What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

যুক্তিবাদী গুরু বিবেকানন্দ (1 Viewer)

ji7vDiX.jpeg


আপনি কখনও কাউকে কারও কাছে যোগের মতো অপার্থিব কোনোকিছুর জন্য দরবার করতে শুনেছেন, এমনটি আমার জানা নেই। কলিযুগে বৈষয়িক বিষয় রেখে অবৈষয়িক বিষয়ে দরবার করতে খুব কম মানুষকেই দেখা যায়। রামকৃষ্ণ যখন জীবনসায়াহ্নে এসে পৌঁছেছেন, তখন একবার নরেন্দ্রনাথ দত্ত, পরবর্তীতে স্বামী বিবেকানন্দ এমনই দরবার করেছিলেন। তিনি ঠাকুরের কাছে নির্বিকল্প সমাধির জন্য বারবার দরবার করেছিলেন। কিন্তু ওই সময় ঠাকুর তা দেননি কেন? কারণ তিনি ভালোভাবেই জানতেন যে, ১৮৯৩ সালে এই বিবেকানন্দ শিকাগোতে ধর্মসভা মহাসম্মেলনে বক্তৃতা দেবেন। আর তাই যত মত, তত পথের এই প্রবক্তা সেদিন নির্বিকল্প সমাধি চাইতে আসা প্রিয় শিষ্যকে তা দেননি। দিয়েছিলেন পরে। যখন বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে তার কাজ সমাপ্ত হয়েছে, তখন। ১৯০২ সালের ৪ জুলাই নির্বিকল্প সমাধির ভেতরেই প্রয়াণ হয় তার। চিকিৎসকরা অবশ্য ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন, মস্তিষ্কের রক্তনালী ফেঁটে যাওয়ার দরুণ মৃত্যু হয়েছে বিবেকানন্দের। কিন্তু তার শিষ্যরা পরবর্তীতে এই মৃত্যুকে ব্যাখ্যা করেছেন, নির্বিকল্প সমাধিস্থ থাকলে এক পর্যায়ে ব্রহ্মতালু ফেঁটে যায়। এভাবেই প্রয়াত হন বিবেকানন্দ।

১৮৬৩ সালের ১২ জানুয়ারি এক কায়স্থ দত্ত পরিবারে জন্ম নিয়েছিলেন নরেন্দ্রনাথ। জন্মের আগে তার মা ভুবনেশ্বরী দেবী শিবের আরাধনা করতেন। সন্ন্যাসীরা বলেছিলেন, এ হলো স্বয়ং শিবশম্ভু। গেরুয়া ধারণ করে যিনি সমগ্র বিশ্ব সংসারকে পথ দেখাবেন। সেই নরেন্দ্রনাথ দত্তের বাবা বিশ্বনাথ দত্ত ও পিতামহ দুর্গাপ্রসাদ দত্ত ছিলেন আইন ব্যবসায়ী। তিনি নিজেও আইন বিষয়ে পড়াশুনা করেছিলেন। কিন্তু ঠাকুর রামকৃষ্ণের পাদপদ্মে সে আর হয়ে ওঠেনি। কেননা রামকৃষ্ণ তাকে বলেছিলেন, তুই জগতে এই কারণে আসিস নে। তুই কে, তা বুঝতে পারবি যখন ইহজগতে আর থাকবি নে, তখন।

সনাতন ধর্মের প্রচারকরা বলে থাকেন, মানুষকে আধ্যাত্মিক মুক্তির পথ দেখানোর জন্যই বিবেকানন্দের আবির্ভাব হয়েছিল। তিনি না থাকলে রামকৃষ্ণকে পরিপূর্ণরূপে প্রচার করা কষ্টসাধ্য হতো। মৃত্যুর আগে বিবেকানন্দ বলেছিলেন, যদি একজন মানুষকেও সংশোধন করতে হয়, তারপরেও ধরাধামে আমি আবার দেহধারণ করবো। কোথায় স্বর্গ, কোথায় নরক, কে বলে তা বহুদূর/ মানুষের মাঝেই স্বর্গ-নরক, মানুষেতেই সুরাসুর- এই আধ্যাত্মিক বাণী মানুষকে উপলব্ধির জন্যই বিবেকানন্দ। রামকৃষ্ণ বিশ্বাস করতেন মানুষের মধ্যেই ভগবান বাস করে। সে হোক হিন্দু, হোক মুসলমান।

মুঘল শাসনামল থেকে বিবেকানন্দের পূর্বপুরুষেরা বর্ধমান জেলার কালনা মহকুমার ডেরিয়াটোলি গ্রামে বসবাস করতেন। ব্রিটিশ শাসনামলে তার এক পূর্বপুরুষ রামনিধি দত্ত ছেলে রামজীবন দত্ত ও নাতি রামসুন্দর দত্তকে সঙ্গে নিয়ে কলকাতার গোড়গোবিন্দপুর গ্রামে চলে আসেন। পরবর্তীতে তারা সুতানুটি (উত্তর কলকাতার সিমলা) গ্রামে চলে আসেন। ৩ নম্বর গৌরমোহন মুখোপাধ্যায় স্ট্রিটের যে বাড়িতে বিবেকানন্দ জন্মগ্রহণ করেছিলেন, সেই বাড়িটি নির্মাণ করেছিলেন রামসুন্দর দত্তের বড় ছেলে রামপ্রসাদ দত্ত। রামপ্রসাদ দত্তের বড় ছেলে দুর্গাপ্রসাদ দত্ত ছিলেন বিবেকানন্দের পিতামহ। একমাত্র ছেলে বিশ্বনাথ দত্তের জন্মের পর মাত্র ২৫ বছর বয়সে সন্ন্যাস গ্রহণ করেন তিনি। তখন থেকেই চাচা কালীপ্রসাদ দত্তের কাছেই লালিতপালিত হন বিশ্বনাথ। আর বিশ্বনাথ ও ভুবনেশ্বরীর ঘর আলো করেই বিশ্বে আর্বিভূত হন স্বয়ং শিবশম্ভু অর্থাৎ নরেন্দ্রনাথ দত্ত (পরবর্তী আশ্রমে স্বামী বিবেকানন্দ নামে পরিচিত হন)।

বিশ্বনাথ দত্ত ছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের অ্যাটর্নি। তিনি চেয়েছিলেন, ছেলে বিবেকানন্দও নামকরা আইনজীবী হবেন। কিন্তু বিধিলিপি ছিল উল্টো। আইনে পড়াশুনা করলেও বেশিদূর এগোতে পারেননি তিনি। এরই মধ্যে বিষয়বুদ্ধির আবরণে থেকেও রামকৃষ্ণের প্রিয় শিষ্য হয়ে ওঠেন। রামকৃষ্ণের সঙ্গে নরেন্দ্রনাথের পরিচয় রামচন্দ্র দত্তের মাধ্যমে, সুরেন্দ্র্যনাথ মিত্রের বাড়িতে। রামচন্দ্র দত্ত ও সুরেন্দ্র্যনাথ মিত্র দুজনেই ঠাকুরের গৃহী শিষ্যদের অন্যতম ছিলেন। অন্যদিকে, নরেন্দ্রনাথ দত্ত প্রথম জীবনে ছিলেন যুক্তিবাদী এবং নিরীশ্বরবাদী। তাই ঠাকুরের সঙ্গে এই সাক্ষাৎকে রামকৃষ্ণ ও বিবেকানন্দ দুজনেই গণনায় ধরতেন না।

বাবার যুক্তির প্রতি অনুরাগ ও মায়ের ধর্মানুশীলন বিবেকানন্দের জীবনকে দারুণভাবে প্রভাবিত করেছিল। এ জন্যই 'বিবিদিশানন্দ' হয়ে উঠতে পেরেছিলেন তিনি। তার মতো ঠাকুরের আরেক ভক্ত নাট্যকার গিরিশচন্দ্র সেনও নিজেকে পরিবর্তন করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তিনি এক সময় নেশা করতেন। এ কারণে কলকাতা শহরে তার নামে কুখ্যাতি ছিল। কিন্তু ঠাকুরের পাদপদ্মে থেকে বিবেকানন্দের যুক্তিবাদী মন যেমন পরাভূত হয়েছিল, তেমনই গিরিশচন্দ্রের জীবনে এসেছিল পরিবর্তনের ছোঁয়া।

যাই হোক, ১৮৮৬ সালে রামকৃষ্ণের প্রয়াণের পর বিবেকানন্দ ভারত ও পাশ্চাত্যের বিভিন্ন দেশে পরিব্রাজক হিসেবে ঘুরে বেড়ান বিবেকানন্দ। ১৮৯৩ সালে ছোট ভাই মহেন্দ্রনাথ দত্তের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্বধর্ম মহাসম্মেলনে গেছিলেন তিনি। রামকৃষ্ণ মন্দির ও মঠসহ ভারতে গড়ে তোলেন একাধিক মঠ-মন্দির। বিবেকানন্দের ছোট ভাই ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত ভারতের ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রামী ও সমাজতান্ত্রিক নেতা হিসেবে পরিচিত। আর মহেন্দ্রনাথ দত্ত ছিলেন ঠাকুর রামকৃষ্ণের গৃহী শিষ্য ও লেখক।

রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব প্রায়শই বলতেন, মানুষ টাকার জন্য কাঁদে, মা তার বেটার জন্য, কিন্তু ভগবানের জন্য কাঁদে ক'জনা? ঠাকুরের প্রিয় এই শিষ্য তাই একবার ঠাকুরের কাছে চেয়েছিলেন নির্বিকল্প সমাধি। কাশীপুরে তা লাভও করতে পেরেছিলেন। কিন্তু ঠাকুরের কথামতো লোকশিক্ষার সব কাজ সেরে ১৯০২ সালের ৪ জুলাই বেলুড় মঠে নির্বিকল্প সমাধিস্থ হন তিনি।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top