কিশোর-কিশোরীর বৃদ্ধি ও বিকাশে প্রভাবিত করে, এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে পুষ্টি। শিশুকাল থেকে যৌবনকালে প্রবেশের একটি অরৈখিক প্রক্রিয়া হলো বয়ঃসন্ধিকাল বা কৈশোরকাল। এ সময় জৈবিক, শারীরিক, মানসিক—তিন অবস্থারই পরিবর্তন ঘটে থাকে। জন্মের পর থেকে বৃদ্ধির দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পরিবর্তন হয় এই কৈশোরে। সে জন্য এ সময় পর্যাপ্ত পরিমাণে সুষম খাদ্যনির্দেশিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
বিগত দশকের তুলনায় এখন মেয়েরা অল্প বয়সে কৈশোরে প্রবেশ করেছে। অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন, বিভিন্ন প্রক্রিয়াজাত খাবার গ্রহণ, উচ্চ চর্বিযুক্ত ফাস্ট ফুড–জাতীয় খাবার খাওয়া, অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ, সারা দিন তেমন কোনো শারীরিক কার্যকলাপ না করা ইত্যাদি কারণেই মূলত এই পরিবর্তন ঘটেছে। অতিরিক্ত ওজনসম্পন্ন শিশুরা বয়ঃসন্ধিকালে দ্রুত প্রবেশ করতে পারে।
কিছু গবেষণার তথ্য বলছে, অতিরিক্ত ওজনের ফলে অনেক মেয়ে বয়ঃসন্ধিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে বাধার সম্মুখীন হচ্ছে ও ছেলেদের বিলম্ব হচ্ছে। বয়ঃসন্ধির অগ্রগতি পুষ্টি দ্বারা প্রভাবিত। সব সুষম খাবারের (কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফ্যাট, ভিটামিন, মিনারেল ও পানি) পাশাপাশি প্রোটিন, আয়রন, জিঙ্ক, ফোলেট ও ক্যালসিয়াম–জাতীয় খাবারের পরিমাণ বাড়ানো প্রয়োজন। অতি পুষ্টিতে যেমন জটিলতা তৈরি হয়, তেমনি অপুষ্টিতে কৈশোরের অগ্রগতিতে বাধা প্রদান করে। তাই কিশোর বয়সে ছেলেমেয়েদের খেতে হবে পুষ্টিকর খাবার।
- বয়ঃসন্ধিকালে কিশোরদের সাধারণত শারীরিক চাহিদাভেদে ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৮০০ কিলোক্যালরি খাদ্যশক্তি প্রয়োজন আর কিশোরীদের দরকার হয় ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ২০০ কিলোক্যালরি।
- বাইরের ও স্বাস্থ্যকর খাবারের পরিবর্তে শাকসবজি, ফলমূল, বাদাম ও বিচিজাতীয় খাবার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। সকালের নাশতায় বেশির ভাগ ছেলেমেয়ে খাবার গ্রহণ করতে চায় না। এই অভ্যাস ঠিক নয়, বরং সকালে বিভিন্ন স্বাস্থ্যকর আকর্ষণীয় খাবার, যেমন রুটি, সবজি ও ডিম; ওটস, দুধ ও ফলজাতীয় খাবার, বিভিন্ন প্রকার স্মুদি ইত্যাদি রাখুন এই বয়সীদের সকালের নাশতায়।
- খাদ্যতালিকায় স্বাস্থ্যকর ফ্যাট রাখতে হবে। ত্বক ও চুল ভালো রাখে ফ্যাট। ভিটামিন এ, ডি, ই, কে চর্বিতে দ্রবণীয়, সে জন্য সেগুলো কার্যকর রাখতেও ফ্যাট প্রয়োজন। বাদাম ও বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছ ওমেগা–৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের চমৎকার উৎস, যা মস্তিষ্কের বিকাশ সঠিকভাবে করতে কার্যকর ভূমিকা রাখে।
দুধ হাড় ও দাঁত মজবুত হতে সাহায্য করে
- সূর্যের আলোতে বেড়ে ওঠা হাঁস-মুরগির ডিম, গরুর দুধ ভিটামিন ডি-এর উৎস। পাশাপাশি দুধ ও দুধজাতীয় খাবার সামগ্রিক ক্যালসিয়ামের উৎস, যা হাড় ও দাঁত মজবুত রাখতে সাহায্য করে। মাছ, মাংস, ডিম, বাদাম, বিচিজাতীয় খাবার, কলিজা ইত্যাদি ফলিক অ্যাসিড, আয়রন ও জিঙ্কের উৎস। রক্তে ফলিক অ্যাসিডের পরিমাণ কমে গেলে একধরনের রক্তস্বল্পতা দেখা দেয়। বহুদিন ধরে জিঙ্কের অভাব থাকলে কৈশোরে এসে ছেলেমেয়েদের দৈহিক বৃদ্ধি ও পরিণতি পেতে অসুবিধা হয়। আয়রনের অভাব হলে দেহে রক্তস্বল্পতা দেখা দেয়। কিশোরদের মাংসপেশির গঠন ও মেয়েদের মাসিকের সময় শরীর থেকে বের হয়ে যাওয়া আয়রনের ঘাটতি পূরণ করতে আয়রন–জাতীয় খাবার গ্রহণ করতে হবে।
- এ বয়সে নিয়মিত ৪০ থেকে ৪৫ মিনিট ব্যায়াম করতে হবে। এতে রক্তসঞ্চালনের প্রক্রিয়া সঠিক রাখতে সাহায্য করবে।
- নিয়মিত ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুমাতে হবে। প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ গ্লাস পানি পান করা বা তরল খাবার গ্রহণ করা বাধ্যতামূলক, এতে শরীর থেকে টক্সিন বের হয়ে যেতে সাহায্য করবে। মানসিক চাপমুক্ত রাখতে হবে কিশোর–কিশোরীদের। হাসিখুশি থাকলে তাদের স্বাভাবিক বেড়ে ওঠা নিশ্চিত হবে।
লেখক: নাহিদা আহমেদ, পুষ্টিবিদ