What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Collected নীলের চিঠি (1 Viewer)

প্রিয় অবনী,
আশা করি স্রষ্টার অসীম কৃপায় তুমি ভালো আছো । ভাবছো তোমার ঠিকানা কিভাবে পেলাম । তোমার ঠিকানাটা বহুকষ্টে তোমায় চাচাতো ভাইয়ের কাছে পেয়েছি । যদিও তার পরিচয় সে গোপন রাখতে বলেছিল কিন্তু অবনীর কাছে নীল কি মিথ্যা বলতে পারে তাই বলে দিলাম ।
আজ চার বছর পর হঠাৎ আমার
চিঠি পেয়ে নিশ্চয়ই অবাক হয়েছো । হয়তো ভাবোনি পেছনের সেই ফেলে আসা অতীত কোনোদিন তার অস্তিত্ব আবার জানান দিবে । মানুষ সবসময় তার অতীতটাকে ভুলতে চায় কিন্তু কখনো কি তারা ভেবে দেখেছে নিজের মাঝ থেকে যদি তার অতীতটাই চলে যায় তবে তার কাছে বাকি কি থাকে । তার যা পাওয়া সবই তো অতীত থেকেই পাওয়া ।

এই চিঠি এখানেই ছিঁড়ে ফেল না যেন আরো অনেক কিছু বলার বাকি আছে কিংবা বলতে পারো নিজের অতীতটাকে এই চিঠির মাধ্যমে বাঁচিয়ে রাখার প্রয়াস বাকি আছে ।
চিঠিটা তোমার কাছে পৌঁছাবে কিনা জানি না । বাংলাদেশের ডাক বিভাগের যা অবস্থা মানি অর্ডার ছাড়া আর কিছুই তো পৌছায়না । হয়তো ভাবতে পারো
চিঠি না লিখে ফোনে কথা বললেই তো পারতাম কিন্তু তুমি তো জানোই আমি কথা তেমন অমায়িক ভাবে বলতে পারি না তাই এই
চিঠিটাকেই বেছে নেয়া । আচ্ছা রাখি সব অপ্রয়োজনীয় কথা, তোমায় যা বলবো তা এর আগে কাউকে বলিনি । চার বছর আমাদের মাঝের দুরুত্ব খুব কম থাকলেও এসব কথা তোমায় বলা হয়নি । আজ সেই কথা গুলোই বলবো ।

আমার বয়স যখন মাত্র চার তখন আমার বাবা মার ডিভোর্স হয়ে যায় কিন্তু বিশ্বাস কর সাধারন ডিভোর্সী নারী পুরুষের মাঝে যা সাধারনত হয় জগড়া, মারপিট, কথা কাটাকাটি তার কিছুই আমার মা বাবার হয়নি । আমার যেটুকু মনে আছে তাই বলছি, বাবা প্রতিদিন সন্ধ্যা ৮টার দিকে বাসায় আসতেন । মা অধীর আগ্রহে জানালার ধারে বসে থাকতেন, বাবা আসলেই তার মুখে হাঁসি ফুটে উঠত যেন সারাদিনের ক্লান্তি চলে গেছে । ছুটির দিনে আমরা তিনজন বাইরে বের হতাম খুব সুন্দর কাটতো দিনগুলো কিন্তু হঠাৎ বাবা রাতে বাড়ি আসা বন্ধ করে দেন । মাঝে মাঝে আসলে মা কিছু জিজ্ঞাসা করলেও তিনি উত্তর দিতেন না, দাদা-দাদি প্রশ্ন করলেও সে উত্তর দিতো না । মা সারারাত আমায় জড়িয়ে কাঁদতেন আমি যদিও কিছু বুঝতাম না তবুও মার কান্না দেখে তার সাথে সাথে কাঁদতাম । এরপর একদিন আমি আর মা, নানুদের বাড়িতে চলে আসি । সেই বাবাকে শেষ দেখা, তার সাথে একজন অপরিচিত মহিলাও ছিলেন আর সবচেয়ে বড় ব্যাপার কি জানো ? বাবার চোখে আর বাবার মত মমতাটা ছিলো না । সেই থেকে নানু বাড়িতেই আমি বড় হই ।
সব সময় খুব একাএকা থাকতাম ।তাই বন্ধুও বেশি ছিল না, যারাও ছিল তারাও আমার ভেতরটা জানতো না । তখন আমি ক্লাস নাইনে পড়ি, সে দিনটা ছিল মেঘলা আমি তোমাদের সেই দো'তলা বাড়ির সামনে দিয়ে যাচ্ছিলাম । তুমি হয়তো মেঘলা আকাশ কে অভিবাদন জানাতে বারান্দায় এসেছিলে । সূর্যের আলো তোমার কালো কেশে পড়ে, রংধনুর মত চারিদিকে সাত রঙের মায়া ছড়াচ্ছিল তারই সাথে তোমার সেই অদ্ভুত দৃষ্টি, জেনো নিরর্থক হয়েও শত অর্থের জানান দিচ্ছিলো ।
থাকতে পারলাম না বেশিক্ষন কেননা তোমার দিকে অমন ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকতে দেখলে তুমি মোটেও তা ইতিবাচক ভাবে নিতে না । সেদিন রাতে আর ঘুমাতে পারলাম না, কলম যেন আপনাআপনি চলতে লাগলো আর লিখলো-
"অবনী তোমায় বলবো কিবা বলো,
আপন আলোয় আপনি তুমি জ্বলো ।
আলোকিত ওই সদ্য খোলা কেশে
ঝর-বেগে শত আবেগ যায় গো ভেসে,
সাধ্য থাকলে আমিও যেতাম ঘেঁষে
স্বর্গীয় ওই তোমার ঘুমের দেশে,
বলেছি অনেক শুনতে চাও কি আরো ?
অবনী তোমায় বলবো কি বা বলো,
আপন আলোয় আপনি তুমি জ্বলো ।"
সেই তোমাকে প্রথম দেখা, নামটা কিভাবে জানা তা নাহয় নাই বা বললাম । জানতাম না একি কলেজে পড়বো আমরা । তোমাদের ক্লাস হত সকালে আমাদের দুপুরে । আমি রোজ দৌড়ে আসতাম তোমায় দেখার জন্য । তুমি কলেজ-বাসে চড়ে যেতে এবং জানালার বাইরে তাকিয়ে থাকতে আর আমি সে জানালায় প্রেমের চিহ্ন খুঁজতাম । তোমার বন্ধুর অভাব ছিলো না, সবসময় তোমার মুখে হাঁসি লেগেই থাকতো আর আমি দূর থেকে সেই হাঁসি দেখতাম আর তার স্থায়িত্বর কামনা করতাম । তখনো তুমি আমায় চিনতে না । হয়তো দেখে থাকতে পারো মাঝে মাঝে । আমিও পরিচিত হতে যেতাম না, ভয় পেতাম ভাবতাম দূর দেশের রাজকন্যা তুমি, আমার মত বামুন কি আর চাঁদকে ধরার ক্ষমতা রাখে ।
ভাগ্যের কি অদ্ভুত লীলা দেখ, সেই তোমার সাথেই ভার্সিটিতে দেখা । এবার আর আলাদা ব্যাচে না একি ক্লাসে, একি সাথে । সে দিন খুব বৃষ্টি হচ্ছিলো, প্রথম ক্লাস সবাই এসেছিল তাই, জায়গাও কম ছিল । হঠাৎ যেন দমকা হাওয়ার মত এক অবয়বী ক্লাসে প্রবেশ করলো । যার পরনে নীল শাড়ী আর চুল খানিকটা ভেজা । বিধাতা যেন সব মনকামনা পূরণ করিয়ে দিয়ে সেই অবয়বীকে আমার পাশে এনে বসালো । সে পাশে বসে খানিক এদিক ওদিক চেয়ে আমার উদ্দেশ্যে বলেছিল, "আমি অবনী, তুমি ?" আমি অপ্রস্তুত হয়ে বলেছিলাম, "আমি নীল ।" এতদিনের ভালোবাসা, এতদিনের অপেক্ষার পর যে প্রেম আমার পাশে এসে বসেছিল , তাকে এতো কাছে পেয়েও যেন আপন করে আগলে নেয়ার চেয়ে, তাকে হারানোর ভয়টাই বেশি লাগছিল । সেদিন গেল এভাবেই তোমার দিকে চেয়ে চেয়ে, তুমি হয়তো বুঝেছিলে কিংবা বুঝতে চাওনি । তুমিও চেয়েছিলে মাঝে মাঝে আমি চাইতেই সরিয়ে নিয়েছিলে মুখ । এরপর মাঝে মাঝেই কথা হত, তুমি তোমার ভালো লাগা খারাপ লাগা সব বলতে। আমি শুধু মুগ্ধ হয়ে শুনতাম আর হুম,হুম বলতাম ।তুমি একবার তাই বলেই দিলে, "হুম, ছাড়া কি অন্য কিছু বলার পাও না ?" আমি হেসেছিলাম আর মনে মনে বলেছিলাম, 'তুমি চাইলে আমার মনের সব কথা বলতে পারি কিন্তু আজ মনের কথা মনই বলতে দিচ্ছে না ।" সেই বৈশাখের দিনটার কথা মনে আছে যখন তোমার চুলে পরার জন্য একটা গোলাপ আর একজোড়া বেলীফুলের গাঁজরা হাতে নিয়ে হাঁটু গেড়ে বলেছিলাম ,"ভালোবাসি ।" তুমি উত্তর দেওনি শুধু আমায় দাঁড় করিয়ে, আমার হাত তোমার বাহুতে নিয়ে চলতে শুরু করেছিলে । সেই থেকে আমাদের স্বীকৃতিপ্রাপ্ত প্রেম শুরু ।
তোমার জম্নদিনে গোলাপি রঙের শাড়ী দেয়ায় তুমি বলেছিলে, "সবাই নীল বা লাল শাড়ী দেয় তুমি গোলাপি কেন ? " আমি তখন হেসে বলেছিলাম, "গোলাপি রঙটা তোমার ঠোঁটের সাথে বেশ যায় ।" এ কথা শুনে তুমি লজ্জায় যেভাবে গোলাপি হয়েছিলে তা এখনো আমার মনে পরে । এভাবেই গেল চারটি বছর ।
ভার্সিটির লাস্ট ইয়ার হঠাৎ একদিন তুমি আমার ফোন ধরলেনা । আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পরলো । ভাবলাম তোমার কিছু হল না তো । তোমার বাড়ির সামনে গেলাম । তোমার মামা আমাকে ডেকে অত্যন্ত ভদ্র ভাবে বুঝিয়ে দিলেন এই রাস্তায় আর আসলে আমার শরীলের হাড়ের সংখা দিগুন করে দিবেন । আমার মাথায় আবার তোমার চিন্তা এল ভাবলাম, তোমার যদি কিছু হয় তবে এদের আমি ছাড়বো না । অবশ্য এর পরেরদিনই জানতে পারলাম তোমার কিছু না অনেক কিছুই হয়েছে । সেদিন তুমি আসলে ভার্সিটিতে, যেন আমায় চিনো না । কতবার সামনে গেলাম তুমি তাকালেনা । কিছুদিন পর তোমার আরেক বয়ফ্রেন্ড জুটলো । অনেক বড়লোক সে । বুঝিয়ে দিলে আমি তোমার ব্যবহারের একটা বস্তু মাত্র । আমার মন মানলোনা, তোমার বাড়ির সামনে আবার গেলাম । এবার আর তোমার মামা না, আসলেন পুলিশ । আমার নামে জিডি হয়েছে আমি নাকি তোমায় হয়রানি করি । ভাগ্যক্রমে এস.পি স্যার ভালো মানুষ ছিলেন তিনি বললেন, "বাবা তোমার পরিবার আছে, যদি একবার তোমার নাম আমাদের খাতায় আসে তবে আজীবন তা থেকে যাবে । তাই আজ ছেঁড়ে দিলাম কিন্তু আর এদিকে এসো না ।" চলে এলাম বাড়িতে ।
কেটে গেল দুই মাস, তোমার ফোন বন্ধ, শুনলাম তোমার বিয়ে হয়ে গেছে । আমি রুমে একাএকা কাঁদি মাঝে মাঝে তোমার ছবি দেখি আর গান গাই । হঠাৎ মায়ের ডাক শোনা গেল, যেন সব কষ্ট নিমেষেই শেষ হল । মায়ের কাছে যেতেই মা বলল,"নীল অনেকদিন তোর গান শুনি না, আমায় একটা গান শোনাবি ?" আমি মায়ের পাশে বসে গান শুরু করলাম । মায়ের খুব প্রিয় একটা গান "আমার সারা দেহ খেও গো মাটি"। মা গান শুনে বলল, "নীল তুই তো গান লিখে, গান গাইলেই পারতি, এটাই না তোর ছোটবেলার স্বপ্ন ছিল ?" জীবন থেকে যেন বড় একটা বোঝা নেবে গেল । সারারাত ভাবলাম এই ব্যাপারে আর ঠিক করলাম এটাই করবো, গানই গাইবো । সকালে ঘুম ভাঙল রান্নাঘরে কিসের যেন আওয়াজে । সেখানে যেয়ে দেখি মা মাটিতে পরে আছেন । হাসপাতালে গেলাম কিন্তু লাভ হল না দুই ঘন্টার মধ্যে সব শেষ । আমার মামা পাশে এসে বসলো । বাবার নাম্বার দিয়ে বাবাকে একবার জানাতে আর এখানে একবার আসতে বলতে বলল । এই প্রথম আমি বাবাকে কল দিলাম । বাবা সব শুনে তার নতুন স্ত্রীর সাথে কথা বলে, আমাকে কিছু টাকা পাঠানোর আশ্বাস দিয়ে ফোন কেটে দিলেন । জীবন এমনভাবে বদলে যাবে ভাবিনি কখন । সেই থেকে একা কিন্তু তুমি জেনে খুশি হবে যে আমি আবার গানটা শুরু করেছি । যেখানে যা শো পাই সব করছি মানুষ ভালো সারাও দিচ্ছে । শত প্রাপ্তির মাঝেও যেন সব শূন্য মনে হচ্ছে কিন্তু তবুও শত আশার আলো দেখছি আর বুঝছি এখনো স্বপ্ন দেখা ভুলিনি আমি ।
থাক আজ আর না । তোমার কি খবর, কি করছো ইদানিং জানিও আর ভালো থেকো ।
ইতি
তোমার আজীবন শুভাকাঙ্ক্ষী
নীল
{ ভাগ্যক্রমে বা দুর্ভাগ্যক্রমে বাংলাদেশের ডাকবিভাগ এইবার অলসতা না করে
চিঠিটা ঠিক অবনীর কাছে পৌছে দেয় হয়তো সেখানকার কোন কর্মকর্তা
চিঠিটা পরে এর মাহাত্ম্য বুঝতে পেরেছিল । মূল কথা এই অবনী কিন্তু এই
চিঠির উত্তরো
দিয়েছিল । সেটা নাহয় অন্য আরেকদিন জানাবো । আজ এটুকুই }

লেখায়ঃ অবনীল শিকদার
 
Last edited:

Users who are viewing this thread

Back
Top