What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Collected # রাঁধুনি # (1 Viewer)

BRICK

Board Senior Member
Elite Leader
Joined
Dec 12, 2019
Threads
355
Messages
10,073
Credits
81,757
T-Shirt
Glasses sunglasses
Calculator
Watermelon
Pistol
Pistol
বাড়িতে ভেটকি পাতুরি বানিয়েছি। তারই একটু বাটিতে নিয়ে হাজির হলাম মায়া বউদির বাড়ি। কলিং বেল টিপতেই "কোঁকরো ককো".... কয়েক সেকেন্ড পর ফটাস করে দরজা খুলে বউদি হাজির
" আরে মিলি এসো এসো। আসোই তো না।"
"হ্যাঁ গো আসবো আসবো করে আর সময় হয়ে ওঠে না।"

বাটিটা দিলাম। বউদি অবাক!
"এসব আবার কী এনেছো? "
আমি বিনীত কণ্ঠে,
"ওই একটু বানিয়েছিলাম।"

বউদিরা মাস কয়েক হলো এসেছে পাড়ায়। যেমনি সুন্দরী দেখতে। তেমনি কর্তাকে শাসনে রাখে। ওদের রান্নাঘরটা তো আমার বেডরুমের জানালা দিয়ে দেখা যায়। সেখানেই অমলদাকে মানে মায়া বউদির বরকে রাঁধতে দেখি। বউদি নিশ্চই তখন সোফায় বসে সিরিয়াল দেখে, নয়তো মুখে ফেসপ্যাক লাগিয়ে বসে থাকে। নয়তো অমন ফর্সা টকটকে গাল থাকে কি করে? ফর্সা আমিও বৈকি কম কিছু ছিলাম না। অভিই তো বিয়ের আগে গাল টিপে বলতো, "ওগো তোমার গালগুলো ঠিক যেন আপেল।" সেই আপেলই এখন ছোপে ছাপে সবেদা হয়ে গেছে।
সময় পেলেই অভিকে জানলার সামনে ডেকে এনে দেখাই
"ওগো দেখো, দেখো, দেখে কিছু শেখো। পাড়ায় আড্ডা দিতে যাও যখন, দাদার থেকে একটু রান্না শিখলেও তো পারো। "

তবে আমার কর্তাটি সেই প্রাইমারি স্কুল টু বিয়ের আগের দিন অবধি যা শেখার শিখে নিয়েছিলো। তারপর আর নতুন কিছু সে শিখবেই না । সম্ভবত বিয়ের দিন মন্ত্র আউড়েছিলো, "যাহা শিখিবার শিখিয়া নিয়াছি। আর নতুন কিছু শিখিবোনা।"
শুধু শেখা না, তিনি কিছু ভোলেনও না। যেমন রোজ রাতে নিয়ম করে ঘরত ঘরত করে নাক ডাকেন, ঘন্টায় ঘণ্টায় সিগারেট ফোঁকেন, বন্ধুদের সাথে ঘন্টার পর ঘন্টা আড্ডা দেন, পকেটে দুটাকা খুচরো রাখলেও মনে রাখেন। কিন্তু আমি বাজার থেকে দশটাকার বাসন মাজার সাবান আনতে বললে ভুলে যান। এই কটা বছর সংসার করার পর আমি বুঝে গেছি এ ব্যাটার ভোলাভুলির রুটিন আছে, রীতিমতো চার্ট মেনে চলে। আর কিছু বলতে গেলেই অশান্তি।

তাই এই মায়া বউদির সাথে কথা বলার প্রবল ইচ্ছে হওয়াই স্বাভাবিক। কিভাবে কর্তাকে দিয়ে খাটাচ্ছে কৌশলটা জানা দরকার। কিন্তু নতুন এসেছে, দুম করে বাড়ি গিয়ে তো জিজ্ঞেস করা যায়না, "তোমার বরকে দিয়ে কি করে কাজ করাও গো, আমাকে শেখাও গো..." ভদ্রতা সভ্যতা বলেও একটা ব্যাপার আছে। তাই তক্কে তক্কে ছিলাম। তো আজ আমার অফিস ছুটি। হাতে সময় নিয়ে সেই কারণেই আসা।

বউদি হাত চেপে ধরে এসে সোফায় বসালো। না চাপলেও কায়দা করে বসে যেতাম অবশ্য। আহা বউদি তো নয় যেন সাক্ষাৎ দেবী। কি ভাবে কথাটা শুরু করবো ভেবে ভেবে ঠ্যাং নাচাচ্ছি। ওমনি বউদিই বলে উঠলো
"তোমার দাদাকে নিয়ে আর পারিনা। সুযোগ পেলেই রান্নাঘরে ঢুকবে। " সুযোগটা লুফে নিয়ে বললাম
"দাদা কতো ভালো গো। দেখি তো জানালা দিয়ে। কতো কিছু রাঁধে আহা! আমার বর তো ঘরের কোনো কাজে হাতই দেবেনা। ভাগ্য করে বর পেয়েছো তুমি বউদি। অভিকে তো বলি দাদাকে দেখে কিছু শেখো..."
ওমনি সাদা স্যান্ডো গেঞ্জি আর পাজামা পরে হাসিমুখে অমলদা এসে হাজির। আমি গদগদ ভঙ্গীতে বলে ফেললাম,
"দাদা আপনার মতো দেবতুল্য মানুষ আর হয়না। রোজই দেখি কতো কী রাঁধছেন। আপনার ভাইটিকে একটু শিখিয়ে যদি দেন। "
"হ্যাঁ অবশ্যই শেখাবো। আগে দাঁড়াও একটু চা বানিয়ে আনি। "
বউদি আর্তনাদ করে বলে উঠলো
"না...আমি বানাচ্ছি। তুমি বসো। "
সেই আর্তনাদকে তুচ্ছ করে দাদা ঢুকে গেলেন রান্নাঘরে। বউদি বেজার মুখে বসে রইলো। স্বাভাবিক, বাড়িতে অতিথি এলে গৃহকর্তার চা বানানোটা শোভা পায়না।

দু'মিনিট পর দাদা চায়ের ট্রে এনে হাজির।
বললেন
"খেয়ে দেখো মিলি, স্পেশাল চা।"
নাকের কাছে কাপটা নিতেই অদ্ভুত রকম গন্ধ পেলাম। তারপর মুখে দিতেই হেঁচকি উঠে নাক দিয়ে বেরিয়ে গেলো। "
দাদা মুচকি হেসে বললেন
" প্রথম প্রথম খেতে অসুবিধা হবে, তারপর সয়ে যাবে। তোমার বউদিরও এমন হতো। অভিকে শিখিয়ে দেবো। চিন্তা নেই। "
"এটা চা?"
"হ্যাঁ, হিঙচা। প্রথমে তেজপাতা দিয়ে একটু গরমমশলা দিতে হবে গরমজলে, তারপর চা পাতা আর কাসৌরি মেথি দিয়ে ফুটিয়ে সামান্য হিং। ব্যস রেডি। "

বউদি বললো
" এই দিন কয়েক আগে বাড়িতে ইলিশ মাছ হয়েছিলো। ওর আবার সেদিন পেট খারাপ। পেঁপে কাঁচকলা দিয়ে সেদ্ধ ভাত গিলবে। কিন্তু রাঁধবেই। "
বললাম
"আসলে, বউকে খুব ভালোবাসেন তো তাই।"
বউদি বললো
"রেসিপিটা শোনো আগে। নুন, চিনি,দই, সর্ষে, তেজপাতা, ধনেগুঁড়ো,পেঁয়াজ, রসুনবাটা, পাঁচফোড়ন, বড়ি, ঝিঙে আর বেগুন দিয়ে রান্না করলো। শেষে আবার পাকা আম চটকে ছড়িয়ে দিলো।
বিস্ময়ে মুখ দিয়ে বেরিয়ে এলো
"ওটা খাওয়া গেলো? "
"হ্যাঁ, উপায় কি? খাওয়ার জিনিস ফেলা আমার ধাতে নেই। "
দাদা বলে উঠলেন
"আহা! ওভাবে বোলোনা। শখে রাঁধি একটু... "
বউদি বললো
"শখ? পেট খারাপ মাথায় উঠে গেলেও লোকে ওর থেকে ভালো রাঁধে। আবার সেই ইলিশ এ বাড়ির মাসিমাকেও দিয়েছিলাম। বাটিটা ফেরত দিতে এসে বললেন, এরপর থেকে ইলিশ আনলে আমাকে বলো মা। আমি না হয় রেঁধে দিয়ে আসবো।"
অমলদার দিকে তাকিয়ে দেখি অম্লান বদনে মোবাইল ঘাঁটছেন। বউদি বললো
" শুধু এক ছিলো আমার আদরের হুলো বেড়ালটা। যা দিতাম ল্যাজ তুলে চেটে পুটে খেতো। তো সেদিন ঝোল আর কাটাকুটো আর একটু মাছ ভেঙে দিয়ে ভাত মেখে দিলাম। দুবার গন্ধ শুঁকে কোথায় যে গেলো! আজ পাঁচদিন হলো তার দেখা নেই!"

অমলদা উঠে গেলেন। বুঝলাম লজ্জা পেয়েছেন। পাওয়াই স্বাভাবিক। বসে বসে নিজের নিন্দে শোনা কারও পক্ষেই সম্ভব নয়। কিন্তু খানিক বাদেই হাতে একটা বাটি এনে বললেন
"সকালে বানিয়েছিলাম খেয়ে বলো তো কেমন? তোমার বউদির তো আমার কোনো রান্নাই পছন্দ নয়। আগে কিছুই করতাম না সেটাও পছন্দ ছিলোনা। এখন রাঁধছি সেটাও পছন্দ না। কী যে চায় বোঝাই দায়। "
অনিচ্ছা ভরে বাটির দিকে তাকাতেই দেখি কালো কুটকুটে থকথকে একটা বস্তু। ভাবলাম এর থেকে বিষ দিলেই পারতো, খেয়ে মরে গিয়েও শান্তি পেতাম। কিন্তু এ খাবার মুখে দিলে আজন্ম হতাশায় ভুগতে হবে। এদিকে দাদা বউদি আমার মুখের দিকে তাকিয়ে। চামচ দিয়ে খানিকটা তুলে জিজ্ঞেস করলাম
"এটা কি?
দাদা বললেন
"পায়েস? "
"অ্যা!!!পায়েস? "
"হুম, জাম-বেগুনের পায়েস। প্রথমে বেগুনটা সেদ্ধ করে চটকে নিয়ে তারপর..."
আর রেসিপি শোনার ইচ্ছে রইলো না। মিনমিনে গলায় বললাম
"এটা বাড়িতে নিয়ে যাই? অভিকেও দেবো একটু। "
দাদা খুশি হয়ে আরও অনেকটা দিয়ে দিলেন পায়েস।

ফেরার সময় মায়া বউদি গেট অবধি এগিয়ে দিতে এলো। আমি ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করলাম
"দাদা কি বরাবরই এমন রাঁধতে ভালোবাসেন? "
"না গো, আগে তো রান্নাঘরে ঢুকতোই না। আগে যে পাড়ায় ছিলাম সেখানে এক প্রতিবেশী ভদ্রলোক প্রায়ই রাঁধতেন। সেই দেখেই আমিও ওকে কদিন বলেছি। ব্যস তারপর এই কমাস থেকে তোমার দাদার হঠাৎ যে কী হলো! এখন রাঁধতে না দিলেই বরং ক্ষেপে যাচ্ছে। আর এই উৎকট রেসিপিগুলো তো তাঁর থেকেই নেওয়া। "

প্রায় ছুটতে ছুটতে বাড়ি এলাম। দেখি অভি রান্নাঘরে চা বানাচ্ছে। আর্তনাদ করে উঠলাম,
"সেকি! তুমি কেন? বাড়িতে তো হিং নেই!"
অভি অবাক হয়ে বললো
"হিং কেন? "
মিনিট দুয়েক চুপ থেকে ভগবানকে ধন্যবাদ দিলাম। উফফ খুব জোর বেঁচে গেছি। ভাগ্গিস এখনও অমলদার রেসিপি শেখেনি।
খুশি মনে সোফায় বসে চায়ের চুমুক দিলাম। একী ! এমন বিশ্রী গন্ধ কেন? অভি মুচকি হেসে বললো
"ওতে দুচামচ পাঁচফোড়ন দিয়েছি। স্পেশাল চা। অমলদার রেসিপি। আরও অনেক আছে। একে একে সবই বানিয়ে খাওয়াবো। "

বেডরুমের জানালাটা বন্ধ করে দিয়েছি। ইদানীং বাড়িতে অশান্তিও হয়না। হবেই বা কি করে? অভি তো রাঁধে। আর আমি দুবেলা ঠাকুর ঘরে জপ করি "ওর রান্নার বাতিকটা ছাড়াও ঠাকুর... "।
কলমে #সোমাশ্রী_পাল_চন্দ
 

Users who are viewing this thread

Back
Top