মানুষের শরীরের পিঠের দিকটা যতটা সুরক্ষিত, পেটের দিকটা ততটা নয়। এখানে প্রাকৃতিক কিছু ছিদ্র বা দুর্বলতা আছে। কোনো কারণে পেটে বেশি চাপ পড়লে সেগুলো দিয়ে ভেতরের অনেক কিছু বের হয়ে আসতে পারে। এ ধরনের প্রাকৃতিক দুর্বল কেন্দ্র হলো নাভি কিংবা ছেলেদের কুঁচকি। জন্মের আগে নাভির মাধ্যমে মায়ের শরীরের সঙ্গে গর্ভস্থ শিশুর যোগাযোগ থাকে। কিন্তু জন্মের পরও ছিদ্রটি রয়ে যায়। আর ছেলেদের অণ্ডকোষ জন্মের আগে পেটের ভেতর থাকে পরে কুঁচকি দিয়ে অণ্ডথলিতে নেমে আসে। এখানেও তাই একটা পথ রয়ে যায়। এ দুটা ছিদ্রযুক্ত জায়গায় সে জন্য হার্নিয়া বেশি হয়।
হার্নিয়া লাতিন শব্দ, যার অর্থ ছিদ্র। ছিদ্র নাভিতে হলে তাকে বলে আমবিলিক্যাল
হার্নিয়া। আর কুঁচকিতে হলে বলা হয় ইংগুইনাল হার্নিয়া।
এ ছাড়া কোনো অস্ত্রোপচারের পর ক্ষতস্থান দুর্বল থাকলে, সেই দুর্বল দিক দিয়েও হার্নিয়া বেরিয়ে আসতে পারে।
হার্নিয়া হলে চিকিৎসা করাতে হবে। নয়তো এ থেকে নানা ধরনের জটিলতা হতে পারে। যেমন পেটের অন্ত্র বা কোনো প্রত্যঙ্গ হার্নিয়া দিয়ে বেরিয়ে আসতে পারে। অন্ত্র যদি আটকে যায়, তাহলে রোগীর জীবন ঝুঁকির মধ্যেও পড়তে পারে। সঠিক সময়ে হার্নিয়ার চিকিৎসা না করা হলে তা অনেক বড় আর জটিল আকার ধারণ করতে পারে।
হার্নিয়া হলে অনেকেই চিকিৎসার জন্য নানা ধরনের কবিরাজি আর অপচিকিৎসার শরণাপন্ন হন। এতে জটিলতা আরও বাড়ে। তাই একজন অভিজ্ঞ শল্যচিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
চিকিৎসা
হার্নিয়ার চিকিৎসা হলো অস্ত্রোপচার। তবে হার্নিয়ার প্রকৃতি, রোগীর সক্ষমতা, কো–মরবিডিটি যেমন ডায়াবেটিস, স্থূলতা ইত্যাদি বিবেচনা করে সার্জন কখন অস্ত্রোপচার করবেন, সে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন।
বর্তমানে বেশির ভাগ হার্নিয়াই কেটে অথবা আধুনিক যন্ত্রের মাধ্যমে ফেলে দেওয়া যায় যায়। আধুনিক পদ্ধতিতে হার্নিয়ার অস্ত্রোপচার অনেক ব্যয়বহুল।
অস্ত্রোপচারের সময় হার্নিয়ার কনটেন্ট অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়। সেগুলো আবার ভেতরে ঢুকিয়ে দেওয়া যেতে পারে কিংবা কোনো কোনো ক্ষেত্রে কেটেও ফেলা যেতে পারে। এরপর হার্নিয়ার ক্ষতস্থানে একটি সিনথেটিক বা সেমিসিনথেটিক ম্যাশ বসিয়ে দেওয়া হয়। এটি দেখতে অনেকটা মশারির জালের মতো।
তবে বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে, যেমন শিশুদের হার্নিয়া কিংবা জরুরি হার্নিয়া অস্ত্রোপচারের সময় অথবা যদি কোনো নারী গর্ভধারণ করতে চান, তাদের হার্নিয়া ম্যাশ ছাড়া শুধু টিস্যু মেরামতের মাধ্যমে অস্ত্রোপচার করে দেওয়া হয়।
অস্ত্রোপচারের পর যেন সংক্রমণ না হয়, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। কারণ, ম্যাশে সংক্রমণ হয়ে গেলে সেটা রোগী ও চিকিৎসক দুজনের জন্যই ভীষণ ভোগান্তির বিষয়। মূলত ডায়াবেটিসের রোগী বা স্থূলকায় রোগীদের ক্ষেত্রে এ সমস্যা বেশি দেখা যায়। তাই অস্ত্রোপচারের আগে ডায়াবেটিস ও স্থূলতা নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি।
আরেকটা সমস্যা হলো, হার্নিয়া পুনরায় হওয়া। যদিও ম্যাশ ব্যবহারের ফলে এ ঝুঁকি এখন অনেক কমে গেছে। তবে তার জন্য কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে।
প্রতিকার
হার্নিয়ার মতো বিব্রতকর ও জটিল সমস্যা থেকে বাঁচতে চাই নিয়মিত ব্যায়াম আর সুস্থ খাদ্যাভ্যাস। ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এ ছাড়া জোরে চাপ দিয়ে পায়খানা-প্রস্রাব করা যাবে না। জোরে হাঁচি–কাশি দেওয়া থেকেও বিরত থাকার চেষ্টা করা উচিত। আর পেটের যে কোনো অস্ত্রোপচারের পর, বিশেষত সিজারের পর, কিছুদিন বেল্ট ব্যবহার করা ভালো। তাতে ক্ষতস্থানে চাপ কম পড়ে। আর অস্ত্রোপচারের পর মাসখানেক ভারী কিছু না তোলাই উত্তম।
ইদানীং অনেক উঠতি বয়সের যুবক জিমে গিয়ে মাত্রাতিরিক্ত ভারোত্তলন করে থাকেন। এতে হার্নিয়ার সমস্যা হতে পারে। তাই নিজের সামর্থ্যের বেশি ওজন তোলা উচিত নয়।
লেখক: ডা. রেজা আহমদ কনসালট্যান্ট, জেনারেল ও ল্যাপারোস্কপিক সার্জারি, ইবনে সিনা হাসপাতাল সিলেট লিমিটেড, ঢাকা