শর্টফিল্মের শুরুতে একটা কাঠখোট্টা শিক্ষক ক্লাসে এসে ব্ল্যাকবোর্ডে লিখলেন,
'২+২ = ৫'
বাচ্চাদের মধ্যে হালকা শোরগোল শুনা গেলো। শিক্ষক ধমক দিলেন, চুপ করো। শিক্ষক পড়াতে শুরু করলেন, 'বাচ্চারা পড়ো, দুই যোগ দুই সমান পাঁচ! পড়ো।'
বাচ্চারা ইতস্তত করে পড়লো। শিক্ষক বললেন, জোরে পড়ো। বাচ্চারা জোরে পড়লো। শিক্ষক বললেন, আরও জোরে। বাচ্চারা সমস্বরে আরও জোরে পড়লো, দুই যোগ দুই সমান পাঁচ!
একটা বাচ্চা হাত তুলে ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলো, 'স্যার, দুই আর দুই যোগ সমান চার না?'
শিক্ষক বললেন, 'তোমাকে পড়তে বলা হয়েছে, দুই যোগ দুই সমান পাঁচ... তুমি ওটা পড়ো। কোনো প্রশ্ন করবা না। বুঝেছো?'
'কিন্তু আমি ভেবেছিলাম...'
'ভাবতে হবে না। ভাবার দরকার নাই। দুই যোগ দুই সমান পাঁচ। তুমি বসো এবং পড়ো।'
বাচ্চারা আবার সমস্বরে পড়ল, দুই যোগ দুই সমান পাঁচ। তারপর একটা বাচ্চা সটান ওঠে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো, 'দুই যোগ দুই সমান চার। এবং সবসময় চারই থাকবে। পাঁচ কিভাবে হয় এটা?'
শিক্ষক কঠিন স্বরে ধমক দিলেন, 'তোমাকে প্রশ্ন করার অনুমতি কে দিয়েছে? প্রশ্ন করার সাহস কোথায় পেলে তুমি?'
বাচ্চা দাঁড়িয়ে রইলো। শিক্ষক বললেন, বলো দুই যোগ দুই সমান পাঁচ। বাচ্চাটা ঘাড় ত্যাঁড়া, বাকি সবার দিকে ফিরে দুই হাতের দুই আঙুল জড়ো করে বুঝালো দুই যোগ দুই সমান চার, পাঁচ নয়।
শিক্ষক ধমকালেন, বাচ্চাটা হতাশ স্বরে বললো, 'আপনি জানেন দুই যোগ দুই সমান পাঁচ নয়, চার। কেন পড়াচ্ছেন না সেটা?'
শিক্ষক খুব রেগে গেলেন। বাচ্চাটাকে চুপ করতে বলে ক্লাসরুমের বাইরে গেলেন। এইসময় সহপাঠীরা দাঁড়িয়ে থাকা বাচ্চাটাকে বলল, 'চুপ করো। তুমি তো দেখছি আমাদের সবাইকে ঝামেলায় ফেলবে।'
শিক্ষক ক্লাসে ফিরলেন আবার, স্কুলের তিন জন সেরা ছাত্র সঙ্গে নিয়ে। বাচ্চাদের সামনে ওই তিন জনকে দাঁড় করিয়ে বললেন, 'এরা স্কুলের সেরা ছাত্র। তোমরা বলো, দুই যোগ দুই সমান কত?'
সেরা ছাত্ররা সমস্বরে বলল, দুই যোগ দুই সমান পাঁচ।
শিক্ষক ঘাড় ত্যাঁড়া বাচ্চাটাকে ডেকে ব্ল্যাক বোর্ডের সামনে দাঁড় করিয়ে বললেন, 'অংকটা সমাধান করো।'
বাচ্চা ব্ল্যাকবোর্ডে দেখল,
'২+২ = '
একবার পেছনে তাকালো। ততক্ষণে স্কুলের সেরা তিনজন ছাত্র হাত দুটো বুকের কাছে এনে রাইফেল তাক করার মতোন করে ধরে রেখেছে বাচ্চাটার দিকে।
অংকে ভুল করলেই গুলি করা হবে। বাচ্চাটা ঘাড় ফেরালো, তারপর ব্ল্যাকবোর্ডে লিখল,
'৪'
লিখে ব্ল্যাকবোর্ড পেছনে রেখে সামনে মাথা উঁচু করে দাঁড়ালো। গুলি চললো তিন জনের হাত থেকে।
বাচ্চাটার রক্ত ছিটকে গিয়ে পড়ল ব্ল্যাকবোর্ডে লেখা '৪' এর উপর! শিক্ষক পেছন ফিরে ভীত বাচ্চাদের উদ্দেশ্যে বললেন, 'আর কেউ আছো যে আজকের পড়াটা বুঝতে পারোনি?'
রক্তাক্ত মৃত বাচ্চাটাকে ক্লাসরুমের বাইরে নিয়ে যাওয়া হলো। শিক্ষক ব্ল্যাকবোর্ডে লেগে থাকা রক্তের দাগ সহ পুরো অংক মুছলেন ডাস্টার দিয়ে। তারপর আবার লিখলেন,
'২+২ = ৫'
বললেন,
'সবাই লিখো, দুই যোগ দুই সমান পাঁচ!'
ভীত বাচ্চারা খাতায় লিখল, দুই যোগ দুই সমান পাঁচ!
শর্টফিল্মের শেষ ক'টি সেকেন্ড।
কোনার একটা বাচ্চাকে দেখা গেল, খাতায় সবার মতো করে লিখেছে, দুই যোগ দুই সমান পাঁচ। লিখে একটু পরই 'পাঁচ' কেটে দিলো, পাঁচের পাশে লিখল,
'চার'
গল্প শেষ!
একটি ইরানী শর্টফিল্ম এটি।
নাম 'টু এন্ড টু', বানিয়েছেন বাভাক আনভারি। ২০১১ সালে ব্রিটিশ একাডেমি ফিল্ম অ্যাওয়ার্ড এ বেস্ট শর্টফিল্ম এর নমিনেশন পাওয়া এই ছোট্ট গল্পটির গভীরতা প্রচুর। প্রতিটি সংলাপ। প্রতিটি দৃশ্য, প্রতিটি দৃষ্টি ডুবে যাওয়ার মতোন।
এত প্রাসঙ্গিক, এত বাস্তব, এতটাই গা শিউরে ওঠা সত্য গুজে দেওয়া হয়েছে এই শর্টফিল্মের পরতে পরতে।
কেউ মাথা উঁচু করে সত্য বললে, তাকে দমানো হয়। ভাবে, দমে গেলো। ভাবে না, সত্যের জন্য মরে গিয়ে অনেককে সে ভাবিয়েও দিয়ে গেলো।
শর্টফিল্মটা দেখার সময়, আমি একটা মানচিত্র দেখতে পেয়েছি চোখে। আর অসংখ্য সহপাঠী। টিয়ার মতোন সুর করে পড়ছে... দুই যোগ দুই সমান পাঁচ। 'চার' বলতে নেই, লিখতে নেই। 'চার' রক্তাক্ত সংখ্যা।
আমার শুধু এইটুকু ভেবে ভালো লাগে, এই অসংখ্য'র ভেতর কোনো এক কোনায় হয়তো কেউ আছে, যার খাতায় 'পাঁচ' কেটে পাঁচের পাশে স্পষ্ট একটা সংখ্যা লেখা, 'চার'। আমরা দেখতে পাচ্ছি না। হয়তো ওই 'চার' একদিন চিৎকার করে বলতে শিখবে,
'দুই যোগ দুই সমান চার এবং এটা সবসময় চারই থাকবে। আপনি ভুল, আমি সঠিক। আপনি মিথ্যে, আমি সত্য। আপনি পরাজিত, আমি বিজয়ী। আপনি দালাল, আমি কাণ্ডারী।'
ফিল্মটা দেখুন
'২+২ = ৫'
বাচ্চাদের মধ্যে হালকা শোরগোল শুনা গেলো। শিক্ষক ধমক দিলেন, চুপ করো। শিক্ষক পড়াতে শুরু করলেন, 'বাচ্চারা পড়ো, দুই যোগ দুই সমান পাঁচ! পড়ো।'
বাচ্চারা ইতস্তত করে পড়লো। শিক্ষক বললেন, জোরে পড়ো। বাচ্চারা জোরে পড়লো। শিক্ষক বললেন, আরও জোরে। বাচ্চারা সমস্বরে আরও জোরে পড়লো, দুই যোগ দুই সমান পাঁচ!
একটা বাচ্চা হাত তুলে ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলো, 'স্যার, দুই আর দুই যোগ সমান চার না?'
শিক্ষক বললেন, 'তোমাকে পড়তে বলা হয়েছে, দুই যোগ দুই সমান পাঁচ... তুমি ওটা পড়ো। কোনো প্রশ্ন করবা না। বুঝেছো?'
'কিন্তু আমি ভেবেছিলাম...'
'ভাবতে হবে না। ভাবার দরকার নাই। দুই যোগ দুই সমান পাঁচ। তুমি বসো এবং পড়ো।'
বাচ্চারা আবার সমস্বরে পড়ল, দুই যোগ দুই সমান পাঁচ। তারপর একটা বাচ্চা সটান ওঠে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো, 'দুই যোগ দুই সমান চার। এবং সবসময় চারই থাকবে। পাঁচ কিভাবে হয় এটা?'
শিক্ষক কঠিন স্বরে ধমক দিলেন, 'তোমাকে প্রশ্ন করার অনুমতি কে দিয়েছে? প্রশ্ন করার সাহস কোথায় পেলে তুমি?'
বাচ্চা দাঁড়িয়ে রইলো। শিক্ষক বললেন, বলো দুই যোগ দুই সমান পাঁচ। বাচ্চাটা ঘাড় ত্যাঁড়া, বাকি সবার দিকে ফিরে দুই হাতের দুই আঙুল জড়ো করে বুঝালো দুই যোগ দুই সমান চার, পাঁচ নয়।
শিক্ষক ধমকালেন, বাচ্চাটা হতাশ স্বরে বললো, 'আপনি জানেন দুই যোগ দুই সমান পাঁচ নয়, চার। কেন পড়াচ্ছেন না সেটা?'
শিক্ষক খুব রেগে গেলেন। বাচ্চাটাকে চুপ করতে বলে ক্লাসরুমের বাইরে গেলেন। এইসময় সহপাঠীরা দাঁড়িয়ে থাকা বাচ্চাটাকে বলল, 'চুপ করো। তুমি তো দেখছি আমাদের সবাইকে ঝামেলায় ফেলবে।'
শিক্ষক ক্লাসে ফিরলেন আবার, স্কুলের তিন জন সেরা ছাত্র সঙ্গে নিয়ে। বাচ্চাদের সামনে ওই তিন জনকে দাঁড় করিয়ে বললেন, 'এরা স্কুলের সেরা ছাত্র। তোমরা বলো, দুই যোগ দুই সমান কত?'
সেরা ছাত্ররা সমস্বরে বলল, দুই যোগ দুই সমান পাঁচ।
শিক্ষক ঘাড় ত্যাঁড়া বাচ্চাটাকে ডেকে ব্ল্যাক বোর্ডের সামনে দাঁড় করিয়ে বললেন, 'অংকটা সমাধান করো।'
বাচ্চা ব্ল্যাকবোর্ডে দেখল,
'২+২ = '
একবার পেছনে তাকালো। ততক্ষণে স্কুলের সেরা তিনজন ছাত্র হাত দুটো বুকের কাছে এনে রাইফেল তাক করার মতোন করে ধরে রেখেছে বাচ্চাটার দিকে।
অংকে ভুল করলেই গুলি করা হবে। বাচ্চাটা ঘাড় ফেরালো, তারপর ব্ল্যাকবোর্ডে লিখল,
'৪'
লিখে ব্ল্যাকবোর্ড পেছনে রেখে সামনে মাথা উঁচু করে দাঁড়ালো। গুলি চললো তিন জনের হাত থেকে।
বাচ্চাটার রক্ত ছিটকে গিয়ে পড়ল ব্ল্যাকবোর্ডে লেখা '৪' এর উপর! শিক্ষক পেছন ফিরে ভীত বাচ্চাদের উদ্দেশ্যে বললেন, 'আর কেউ আছো যে আজকের পড়াটা বুঝতে পারোনি?'
রক্তাক্ত মৃত বাচ্চাটাকে ক্লাসরুমের বাইরে নিয়ে যাওয়া হলো। শিক্ষক ব্ল্যাকবোর্ডে লেগে থাকা রক্তের দাগ সহ পুরো অংক মুছলেন ডাস্টার দিয়ে। তারপর আবার লিখলেন,
'২+২ = ৫'
বললেন,
'সবাই লিখো, দুই যোগ দুই সমান পাঁচ!'
ভীত বাচ্চারা খাতায় লিখল, দুই যোগ দুই সমান পাঁচ!
শর্টফিল্মের শেষ ক'টি সেকেন্ড।
কোনার একটা বাচ্চাকে দেখা গেল, খাতায় সবার মতো করে লিখেছে, দুই যোগ দুই সমান পাঁচ। লিখে একটু পরই 'পাঁচ' কেটে দিলো, পাঁচের পাশে লিখল,
'চার'
গল্প শেষ!
একটি ইরানী শর্টফিল্ম এটি।
নাম 'টু এন্ড টু', বানিয়েছেন বাভাক আনভারি। ২০১১ সালে ব্রিটিশ একাডেমি ফিল্ম অ্যাওয়ার্ড এ বেস্ট শর্টফিল্ম এর নমিনেশন পাওয়া এই ছোট্ট গল্পটির গভীরতা প্রচুর। প্রতিটি সংলাপ। প্রতিটি দৃশ্য, প্রতিটি দৃষ্টি ডুবে যাওয়ার মতোন।
এত প্রাসঙ্গিক, এত বাস্তব, এতটাই গা শিউরে ওঠা সত্য গুজে দেওয়া হয়েছে এই শর্টফিল্মের পরতে পরতে।
কেউ মাথা উঁচু করে সত্য বললে, তাকে দমানো হয়। ভাবে, দমে গেলো। ভাবে না, সত্যের জন্য মরে গিয়ে অনেককে সে ভাবিয়েও দিয়ে গেলো।
শর্টফিল্মটা দেখার সময়, আমি একটা মানচিত্র দেখতে পেয়েছি চোখে। আর অসংখ্য সহপাঠী। টিয়ার মতোন সুর করে পড়ছে... দুই যোগ দুই সমান পাঁচ। 'চার' বলতে নেই, লিখতে নেই। 'চার' রক্তাক্ত সংখ্যা।
আমার শুধু এইটুকু ভেবে ভালো লাগে, এই অসংখ্য'র ভেতর কোনো এক কোনায় হয়তো কেউ আছে, যার খাতায় 'পাঁচ' কেটে পাঁচের পাশে স্পষ্ট একটা সংখ্যা লেখা, 'চার'। আমরা দেখতে পাচ্ছি না। হয়তো ওই 'চার' একদিন চিৎকার করে বলতে শিখবে,
'দুই যোগ দুই সমান চার এবং এটা সবসময় চারই থাকবে। আপনি ভুল, আমি সঠিক। আপনি মিথ্যে, আমি সত্য। আপনি পরাজিত, আমি বিজয়ী। আপনি দালাল, আমি কাণ্ডারী।'
ফিল্মটা দেখুন