আর বোরিং লাগবে না “
“ কেন তোদের বাড়ি কি আছে ?”
“ আমি আছি”
অনিক এর হার্ট একটা বিট মিস করে গেলো , কিছু একটা লিখতে গিয়েও থেমে গেলো ওর আঙুল গুলো । ইচ্ছা করছে কিছু একটা লিখতে যেটা পরে ইভাও ওর মনের কথা বুঝতে পারবে । কিন্তু সেরকম কিছু লিখলো না লিখলো । “ বাচ্চাদের সাথে কথা বলে মজা নেই”
অপর পাশ কিছুক্ষন চুপ চাপ , টাইপ ও করছে না , তবে দেখছে । অনিক ভাব্লাও ইভা মনে হয় মাইন্ড করেছে । অনিক দ্রুত লিখলো “ কিরে মাইন্ড করলি নাকি “ কিন্তু সেন্ড করলো না , মুছে দিলো । ঠিক তখনি ও দেখতে পেলো অপর দিক থেকে কিছু একটা টাইপ হচ্ছে । তাই ঠিক করলো কি লিখছে ইভা সেটা আগে দেখার । বেশ অনেক্ষন পর উত্তর এলো
“ মনে হচ্ছে চোখের ছানি এখনো ঠিক মতো কাটেনি” ।
কথাটা ইভা রাগ করে বলেছে নাকি মজা করে সেটা বোঝা গেলো না । আসলে এই হচ্ছে সামনা সামনি কথা বলা আর টেক্সট এর মাধ্যমে কথা বলার পার্থক্য । ইমোশান ঠিক মতো বোঝা যায় না ।
“ চোখের সামনে তো আর বেশিক্ষণ ছিলি না যে ভালো করে দেখবো”
“ সুযোগ তো দিয়েছিলাম , তখন তোমার কাছে ডিম বেশি পছন্দ হয়েছিলো” সাথে সাথেই ইভার উত্তর এলো ।
অনিক বুঝতে পারছে ও ধিরে ধিরে জড়িয়ে পড়ছে , হয়ত আর কিছুদুর এগিয়ে গেলে আর ফিরে আসা যাবে না । কিন্তু ওর আঙুল গুলি ওর শাসন মানছে না কিছুতেই , দ্রুত টাইপ করে চলছে , টাইপ শেষে সেন্ড বাটনে চাপ দিয়েই অনিক নিঃশ্বাস বন্ধ করে ফেলল ।
অনিক লিখেছে “ আর একবার দেখার সুযোগ হলে মনেহয় আগের ভুল হবে না”
দম আঁটকে বসে আছে ইভার উত্তর এর জন্য । অনিক যানে ও উত্তাল সমুদ্রে যাত্রা শুরু করার জন্য নৌকা ভাসিয়েছে । এখন আর ফিরে আসার সুযোগ নেই । সহজ হবে না এই সম্পর্ক , সবচেয়ে বড় যে বাধা আসবে সেটা আসবে অভির দিক থেকে । রুম মেট হওয়ার কারনে অভি অনেক কিছুই দেখছে যা অনিকের প্রতি খুব ভালো মনভাব তৈরি করেনি ওর মনে ।
“ কি ভাবে দেখতে চাও” বেশ কিছুক্ষন পর উত্তর এলো
“তুই যেভাবে দেখাবি সেভাবেই” দ্রুত টাইপ করে সেন্ড করে দিলো অনিক ।
অনিকের হাতের তালু ঘামছে , বেশ চিন্তা হচ্ছে , সত্যি বলতে প্রথমের প্রেমেও এতো এংজাইটি ফিল করেনি অনিক । শেষ টেক্সট টি পাঠানোর পর ইভা অফলাইন হয়ে যাওয়ার পর থেকেই অনিক ভেবে পাচ্ছে না কি ভুল বলল ও । ইভা কি মাইন্ড করেছে ? কিন্তু মাইন্ড করার মতো কিছুই তো বলেনি ও । আর ইভা নিজেই শুরু করেছে এই ধরনের কথার চালাচালি ।
ইচ্ছা হচ্ছে ইভার সাথে গিয়ে দেখা করে । কিন্তু সেটা সম্ভব হচ্ছে না , কারন ইভাদের বাড়িতে যেতে হলে আনিকাকে নিয়ে যেতে হবে , নইলে এক একা যাওয়া সম্ভব নয় । আর আনিকা কে নিয়ে গেলেও একা ইভার সাথে কথা বলা যাবে না , আনিকা কি মনে করে । হঠাত একটা চিন্তা মাথায় এলো অনিক এর । আনিকা ওর সব গার্ল ফ্রেন্ড এর কথাই যানে । তাহলে আনিকার সাথে কি একটু কথা বলবে?
আসলে আনিকার সাথে কথা বলতেও একটু বাধছে , আনিকা কি ভালো ভাবে নেবে কথাটা ? ওর বান্ধবীর সাথে বড় ভাই প্রেম করতে চাইছে , ভালো ভাবে নাও নিতে পারে । গেলো কয়েকদিন আনিকার সাথেও তেমন দেখা কথা হচ্ছে না । আনিকা নিজের ঘরেই এসি সময় পার করছে । নতুন মোবাইল পেলে যা হয় আরকি । এক দিক থেকে ভালোই হয়েছে অন্য দিক থেকে ভীষণ একেকিত্ত্ব বোধ আরও বেরেছে । অনিক ঠিক করলো আনিকার সাথে একটু কথা বলবে ।
৮
আনিকা নিজের ঘরের দরজা লাগিয়ে বিছানায় শুয়ে , এক হাত পাজমার ভেতরে অন্য হাতে মোবাইল ধরা । মোবাইল এর স্ক্রিনে একটি কালো লোক একটি চিকন স্বর্ণকেশীর উপরে চড়ে বসেছে , এক হাতে চুলের মুঠি ধরে রেখছে অন্য হাতটি দিয়ে কিছুক্ষন পর পর স্বর্ণকেশীর নরম পাছায় চড় বসাচ্ছে ।
আজকাল এই নিয়ে থাকে বেশি আনিকা , একদম নেশার মতো হয়ে গেছে । আগে বেশিরভাগ সময় ইভার পছন্দ করা ভিডিও দেখত আনিকা , কিন্তু আজকাল এসব teen on black এবং teenfedility এর পর্ণ ভিডিও দেখতে দেখতে নেশার মতো ধরে গেছে । মাঝে মাঝে মনে হয় এসব এতো বেশি দেখা ঠিক নয় । কিন্তু যখনি সময় পায় একটু দেখে নিতে ইচ্ছা হয় । পর্ণ দেখার পাশাপাশি আজকাল গোপনাঙ্গ নিয়ে খেলার পরিমান ও বেড়ে গেছে । আজ সকাল থেকে এই পর্যন্ত ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় ডজন খানেক অরগাসম হয়ে গেছে । আরও একটি হওয়ার প্রায় কাছা কাছি , ঠিক সেই সময় দরজায় টোকা পড়লো ।
আনিকার হাত থেমে গেলো , বাড়িতে এখন অনিক একাই আছে , আনু খালা রান্না করে দিয়ে আজ অনেক আগেই চলে গেছে । দ্রুত নিজের জামা কাপড় ঠিক করে নিয়ে উঠে দরজা খুলে দিলো আনিকা । দরজা লাগিয়ে রাখার অভ্যাস না থাকার করনে একটু হরবরিয়ে গেছে ও , তাই জামা কাপড় ঠিক করলেও বাকি সব কিছুতে একটা এলোমেলো ভাব রয়েই গেলো , ফর্সা মুখটা হালকা লাল হয়ে আছে , চুল গুলি আলিথালু এছাড়া সবচেয়ে বড় যে ব্যাপার সেটা হচ্ছে ঘরে যোনি নিস্রিত তরল এর গন্ধ । এই গন্ধ সবাই বুঝবে না কিন্তু যারা এই গন্ধের সাথে পরিচিত একটু চেষ্টা করলেই বুঝে ফেলবে ।
অনিক এর ক্ষেত্রে তাই ঘটলো , প্রথমে কিছু না বুঝলেও , সেই সুক্ষ গন্ধটা নাকে এসে লাগতেই আনিকার দিকে একটু ভালো করে তাকালো। মুখটা ঈষৎ লাল হয়ে আছে , শ্বাস এখনো দ্রুত পড়ছে , কপালের উপর এলোমেলো কিছু চুল এখনো ঘামের সাথে লেপটে আছে। আনিকা কি করছিলো সেটা বুঝতে আর কষ্ট হলো না অনিকের । আর সাথে সাথে একটি রক্তিম আভা অনিকের চেহারাতেও প্রকট হলো । দ্রুত চোখ নামিয়ে নিলো অনিক । অনেক কষ্টে আনিকার নতুন বাড়ন্ত শরীর দেখে নিজের মাঝে যে কাম ভাব উদ্রেক হতো সেটাকে নিয়ন্ত্রণ করছে ও । পুনরায় আর তার পুনরাবৃত্তি চায় না অনিক ।
“কিছু বলবি ভাইয়া” খুব সাধারন ভাবে জিজ্ঞাস করলো আনিকা , আসলে ভাই যে বুঝতে পেরেছে সেটা ওর মাথায় ই আসেনি ।
“ এক কাপ চা করে দে” আনিকার দিকে দৃষ্টিপাত না করেই বলল অনিক , তারপর দ্রুত চলে গেলো ।
মোবাইল এর ব্রাউসিং হিস্টোরি ডিলিট করে আনিকা চলে গেলো চা করতে
আজ দুপুরে ওদের বাবা বাড়ি আসেনি , চালের বড় চালান এসেছে আজ , চারিদিকে চাল বিতরনের যে হিরিক পড়েছে সেই চালের জগান দেয়ার জন্য এই চালান । তাই আজ সন্ধ্যা হয়ে যাবে । লক ডাউনে অন্য সব কিছু বন্ধ থাকলেও ঔষধ আর চাল এই দুই দোকান বন্ধ হয়নি । আর পুরো এলাকার এক মাত্র বড় চালের আড়ত করিম সাহবের হওয়ায় ওনার উপর বেশ চাপ যাচ্ছে আজকাল । তাই সময় মতো বাড়ি আসতে পারছেন না ।
তাই দুপুরে সুধু অনিক আর আনিকা খেতে বসেছে । আনিকা লক্ষ করছে অনিক ঠিক মতো ওর দিকে তাকিয়ে কথা বলছে না । কেমন জানি অন্যমনস্ক অবস্থায় আছে । যেদিন অনিক এলো তার পর দুই তিনদিন এমন অবস্থায় ছিলো অনিক । তারপর ধিরে ধিরে স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছিলো । কিন্তু আজ আবার সেই এক রকম আচরন করছে । আনিকার কাছে এই ব্যাপারটা খুব খারাপ লাগে । একবার ইভার সাথে খুব ঝগড়া হয়েছিলো ওর , তখন প্রায় মাস খানেক দুজনের মাঝে কথা বন্ধ ছিলো , স্কুলে দেখা হলেও একজন আর একজনের সাথে কথা বলতো না । এক সাথে বসে সব বান্ধবীরা যখন আড্ডা দিতো তখন ও একজন অন্যজন কে এড়িয়ে যেত । সরাসরি তাকাতো না একে অপরের দিকে । তখন আনিকার খুব খারাপ লাগতো ।
অনিকের আচরনেও ঠিক সেই রকম লাগছে আনিকার কাছে । একবার ইচ্ছা হলো জিজ্ঞাস করে এমন করছে কেনো । কিন্তু জিজ্ঞাস করলো না একটা অভিমান এসে জড় হলো । দ্রুত খাবার সেরে থালা বাসন রেখে দিয়েই চলে গেলো নিজের ঘরে ।
ঘরে এসেই মোবাইল নিয়ে পড়লো , নাহ এখন আর পর্ণ নয় । ফেসবুক খুলে বসলো , ইভা অফলাইন এ আছে । কিন্তু একটা নতুন ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট দেখতে পেলো আনিকা ,একটা ছেলে হালকা পরিচিত ওদের কলেজে ই পরে । তেমন কথা হয় না , আনিকা রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করলো । প্রায় সাথে সাথেই প্রাইভেট ম্যাসেজ এলো
“ হাই , চিনতে পেরেছো”
আমিকা প্রথমে ভাবল রিপ্লে দেবে না , জীবনের একটা বড় সময় ছেলেদের কাছ থেকে তেমন পাত্তা না পাওয়ায় এক ধরনের জড়তা কাজ করে আনিকার মাঝে । তাই যখন ছেলে গুলি ওকে নোটিস করা শুরু করলো তখন আনিকা কেমন জানি গুটিয়ে গেলো , অনেকটা মনের ভেতরকার জমানো ক্ষোভ থেকে । স্কুল কলেজে নিজে বান্ধবীদের যখন আলোচনা করতে শুনত যে আজ অমুক ছেলে তাকিয়ে ছিলো কাল অমুক ছেলে প্রেম নিবেদন করেছে , তখন নিজের ভেতর গুটিয়ে যেত আনিকা । এক ধরনের হীনমন্যতা কাজ করতো নিজের মাঝে । আজো সেই হীনমন্যতা থেকে বেড়িয়ে আসতে পারেনি ও , তাই এখনো যখন কোন ছেলে ওকে এপ্রচ করে তখন খুব অভিমান হয় , মনে হয় ওর বুকের উপর সদ্য গজিয়ে ওঠা মাংস পিণ্ডের জন্য ছেলেটি ওকে নোটিস করেছে । তাই তেমন ভাবে সাড়া দেয় না আনিকা । বান্ধবীরা জিজ্ঞাস করলে বলে , বাবার ভয়ে এমন করে । আসল কথা কোনদিন কাউকে বলেনি , এমনকি অনিককে ও না ।
তবে আনিকার ওই সব দিনে ওর দুঃখ অনেকটাই লাঘব করতো অনিক , অন্য বান্ধবীরা যখন ছেলে বন্ধুদের সাথে মজা করতো , তখন আনিকা অনিকের সাথে সময় কাটাত । ছেলে বন্ধুর অভাব অনিক পুরন করতো , অবশ্য অনিক সেটা বুঝত না আনিকা কোনদিন ওকে বুঝতে দেয়নি । যে সব চাহিদা মেয়ে বন্ধুদের দ্বারা পুরন না হতো সেটা অনিক এর দ্বারা পুরন হতো , ঘুরতে যাওয়া , নানা ধরনের বাহানা করা , বান্ধবীরা যা বয় ফ্রেন্ড এর কাছে করতো , আনিকা করতো অনিক এর কাছে । আজকাল সেই ভাই ও কেমন আলগা আলগা আচরন করছে । তাই অনেকটা জেদের বসে আনিকা উত্তর দিলো , যেহেতু অনিক দূরে সসরে যাচ্ছে তাই কাউকে না কাউকে তো সেই যায়গায় বসাতে হবে ।
“ হ্যাঁ চিনবো না কেন , তুমি অরুপ আমাদের ক্লাসেই তো ”
ছেলেটি মনে হয় এতটা আসা করেনি , তাই কয়েক মুহূর্ত কোন রিপ্লে এলো না । তারপর এলো “ আমারা কি বন্ধু হতে পারি?”
“ আমরা তো অলরেডি বন্ধু হয়ে গেছি” আনিকা লিখলো একটু পস্রয় দেয়ার জন্য
“ হ্যাঁ , তা হয়েছি , আমি বলছিলাম , বাস্তবে , আই মিন সুধু ফেসবুক এ না “
ছেলেটির এমন হাব্লা মার্কা কথায় আনিকার মুখে একটু হাঁসি ফুটে উঠলো । বেশ মজা পাচ্ছে ও , আনিকা লিখলো “ হয়ত , তবে এখনি নয়” একটু আশা দিয়ে রাখলো আবার ঝুলিয়েও রাখলো
“ অবশ্যই , অবশ্যই , এখন চাইলেও আমরা দেখা করতে পারছি না , কলেজ ও বন্ধ , কিন্তু ভিডিও চ্যাট করতে পারি”
আনিকা মুচকি হাসল , তাপর লিখলো “ হয়ত” মনে মনে ভাবল ছেলেটি বেশ ফাস্ট তো
“ এখন???”
“ নাহ” আনিকা লিখে পাঠাল , যদিও ওর একবার ইচ্ছে হয়েছিলো হ্যাঁ বলার , কিন্তু নিজেকে সামলে নিয়েছে । কারন আনিকা এমনি মজা করছিলো ছেলেটির প্রতি ওর তেমন কোন ফিল নেই ।
চ্যাট আরও কিছুক্ষন এগিয়ে চলল ,এর মাঝে ইভার কল এলো , আনিকা সেটা রিসিভ করে ইভার সাথে কথা বলতে লাগলো ।
এদিকে আনিকা চলে যাওয়ার পর অনিক বেশ অবাক হয়েই থালা বাটি গুলর দিকে তাকিয়ে ছিলো , সাধারনত আনিকাই এসব করে , অনিক হাজার হেল্প করতে চাইলেও করতে দেয় না । আজ সব কিছু ফেলেই এবাভে কেন চলে গেলো , সেটা ভেবে পাচ্ছে না । ধিরে ধিরে সব কত প্লেট ধুয়ে জায়গা মতো রেখে দিলো অনিক । তারপর নিজের ঘরে চলে এলো , একটা চিন্তা মাথায় অনেক ক্ষন যাবত ঘুরছে ওর । সেটা হচ্ছে আনিকা কে মোবাইল এনে দিয়ে কি ভুল করলো নাকি ?
অবশ্য এই বয়সে এসব নিজেও অনেক দেখছে । কিন্তু ঢাকা যাওয়ার আগে মেয়েরা এসব দেখে কিনা তা জানতো না । ঢাকা বিভিন্ন মেয়েদের সাথে বন্ধুত্ব হওয়ার পর জানতে পেরেছে আজকাল মেয়েরাও ছেলেদের সাথে পাল্লা দিয়ে দেখছে এসব । অনিক অবশ্য অনেক আগেই এসব এর অভ্যাস ত্যাগ করেছে । কিন্তু ভাই এর স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্য থেকে মাথা থেকে দুশ্চিন্তা দূর করতে পারছে না । একবার ভাবে এই নিয়ে আলোচনা করবে আনিকার সাথে , আবার ভাবে কি ভাবে আলোচনা করবে , আজকাল আর আনিকার সাথে আগের মতো সহজ হতে পারছে না ও । আগে আনিকার সাথে এমন অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছে যা এক ভাই তার বোন এর সাথে করে না । কিন্তু এখন আর সেই পরিস্থিতি নেই । সেই স্বাচ্ছন্দ্য আর পায় না অনিক যখন আনিকা আশেপাশে থাকে ।
এমন সময় ইভার কল এলো , সরাসরি কল করেছে , অনিক এর মাথা থেকে সাথে সাথে আনিকার চিন্তা উধাও হয়ে গেলো ।
“ ওরে বাবা একেবারে কল করলি যে” ফোন রিসিভ করে বলল অনিক
“ বন্দোবস্ত করলাম এতখন “ ইভা হেঁসে হেঁসে বলল
ইভার কথা বুঝতে পারলো না অনিক , তবে ইভার অফ লাইন হয়ে যাওয়ার কারনে যে দুশ্চিন্তা এসেছিলো সেটা অনেকটা কেটে গেছে , কারন ইভার কণ্ঠে রাগের কোন লক্ষন দেখা যাচ্ছে না । “ কিসের বন্দোবস্ত” অনিক কৌতূহল নিয়ে জিজ্ঞাস করলো
“ দেখা করার বন্দোবস্ত” লজ্জা মিশ্রিত কণ্ঠে বলল ইভা
অনিকের মনটা আনন্দে নেচে উঠলো । “ তাই নাকি “
“ হ্যাঁ মশায় , সব কাজ তো আমাকেই করতে হবে”
বাকি ঘটনা খুলে বলল ইভা , ওর বাবা মা কে বলেছে যে আনিকার কাছে যেতে হবে এক জরুরী কাজে , তাই অনিক যেন ওকে এসে নিয়ে যায় । আনিকাকেও জানিয়েছে ইভা । আর বলতে বলতেই আনিকা এসে দরজায় হাজির
“ ভাইয়া , তোকে.........” কথাটা বলেই আনিকা থেমে গেলো । অনিক হেঁসে হেঁসে তখন ইভার সাথে কথা বলছিলো সেটা আনিকা দেখে ফেলেছে । “ওহ তুই তো জেনেই গেছিস” এই বলে আনিকা আবার চলে গেলো ।
অনিক এতো খুসি হলো যে আনিকার চলে যাওয়া লক্ষ করলো না , ইভা কে জানালো যে আনিকা এসেছিলো , তারপর কল কেটে দিয়ে ভালো একটা টি শার্ট আর প্যান্ট পরে নিলো , গাঁয়ে একটি সুগন্ধি ও লাগলো ।
দশ মিনিট এর রাস্তা অনিক মনেহয় তিন মিনিট এর চলে এলো । এসেই দেখা ইভার মায়ের সাথে । কুসল বিনিময় করতে করতে ইভা চলে এলো । “তোমাকে কষ্ট দিলাম বাবা , বোঝোই তো লক ডাউন এর সময় , রাস্তা ঘাট খালি “ ইভার মা দুঃখ প্রকাশ করে বলল , যদি জানতো যে অনিক কতটা উতলা হয়ে আছে ওনার মেয়ে কে সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার জন্য ।
“ না না চাচি , আপনি ঠিক বলেছেন , আমি আবার দিয়ে যাবো” অনিক যতটা সম্ভব নিজের ভেতরকার উল্লাস চেপে রেখে বলল ।
ফিরতি পথ পাড়ি দিতেও সময় লাগলো না । পুরো পথ দুজনেই চুপ চাপ এসেছে , তবে চাপা একটা উত্তেজনা যে কাজ করছে সেটা বোঝা যাচ্ছে । অনিকদের বাড়িতে ঢুকতেই দুজন আর আলাদা রইলো না , দু জোড়া হাত একে অপর কে জড়িয়ে ধরল , দু জোড়া ঠোট একে অপরের সাথে মিশে গেলো । আর এক জোড়া চোখ দূর থেকে সেটা লক্ষ করলো ।
৯
শীতল দৃষ্টিতে আনিকা তাকিয়ে আছে ইভা আর অনিক এর দিকে । মুল ফটক পেড়িয়ে ভেতরে ঢোকার পর এক সেকেন্ড সময় ও নষ্ট করেনি ওরা । এর আগে ইভা অনেকবার আনিকার কাছে অনিক সমন্ধে এমন কথা বলেছে । আনিকা তখন খুসিই হতো , নিজের বান্ধবীর সাথে ভাইয়ের সম্পর্ক হলে ভালোই হয় , এমন ভাবত । কিন্তু আজ যখন ব্যাপারটা সত্যি সত্যি ঘটছে তখন কেন জানি মেনে নিতে পারছে না আনিকা । এই পৃথিবীতে ওর সবচেয়ে কাছের দুই জন মানুষ একে অপরের কাছা কাছি আসছে এই দৃশটি আনিকার মনে প্রচণ্ড এক ভয়ের সৃষ্টি করছে । মনে হচ্ছে ও একা হয়ে যাবে , যে দুজন মানুষ এর কাছা কাছি ছিলো তারা একে অপরের কাছে এসে ওর কাছ থেকে দূরে সরে যাবে । তখন ওর আপন বলতে আর কেউ থাকবে না । দ্রুত জানালা থেকে সরে গেলো আনিকা , ও চায় না ওরা দেখুক যে পুরোটা ব্যাপার ও দেখছে ।
চুম্বন শেষে , একে অপরের বাহুবন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে , লজ্জায় একজন আর একজনের দিকে তাকাতে পারছে না । দুজনের কারো জন্যই এটা নতুন কিছু নয় । দুজনেই আগে এক বা একাধিকবার এই অনুভুতির মধ্য দিয়ে গিয়েছে । কিন্তু দুজনেই এই হঠাত চুম্বনে বেশ বিব্রত , কারন এতটা হয়ে যাবে দুজনের কেউ ভাবেনি । কিন্ত এসব তো আর ভেবে বলে কয়ে হয় না হঠাত হয়ে যায় । প্রথম নিরবতা ভাংলো অনিক, কারন দুজনের মাঝে অনিক বেশি অভিজ্ঞ “ ভালো ঔষধ দিয়েছিস তো, ছানি একদম কেটে গেছে”
“ এখন দেখতে পাচ্ছো” ইভা মস্তক নত রেখেই জিজ্ঞাস করলো , তবে মিষ্টি হাঁসিটি অনিক এর দৃষ্টি এড়ালো না ।
“ হ্যাঁ দারুন দেখতে পাচ্ছি , সুধু বড় নয় , একেবারে অনেকটাই বড় হয়ে গেছিস , পেকে টস টস করছে” ইভা কে সহজ করার জন্য একটু রসিকতা করে বলল অনিক ।
“ ঔষধ মনে হয় একটু বেশি পরে গেছে “ চোখ পাকিয়ে বলল ইভা , তবে কপট রাগ উপচে চুম্বন পরবর্তী আনন্দ আর লাজ দুটোই ভেসে উঠছে ।
“ উহু খুব দ্রুত দ্বিতীয় ডোজ দরকার হবে “ অনিক হাসতে হাসতে বলল
“ তার আগে আমার বান্ধবীর সাথে দেখা করে আসি” এই বলে ইভা প্রায় দৌড়েই চলে গেলো , অনেকটা পালিয়েই গেলো বলতে গেলে ।
আনিকা বিছানায় আধ শোয়া হয়ে মোবাইল ঘাঁটছিলও , ইভা ঘরে ঢুকেই ওকে এসে জড়িয়ে ধরলো “ আমার আদরের ননদি , কি করছিস , এবার তর জন্য একটা খুঁজে দেখতে হবে”
ইভা যতটা উস্নতার সাথে আনিকাকে আলিঙ্গল করলো , আনিকা ঠিক ততটাই শীতলতার সাথে ইভার আলিঙ্গন কে উপেক্ষা করলো । কিন্তু ইভার আনন্দ সেটা ওকে বুঝতে দিলো না । এতেটাই খুসি যে , ইভা বুঝতেই পারলো না ওর ছোট বেলার বান্ধবির গাল ফুলে আছে ।
“ আমার কাছে তো আর আসিস নি , যার কাছে এসেছিস তার কাছে যা” নির্বিকার ভাবে বলল আনিকা , কিন্তু এবারো ইভা আনিকার নিরলিপ্ততা উপেক্ষা করলো । হেঁসে বলল “ সে তো যাবই , কিন্তু আগে ননদীর সাথে দেখা না করলে যদি রাগ হয় আমার ননদীনির”
‘ বড় এসেছে আমার ভাবি হতে , আগে দেখ কয়দিন টেকে” চোখ মুখ কঠিন করে বলল আনিকা। “ভাইয়া তো দুইদিন পর পর গার্ল ফ্রেন্ড পাল্টায় ,“
আনিকার কথা শুনে ইভা একটু চমকে গেলো , অবাক হয়ে তাকাল বান্ধবীর দিকে , অন্য দিন হলে হয়ত আনিকার এমন আচরণে ঝগড়া হয়ে যেত । কিন্তু ইভা আজকে পাত্তা দিলো না কারন আজ কোন রকম মন মালিন্য করার ইচ্ছে ওর নেই । যতটা উষ্ণতার সাথে বান্ধবীর সাথে দেখা করতে এসেছিলো , ততোটা উষ্ণতা নিয়ে বিদায় হতে পারলো না ইভা । তবে এতে ওর আনন্দের নদিতে একটুও ভাটা পড়লো না। আজ যে বড় আনন্দের দিন ওর বুঝ হওয়ার পর থেকেই অনিকের প্রতি ওর এক ধরেনের আকর্ষণ ছিলো । একের পর এক প্রেম করতে দেখেছে , তাতে ইভার আগ্রহ এক চুল কমেনি , বরং বেরেছে । মনে মনে সংকল্প বেরেছে , যে একদিন যে করেই হোক এই ছেলেটিকে নিজের করে নেবে ।
<><>
অনিক নিজের বিছানায় বসে হঠাত অমন চুমুর ব্যাপারটা ভাবছে । , হঠাত করে যে ও ইভা কে চুমু খায়ে বসবে সেটা আগে থেকে ভেবে রাখেনি । এমনকি এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না যে ব্যাপারটা সত্যি সত্যি ঘটেছে । তবে হুট করে হয়ে গেলেও চুমু ব্যাপারটা নিয়ে একটুও অনুশোচনা নেই ওর মাঝে । বরং একটা ভালো লাগা কাজ করছে । আজকে ইভাকে অন্যরকম লাগছিলো , এমনিতেই ইভা দেখতে অনেক মিষ্টি কিন্তু আজ যেন রাজ্যের মিষ্টতা আর মায়া এসে ভর করেছিলো ওর মুখে । নরম একটি হাঁসি সারাক্ষন লেগে ছিলো ঠোঁটে , তাই অনিক নিজেকে সংবরণ করতে পারেনি । ভাগ্য ভালো ইভাও ওকে পাল্টা চুমু খেয়েছিলো , নয়তো আজ জন্ম নেয়া নতুন সম্পর্কের এখানেই ইতি হয়ে যেত । খুব লজ্জা কর হতো জিনিসটা , এসব ভাবতে ভাবতে ইভা এসে ঢুকল অনিক এর ঘরে ,
“ কিরে দেখা করে এলি আনিকার সাথে?” অনিক জিজ্ঞাস করলো
“ হ্যাঁ ... এলাম...” আসলে আনিকার আচরণে এখনো মেজাজ খিটখিটে হয়ে আছে ওর , কিন্তু অনিক কে বুঝতে দিতে চায় না ও ।
যেমন করে ঠোট বাকিয়ে ‘হ্যাঁ’ বলল ইভা সেটা অনিকের কাছে বেশ আকর্ষণীয় মনে হলো , ঠোট দুটো একটু বাঁকা করে হ্যাঁ শব্দটা বলেছে ইভা , এতে এর সুন্দর ঠোট দুটো আরও বেশি আকর্ষণীও হয়ে উঠেছিলো , আর একবার চুমু খাওয়ার জন্য প্ররোচিত করছে যেন অনিক কে , কিন্তু অনিক নিজেকে সংবরণ করলো , কারন এক দিনে বেশি বেশি হয়ে যাবে ।
“ কি দেখছো” অনিক কে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে জিজ্ঞাস করলো ইভা ।
“ তোকে”
‘ উহু এখন থেকে তুমি বলতে হবে”
“ সেটা করতে মনে হয় একটু সময় লাগবে “ অনিক হেঁসে বলল
“ চলবে না” রাগি গলায় বলল ইভা ,” চুমু খেতে তো এক সেকেন্ড ও সময় লাগে নি “
হা হা হা করে হেঁসে উঠলো অনিক , তারপর বলল “ আমি মনে হয় জোড় করে খেয়েছি “
“ আমি কি সে কথা বলেছি , আচ্ছা ঠিক আছে আগে বলো , যা দেখলে তা পছন্দ হয়েছে? “ এই বলে এক পাক ঘুরল ইভা
“ অনে.........কে , ইচ্ছে হচ্ছে চিবিয়ে খেয়ে ফেলি “ কথাটা বলে অনিক ভাবল একটু বেশি হয়ে গেলো কিনা , শত হলেও মফঃস্বল এর মেয়ে ইভা ,
“ ঈশ সখ কত , তোমার মাথায় কি সুধু খাওয়া দাওয়ার কথা ঘোরে , অন্য কিছু ভাবতে পারো না “
“ কি ভাববো তুই ই বল “
“ একটু রোমান্টিক ভাবে বলতে পারতে , যে আমাকে অনেক সুন্দর লাগছে “ ইভা ঠোট ফুলিয়ে বলল
“ চল বাইরে গিয়ে আম গাছের নিচে বসে কথা বলি , আনিকাকেও ডাক , নয়তো মাথায় সুধু খাওয়া দাওয়ার কথা আসছে”
সত্যি বলতে একা ঘরে ইভার সাথে নিজেকে বিশ্বাস করছে না অনিক , অন্য কেউ হলে হয়ত অনিক এতো কিছু ভাবত না । কিন্তু এই মেয়েকে বিশেষ ভাবে ট্রিট করতে চায় অনিক । না বোনের বান্ধবি আর বন্ধুর বোন হিসেবে নয় , ইভা নিজেই বিশেষ কিছু ।