চলছে পবিত্র মাহে রমজান। অপার মহিমায় ভরা এই রমজানের প্রভাবে পরিবর্তন এসেছে মানুষের মন, চিন্তা-চেতনা, আচার-আচরণ, জীবন ধারণ, খাদ্যভাসসহ সব কিছুতেই। এই পরিবর্তনের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে না পারলেই আপনি হারাতে পারেন আপনার স্বাভাবিক স্বাস্থ্য ও সৌন্দরর্য্য। স্বাস্থ্য ও সৌন্দরর্য সাথে সবচেয়ে বেশি সম্পর্কীত আপনার খাদ্যাভাসের। তাই রমজানে আপনার খাদ্যতালিকায় এমন কিছু খাবার যোগ করতে হবে যা দিবে স্বাস্থ্য সুরক্ষা। সেইসাথে সৌন্দরর্য্যকে রাখবে অটুট। নিজেকে মানিয়ে নিতে পারবেন পরিবর্তীত খাদ্যাভাসের সাথে।
আজ আপনাদের এমন কিছু খাবার সম্পর্কে জানাবো যা এই রমজানে আপনার দেহের পুষ্টিচাহিদা পুরনের পাশাপাশি সৌন্দরর্য্য বৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করবে।
ছোলা
রমজানে ছোলা একটি অপরিহায্য খাদ্য। ছোল কাঁচা, সেদ্ধ বা কম তেলে ভেজে খেতে পারেন। ইফতারিতে কাঁচা ছোলার সঙ্গে আদা কুচি, লবণ ও পুদিনা পাতা কুচি দিয়ে খাওয়া যায়। এটা হজমে যেমন সহায়ক, তেমনি ভিটামিন ও খনিজ লবণের ঘাটতি দূর হবে এতে ।কাঁচা ছোলা সবসময়ের জন্যই একটি পুষ্টিকর খাবার। কারণ ১০০ গ্রাম কাঁচা ছোলায় আপনি পাবেন ২২·৫ গ্রাম প্রোটিন, ৩৬৯ কিলোক্যালোরি খাদ্যশক্তি, ৫৮ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ৯·৫ মিলিগ্রাম আয়রন, ১১৩ মাইক্রোগ্রাম ক্যারোটিন । এছাড়া 'বি'বর্গীয় ভিটামিনের মধ্যে ভিটামিন বি১ রয়েছে ০·২০ গ্রাম। এসব উপাদান আপনার ত্বকের স্বাস্থ্যে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। শুধু তাই নয় ওজন কমাতে ছোলা অতুলনীয় ভূমিকা পালন করে। তবে যাদের কাঁচা ছোলা খেতে সমস্যা হয় তারা সেদ্ধ বা অল্পতেলে ভেজে খাবেন।
খেজুর
রমজানে ইফতারিতে খেজুর একটি বিশেষ উপাদান হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। কারণ খেজুর একটি আঁশ সমৃদ্ধ ফল। এতে উচ্চমাত্রার গ্লুকোজ ও ফ্রুক্টোজ থাকলেও তা ধীরে ধীরে এই শর্করা রক্তে মেশে এবং শরীরে শক্তি যোগায়। মাত্র কয়েকটা খেজুর কমিয়ে দিতে পারে আপনার ক্ষুধার জ্বালা এবং এটি পাকস্থলীকে কম খাবার গ্রহনে উদ্বুদ্ধ করে। খেজুরে আছে বিভিন্ন ধরণের পুষ্টি উপাদান যা খাদ্য পরিপাকে সাহায্য করে। এবং কোষ্ঠ কাঠিন্য রোধ করে। আর এসকল গুনাগুনের ফলে এটি আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণ ও ব্রোণ সমস্যা থেকে রক্ষা করবে।
দই-চিড়া
দই-চিড়ায় পাবেন আমিষ, শর্করা, ভিটামিন, মিনারেলসহ বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান। দইয়ে রয়েছে দুধের চেয়েও বেশী ভিটামিন বি, ক্যালসিয়াম ও পটাশ। দইয়ের মধ্যে থাকা উপকারী ব্যাকটেরিয়া আপনার খাদ্য হজমে সাহায্য করে। শুধু তা-ই নয় ত্বক পরিষ্কার ও মসৃণ হতে সাহায্য করে দই। এটি ত্বকের মৃত কোষ দূর করতে সাহায্য করে। তাই রমজানের দই-চিড়া আপনার দেহের প্রয়োজনীয় পুষ্টিউপাদান যোগন দেয়া, হজমে সহায়তা করার পাশাপাশি ত্বকের সুরক্ষা নিশ্চিত করবে।
মিক্সড সবজি
রমজানে অনেকেই সবজি খেতে চায় না। তবে এটি আপনার স্বাস্থ্যের জন্য অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি খাবার। আপনার রাতের খাবার বা সেহেরিতে রাখুন মিক্সড সবজি। বরবটি, পটল, মিষ্টিকুমড়া, বেগুন ইত্যাদির সবজির সংমিশ্রণের তৈরি করুন সুস্বাধূ মিক্সড সবজি। এটি আপনার খাদ্য পরিপাকে সহায়তার পাশাপাশি বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানের যোগান দিবে। যা আপনার সারাদিনের পুষ্টি চাহিদা পূরণ রকবে। আর আপনার ত্বককে রাখবে স্বাস্থ্যজ্জ্বল।
সালাদ
সালাদ হতে পারে আপনার ইফতারের অন্যতম আকর্ষণ। গাজর, টমেটো, শশা, ধণেপাতা ইত্যাদির দিয়ে তৈরি করুন মজাদার রংবাহারি সালাদ। এ থেকে আপনার শরীর পাবে ভিটামিন ও মিনারেলস এর অনন্য উৎস। আর গাজর, টমেটো, শশা আপনার ত্বককে রাখবে সতেজ, ধরে রাখবে আপনার তারুণ্য।
কলা
সারাদিন রোজা রাখার পাশাপাশি আমাদের করতে হয় দৈনন্দিন স্বাভাবিক সব কাজ। ফলে প্রচুর শক্তি ক্ষয় হয়। যার ফলে আমরা সকলেই দুর্বলতা অনুভব করি। আর সেই ক্ষয় পূরণের অন্যতম কার্যকরী উপদান কলা। দৃঢ় টিস্যু গঠনকারী উপদান যথা আমিষ, ভিটামিন এবং খনিজ অন্যতম উৎস এটি। কলায় রয়েছে উচ্চ ক্যালরী। একটি বড় মাপের কলা খেলে ১০০ ক্যালরির বেশী শক্তি পাওয়া যায়। কলাতে রয়েছে সহজে হজমযোগ্য শর্করা। এই শর্করা পরিপাকতন্ত্রকে সহজে হজম করতে সাহায্য করে।
শরবত
রমজানের দেহের পানিশূন্যতা পূরণে ইফতারের আরেকটি উপদান হচ্ছে শরবত। লেবু, কমলা বা মালটা দিয়ে ঘরেই তৈরি করুন ঠান্ডা শরবত। এসব ছড়াও আম, তরমুজ দিয়েও তৈরি করতে পারেন নানা রং ও স্বাদের শরবত। ইফতারে একগ্লাস শরবত আপনাকে দিবে তৃষ্ণার পূর্ণ পরিতৃপ্তি আর শরীর পাবে তার পুষ্টি উপদান। শরবত হিসেবে ডাবের পানি অত্যান্ত উপকারি। এটি আপনার ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতেও সহায়োগ। তাছাড়া ডাবের পানি দেহের পনিশুণতা পূরণে সবচেয়ে বেশি কার্যকর। তবে বাহিরের তৈরি শরবত না খাওয়াই ভালো। কারণ এসব সরবতে ব্যবহৃত উপদান স্বাস্থ্যসম্মত নাও হতে পারে।
পানি
পানির অপর নাম জীবন। আর সুস্থ্য দেহের জন্য প্রতিটি পূর্ণবয়স্ক মানুষের দৈনিক দুই লিটার বা আট গ্লাস পানি পান করা উচিত। রমজানে যেহেতু সারা দিন পানি পানের সুযোগ নেই। তাই ইফতার ও সেহেরীর মধ্যবর্তী সময়ে কমপক্ষে আট গ্লাস পানি পান করুন। এটি আপনার শরীরবৃত্তিয় যাবতীয় কার্যাবলীকে স্বচল রাখবে। আপনার ত্বককে বলিরেখা, ব্রণ ও খসখসেভাব থেকে মুক্ত রাখবে।
অপ্রিয়ো হলেও সত্য যে, বাজারেরে প্রায় সব খাদ্য উপদানের রয়েছে ভেজাল। দুধে পানি থেকে শুরু করে চালে পাথর। সব পণ্যেই রয়েছে কোনোনা কোন ভোজাল। তা কখনো অস্বাস্থ্যকর উপাদান, কখনো কৃত্রিম রং, কখনো ক্ষতিকর প্রিজারভেটিভ অথবা ফরমালিন। এর ফলে অনেক শতর্কতা অবলম্বনের পরেও আমাদের অনাকাঙ্খিত সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় প্রায়ই। দেখা দেয়া বিভিন্ন স্বাস্থ্য ও সৌন্দরর্য্য সমস্যা। এসবের পাশাপশি রমজানের জীবনযাত্রা ও খাদ্যাভাসে ব্যাপক পরিবর্তনের ফলে গ্যাসটিক, পেটব্যাথা, কোষ্ঠ্যকাঠিন্য, বমিভাব দেখা দিতে পারে আপনার। আর সেক্ষেত্রে মোটেই অবহেলা করবেন না। এসব সমস্যায় আপনার নিকটস্থ হাসপাতাল বা ক্লিনিকের বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করুন। রমজানে পুষ্টিহীনতা ও পানিশূন্যতায় অনেকেরই ত্বক খসখসে হয়ে যায়, ত্বকের বলি রেখা পড়ে, কারো কারো চোখের নিচে কলো দাগ দেখা দেয়, কারো আবার শুরু হয় অতিরিক্ত চুল পড়া। সার্বিক ভাবেই আপনার সৌন্দরর্য্য হুমকির মুখে পড়ে। আর এধণের সমস্যায় পড়লে অবশ্যই রূপ বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ গ্রহণ করবেন। বাংলাদেশে এধরণের বেশ কিছু ক্লিনিক রয়েছে। এদের মধ্যে লেজার মেডিক্যাল সেন্টার অন্যতম। প্রতিষ্ঠানটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন। এছাড়া বিভিন্ন হাসপাতালেরও রয়েছে স্বাস্থ ও পুষ্টি বিভাগ। সেখানেও যেতে পারেন পরামর্শের জন্য।
সবশেষে বলতে চাই, আপনার সুস্থ্য জীবন আমাদের একান্তকাম্য। আর সুস্থ্য জীবনের জন্য সঠিক খাদ্য নির্বাচন অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই উপরোক্ত খাবারগুলো আপনার খাদ্য তালিকায় যোগ করুন, সুস্থ্য থাকুন। সুস্থ্য শরীরের রমজানের রহমাত-মাগফিরাত-নাযাত লাভ করুন।