What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

স্বাধীনতার অজানা ইতিহাস - ৪ (1 Viewer)

BRICK

Board Senior Member
Elite Leader
Joined
Dec 12, 2019
Threads
355
Messages
10,073
Credits
81,757
T-Shirt
Glasses sunglasses
Calculator
Watermelon
Pistol
Pistol
এ আপনি কি করছেন ?
আমি কোর্ট-ইন্সপেক্টরের ভুঁড়ির মাপ নিচ্ছি স্যার।
বিচারকের প্রশ্নের উত্তরে জানান আসামি। সেই সময়ের মুরারীপুকুর মামলার মতো সবচেয়ে হাইভোল্টেজ মামলা চলাকালীন জীবন-মৃত্যুর মাঝে দাঁড়িয়ে কোর্টের মধ্যে আসামি এমনই মজার কাণ্ডকারখানা করেছিলেন। আসামি দেশপ্রেমে পাগল, প্রাণশক্তিতে পাগল, কারাগারে অত্যাচারে পাগল আর সেইসাথে নিজের স্ত্রী'র প্রেমে পাগল - আসামি পাগল প্রেমিক, বোমা বিশেষজ্ঞ, বিপ্লবী উল্লাসকর দত্ত।

২০২০ সালেও মানে এই আধুনিক যুগেও এক প্রচণ্ড চির রোমান্টিক নায়ক তিনি .. ইংরেজ অধ্যাপক কে আহত করে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়েছেন, শিবপুরের বাড়ীতে ল্যাবরেটরি বানিয়ে বোমা তৈরি করেছেন, অত্যাচারী দৈত্যের সাথে অস্ত্র নিয়ে লড়াই করেছেন .. তবু বোমা তৈরির উন্নত শিক্ষার জন্য দেশের বাইরে যেতে চাননি .. কারণ তখন তাঁর চলছে প্রচণ্ড প্রেম .. যে প্রেমের সাথে আর কিছু দিনের মধ্যেই বিয়ের পাকাকথা হয়ে গেছে। আর তারপরেই মুরারীপুকুর বাগান বাড়ী থেকে তাঁর ধরা পরা। মামলার রায়ে তাঁর প্রথমে হ'ল ফাঁসি, পরে দেশবন্ধুর চেষ্টায় সেটাই হয়ে গেল আন্দামানে দীপান্তর। এই খবর শুনে তাঁর প্রেম প্রথমে আত্মহত্যা করতে গিয়েছিলেন .. আর তারপর .. অন্য ছেলের সাথে তাঁর প্রেমের বিয়ে হয়ে যায়। অন্যদিকে দীপান্তরে তখন তিনি কারাবাসী .. সেখানে প্রচণ্ড অত্যাচারে প্রায় পাগল হয়েছেন .. এই কারণে প্রথমে এলেন আন্দামান পাগলা গারদে, পরে সেখান থেকে মাদ্রাজ পাগলা গারদ। এতো কিছুর পরেও যৌবনের প্রেম'কে ভুলতে পারেননি, সুস্থ হয়ে ফিরে এসে সেই স্বপ্নের রাজকন্যা'কেই বিয়ে করেছেন। কখন কোন পরিস্থিতিতে বিয়ে করেছেন .. যখন তিনি কারাবাসী তখন তাঁর প্রেমের তো অন্য জনের সাথে বিয়ে হয়েগেছিল! আসলে প্রকৃতির চিন্তা ছিল অন্যরকম .. হঠাৎ বিধবা হন তাঁর প্রেম। কারাবাস শেষ করে, সমাজের সব বাধা পেরিয়ে, সেই বিধবা হয়ে যাওয়া প্রেম'কেই বিয়ে করেন তিনি।

সাজা কাটিয়ে উল্লাসকর দত্ত ফিরেছিলেন ১৯২০ সালে৷ শুরু হয়েছিল তাঁর বেঁচে থাকার লড়াই। কিছু বন্ধু বিপ্লবীর চেষ্টায় ব্রাহ্ম সমাজের সিঁড়ির নিচের ঘরে থাকার জায়গা পেলেন। ভুলতে পারেননি দেশপ্রেম। চমকে উঠতে হয় যখন জানা যায় শ্রীঅরবিন্দে'কে আবার দেশের কাজে ফিরিয়ে আনতে তিনি চলে যান সোজা পন্ডিচেরি'তে, আর যাতায়াত করেছিলেন সাইকেলে! আজকের দিনে কেউ কল্পনা করতেও ভয় পাবে। হতাশ হয়ে পন্ভিচেরি থেকে ফিরে আসেন। এরপরই তিনি তাঁর বিধবা হয়ে যাওয়া প্রেম'কে বিবাহের প্রস্তাব দেন। কোন অবস্থায়! সেই অবস্থায় যখন তাঁর নিজেরই খাবার কখনও জুটেছে, কখনো জোটেনি। শুয়েছেন মড়ার খাটিয়ায়।

চমকে যাওয়ার এখানেই শেষ নয় .. মিল হয়েও যেন মিলন হ'ল না। যখন তিনি বিয়ে করছেন তখন তাঁর প্রেম একপ্রকার শয্যাশায়ী, পরে হয়ে যান পঙ্গু। এদিকে বিধবা বিয়ে .. তাই জায়গাও কেউ দিল না। ব্রাহ্মসমাজে তাঁদের বিয়ে হয়। যৌবন পেড়িয়ে যাওয়া দুই প্রেমিক নব দম্পতি - একজন নি:স্ব সমাজ চ্যুত প্রেমিক অপরজন তাঁর পঙ্গু প্রেমিকা। আর যেদিন বিয়ে হ'ল সেইদিনই প্রেমিকাকে ভর্তি করতে হ'ল হাসপাতালে।

অসুখ ভালো হবার নয় - তাই কিছুদিন পরে তাঁর স্ত্রী'কে ছুটি দিয়ে দেয় হাসপাতাল। এবারে চিন্তা থাকবেন কোথায় .. ব্রাহ্মসমাজে সংসার পেতে থাকা যায় না। কোথাও স্থায়ী জায়গা না পেয়ে এবারে অসুস্থ স্ত্রী'কে নিয়ে তিনি চলে যান দেশের বাড়ী । বাসনা-কামনা-মোহ-রূপ কিছু নেই .. সেদিন হয়েছে দুটি আত্মার মিলন। উল্লাসকর পাগলের মতো সেবা করেছেন অসুস্থ পঙ্গু স্ত্রী'র।

কোনও সরকারী সাহায্য তিনি নিতে চাননি। ১৯৪৮ সালে ভারত সরকার স্বাধীনতা সংগ্রামে অবদানের জন্য ভাতা মঞ্জুর করলে, তিনি তা গ্রহণে অস্বীকার করেন। তিন বছর পর ১৯৫১ সালে শিলচরে আসেন। শেষ জীবনের ১৪ বছর ওই শহরেই কাটান। তখন তিনি ব্রিটিশের নির্যাতনে মানসিক ভারসাম্য হারানো এক উদাসী, সঙ্গে তাঁর পঙ্গু স্ত্রী। শিলচরের মানুষই তখন তাঁদের থাকা-খাওয়া-চিকিৎসার যাবতীয় দায়িত্ব নিয়েছিলেন। আর তাঁর বিপ্লবী বন্ধুরাই নিয়মিত অর্থ সাহায্য করে গেছেন। ৬২' সালে স্ত্রীর মৃত্যু হয়। প্রেমিকা স্ত্রীর মৃত্যুর পরেও বিশ্বাস করেন নি যে স্ত্রী আর নেই। ঘরের দরজা বন্ধ রাখতেন না, খোলা রাখতেন .. বলতেন, দরজা বন্ধ দেখলে যদি স্ত্রী ফিরে যান। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত নিজের খাবার থেকে এক ভাগ স্ত্রীর নামে রাখতেন, যদি স্ত্রী ফিরে এসে খেতে চায়। কোনও সিনেমার চিত্রনাট্য নয়, নয় কোনও লেখকের গল্প, এটা এক বাস্তব ঘটনা। ঘটনার নায়ক উল্লাসকর দত্ত, নায়িকা লীলা পাল। লীলাদেবীর বাবা ছিলেন আরেক স্বাধীনতা সংগ্রামী বিপিনচন্দ্র পাল।

জানি না উল্লাসকর দত্তের এই কাজ মোহ না প্রেম .. জানি না তিনি কাকে বেশি ভালোবেসে ছিলেন - দেশ কে .. না স্ত্রী কে। শুধু জানি শত্রুকে ঘৃণা না করলে সৈনিক হওয়া যায় না, আর মানুষকে ভালো না বাসলে বিপ্লবী হওয়া যায় না।
সত্যি আশ্চর্য মানুষ অগ্নিযুগের বিপ্লবী, প্রেমিক উল্লাসকর দত্ত ।

(১৬ এপ্রিল, ১৮৮৫ -১৭ মে, ১৯৬৫)।

সূত্র: উল্লাসকর দত্তের 'আমার কারা জীবন' এবং মনোরঞ্জন ঘোষের 'আশ্চর্য মানুষ উল্লাসকর'।

(সংগৃহীত)
 

Users who are viewing this thread

Back
Top