গল্পের নামঃ- ভালোবাসাময় রমযান
লেখকঃ- মোঃ আব্দুল্লা-হিল-মারুফ তামিম
...
রমযান মাস,অনেক গুলো রোযা পার হয়ে গিয়েছে। তাছাড়া দেশে এখন করোনা ভাইরাসের জন্য লকডাউন তাই কোনো কাজ না থাকায় দুপুরে যোহর এর নামায পড়ে শুয়ে রয়েছে তামিম।
বিছানায় শুয়ে শুয়ে ফোনে পাব্জি গেম খেলছে। রোযার ভিতরে আর কোনো কাজ নেই তাই এখন শুয়ে গেম খেলছিল। তখনই তার ফোন বেজে উঠে। ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখে পায়েল ফোন দিয়েছে।
পায়েল এর সাথে তামিমের প্রায় তিন বছর ধরে ভালোবাসার সম্পর্ক। সব কিছু ঠিক থাকলে তাদের বিয়েও হতে পারে। তবে এখনও তাদের বাসার কেউ এই বিষয়ে জানে না। যখনই বাসায় জানানোর বিষয়টি তোলা হয় তখনই দুজন ভয়ে আবার থেমে যায় যদি তাদের পরিবার মেনে না নেয় এজন্য।
...
ফোন ধরতেই ওপাশ থেকে পায়েল বলল-
পায়েলঃ- কী জনাব,এত দেরী হল কেন ফোন ধরতে?
তামিমঃ- পাব্জি খেলছিলাম তাই দেরী হয়েছে।
পায়েলঃ- উফফ এই পাব্জি খেলে যে তুমি কী মজা পাও?
তামিমঃ- কেন খুব ভালো গেম ত এটি।
পায়েলঃ- ভালো না ছাই।
তামিমঃ- কেন তোমার এতো জ্বলে কেন?
পায়েলঃ- আমার সতীন ত তাই জ্বলে।
তামিমঃ- হা হা হা ভালো বলেছো।
পায়েলঃ- একদম হাসবে না।
তামিমঃ- আচ্ছা হাসব না।
পায়েলঃ- হুম ভালো ছেলে।
তামিমঃ- আমার আম্মুও এই কথা বলেন সবসময়।
পায়েলঃ- আন্টি তোমাকে পাম দেন কারণ এসব না বললে তুমি আন্টিকে হেল্প করবা না কোনো কাজে তাই এটা বলছেন।
তামিমঃ- এ কেমন কথা? আমি কী এতটাই খারাপ?
পায়েলঃ- খারাপ না তবে দুষ্টু ছেলে।
তামিমঃ- কী দুষ্টুমি করেছি আমি? তোমাকে কী আমি খামচি দিয়েছি নাকি তোমার বিরুদ্ধে কথা বলেছি?
পায়েলঃ- খামচি দিলেও ত বুঝতাম যে আপনি আমাকে স্পর্শ করেছেন। কিন্তু এই তিনবছরে আমাকে কখনও নিজ থেকে স্পর্শ করেছেন তা আমার মনে হয় না। আমি নিজে থেকে যতবার হাত ধরেছি ঐ শেষ। সব সময়ত আমার থেকে দুই-তিন হাত দূরে থাকো।
তামিমঃ- আমি মেয়েদেরকে সম্মান করি তাই কখনও তোমাকে স্পর্শ করি নাই যা হবার বিয়ের পর হবে। আর দুই-তিন হাত দূরে থাকা মানে হল সামাজিক দূরত্ব জানো না এখন করোনার জন্য তিন ফুট দূরত্ব রাখতে হচ্ছে।
পায়েলঃ- আচ্ছা বুঝতে পারছি যুক্তিবাদী। বাদ দাও এসব এখন বল কি করছ?
তামিমঃ- বিছানায় শুয়ে আছি ফ্যানের নিচে আজ যে গরম পড়েছে।
পায়েলঃ- হুম অনেক গরম পড়েছে, রোযা আছো?
তামিমঃ- হ্যাঁ তুমি?
পায়েলঃ- আলহামদুলিল্লাহ্ আমিও আছি, নামায পড়েছ?
তামিমঃ- নামায পড়েই তারপর শুয়েছি। তুমি নাময পড়েছ?
পায়েলঃ- আমিও নামায পড়ে তোমাকে ফোন দিচ্ছি।
তামিমঃ- বাহ খুব ভালো।
পায়েলঃ- হুম,শোননা একটা কথা বলার জন্য ফোন দিয়েছিলাম।
তামিমঃ- কী কথা?
পায়েলঃ- আজকে তুমি আমার বাসায় ইফতার করবে।
তামিমঃ- কী বলছ এসব মাথা ঠিক আছে? আমি যাব তোমার বাসায় তোমার পরিবারের সবার সাথে ইফতার করতে। আমাকে দেখলে তোমার বাড়ির লোক পিটাবে।
পায়েলঃ- আরে ধূর এসব কিছুই হবে না।
তামিমঃ- তাহলে কী তারা আমাকে জামাই আদর করবেন? আচ্ছা এক মিনিট তুমি কী তাদের আমার কথা বলে দিয়েছ নাকি?
পায়েলঃ- নাহ এখনও বলি নাই তবে বলব ভাবছি।
তামিমঃ- তাহলে আমাকে কী পরিচয়ে আজকে ইফতার করাবে?
পায়েলঃ- কোনো পরিচয় না। আব্বু,আম্মু আর ছোটবোন আজকে বাসায় নাই নানুবাড়ি গিয়েছে। তাদের আসতে রাত হয়ে যাবে।
তামিমঃ- তুমি যাও নাই কেন?
পায়েলঃ- আমার বাইরে যেতে ইচ্ছা করছিল না তাই থেকে গিয়েছি।
তামিমঃ- আচ্ছা ভালো করছ।
পায়েলঃ- এখন তুমি চলে এসো দ্রুত।
তামিমঃ- এখন আসব কীভাবে?
পায়েলঃ- কেন যেভাবে আসা যায় সেভাবে আসো।
তামিমঃ- পাগল হলে তুমি? এখন এই লকডাউনে ত গাড়িও চলছে না কীভাবে আসব?
পায়েলঃ- মিথ্যা বলবে না সবখানেই গাড়ি চলাচল করছে। কেন তুমিই ত বল আংকেল প্রতিদিনই শহরে যান রাজনৈতিক কাজের জন্য তাহলে উনি যান কীভাবে?
তামিমঃ- সে কোনো ব্যবস্থা করেই যায় কিন্তু আমি আসব কীভাবে।
পায়েলঃ- কেন দুইটা পা আছে কি করতে? সেটা দিয়ে দরকার হয় হেটে আসবা কিন্তু তোমাকে আসতেই হবে।
তামিমঃ- পায়ে হেটে যদি আসতে হয় তাহলে আজকে আর তোমার বাড়ী পৌছাতে পারব না। কারণ তোমার বাড়ী আর আমার বাড়ি শহরের শুরু এবং শেষদিকে মানে দুইজন দুই প্রান্তে থাকি।
পায়েলঃ- আমি এত কিছু বুঝি না তুমি আসবা এটাই শেষ কথা।
আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে পায়েল ফোন কেটে দেয়। এদিকে তামিম পড়ল উভয় সংকটে। একদিকে প্রেমিকার আবদার আর এদিকে বাসায় কী বলে বের হবে তাছাড়া এই লকডাউনে রাস্তায় বের হতে দেখলেই পুলিশ পিটাচ্ছে।
...
তারপরও তাকে যেতে হবে এছাড়া কোনো উপায় নেই কারণ সে সবাইকে খুশি রাখতে চায়। তাই বাসায় কোনোভাবে বুঝিয়ে বেরিয়ে পড়ে পায়েল এর বাড়ির উদ্দেশ্যে।
পথে অনেক বাধা বিপত্তি পেরিয়ে চল্লিশ মিনিটের পথ দেড় ঘন্টা লেগে যায়।
...
অবশেষে পায়েল এর বাড়ি গিয়ে পৌছায়।
দরজা খুলে পায়েল দেখতে পায় তামিম একেবারে ঘেমে ভিজে আছে। তামিম এর এই অবস্থা দেখে তার একটু কষ্ট লাগে। মনে মনে নিজেকে গালি দিতে থাকে যে আজ তার জন্য এই রোযার ভিতরে কষ্ট করে এসেছে তামিম।
...
পায়েল এর ঘোর কাটে তামিম এর ডাকে-
তামিমঃ- কী হল এভাবে দাঁড়িয়ে রাখবে? অনেক ক্লান্ত আমি একটু বসতে চাই।
পায়েলঃ- ওহ এসো ভিতরে এসো।
তামিম ঘরের ভিতর ঢোকার পর পায়েল দরজা লাগিয়ে দেয়। তামিম এই প্রথম পায়েলদের বাড়িতে এসেছে তাই একটু ঘুরে ঘুরে সব কিছু দেখছে।
পায়েল, তামিমকে বসতে দিয়ে ফ্যানটি জোরে চালিয়ে দেয় যেন একটু তৃপ্তি পায়।
ফ্যানের ঠান্ডা বাতাসে এখন ভালো লাগছে তামিমের।
এবার পায়েল তার পাশে বসে জিজ্ঞাসা করে-
পায়েলঃ- কী গো আমি তোমাকে আসতে বললাম আর চলে এলে এত কষ্ট করে।
তামিমঃ- তুমি ডেকেছ তাই না এসে পারি বল?
পায়েলঃ- তাই বলে এত কষ্ট করে আসতে হবে? দেখো কত ঘেমে গিয়েছ রোযার ভিতর কত কষ্ট দিলাম তোমাকে।
তামিমঃ- বাদ দাও এসব কিছুই না।
পায়েলঃ- আচ্ছা এসেছ কীভাবে?
তামিমঃ- সে অনেক বড় ইতিহাস।
পায়েলঃ- ছোট করে বলে দাও। তার আগে বল বাসা থেকে তোমাকে বের হতে দিয়েছে কেন? কী বলেছিলে তুমি তাদেরকে?
তামিমঃ- তেমন কিছু না বলেছি আম্মু আমার ফ্রেন্ডের বাসায় যাচ্ছি ঐখানে ইফতার করব।
পায়েলঃ- আন্টি জিজ্ঞাসা করেন নাই কার বাসায় যাচ্ছ বা কেন?
তামিমঃ- আম্মু জানেন আমার ফ্রেন্ড বলতে আকাশ আর রাকিব ভাই এদের সাথেই আমি নিয়মিত চলাচল করি তাই তাদের একজনকেই ভেবে নিয়েছেন।
পায়েলঃ- বাহ এখন বল রাস্তায় কোনো সমস্যা হয় নাই ত?
তামিমঃ- সমস্যা বলতে গাড়ি পাচ্ছিলাম না তেমন একটা কিছু কিছু জায়গায় পেয়েছিলাম তারা অল্প একটু এসে আর যাবে না বলেছে এরপর হেটে হেটে আসতে হয়েছে। এছাড়া কিছু কিছু জায়গাতে পুলিশ দেখতে পাই তখন অন্য রাস্তা দিয়ে আসতে হয়েছে। তাই চল্লিশ মিনিটের রাস্তা দেড় ঘন্টা লেগেছে।
পায়েলঃ- তাহলে অনেক কষ্ট হয়েছে আসতে তোমার।
তামিমঃ- বাদ দাও এসব এখন বল বাসার সবাই কখন আসবে?
পায়েলঃ- ইফতার করে তারপর আসবেন।
তামিমঃ- এর আগে যদি এসে যায়?
পায়েলঃ- নাহ আসবে না ইফতার করেই আসবে আমাকে বলেছেন।
তামিমঃ- তুমি যাও নাই কেন?
পায়েলঃ- আমার এই রোযা রেখে বাইরে যেতে ইচ্ছা করছিল না। তাছাড়া এত মানুষ রাস্তায় না বের হওয়া ভালো। আমার ছোটবোন ছোট না হলে তাকেও রেখে যেত আব্বু আম্মু।
তামিমঃ- হ্যাঁ এখন যা অবস্থা বেশি লোক একসাথে হতে দিচ্ছে না রাস্তায়। যাই হোক এখন বল আজকের ইফতারের আইটেম কী কী?
পায়েলঃ- চল রান্নাঘরে দুজনে আজকে ইফতার বানাব।
তামিমঃ- আমি ত রান্না করতে পারি না।
পায়েলঃ- রান্না আমি করব তুমি আমাকে হেল্প কর।
তামিমঃ- আচ্ছা তাহলে চল শুরু করি নাহলে আসর এর আযান দিয়ে দিবে।
পায়েলঃ- হুম চল।
...
এরপর দুজনে মিলে আয়োজন শুরু করে ইফতারের। আজকে তামিম এর পছন্দের সব ইফতার বানাচ্ছে পায়েল।
দুজনের খুনসুটি এবং ভালোবাসা মিশিয়ে ইফতার বানানো শেষ হল। সবকিছু শেষ করতে গিয়ে আসর এর আযান দিয়ে দেয়।
এখন হাতে আর কোনো কাজ নেই তাই তামিম অযু করে নামাযে দাঁড়িয়ে যায়। এদিকে পায়েলও অযু করে এসে নামাযে দাঁড়াবে তখনই বাসার কলিংবেল বেজে উঠে।
কলিংবেল এর শব্দে পায়েল এর ভয় শুরু হয় সে ভাবছে তারা বাবা-মা ফিরে এলো না ত আবার। এদিকে তামিমও নামাজে দাঁড়িয়ে গিয়েছে তাকে এখন লুকাতেও পারবে না।
এদিকে কলিংবেল বেজেই চলেছে এখন উপায় না পেয়ে আস্তে আস্তে দরজার কাছে যায় সে এবং লুকিং গ্লাস দিয়ে বাইরে কে আছে দেখার চেষ্টা করে।
লুকিং গ্লাস থেকে যা দেখল যার ফলে তার বুক কেপে উঠল এবং কলিজা শুকিয়ে যায় ভয়ে। কারণ দরজার ওপাশে তার মা-বাবা এবং ছোটবোন দাঁড়িয়ে আছেন।
এখন সে পড়েছে উভয় সংকটে একদিকে ঘরের ভিতরে তামিম নামায পড়ছে এবং অন্যদিকে দরজার বাইরে তার পরিবার দাঁড়িয়ে আছে।
...
এখন সে পারছে না তামিমকে চলে যেতে বলতে বা লুকিয়ে রাখতে এবং দরজাও বেশিক্ষণ না খুলে থাকা যাবে না তাহলে হুলস্থুল কান্ড ঘটে যাবে।
তাই মনে সাহস নিয়ে দরজা খুলে দেয় পায়েল।
...
দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে পায়েল এর আম্মু জিজ্ঞাসা করেন-
আম্মুঃ- কী হল এতো দেরী করলে কেন দরজা খুলতে?"
পায়েলঃ- অযু করতে গিয়েছিলাম নামায পড়ব তাই দেরী হয়েছে দরজা খুলতে।
আম্মুঃ- আচ্ছা দেখি সরে দাড়াও আমাদেরকে ঢুকতে দাও।
এতক্ষণ দরজার কাছে দাঁড়িয়ে কথা বলছিল পায়েল তার খেয়াল ছিল না যে সে পথ আটকে দাঁড়িয়ে আছে। তাকে সরিয়ে দিয়ে একে একে ঘরে ঢুকল তার আব্বু,আম্মু এবং ছোটবোন।
পায়েল এর মনে এখন ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়। এদিকে তামিম এর এখনও নামায পড়া শেষ হল না। তাই এই সময়টুকু কীভাবে মা-বাবা'কে আটকে রাখা যায় সেজন্য নানাবাড়ির গল্প জুড়ে দিল বাব-মায়ের সাথে।
...
কিন্তু কপাল খারাপ হলে যা হয় মা-বাবার সাথে কথা বলার ফাকে তার ছোটবোন ঘরে চলে গিয়েসে এটি সে খেয়াল করে নি।
হঠাত করে পায়েল এর ছোটবোন চিৎকার দিয়ে উঠে। ছোটবোনের চিৎকার শুনে সবাই ছুটে যায় পায়েল এর ঘরের দিকে আর এদিকে পায়েল ভয়ে শেষ। আজকে ধরা পড়ে গিয়েছে সে এখন বিপদ রয়েছে কপালে।
...
পায়েল এর মা-বাবা ঘরে ঢুকে দেখেন একটি ছেলে নামায পড়ছে অর্থাৎ তারা তামিমকে দেখে ফেলেছেন।
পায়েলও তাদের পিছু পিছু নিজের ঘরে এসে দরজার এক পাশে দাঁড়িয়ে যায় ভয়ে কাউকে কিছু বলতে পারছে না শুধু ঘামছে।
তামিমকে দেখে পায়েল এর বাবা-মা দুজনেই অবাক একে অপরের দিকে তাকাচ্ছেন।
...
নামায শেষে সালাম ফিরিয়ে তামিম দেখতে পায় তার পিছনে পায়েল এর পুরো পরিবার দাঁড়িয়ে আছে।
নামায পড়ার সময় বুঝতে পেরেছিল বাসায় লোকজন ফিরে এসেছে কিন্তু নামায ফেলে ত আর পালিয়ে যাওয়া যায় না তাই নামায আদায় করে যায় এবং ভেবে নেয় যা হবার তখন দেখা যাবে আর এভাবে কত লুকিয়ে থাকবে একদিন না একদিন তাদের সবকিছু জানাতে হবে তাই সেই সময়টা নাহয় এখনই হয়ে যাক।
...
জায়নামায থেকে উঠে দাঁড়িয়ে তামিম, পায়েল এর বাবা এবং মা'কে সালাম দেয়।
এরপর পায়েল এর বাবা জিজ্ঞাসা করেন-
পায়েল এর বাবাঃ-এই ছেলে তুমি কে?
তামিমঃ- জ্বী আংকেল আমার নাম তামিম।
পায়েল এর বাবাঃ-এখানে কী করছ তুমি আর পায়েল এর সাথে তোমার কীসের সম্পর্ক।
তামিমঃ- আমরা দুজন বন্ধু।
পায়েল এর বাবাঃ- পায়েল তুমি এই ছেলেকে ডেকে নিয়ে এসেছ?
পায়েলঃ- আব্বু মানে...
তামিমঃ- নাহ আংকেল আমি নিজেই এসেছি। ওর কোনো দোষ নেই।
পায়েল এর বাবাঃ- শুধু বন্ধু তোমরা না কী অন্য কিছু?
পায়েলঃ- আব্বু আমার কথাটা একটু শুনো।
তামিমঃ- আংকেল ভূল যেহেতু আমি করেছি তাই আমাকেই বলতে দিন।
পায়েল এর বাবাঃ- হ্যাঁ বল কী বলতে চাও?
তামিমঃ- আংকেল আমি পায়েল'কে ভালোবাসি এবং আমাদের তিনবছর যাবত সম্পর্ক।
পায়েল এর বাবাঃ- কী বলছ এসব তিনবছর ধরে সম্পর্ক তোমাদের মাঝে। পায়েল ও কী সত্যি বলছে?
পায়েলঃ- হ্যাঁ আব্বু সব সত্যি।
তামিমঃ- আংকেল বিশ্বাস করুন আমাদের তিনবছর সম্পর্ক কিন্তু আমাদের দুজনের মাঝে কখনও অপবিত্রতা দেখা দেয় নাই। আমাদের দুজনের ভিতর পবিত্র বন্ধন। আমি কিছুদিন পর আমার পরিবার নিয়ে আপনাদের কাছে আসতাম কিন্তু তার আগেই আপ্নারা জেনে ফেলেছেন। এখন ভূল কিছু হলে ক্ষমা করে দিবেন। তবে পায়েল এর কোনো দোষ নেই আমি নিজেই এসেছি এখানে ওকে ইফতার বানাতে সাহায্য করতে। আপনি প্লিজ ওকে কিছু বলবেন না। আপনার মেয়ের প্রতি বিশ্বাস রাখুন সে অনেক পবিত্র।
পায়েল এর বাবাঃ- হুম,তাই বলে এভাবে কেউ না থাকলে কারও বাসায় আসাটা অপরাধ তাও আবার একজন একা মেয়ের কাছে আসাটা। আশেপাশে লোকজন রয়েছে তারা দেখলে খারাপ ভাব্বে।
তামিমঃ- এর জন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী আংকেল এমন ভূল আর হবে না। আমাকে মাফ করে দিবেন। আপনাদের কষ্ট দিয়েছি আমি পারলে ক্ষমা করে দিবেন। আমি এখন চলি।
কথা শেষ করে তামিম পা বাড়ায় বাইরে যাওয়ার জন্য তখনই তাকে পিছন থেকে পায়েল এর বাবা ডাক দেন।
তামিম পিছন ফিরে তাকালে তিনি বলেন "কোথায় যাও? এত কষ্ট করে ইফতার বানিয়েছ এখন ইফতার না করেই চলে যাচ্ছ? এসো আজকে আমরা সবাই মিলে একসাথে ইফতার করব।"
কথাটি শেষ করে তিনি হেসে দেন আর তার হাসি দেখে সবাই হেসে দেয় এরপর সবাই মিলে ইফতারের আয়োজন করে।
এভাবেই পরিপূর্ণ হল এক পবিত্র ভালোবাসার গল্প।
...
এই রমযানে এমনভাবেই পূর্ণতা পাক সকল ভালোবাসার বন্ধনগুলি। প্রিয়জনকে নিয়ে সুন্দরভাবে কাটিয়ে দেই এই রমযান।
সবাইকে জানাই রমযানুল মোবারাক।
#সমাপ্ত..
(ভূলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। গল্পটি সম্পুর্ণ কাল্পনিক। সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন এবং ঘরে থাকুন। সবাইকে পড়ার জন্য ধন্যবাদ।)
Copyright:- May 20,2020 at 12:55 AM.
Maruf Tamim (Author).
লেখকঃ- মোঃ আব্দুল্লা-হিল-মারুফ তামিম
...
রমযান মাস,অনেক গুলো রোযা পার হয়ে গিয়েছে। তাছাড়া দেশে এখন করোনা ভাইরাসের জন্য লকডাউন তাই কোনো কাজ না থাকায় দুপুরে যোহর এর নামায পড়ে শুয়ে রয়েছে তামিম।
বিছানায় শুয়ে শুয়ে ফোনে পাব্জি গেম খেলছে। রোযার ভিতরে আর কোনো কাজ নেই তাই এখন শুয়ে গেম খেলছিল। তখনই তার ফোন বেজে উঠে। ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখে পায়েল ফোন দিয়েছে।
পায়েল এর সাথে তামিমের প্রায় তিন বছর ধরে ভালোবাসার সম্পর্ক। সব কিছু ঠিক থাকলে তাদের বিয়েও হতে পারে। তবে এখনও তাদের বাসার কেউ এই বিষয়ে জানে না। যখনই বাসায় জানানোর বিষয়টি তোলা হয় তখনই দুজন ভয়ে আবার থেমে যায় যদি তাদের পরিবার মেনে না নেয় এজন্য।
...
ফোন ধরতেই ওপাশ থেকে পায়েল বলল-
পায়েলঃ- কী জনাব,এত দেরী হল কেন ফোন ধরতে?
তামিমঃ- পাব্জি খেলছিলাম তাই দেরী হয়েছে।
পায়েলঃ- উফফ এই পাব্জি খেলে যে তুমি কী মজা পাও?
তামিমঃ- কেন খুব ভালো গেম ত এটি।
পায়েলঃ- ভালো না ছাই।
তামিমঃ- কেন তোমার এতো জ্বলে কেন?
পায়েলঃ- আমার সতীন ত তাই জ্বলে।
তামিমঃ- হা হা হা ভালো বলেছো।
পায়েলঃ- একদম হাসবে না।
তামিমঃ- আচ্ছা হাসব না।
পায়েলঃ- হুম ভালো ছেলে।
তামিমঃ- আমার আম্মুও এই কথা বলেন সবসময়।
পায়েলঃ- আন্টি তোমাকে পাম দেন কারণ এসব না বললে তুমি আন্টিকে হেল্প করবা না কোনো কাজে তাই এটা বলছেন।
তামিমঃ- এ কেমন কথা? আমি কী এতটাই খারাপ?
পায়েলঃ- খারাপ না তবে দুষ্টু ছেলে।
তামিমঃ- কী দুষ্টুমি করেছি আমি? তোমাকে কী আমি খামচি দিয়েছি নাকি তোমার বিরুদ্ধে কথা বলেছি?
পায়েলঃ- খামচি দিলেও ত বুঝতাম যে আপনি আমাকে স্পর্শ করেছেন। কিন্তু এই তিনবছরে আমাকে কখনও নিজ থেকে স্পর্শ করেছেন তা আমার মনে হয় না। আমি নিজে থেকে যতবার হাত ধরেছি ঐ শেষ। সব সময়ত আমার থেকে দুই-তিন হাত দূরে থাকো।
তামিমঃ- আমি মেয়েদেরকে সম্মান করি তাই কখনও তোমাকে স্পর্শ করি নাই যা হবার বিয়ের পর হবে। আর দুই-তিন হাত দূরে থাকা মানে হল সামাজিক দূরত্ব জানো না এখন করোনার জন্য তিন ফুট দূরত্ব রাখতে হচ্ছে।
পায়েলঃ- আচ্ছা বুঝতে পারছি যুক্তিবাদী। বাদ দাও এসব এখন বল কি করছ?
তামিমঃ- বিছানায় শুয়ে আছি ফ্যানের নিচে আজ যে গরম পড়েছে।
পায়েলঃ- হুম অনেক গরম পড়েছে, রোযা আছো?
তামিমঃ- হ্যাঁ তুমি?
পায়েলঃ- আলহামদুলিল্লাহ্ আমিও আছি, নামায পড়েছ?
তামিমঃ- নামায পড়েই তারপর শুয়েছি। তুমি নাময পড়েছ?
পায়েলঃ- আমিও নামায পড়ে তোমাকে ফোন দিচ্ছি।
তামিমঃ- বাহ খুব ভালো।
পায়েলঃ- হুম,শোননা একটা কথা বলার জন্য ফোন দিয়েছিলাম।
তামিমঃ- কী কথা?
পায়েলঃ- আজকে তুমি আমার বাসায় ইফতার করবে।
তামিমঃ- কী বলছ এসব মাথা ঠিক আছে? আমি যাব তোমার বাসায় তোমার পরিবারের সবার সাথে ইফতার করতে। আমাকে দেখলে তোমার বাড়ির লোক পিটাবে।
পায়েলঃ- আরে ধূর এসব কিছুই হবে না।
তামিমঃ- তাহলে কী তারা আমাকে জামাই আদর করবেন? আচ্ছা এক মিনিট তুমি কী তাদের আমার কথা বলে দিয়েছ নাকি?
পায়েলঃ- নাহ এখনও বলি নাই তবে বলব ভাবছি।
তামিমঃ- তাহলে আমাকে কী পরিচয়ে আজকে ইফতার করাবে?
পায়েলঃ- কোনো পরিচয় না। আব্বু,আম্মু আর ছোটবোন আজকে বাসায় নাই নানুবাড়ি গিয়েছে। তাদের আসতে রাত হয়ে যাবে।
তামিমঃ- তুমি যাও নাই কেন?
পায়েলঃ- আমার বাইরে যেতে ইচ্ছা করছিল না তাই থেকে গিয়েছি।
তামিমঃ- আচ্ছা ভালো করছ।
পায়েলঃ- এখন তুমি চলে এসো দ্রুত।
তামিমঃ- এখন আসব কীভাবে?
পায়েলঃ- কেন যেভাবে আসা যায় সেভাবে আসো।
তামিমঃ- পাগল হলে তুমি? এখন এই লকডাউনে ত গাড়িও চলছে না কীভাবে আসব?
পায়েলঃ- মিথ্যা বলবে না সবখানেই গাড়ি চলাচল করছে। কেন তুমিই ত বল আংকেল প্রতিদিনই শহরে যান রাজনৈতিক কাজের জন্য তাহলে উনি যান কীভাবে?
তামিমঃ- সে কোনো ব্যবস্থা করেই যায় কিন্তু আমি আসব কীভাবে।
পায়েলঃ- কেন দুইটা পা আছে কি করতে? সেটা দিয়ে দরকার হয় হেটে আসবা কিন্তু তোমাকে আসতেই হবে।
তামিমঃ- পায়ে হেটে যদি আসতে হয় তাহলে আজকে আর তোমার বাড়ী পৌছাতে পারব না। কারণ তোমার বাড়ী আর আমার বাড়ি শহরের শুরু এবং শেষদিকে মানে দুইজন দুই প্রান্তে থাকি।
পায়েলঃ- আমি এত কিছু বুঝি না তুমি আসবা এটাই শেষ কথা।
আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে পায়েল ফোন কেটে দেয়। এদিকে তামিম পড়ল উভয় সংকটে। একদিকে প্রেমিকার আবদার আর এদিকে বাসায় কী বলে বের হবে তাছাড়া এই লকডাউনে রাস্তায় বের হতে দেখলেই পুলিশ পিটাচ্ছে।
...
তারপরও তাকে যেতে হবে এছাড়া কোনো উপায় নেই কারণ সে সবাইকে খুশি রাখতে চায়। তাই বাসায় কোনোভাবে বুঝিয়ে বেরিয়ে পড়ে পায়েল এর বাড়ির উদ্দেশ্যে।
পথে অনেক বাধা বিপত্তি পেরিয়ে চল্লিশ মিনিটের পথ দেড় ঘন্টা লেগে যায়।
...
অবশেষে পায়েল এর বাড়ি গিয়ে পৌছায়।
দরজা খুলে পায়েল দেখতে পায় তামিম একেবারে ঘেমে ভিজে আছে। তামিম এর এই অবস্থা দেখে তার একটু কষ্ট লাগে। মনে মনে নিজেকে গালি দিতে থাকে যে আজ তার জন্য এই রোযার ভিতরে কষ্ট করে এসেছে তামিম।
...
পায়েল এর ঘোর কাটে তামিম এর ডাকে-
তামিমঃ- কী হল এভাবে দাঁড়িয়ে রাখবে? অনেক ক্লান্ত আমি একটু বসতে চাই।
পায়েলঃ- ওহ এসো ভিতরে এসো।
তামিম ঘরের ভিতর ঢোকার পর পায়েল দরজা লাগিয়ে দেয়। তামিম এই প্রথম পায়েলদের বাড়িতে এসেছে তাই একটু ঘুরে ঘুরে সব কিছু দেখছে।
পায়েল, তামিমকে বসতে দিয়ে ফ্যানটি জোরে চালিয়ে দেয় যেন একটু তৃপ্তি পায়।
ফ্যানের ঠান্ডা বাতাসে এখন ভালো লাগছে তামিমের।
এবার পায়েল তার পাশে বসে জিজ্ঞাসা করে-
পায়েলঃ- কী গো আমি তোমাকে আসতে বললাম আর চলে এলে এত কষ্ট করে।
তামিমঃ- তুমি ডেকেছ তাই না এসে পারি বল?
পায়েলঃ- তাই বলে এত কষ্ট করে আসতে হবে? দেখো কত ঘেমে গিয়েছ রোযার ভিতর কত কষ্ট দিলাম তোমাকে।
তামিমঃ- বাদ দাও এসব কিছুই না।
পায়েলঃ- আচ্ছা এসেছ কীভাবে?
তামিমঃ- সে অনেক বড় ইতিহাস।
পায়েলঃ- ছোট করে বলে দাও। তার আগে বল বাসা থেকে তোমাকে বের হতে দিয়েছে কেন? কী বলেছিলে তুমি তাদেরকে?
তামিমঃ- তেমন কিছু না বলেছি আম্মু আমার ফ্রেন্ডের বাসায় যাচ্ছি ঐখানে ইফতার করব।
পায়েলঃ- আন্টি জিজ্ঞাসা করেন নাই কার বাসায় যাচ্ছ বা কেন?
তামিমঃ- আম্মু জানেন আমার ফ্রেন্ড বলতে আকাশ আর রাকিব ভাই এদের সাথেই আমি নিয়মিত চলাচল করি তাই তাদের একজনকেই ভেবে নিয়েছেন।
পায়েলঃ- বাহ এখন বল রাস্তায় কোনো সমস্যা হয় নাই ত?
তামিমঃ- সমস্যা বলতে গাড়ি পাচ্ছিলাম না তেমন একটা কিছু কিছু জায়গায় পেয়েছিলাম তারা অল্প একটু এসে আর যাবে না বলেছে এরপর হেটে হেটে আসতে হয়েছে। এছাড়া কিছু কিছু জায়গাতে পুলিশ দেখতে পাই তখন অন্য রাস্তা দিয়ে আসতে হয়েছে। তাই চল্লিশ মিনিটের রাস্তা দেড় ঘন্টা লেগেছে।
পায়েলঃ- তাহলে অনেক কষ্ট হয়েছে আসতে তোমার।
তামিমঃ- বাদ দাও এসব এখন বল বাসার সবাই কখন আসবে?
পায়েলঃ- ইফতার করে তারপর আসবেন।
তামিমঃ- এর আগে যদি এসে যায়?
পায়েলঃ- নাহ আসবে না ইফতার করেই আসবে আমাকে বলেছেন।
তামিমঃ- তুমি যাও নাই কেন?
পায়েলঃ- আমার এই রোযা রেখে বাইরে যেতে ইচ্ছা করছিল না। তাছাড়া এত মানুষ রাস্তায় না বের হওয়া ভালো। আমার ছোটবোন ছোট না হলে তাকেও রেখে যেত আব্বু আম্মু।
তামিমঃ- হ্যাঁ এখন যা অবস্থা বেশি লোক একসাথে হতে দিচ্ছে না রাস্তায়। যাই হোক এখন বল আজকের ইফতারের আইটেম কী কী?
পায়েলঃ- চল রান্নাঘরে দুজনে আজকে ইফতার বানাব।
তামিমঃ- আমি ত রান্না করতে পারি না।
পায়েলঃ- রান্না আমি করব তুমি আমাকে হেল্প কর।
তামিমঃ- আচ্ছা তাহলে চল শুরু করি নাহলে আসর এর আযান দিয়ে দিবে।
পায়েলঃ- হুম চল।
...
এরপর দুজনে মিলে আয়োজন শুরু করে ইফতারের। আজকে তামিম এর পছন্দের সব ইফতার বানাচ্ছে পায়েল।
দুজনের খুনসুটি এবং ভালোবাসা মিশিয়ে ইফতার বানানো শেষ হল। সবকিছু শেষ করতে গিয়ে আসর এর আযান দিয়ে দেয়।
এখন হাতে আর কোনো কাজ নেই তাই তামিম অযু করে নামাযে দাঁড়িয়ে যায়। এদিকে পায়েলও অযু করে এসে নামাযে দাঁড়াবে তখনই বাসার কলিংবেল বেজে উঠে।
কলিংবেল এর শব্দে পায়েল এর ভয় শুরু হয় সে ভাবছে তারা বাবা-মা ফিরে এলো না ত আবার। এদিকে তামিমও নামাজে দাঁড়িয়ে গিয়েছে তাকে এখন লুকাতেও পারবে না।
এদিকে কলিংবেল বেজেই চলেছে এখন উপায় না পেয়ে আস্তে আস্তে দরজার কাছে যায় সে এবং লুকিং গ্লাস দিয়ে বাইরে কে আছে দেখার চেষ্টা করে।
লুকিং গ্লাস থেকে যা দেখল যার ফলে তার বুক কেপে উঠল এবং কলিজা শুকিয়ে যায় ভয়ে। কারণ দরজার ওপাশে তার মা-বাবা এবং ছোটবোন দাঁড়িয়ে আছেন।
এখন সে পড়েছে উভয় সংকটে একদিকে ঘরের ভিতরে তামিম নামায পড়ছে এবং অন্যদিকে দরজার বাইরে তার পরিবার দাঁড়িয়ে আছে।
...
এখন সে পারছে না তামিমকে চলে যেতে বলতে বা লুকিয়ে রাখতে এবং দরজাও বেশিক্ষণ না খুলে থাকা যাবে না তাহলে হুলস্থুল কান্ড ঘটে যাবে।
তাই মনে সাহস নিয়ে দরজা খুলে দেয় পায়েল।
...
দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে পায়েল এর আম্মু জিজ্ঞাসা করেন-
আম্মুঃ- কী হল এতো দেরী করলে কেন দরজা খুলতে?"
পায়েলঃ- অযু করতে গিয়েছিলাম নামায পড়ব তাই দেরী হয়েছে দরজা খুলতে।
আম্মুঃ- আচ্ছা দেখি সরে দাড়াও আমাদেরকে ঢুকতে দাও।
এতক্ষণ দরজার কাছে দাঁড়িয়ে কথা বলছিল পায়েল তার খেয়াল ছিল না যে সে পথ আটকে দাঁড়িয়ে আছে। তাকে সরিয়ে দিয়ে একে একে ঘরে ঢুকল তার আব্বু,আম্মু এবং ছোটবোন।
পায়েল এর মনে এখন ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়। এদিকে তামিম এর এখনও নামায পড়া শেষ হল না। তাই এই সময়টুকু কীভাবে মা-বাবা'কে আটকে রাখা যায় সেজন্য নানাবাড়ির গল্প জুড়ে দিল বাব-মায়ের সাথে।
...
কিন্তু কপাল খারাপ হলে যা হয় মা-বাবার সাথে কথা বলার ফাকে তার ছোটবোন ঘরে চলে গিয়েসে এটি সে খেয়াল করে নি।
হঠাত করে পায়েল এর ছোটবোন চিৎকার দিয়ে উঠে। ছোটবোনের চিৎকার শুনে সবাই ছুটে যায় পায়েল এর ঘরের দিকে আর এদিকে পায়েল ভয়ে শেষ। আজকে ধরা পড়ে গিয়েছে সে এখন বিপদ রয়েছে কপালে।
...
পায়েল এর মা-বাবা ঘরে ঢুকে দেখেন একটি ছেলে নামায পড়ছে অর্থাৎ তারা তামিমকে দেখে ফেলেছেন।
পায়েলও তাদের পিছু পিছু নিজের ঘরে এসে দরজার এক পাশে দাঁড়িয়ে যায় ভয়ে কাউকে কিছু বলতে পারছে না শুধু ঘামছে।
তামিমকে দেখে পায়েল এর বাবা-মা দুজনেই অবাক একে অপরের দিকে তাকাচ্ছেন।
...
নামায শেষে সালাম ফিরিয়ে তামিম দেখতে পায় তার পিছনে পায়েল এর পুরো পরিবার দাঁড়িয়ে আছে।
নামায পড়ার সময় বুঝতে পেরেছিল বাসায় লোকজন ফিরে এসেছে কিন্তু নামায ফেলে ত আর পালিয়ে যাওয়া যায় না তাই নামায আদায় করে যায় এবং ভেবে নেয় যা হবার তখন দেখা যাবে আর এভাবে কত লুকিয়ে থাকবে একদিন না একদিন তাদের সবকিছু জানাতে হবে তাই সেই সময়টা নাহয় এখনই হয়ে যাক।
...
জায়নামায থেকে উঠে দাঁড়িয়ে তামিম, পায়েল এর বাবা এবং মা'কে সালাম দেয়।
এরপর পায়েল এর বাবা জিজ্ঞাসা করেন-
পায়েল এর বাবাঃ-এই ছেলে তুমি কে?
তামিমঃ- জ্বী আংকেল আমার নাম তামিম।
পায়েল এর বাবাঃ-এখানে কী করছ তুমি আর পায়েল এর সাথে তোমার কীসের সম্পর্ক।
তামিমঃ- আমরা দুজন বন্ধু।
পায়েল এর বাবাঃ- পায়েল তুমি এই ছেলেকে ডেকে নিয়ে এসেছ?
পায়েলঃ- আব্বু মানে...
তামিমঃ- নাহ আংকেল আমি নিজেই এসেছি। ওর কোনো দোষ নেই।
পায়েল এর বাবাঃ- শুধু বন্ধু তোমরা না কী অন্য কিছু?
পায়েলঃ- আব্বু আমার কথাটা একটু শুনো।
তামিমঃ- আংকেল ভূল যেহেতু আমি করেছি তাই আমাকেই বলতে দিন।
পায়েল এর বাবাঃ- হ্যাঁ বল কী বলতে চাও?
তামিমঃ- আংকেল আমি পায়েল'কে ভালোবাসি এবং আমাদের তিনবছর যাবত সম্পর্ক।
পায়েল এর বাবাঃ- কী বলছ এসব তিনবছর ধরে সম্পর্ক তোমাদের মাঝে। পায়েল ও কী সত্যি বলছে?
পায়েলঃ- হ্যাঁ আব্বু সব সত্যি।
তামিমঃ- আংকেল বিশ্বাস করুন আমাদের তিনবছর সম্পর্ক কিন্তু আমাদের দুজনের মাঝে কখনও অপবিত্রতা দেখা দেয় নাই। আমাদের দুজনের ভিতর পবিত্র বন্ধন। আমি কিছুদিন পর আমার পরিবার নিয়ে আপনাদের কাছে আসতাম কিন্তু তার আগেই আপ্নারা জেনে ফেলেছেন। এখন ভূল কিছু হলে ক্ষমা করে দিবেন। তবে পায়েল এর কোনো দোষ নেই আমি নিজেই এসেছি এখানে ওকে ইফতার বানাতে সাহায্য করতে। আপনি প্লিজ ওকে কিছু বলবেন না। আপনার মেয়ের প্রতি বিশ্বাস রাখুন সে অনেক পবিত্র।
পায়েল এর বাবাঃ- হুম,তাই বলে এভাবে কেউ না থাকলে কারও বাসায় আসাটা অপরাধ তাও আবার একজন একা মেয়ের কাছে আসাটা। আশেপাশে লোকজন রয়েছে তারা দেখলে খারাপ ভাব্বে।
তামিমঃ- এর জন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী আংকেল এমন ভূল আর হবে না। আমাকে মাফ করে দিবেন। আপনাদের কষ্ট দিয়েছি আমি পারলে ক্ষমা করে দিবেন। আমি এখন চলি।
কথা শেষ করে তামিম পা বাড়ায় বাইরে যাওয়ার জন্য তখনই তাকে পিছন থেকে পায়েল এর বাবা ডাক দেন।
তামিম পিছন ফিরে তাকালে তিনি বলেন "কোথায় যাও? এত কষ্ট করে ইফতার বানিয়েছ এখন ইফতার না করেই চলে যাচ্ছ? এসো আজকে আমরা সবাই মিলে একসাথে ইফতার করব।"
কথাটি শেষ করে তিনি হেসে দেন আর তার হাসি দেখে সবাই হেসে দেয় এরপর সবাই মিলে ইফতারের আয়োজন করে।
এভাবেই পরিপূর্ণ হল এক পবিত্র ভালোবাসার গল্প।
...
এই রমযানে এমনভাবেই পূর্ণতা পাক সকল ভালোবাসার বন্ধনগুলি। প্রিয়জনকে নিয়ে সুন্দরভাবে কাটিয়ে দেই এই রমযান।
সবাইকে জানাই রমযানুল মোবারাক।
#সমাপ্ত..
(ভূলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। গল্পটি সম্পুর্ণ কাল্পনিক। সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন এবং ঘরে থাকুন। সবাইকে পড়ার জন্য ধন্যবাদ।)
Copyright:- May 20,2020 at 12:55 AM.
Maruf Tamim (Author).