What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

ডঃ অরুণোদয় মন্ডল - মানবতার আরেক নাম (1 Viewer)

বিরাটি স্টেশন | প্রতি শনিবার ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে কাঁধে ওষুধভর্তি তিন চারটে ব্যাগ নিয়ে আপ শিয়ালদহ হাসনাবাদ লোকালের অপেক্ষা করেন ৭০ বছর বয়সী এক ডাক্তারবাবু ।গন্তব্য সুন্দরবনের চাঁড়ালখালিতে গ্রামের বাড়িতে | ট্রেনে প্রায় দুই ঘন্টার পথ হাসনাবাদ | হাসনাবাদে নেমে ভ্যান রিক্সায় মিনিট কুড়ি | তারপর নৌকায় ডাঁশা নদী পেরিয়ে ট্রেকারে চেপে পৌঁছতেন রায়মঙ্গল নদীর পাড়ে | নদী পেরিয়ে প্রায় এক ঘন্টা পায়ে হেঁটে বা সাইকেল চালিয়ে ডাক্তারবাবু পৌঁছান চাঁড়ালখালি | সেখানে দিনে তিনি ২০০ জন রোগীর বিনামূল্যে চিকিৎসা করেন | রোগীদের হাতে বিনামূল্যে তুলে দেন ওষুধ | প্রতি সপ্তাহের শনি ও রবিবার এটাই ছিল ডাক্তারবাবুর রুটিন | রবিবার বিকেলে রওনা হন বিরাটি ফেরার জন্য |

কে এই ডাক্তারবাবু ?
তিনি ডাক্তার অরুণোদয় মন্ডল | জন্ম ইছামতির তীরে সুন্দরবনের চাঁড়ালখালিতে | দাদু ছিলেন এলাকার একমাত্র হোমিওপ্যাথি ডাক্তার | তাকে দেখেই ডাক্তার হওয়ার ইচ্ছা জন্মায় অরুণোদয় মন্ডলের | কিন্তু একদিন গ্রামেরই একটি ছেলেকে সাপে কাটল এবং বিনা চিকিৎসায় তার মৃত্যু হয় | সেই দিন থেকেই অরুণোদয় মন্ডল শপথ নিলেন ডাক্তার হয়ে গ্রামের মানুষের পাশে দাঁড়াবেন |

অরুণোদয় মন্ডল সুন্দরবন থেকে এসে ভর্তি হলেন টাকি গভর্নমেন্ট কলেজে | প্রথম বর্ষের পরীক্ষার আগেই মারা গেলেন বাবা | অরুণোদয়ের কাঁধে চাপল বাকি তিন ভাই ও চার বোনের দায়িত্ব | এরই মাঝে কলকাতা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে সুযোগ পেলেন | পড়াশোনার পাশাপাশি সামলাতেন সংসার | ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে পড়ার সময় তিনবেলা টিউশন পড়াতেন তিনি |

বিলাসবহুল জীবনের স্বপ্ন ছিল না অরুণোদয় মন্ডলের | তাঁর একটাই স্বপ্ন - মানুষের পাশে দাঁড়ানো |
ইতিমধ্যে বিয়েও করেছেন | ১৯৮১ সাল | বিরাটিতে একটি ঘর ভাড়া নিয়ে খুলেছিলেন চেম্বার। ডাক্তার অরুণোদয় মণ্ডলের ফি ছিল ২ টাকা। সেই সময় থেকেই কাছেপিঠে, কখনও বা দূরে কোনও স্বাস্থ্যশিবির হলে বিনামূল্যেই চিকিৎসা করতেন তিনি |
কিন্তু একটা কথা বুঝতে পারছিলেন, স্বাস্থ্যশিবিরে গিয়ে যাঁদের দেখে আসছেন সেই রোগীরা পরামর্শ মেনে চলছে কি না, প্রেসক্রিপশন ওঁদের কাজে লাগছে কি না, তা নিয়ে কোনও ফলো-আপ তো করা হচ্ছে না | আর এই ফলো-আপ করার জন্যই নিজের গ্রামের কথা মনে পড়ল তাঁর |

২০০০ সাল | প্রতি সপ্তাহে বিরাটি থেকে চাঁড়ালখালি আসতে লাগলেন অরুণোদয় মন্ডল | সেখানে গ্রামের বাড়িতেই সকাল থেকে রাত পর্যন্ত দেখতেন সব ধরনের রোগী | তাঁর বসার জন্যে গ্রামে স্থায়ী কোনও জায়গাও ছিল না | সেই সময় ওই গ্রামে বিদ্যুত পৌঁছায়নি | রাতে লন্ঠন, কুপি জ্বালিয়ে রোগী দেখতেন ডাক্তারবাবু | কিন্তু বুঝলেন কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। কারণ, তাঁর লেখা প্রেসক্রিপশন মেনে চলতে পারছেন না রোগীরা। দামি ওষুধ কিনতে পারছেন না | এমনকি রোগ নির্ণয়ের জন্যে মেডিক্যাল টেস্ট করাও রোগীদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না |স্থানীয় প্রশাসনের কাছে সরকারী সাহায্য চাইলেন, পেলেন না | হাল ছাড়লেন না অরুণোদয় বাবু | পাশে দাঁড়ালেন স্ত্রী |
বিরাটির বন্ধু,আত্মীয়,প্রতিবেশীদের কাছে সাহায্য চাইলেন | অনেকেই আর্থিক সাহায্য করলেন | সেই টাকা দিয়ে ওষুধ কিনে নিয়ে তিনি সপ্তাহের প্রতি শনিবার পৌঁছে যেতেন চাঁড়ালখালিতে। কাঁধে ওষুধবোঝাই তিন-তিনটি ব্যাগ নিয়ে |

কিন্তু বুঝলেন এতেও পুরো কাজ হচ্ছে না | তাই অন্য পথ ধরলেন | সারা সপ্তাহ কলকাতার ডাক্তারদের চেম্বারে চেম্বারে ঘুরে যে 'ডক্টরস্‌ স্যাম্পেল্স' জোগাড় করতে লাগলেন অরুণোদয় বাবু | তাতেও সমস্যা থেকে গেল। যে রোগীর সপ্তাহে পাঁচ দিনের ওষুধ লাগে, তাঁকে বড়জোর দু'দিনের ওষুধ দিতে পারতেন |

অরুণোদয় বাবু বুঝলেন স্থায়ীভাবে সমস্যার সমাধান না করলে রোগীদের সমস্যা মিটবে না | শেষমেশ নিজের সঞ্চয় এবং বেশ কিছু মানুষের সাহায্যে সুন্দরবনের ওই গ্রামেই ১১ কাঠা জমি কিনলেন তিনি |
গড়ে তুললেন দোতলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র | নাম সুজন | ২০০৬ সাল থেকে সেখানেই রোগী দেখতে লাগলেন তিনি | নিজের পয়সায় রোগীদের কলকাতায় এনে কম খরচে মেডিক্যাল টেস্টও করিয়ে দেন অরুণোদয় বাবু | রোগীদের হাতে তুলে দেন দামী ওষুধ | রোগীদের রক্ত ও অন্যান্য পরীক্ষাগুলি নমুনা কলকাতায় নিয়ে এসে কম খরচে করিয়ে দেন অরুণোদয় বাবু | 'সুজন'-এ প্রতি শনি ও রবিবার তাঁকে দেখাতে আসেন গড়ে আড়াইশো রোগী | সকলেই পান বিনামূল্যে চিকিৎসা |

কেন্দ্রীয় সরকার ২০২০ সালে পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত করেছেন ডক্টর অরুণোদয় মণ্ডলকে | কিন্তু অরুণোদয় বাবুর কাছে রোগীদের মুখের হাসিই জীবনের সবচেয়ে বড় পুরস্কার |রোগীদের পাশে দাঁড়াতে গিয়ে বহু বাধা বিপত্তির সম্মুখীন হয়েছেন ডাক্তারবাবু | কিন্তু তিনি হাল ছাড়েননি | কবিগুরুর "একলা চল রে"-ই অনুপ্রেরণা ডাক্তারবাবুর |

আর তাই আজও প্রতি শনিবার ভোরবেলা কাঁধে তিন চারটে ওষুধভর্তি ব্যাগ নিয়ে বিরাটি স্টেশনে হাসনাবাদ লোকালের অপেক্ষায় থাকেন ডক্টর অরুণোদয় মণ্ডল.....

তথ্য : আনন্দবাজার পত্রিকা
সংগৃহিত।।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top