What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

হঠাৎ বমি, কী করব (1 Viewer)

নানা রোগের উপসর্গ হিসেবে বমি হয়ে থাকে। বদহজমের মতো অতিসাধারণ কারণে যেমন বমি হয়, তেমনি গুরুতর কোনো কারণেও শুরু হতে পারে হঠাৎ বমি। এক–দুবার বমি হওয়ার পর যদি প্রাথমিক চিকিৎসায় সেরে যায় এবং আর কোনো উপসর্গ না থাকে, তাহলে ভয়ের কিছু নেই। কিন্তু বমি এমনই অস্বস্তিকর আর পীড়াদায়ক যে তৎক্ষণাৎ কী করবেন, তা জানা না থাকলে মুশকিল।

কোন বমির কী কারণ

খাবারে বিষক্রিয়া: নানা কারণে হতে পারে খাবারে বিষক্রিয়া। এটা কখনো হয় বিভিন্ন ধরনের জীবাণুর কারণে, আবার অনেক সময় খাবারে বিষাক্ত উপাদান থাকার কারণে। বাইরের কেনা খাবার কিংবা অস্বাস্থ্যকর খাবার (পচা–বাসি, মাছি বসেছে এমন খাবার) খেয়ে থাকলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে খাদ্যে বিষক্রিয়ার উপসর্গ হিসেবে বমি হতে পারে। সঙ্গে থাকতে পারে পেটব্যথা, পাতলা পায়খানা কিংবা মৃদু জ্বর।

লিভারের প্রদাহ: বমির অন্যতম কারণ লিভারের প্রদাহ বা হেপাটাইটিস। বমির সঙ্গে পেটের ডান দিকে ওপরের অংশে ব্যথা, খাবারে অরুচি, চোখ বা প্রস্রাব হলুদ হয়ে যাওয়ার মতো লক্ষণও দেখা দিতে পারে। থাকতে পারে জ্বর।

704Q2fp.jpg


নানা রোগের উপসর্গ হিসেবে বমি হয়ে থাকে, ছবি: সংগৃহীত

পিত্তথলির প্রদাহ: পিত্তথলির প্রদাহ হলে পেটের ওপরের অংশে (বুকের নিচ বরাবর) কিংবা পেটের ডান দিকে ওপরের অংশে ব্যথা হতে পারে। ব্যথা ছড়িয়ে যেতে পারে কাঁধের দিকে। বমি তো হতেই পারে। খাওয়ার পর বিশেষ করে ভারী কিছু খাওয়ার পর ব্যথা ও বমি বাড়ে।

অগ্ন্যাশয়ের প্রদাহ: অগ্ন্যাশয়ে প্রদাহ হলে বমি ছাড়াও পেটের ওপরের অংশে প্রচণ্ড ব্যথা হয়, যা পেছনে পিঠে ছড়িয়ে যেতে পারে। থাকতে পারে প্রচণ্ড জ্বরও। খুব দ্রুত অসুস্থ হয়ে পড়ে রোগী।

অ্যাপেন্ডিক্সের প্রদাহ: অ্যাপেন্ডিসাইটিসে আক্রান্ত ব্যক্তির নাভির গোড়ায় কিংবা তলপেটের ডান দিকে ব্যথা, ক্ষুধামান্দ্যর সঙ্গে বমিও থাকতে পারে।

গ্যাসের সমস্যা: পেপটিক আলসারজনিত সমস্যায়ও বমি হতে পারে। সঙ্গে থাকতে পারে বুকে জ্বালাপোড়া, খাওয়ার পর গলা জ্বলা, ঢেকুর ওঠা এবং পেট ভার অনুভূত হওয়ার মতো সমস্যাও।

মূত্র ও মূত্রথলির সংক্রমণ: কেবল পরিপাকতন্ত্রের সমস্যায় বমি হয়, তা নয়, বরং প্রস্রাবে বা মূত্রে সংক্রমণ হলে তলপেটে ব্যথা, ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া, কাঁপুনিসহ জ্বর যেমন হতে পারে, তেমনি হতে পারে বমিও। মূত্রনালি ও মূত্রতন্ত্রের ওপরের অংশে প্রদাহ হলেও বমিসহ কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসতে পারে। কোমরের দুই পাশে ব্যথা হতে পারে।

দীর্ঘমেয়াদি কিডনি রোগ: দীর্ঘমেয়াদি কিডনি রোগে বা কিডনি ফেইলিউরে শরীরে ক্রমাগত বর্জ্য পদার্থ জমা হতে থাকে বলে জটিলতা বাড়ে। এ ধরনের রোগীর ক্ষুধামান্দ্য ও বমির প্রবণতা দেখা যায়।

মস্তিষ্কের রোগে বমি: মস্তিষ্কের গুরুতর সমস্যায় বমি হতে পারে একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ। মস্তিষ্কের প্রদাহ (এনকেফেলাইটিস), মস্তিষ্কের পর্দা বা আবরণীর প্রদাহ (মেনিনজাইটিস), এমনকি মস্তিষ্কে টিউমার হলেও বমি হতে পারে। মাথাব্যথার (বিশেষত সকালবেলার তীব্র মাথাব্যথা) সঙ্গে বমি হলে অবশ্যই এমনটা সন্দেহ করতে হবে। কখনো রোগীর জ্ঞানের মাত্রার তারতম্য হতে পারে, হতে পারে খিঁচুনিও। প্রদাহ হয়ে থাকলে জ্বর হতে পারে।

গর্ভাবস্থা: বিবাহিত নারীর ক্ষেত্রে ভিন্ন একটি সম্ভাবনার কথা মাথায় রাখতে হবে। শেষবার মাসিক হওয়ার পর কত দিন পেরিয়ে গেছে, তা হিসাব করতে হবে। অনেক সময়ই নারীরা নিজের খেয়াল রাখার সময় পান না। গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাস বমি ভাব ও বমি হওয়াটা স্বাভাবিক।

মানসিক: অনেক সময় কোনো কারণ ছাড়াই কেউ কেউ বমির সমস্যায় ভুগে থাকেন। বিশেষ করে কম বয়সী মেয়েদের বা শিশুদের ক্ষেত্রে এমনটা বেশি দেখা যায়। একে বলে সাইকোজেনিক বমি। এসব ক্ষেত্রে চিকিৎসক সম্ভাব্য কোনো কারণ খুঁজে না পেলে এবং মানসিক অস্থিরতা বা অন্য কোনো মানসিক যোগসূত্র পেলে মানসিক সমস্যাকে বিবেচনায় নিয়ে থাকেন।

কী করবেন

  • বমি হলে শরীর থেকে প্রচুর লবণ ও পানি বেরিয়ে যায়। তাই বমি হলেই স্যালাইন পানি পান করতে হবে। তা না হলে রোগী খুব দুর্বল হয়ে পড়বেন। পানিশূন্যতা দেখা দেবে। অনেকের ধারণা ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ বা কিডনি রোগীদের স্যালাইন খাওয়া যাবে না, ধারণাটি ঠিক নয়। পানি ও লবণের অভাব যে করেই হোক পূরণ করতে হবে।
  • একবারে স্যালাইন পানি পান না করতে পারলে একটু পরপর অল্প অল্প করে নিতে হবে। স্যালাইন যাতে বমির মাধ্যমে বের না হয়ে যায়, সে জন্য দরকার হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে বমির ওষুধ আগে খেয়ে নিন।
  • সাধারণ সমস্যায় এক-দুবার বমি হওয়ার পর স্যালাইন খেলেই খানিকক্ষণ পর রোগী সুস্থ বোধ করেন। সাধারণ বমির ওষুধে সেরেও যায়। তবে বারবার বমি হতে থাকলে হাসপাতালে নেওয়া দরকার। খাবার স্যালাইনও সে ক্ষেত্রে বের হয়ে আসতে থাকে। তাই প্রয়োজনে রোগীকে শিরাপথে স্যালাইন দিতে হবে।
  • হাসপাতালের জরুরি বিভাগে বমি কমানোর ইনজেকশন দিয়ে কিছুটা উপশম করার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু ইতিহাস জেনে ও প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বমির কারণ অনুসন্ধান করে তারপর সেটার চিকিৎসা শুরু হবে। কোনো কোনো ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায়ও বমি হতে পারে। তাই সাম্প্রতিক সময়ে কোনো ওষুধ সেবন করে থাকলে সেটি চিকিৎসককে জানাতে ভুলবেন না।

লেখক: ডা. মো. মতলেবুর রহমান | সহযোগী অধ্যাপক, মেডিসিন বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল | অনুলিখন: ডা. রাফিয়া আলম
 

Users who are viewing this thread

Back
Top