বানানের ভুলের জন্য ক্ষমাপ্রার্থী
♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪
আজ মা নেই।এই সংসারে দুটি মানুষের জন্য আজ আমি এখানে।একজন আমার মা আর অন্য জন হলেন নরেন মামা।আমার জন্মের পর শুধু একবার বাবাকে দেখেছিলাম। সম্ভবত বছর কুড়ি বা তারাও আগে।যতোদূর মনে পড়ে তখন আমি স্কুলে পড়তাম।মা আমাকে নরেন মামার হাতে দিয়ে বলেছিলো,যাও নরেন দা ওরে ওর বাবা দেখার শখ মিটিয়ে আনো।শুনে আমি তো খুশিতে আটখানা।মামার সাথে কাঁচা রাস্তা ধরে হেটে ট্রেন ধরি।মামা আমাকে নিয়ে গেলেন শহরের এক কোলাহলপূর্ণ এলাকায়।চারিদিকে মানুষ আর মানুষ।পথে মামা বলেছিলেন বুড়ী তোর বাবা কিন্তু খুব রাগী মানুষ।যদি কিছু প্রশ্ন করে স্পষ্ট জোরে উত্তর দিবি।আমি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালাম। কিছুসময় চুপ থেকে মামাকে প্রশ্ন করলাম, মামা বাবা আামাদের ছেড়ে এতো দূরে একা থাকে ক্যান? আমাদের কি সে অপছন্দ করে?
মামা অনেকক্ষণ চুপ থেকে,গলা খাকড়িয়ে নিচুস্বরে বললেন,শোন বুড়ী তোর বাবা এখানে তার নতুন স্ত্রীর সাথে থাকে।তার শশুরের ব্যাবসা সামলান।তোর বাবা এখন বিরাট মানি লোক,পয়সাওয়ালা মানুষ।শশুরের একমাত্র কন্যার উপযুক্ত ঘরজামাই।তুই এখন বড় হচ্ছিস, তোর জানা দরকার। তোর বাবা তোর মায়ের সাথে প্রতারণা করেছে,তোর মাকে ঠকিয়েছে। তোর মা তাকে বিশ্বাস করে সর্বস্ব দিয়ে ভালোবেসেছিল।কিন্তু তোর বাবা অর্থ লোভে নিজেকে বিকিয়ে দিয়েছে।আজ তার বাড়ি,গাড়ী, টাকা কি নেই?অথচ তোর মা পড়ে রয়েছে গ্রামের ওই এককোনায়, একলা।তোর জন্মের পর কতো বলেছি বুন্ডি বিয়ে কর।নতুন সংসার পাত।কতো মানুষ ই তো সন্তান সাথে নিয়ে নতুন করে সংসার গড়ে দিব্যি চালিয়ে যাচ্ছে। তুই ও পারাবি।তখন তোর মা শুধু বলতো, দাদা যার হয় শুরুতেই হয়।আমার কপালে এই মেয়ে ছিলো,আমি ওরে নিয়েই বাকীটা জীবন কাটিয়ে দিতে পারবো। কই তুমি ও তো আবার সংসার পাতো নাই।বৌদির বাচ্চা হয় নাই,তবুও তো তার জীবদ্দশায় একটা বিয়ে করো নাই।তার চলে যাওয়ার পরও তো একলা রয়ে গেলে।নরেন দা তুমি আমাদের দেখবে না বলো?সেই থেকে আজ পর্যন্ত ওমনি হাড়ভাংগা খেটে চলছে তোর মা। কথা বলতে বলতে আমারা চলে এলাম এক বিশাল বিল্ডিং এর সামনে।সামনে থেকে দেখে মনে হলো আকাশ ছুয়ে গেছে ওর মাথা।মামা আমাকে নিয়ে লিফটে চেপে বারো তলায় পৌঁছালো। সেখানে গিয়ে এক ভদ্রমহিলাকে জিজ্ঞেস করলোঃ শশোধর কাপালি আছেন? মহিলা জবাব দিলেন, স্যার মিটিং এ আছেন।কে আপনি?মামা বললেন আমি নরেন্দ্রনাথ কাপালি। দয়াকরে আপনার স্যারকে বলবেন নরেন কাপালি নামের একজন লোক এসেছে গ্রামের বাড়ি থেকে।মহিলা ফোন করে কি যেনো বললেন।মিনিট দশেক পড়েই বললেন, স্যার আপনাদের ডেকেছেন ভিতরে চলুন। আমরা তার পিছুপিছু চললাম। ভিতরে গিয়ে দেখলাম একজন বিশাল লম্বা ও ফর্সা সামান্য টাক মাথা ওয়ালা ভদ্রলোক দাড়িয়ে সিগারেট খাচ্ছেন।ভদ্রমহিলা বললেন আপনারা থাকুন আমি আসছি।মামা মাথা নাড়িয়ে গলা খাঁকড়ি দিয়ে বললেন, ক্যামন আছো শশো?ভদ্রলোক সিগারেটে একটা বড় টান দিয়ে ধোয়া ছাড়তে ছাড়তে মামার দিকে তাকালেন।পরোক্ষণেই কিছুটা আড় চোখে একপলক আমাকেও দেখে নিলেন। তারপর একটানে বাকী সিগারেট শেষ করে ফেলতে ফেলতে বললেন, নরেন তুমি আবার এসেছো?তোমাদের লজ্জা নেই তা জানতাম কিন্তু অপমান বোধ ও যে নেই তা তো জানতাম না।তা সাথে আবার এ কে হে বাপু? তোমার মেয়ে নাকি? ওহ তোমার আবার মেয়ে কোত্থেকে আসে!কি সমাচার বলো? মামা বললেন এবারই শেষবার শশো।আর আসবো.....বলা শেষ করার আগেই ভদ্রলোক বললো থামো।যেবার ই এসেছো এই এক মন্ত্র পাঠ করেছো।নতুন কিছু থাকলে বলো না হলে কিছু খেয়ে বিদায় হও বাপু।মামা লজ্জায় মাথা নিচু করে নির্লজ্জের মতো আবার বলতে লাগলো। শশো এই মেয়ে তোমার নিজের মেয়ে।সবসময় জেদ করে বাবাকে দেখবে বলে।অনেক বুঝিয়ে সুজিয়ে এতোদিন রেখেছি ভাই।আর পারলাম না।তাই বাধ্য হয়ে.....কথা শেষ হবার আগেই ভদ্রলোক বললো, আস্তে কথা বলো নরেন।তোমাদের সম্মানবোধ না থাকতে পারে কিন্তু আমার একটা স্টাটাস আছে।মেয়ে বললো আর নাচতে নাচতে রথ দেখাতে নিয়ে এলে।এজন্যই আমি তোমাদের দেখতে পারি না দু চোখে।হঠাৎ আমার দিকে রক্ত চক্ষু করে চেয়ে ভদ্রলোক বললেন, কি হে রাজকন্যা, কি দ্যাখা হয়েছে?জবাবে আমি কিছু বলতে পারলাম না।শুধু মামার হাতটা শক্ত করে ধরলাম। আর মাথা নিচু করে মামার পিছনে এসে দাড়ালাম।মামা বললো বুড়ী, মা আমার বাবাকে প্রণাম করো।আমি কিছুতেই সাহস পেলাম না।ঠিক সঙ্গে সঙ্গেই ভদ্রলোক ধমক দিয়ে বললো, নরেন যথেষ্ট হয়েছে।আদিক্ষেতা ছাড়ো।আমি বলে দিচ্ছি। নিচে গিয়ে কিছু খেয়ে বিদায় হও।আমার আবার মিটিংয়ের দেরি হয়ে যাচ্ছে।পারলে আর কখনো এমুখো হইয়ো না।বলতে বলতে জুতার শব্দ করে সামনে এগিয়ে গেলেন ভদ্রলোক। মামা আমার দিকে তাকিয়ে বললো, এই বুড়ী বাবাকে প্রণাম করলি না ক্যানো? কিছু বললি না ক্যান? আমি শুধু একটা কথাই বলতে পেরেছিলাম মামা এখান থেকে আমাকে নিয়ে চলো।আর কোনোদিন এখানে আনবে না আমাকে।আর কোনোদিন ও না।