What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

ব্যাঘ্রবীর শ্যামাকান্ত (1 Viewer)

BRICK

Board Senior Member
Elite Leader
Joined
Dec 12, 2019
Threads
355
Messages
10,073
Credits
81,757
T-Shirt
Glasses sunglasses
Calculator
Watermelon
Pistol
Pistol
বাঘকে নিজের শারীরিক শক্তি দিয়ে বশ করতে চেয়েছিলেন তিনি | বেশ কয়েকমাসের অভ্যাসে বহু রক্ত-ঘাম ঝরিয়ে সফলও হন তিনি | বাঘের সাথে লড়ার সময় শ্যামাকান্ত বাঘের মুখে তার হাতটি ঢুকিয়ে দিতেন। বাঘ তার হাতটিকে কামড়ে ধরলে রক্তের ধারা গড়িয়ে পড়ত, কিন্তু তিনি থাকতেন নিরুত্তাপ | বহুবার তিনি খাঁচার ভেতরে ঢুকে বাঘের সাথে লড়াই করার সময় আক্রান্ত হন। কিন্তু প্রতিবারই তিনি মাথা ঠান্ডা রেখে নিরাপদে বেড়িয়ে আসেন। এভাবেই হয়ে ওঠেন কিংবদন্তি | তাঁর নামই হয়ে যায় -- ' ব্যাঘ্রবীর শ্যামাকান্ত..'

কে এই 'ব্যাঘ্রবীর শ্যামাকান্ত'?

আসল নাম শ্যামাকান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় | জন্ম ১৮৫৮ সালে অবিভক্ত বাংলার ঢাকা জেলার বিক্রমপুর অঞ্চলের আড়িয়ল গ্রামে। শ্যামাকান্তর পিতা শশীভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় ত্রিপুরা জেলার মুরাদনগরে আদালতে সেরেস্তাদার ছিলেন।শ্যামাকান্তরা ছিলেন চার ভাই ও তিন বোন। চার ভাইয়ের মধ্যে শ্যামাকান্ত ছিল সবচেয়ে বড় | বাঙালি জাতি দুর্বল, ভীরু, কাপুরুষ, আত্মরক্ষায় অক্ষম - এই অপবাদ ঘোচাতে তিনি ছিলেন বদ্ধপরিকর। তাঁর শক্তি এবং সাহস ছিল অপরিসীম। ছোট থেকেই পড়াশোনার থেকে শরীরচর্চার উপর তার ঝোঁক ছিল বেশি | পড়তেন ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলে | সেখানে সহপাঠী ছিলেন পরেশনাথ ঘোষ | দুজনে মিলে লক্ষ্মীবাজারের অধর ঘোষের আখড়ায় কুস্তিচর্চা শুরু করেন | খেতেন দুই মণ দুধের মালাই | কুস্তিতেও পারদর্শী ছিলেন শ্যামাকান্ত | হেলায় হারাতেন তখনকার পালোয়ানদের |

শ্যামাকান্ত স্বপ্ন দেখতেন সৈনিক হবেন | কিন্তু ব্রিটিশ ভারতের সেনাবাহিনীতে বাঙালির প্রবেশ তখন নিষিদ্ধ | ঠিক করেন কোনও দেশীয় রাজ্যের সেনাবাহিনীতে ঢুকে যুদ্ধবিদ্যা শিখবেন | কিন্তু সেই ইচ্ছা পূর্ণ হয়নি | এর কিছুদিন পর বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন তিনি | বিবাহের পর শ্যামাকান্ত আগরতলায় বেড়াতে যান | ত্রিপুরার শাসক মহারাজ বীরচন্দ্র মাণিক্য বাহাদুর শ্যামাকান্তের দেহ সৌষ্ঠব ও শরীরচর্চায় পারদর্শিতা দেখে তাকে নিজের পার্শ্বচর নিযুক্ত করেন | একবার মহারাজের সাথে শিকারে বেরোলেন শ্যামাকান্ত | শিকার করতে গিয়ে বাঘ আক্রমণ করল তাদের | সেইসময় খালি হাতে বাঘের সাথে লড়ে তাকে ধরাশায়ী করেছিলেন শ্যামাকান্ত | দুই বছর পর ত্রিপুরায় থাকার পর ১৮৭৬ সালে শ্যামাকান্ত বরিশাল জেলা স্কুলের ব্যায়াম শিক্ষকের চাকরি নিয়ে বরিশাল চলে যান। সেখানেই গঠন করেন সার্কাস দল | কেনেন চিতাবাঘ | সেই চিতাবাঘকে বশ করার জন্যে খাঁচার ভেতর ঢুকে তার সাথে রীতিমত লড়াই শুরু করে দিতেন শ্যামাকান্ত | বাঘের নখদন্তে বহুবার ক্ষতবিক্ষত হয়েছেন কিন্তু হাল ছাড়েননি তিনি | দুইমাস পর সেই চিতাবাঘ বশ মানে | এরপর ধীরে ধীরে বাঘ, সিংহের মত হিংস্র পশু বশ করতে শুরু করেন শ্যামাকান্ত | সারা দেশে শ্যামাকান্তের নাম ছড়িয়ে পড়ে।

ভাওয়ালের রাজা তাকে সুন্দরবনের একটি রয়াল বেঙ্গল টাইগার দান করেন | সেই বাঘটিকে শ্যামাকান্ত নাম দিয়েছিলেন গোপাল | ট্রেনে করে বাঘটাকে ঢাকায় নিয়ে বন্ধু পরেশনাথ ঘোষের আখড়ার শিকল দিয়ে বেঁধে রাখেন তিনি | এই বাঘটিকেও বশ করেছিলেন তিনি | বহুবার বাঘ হাত কামড়ে ক্ষতবিক্ষত করে দিয়েছিল বাঘটি কিন্তু হার মানেননি শ্যামাকান্ত |

পাটনার নবাব শ্যামাকান্তকে বাঘিনীর সাথে কুস্তি লড়ার আহ্বান জানান | কুস্তিতে জিততে পারলে পুরস্কার দু'হাজার টাকা | শ্যামাকান্ত রাজি হন | চারিদিকে হইচই পড়ে যায় | হাজার হাজার লোক সেই লড়াই দেখতে আসে | সেই বাঘিনীটিকে যুদ্ধে পরাজিত করেন শ্যামাকান্ত | নবাবের থেকে দু'হাজার টাকা, দু'টি আরব ঘোড়া ও বাঘিনী উপহার পান | ১৮৯৪ সালে শ্যামাকান্ত ফ্রেডকুকের ইংলিশ সার্কাসে হিংস্র পশুর খেলা দেখতে শুরু করেন | পেতেন মোটা টাকা বেতন | মাসে ১৫০০ টাকা | এক বছর পর সেই চাকরি ছেড়ে নিজের সার্কাস দল নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় খেলা দেখতে থাকেন তিনি | গোটা বাংলায় শোরগোল পড়ে যায় | ১৮৯৭ সালে রংপুরে অবস্থানকালে এক প্রবল ভূমিকম্পে তার সার্কাসের বহু পশু বাড়ি চাপা পড়ে মারা যায় | বেঁচে যায় দুটি বাঘ | প্রবল ক্ষতির সম্মুখীন হন শ্যামাকান্ত | বাঘ দুটিকে নিয়ে শ্যামাকান্ত কলকাতায় চলে আসেন এবং বাঘের সাথে কুস্তি ও অন্যান্য খেলা দেখাতে থাকেন।তার সার্কাসের তাঁবুর বাইরে লেখা থাকত - 'Grand Show of Wild Animals!' বাঘের মুখের ভেতর মাথা ও শরীরের অন্যান্য অঙ্গ প্রত্যঙ্গ ঢুকিয়ে খেলা দেখাতেন তিনি | ১৮ বছর বাঘ সিংহের খেলা দেখিয়েছেন তিনি। সবচেয়ে জনপ্রিয় ছিল রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের সঙ্গে খেলা। রয়্যাল বেঙ্গলের খাঁচায় ঢুকতেন শ্যামাকান্ত। প্রবল গর্জন করে ছুটে আসত রয়্যাল বেঙ্গল। বাঘের মুখে ডান হাত ঢুকিয়ে রয়্যাল বেঙ্গলকে আলিঙ্গন করতেন শ্যামাকান্ত। এই দৃশ্য দেখে দর্শকদের কেউ আতঙ্কিত, কেউ বিস্মিত।

বুকের উপর প্রকাণ্ড পাথর রেখেও খেলা দেখাতেন শ্যামাকান্ত। ১০ মণ ওজনের পাথর বুকে রাখতেন। আর হাতু়ড়ি দিয়ে সেই পাথর ভাঙা হত। একবার লাটভবনে ১৪ মণ পাথর বুকে নিয়ে খেলা দেখান শ্যামাকান্ত | তাঁর বীরত্বের কাহিনি সে কালের বাংলা ও ইংরাজি সংবাদপত্রে ফলাও করে ছাপা হত।

এক কাগজে লেখা হল :
" পদে মস্তকেতে উচ্চ উপাধান,
অবশিষ্ট দেহ শূন্যেতে রয়।
ঐ যুবা এক রয়েছে শয়ান,
হেন অবস্থায় বিশাল প্রস্তর
দিয়াছে যুবার বক্ষের উপর ,
লৌহময় এক ধরিয়া মুদগর
সবলে অপরে আঘাত করে।
অদ্ভূত ব্যাপার, ভাঙ্গিল প্রস্তর!
ব্যথিত না হ'লো বীরের দেহ !
দৈত্য কি দানব হবে এই নর!
অসুর বিনা এত পারে কি কেহ ?"

ত্রিপুরার ল্যাংটা বাবা নামক জনৈক প্রবীণ সন্ন্যাসীর সাথে শ্যামাকান্তের পরিচয় ছিল | তার সান্নিধ্যে এসে শ্যামাকান্ত স্ত্রী কন্যাকে ছেড়ে গৃহত্যাগ করেন | তীর্থস্থানে ঘুরে বেড়াতে থাকেন | হিমালয়ের পাদদেশে পরিভ্রমণকালে তার সাথে এক সাধকের পরিচয় হয় | তিনি শ্যামাকান্তকে তিব্বতীবাবার কাছে পাঠিয়ে দেন | তিব্বতীবাবা শ্যামাকান্তকে সন্ন্যাস ধর্মে দীক্ষা দেন | এরপর শ্যামাকান্তের নাম হয় 'সোহং স্বামী' | সন্ন্যাস গ্রহণের পর তপস্যা শুরু করেন সোহং স্বামী | এরপর তিব্বতীবাবার নির্দেশে নৈনিতাল থেকে সাত মাইল দূরে হিমালয়ের কোলে ভাওয়ালী নামক স্থানে তিনি একটি আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন সোহং স্বামী | সেখানেই সাধনা করতেন তিনি | সেই সময় বেশ কিছু বইও লিখেছনে তিনি |

১৯১৮ সালের ৫ ডিসেম্বর প্রয়াত হন সোহং স্বামী ওরফে 'ব্যাঘ্রবীর শ্যামাকান্ত' | তিব্বতীবাবা তার দেহাবশেষ বর্ধমান জেলার পালিতপুর আশ্রমে নিয়ে আসেন ও তার সমাধি স্থাপন করেন..

© এক যে ছিলো নেতা

সংগৃহীত।(ফেসবুক)
 

Users who are viewing this thread

Back
Top