What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

হলুদের দেশি ভাব (1 Viewer)

ISZyKc5.jpg


হলুদের আয়োজন আর ছোট নেই, ঘরোয়াও নেই; সাজ আর আয়োজনে হয়ে উঠেছে জমকালো। একসময় হলুদের দাওয়াত বিকেলে শুরু হয়ে সন্ধ্যাতেই শেষ হয়ে যেত। আর এখন হলুদের আয়োজন শুরুই হয় সন্ধ্যায়। তবে আয়োজনে পরিবর্তন এলেও এখনো হলুদের আসরে স্বমহিমায় রাজত্ব করছে দেশি উপকরণ। এখনো একই ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে সেই পাটি, বাঁশ কিংবা মাটির ছোট হাতি ও ঘোড়া। তবে এগুলোর উপস্থাপনে এসেছে আধুনিকতার ছোঁয়া।

8KP6J4q.jpg


হলুদের আসরে স্বমহিমায় রাজত্ব করছে দেশি উপকরণ । মডেল : মৌসুম, শাড়ি: পটের বিবি, জ্যাকেট : কিউরিয়াস, গয়না : সিক্স ইয়ার্ডস স্টোরি, সাজ : অরা বিউটি লাউঞ্জ, কৃতজ্ঞতা : গ্র্রান্ড সুলতান গলফ অ্যান্ড রিসোর্টস

বিয়ের সব আয়োজনেই এখন ভিন্ন কিছু করার তাগিদ। হলুদই–বা বাদ যাবে কেন? দেশি উপকরণ ব্যবহার করার মাধ্যমে নতুন অনেক কিছুই করা সম্ভব। অনেকেই মনে করেন বাঁশ কিংবা চট ব্যবহারে অভিজাত ভাব আনা সম্ভব না। ভাবনাটা ভুল। ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের আয়োজকেরা জানান, উপকরণ দেশি হলেও সাজাতে হবে পশ্চিমা ধাঁচে। পিনটারেস্ট বা অন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এ ক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে। ইউরোপের দেশগুলোতে আমাদের দেশি উপকরণে তৈরি বিভিন্ন পণ্য দিয়ে অন্দর সাজানো হয়। তবে মূল জিনিসটির সঙ্গে যোগ করে নেওয়া হয় ছোটখাটো অনুষঙ্গ। যেমন বাঁশের ঝুড়িকে সাদা রং করে টার্সেল লাগিয়ে দিলেই চেহারা বদলে যায়। এ ধরনের ঝুড়ি অনুষ্ঠানের একটি কোনায় রাখলেই সাজের আয়োজনে ভিন্নতা চলে আসবে।

এ ধরনের ঝুড়ি অনুষ্ঠানের একটি কোনায় রাখলেই সাজের আয়োজনে ভিন্নতা চলে আসবে। বাইরের কথা বাদ দিই। দেশের ভেতর থেকেই নেওয়া যায় প্রেরণা। বিজয়ের ৫০ বছর উদ্‌যাপনে জাতীয় সংসদের সামনের বড় গাছগুলোতে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছিল ছোট ছোট লণ্ঠন। এভাবে হলুদসন্ধ্যায় বাঁশ, হোগলার পাতা কিংবা বেতের তৈরি ছোট ছোট শেড বানিয়ে উঁচু কোনো জায়গা থেকে ঝুলিয়ে দেওয়া যায়। মায়াবী পরিবেশ তৈরি হয়ে যাবে। ভেতরে থাকল হলুদ নরম আলো।

1xMut6X.jpg


হলুদের পুরো মঞ্চ শুধু গাঁদা ফুল দিয়েও সাজানো সম্ভব। শাড়ি : হ্যান্ড টাচ

শুধু বাঁশ ব্যবহার করেও একটি মঞ্চ সাজানো সম্ভব। বাঁশের রং বদলে দিলেন। সঙ্গে যোগ করলেন কাচা ও হলুদ গাঁদা। সহজলভ্য জিনিস দিয়েই সাজানো হলো, কিন্তু উপস্থাপন ঠিকভাবে করতে পারলে দেখে মনে হবে দামি কোনো মঞ্চ।

হলুদের পুরো মঞ্চ শুধু গাঁদা ফুল দিয়েও সাজানো সম্ভব। দোলনা থাকলে সেটাকে মঞ্চ বানিয়ে পেঁচিয়ে দিতে পারেন দুই রঙের গাঁদা ফুল দিয়ে। সঙ্গে দিতে পারেন মরিচ বাতি। তৈরি হয়ে যাবে সহজ–সুন্দর মঞ্চ।

QJGS5ZQ.jpg


রঙিন কাগজের ব্যবহারে নান্দনিক মঞ্চসাজ

হলুদের আয়োজনে জমকালোর চেয়ে রঙিন ভাবটাই মূলত তুলে ধরা হয়। হলুদ, কমলা বা লালের ব্যবহার সেখানে থাকবেই। রঙিন পাতলা কাগজ দিয়ে বানানো শিকল, তিনকোনা করে কেটে কাগজ লাগিয়ে, কাগজের ফুল কিনে কিংবা বল বানিয়ে ব্যবহার করা যায়। প্রাণোচ্ছল ভাব নিয়ে আসবে চারদিকে। দাম কিন্তু খুবই কম। সাধারণত গ্রামের বিয়ের উৎসবে এগুলো ব্যবহার করা হয়। তবে শহরের অনুষ্ঠানেও বেশ মানিয়ে যাচ্ছে এখন। রঙিন কাগজের রংগুলোকে ফুটিয়ে তুলতে পেছনে ব্যবহার করতে পারেন চট কিংবা পাটি।

o4NOywu.jpg


সাজ–পোশাক থেকে হলুদের মঞ্চ, সবকিছুতেই দেশজ ছোঁয়া। মডেল : সায়রা, শাড়ি: খুঁত, ব্লাউজ : ভারমিলিয়ন, বেল্ট: পটের বিবি, গয়না : কিউরিয়াস ও সিক্স ইয়ার্ডস স্টোরি।

'একইভাবে টেরাকোটার হাতি, ঘোড়া কিংবা পুতুল ব্যবহার করতে পারেন সেন্টার টেবিলগুলোতে। ভিন্নতা আসবে,' জানালেন ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান এসকের ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর সায়মুল করিম। গাছের লগ ছোট আকারে কেটে নিয়ে টেবিলের ওপর রাখা যায়। চারপাশ ঘিরে থাকল গাঁদা ফুল। লগের ওপর, গাঁদা ফুলের মাঝে থাকল কাচের বয়াম। তার ভেতর থাকতে পারে মোমবাতি বা ফুল।

বর–কনের বসার জন্য হয়তো একটি পাটিই বিছালেন, সেখানে ক্রুশের তৈরি লেইস ব্যবহার করতে পারেন চারপাশে। এমন ছোটখাটো যোগ–বিয়োগই অন্য আর দশটা অনুষ্ঠান থেকে আপনারটাকে আলাদা করে তুলবে। একজনের বাড়িতে একবার বড় আকারের মাটির ঘণ্টা দেখেছিলাম। সারি করে ঝুলিয়ে রাখা ছিল ঢোকার গেটের ওপরে। অপূর্ব সুন্দর সেই সাজ। অনেকক্ষণ পর বুঝলাম সেটা আসলে মাটির সাধারণ টব!

RrCghZw.jpg


খোলা আকাশের নীচেই আয়োজন হচ্ছে হলুদের আর তা জনপ্রিয়তাও পাচ্ছে বেশ।

ত্রয়ীস সিগনেচারের অন্যতম স্বত্ত্বাধিকারী ও ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর রিপতী রিভা জানান, কিছুদিন আগে একটি কাজ করেছি যেখানে প্রতিটা নকশার ছক ছিল ইউরোপিয়ান, কিন্তু উপকরণ ছিল পাট, বাঁশ ইত্যাদি। বাইরের ডিজাইনগুলোকেই দেশি উপকরণ দিয়ে বানিয়ে ফেলা যায়।

মাটির জিনিস, শীতল পাটি, বোতল, পটারি, কলাপাতা, হোগলার পাতা ও ঘুড়ি—সবকিছুই একসঙ্গে আনা যায় সাজানোর সময়। খোলা আকাশের নিচে হলুদের যে আয়োজনগুলো হয়, সেখানে একটি–দুটি উপকরণ দিয়ে সাজালে অসম্পূর্ণ লাগে। মাঝে কৃত্রিম ফুল ব্যবহারের চল দেখা গিয়েছিল, সেটা কমেছে। এখন স্থানীয়ভাবে পাওয়া যাচ্ছে এমন দেশি কাঁচা ফুল বেছে নিচ্ছে সবাই। চৌকির ওপর রং করেও বর–কনের বসার স্থানটি সাজানো যায়।

SpGiSXN.jpg


ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে কনের হাঁটার পথ।

মাটির হাঁড়িতে করে মিষ্টি নেওয়া, শাড়ির ডালা, অনুষ্ঠানস্থলে ঢোকার মুখে ফুল দিয়ে বরণ করে নেওয়া, বাংলা গানে মুখর সন্ধ্যা—এসবই হলুদের আয়োজনকে ভিন্ন করে তোলে। হারিকেনের চিমনির ভেতরে মোমবাতি জ্বালিয়ে বা রঙিন হারিকেন সারি সারি সাজিয়ে হাঁটার পথ তৈরি করে অভ্যর্থনা জানানো যায় বর বা কনেপক্ষকে। মায়াবী এ আলোয় অনুষ্ঠানটাই শুরু হবে অন্যরকম ভালোলাগা নিয়ে। দেশি উপকরণের মাধ্যমে এমন শৈল্পিক উপস্থাপনার হাজারো উপায় আছে। আর আমাদের চারপাশে থাকা অগণিত দেশি উপকরণ দিয়েই এটা করা যায়। এর মধ্যে আছে গর্ব, আছে আনন্দ এবং রুচির প্রতিফলন।

লেখক: রয়া মুনতাসীর
 

Users who are viewing this thread

Back
Top