What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

ডেভিন ক্যাসেলের স্মৃতি (1 Viewer)

Bergamo

Forum God
Elite Leader
Joined
Mar 2, 2018
Threads
9,649
Messages
117,051
Credits
1,241,096
Glasses sunglasses
Berry Tart
Statue Of Liberty
Profile Music
Sandwich
Gw9J4sQ.jpg


দেড় বছর আগে জরুরি কাজে একবার ভিয়েনায় যেতে হয়েছিল। স্লোভেনিয়ার টেম্পোরারি রেসিডেন্ট পারমিট কার্ড রিনিউ করার জন্য স্থানীয় ইমিগ্রেশন অফিসে আবেদন করতে গেলে তারা আমাকে দেশ থেকে জন্মনিবন্ধন ও পুলিশ ক্লিয়ারেন্স কপি জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেয়। সেসব জোগাড় করে যথাস্থানে তা জমা দেওয়ার পর আমাকে জানানো হয়, ১৯৬১ সালে স্বাক্ষরিত হেগ অ্যাপোস্টাইল কনভেনশন চুক্তিতে বাংলাদেশের নাম ছিল না। তাই আমাকে প্রথমে ভিয়েনার বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে আমার কাগজপত্র সত্যায়িত করাতে হবে। এরপর স্লোভেনিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আমার ডকুমেন্টের বৈধতা মিললে তবেই সেসব কাগজপত্র টেম্পোরারি রেসিডেন্ট পারমিট কার্ড রিনিউয়ের জন্য বিবেচনা করবে।

XErNjHw.jpg


দুর্গের জাদুঘরে রাখা সামগ্রী

কী আর করা? অনিচ্ছা সত্ত্বেও তাই ভিয়েনায় যেতে হয়। এর আগেও কয়েকবার ভিয়েনাতে গিয়েছি। তাই ভাবলাম, এবার যদি ভিয়েনা ছাড়াও স্লোভাকিয়ার রাজধানী ব্রাতিস্লাভায় গেলে মন্দ হয় না। যেই ভাবা সেই কাজ।

এখানে একটু বলে রাখা ভলো, স্লোভাকিয়া পূর্ব ইউরোপের একটি নবীন দেশ। আয়তন মাত্র ১৮ হাজার ৮৫৯ বর্গমাইল। ১৯৯৩ সালের ১ জানুয়ারি এর জন্ম। চেকোস্লোভাকিয়া ভেঙে চেক রিপাবলিক ও স্লোভাকিয়া নামের দুটি স্বাধীন রাষ্ট্রের সৃষ্টি।

SpZN9QR.jpg


ব্রাতিস্লাভার রাস্তায় পর্যটকের ভিড়, ছবি: উইকিপিডিয়া

দানিয়ুব ও মোরাভা—এ দুটি নদীর তীরে অবস্থিত ব্রাতিস্লাভা পৃথিবীর একমাত্র রাজধানী শহর হিসেবে দুটি পৃথক দেশ অস্ট্রিয়া ও হাঙ্গেরির সঙ্গে সীমানা ভাগাভাগি করেছে। সড়কপথে ব্রাতিস্লাভার সঙ্গে চেক রিপাবলিকের রাজধানী প্রাগের দূরত্ব ২১১ মাইল, হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্টের দূরত্ব ১২৪ মাইল এবং অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনার দূরত্ব মাত্র ৫০ মাইল। তাই বেশির ভাগ দর্শনার্থী যখন ভিয়েনা, প্রাগ কিংবা বুদাপেস্টের মতো রাজধানী শহর ভ্রমণের পরিকল্পনা করেন, এক ফাঁকে তাঁরা কিছুটা সময় ব্রাতিস্লাভার জন্য বরাদ্দ রাখেন। আমিও এর ব্যতিক্রম ছিলাম না।

ব্রাতিস্লাভায় আসার আগে অনেকে আমাকে পরামর্শ দিয়েছিল ডেভিন ক্যাসেল ভ্রমণের জন্য। সমগ্র পূর্ব ইউরোপের সবচেয়ে দর্শকনন্দিত স্থানগুলোর তালিকায় ডেভিন ক্যাসলকে ওপরের দিকেই রাখা হয়। তাই প্রথমবার ব্রাতিস্লাভায় পা দিয়ে ডেভিন ক্যাসেল যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। মুঠোফোনের অ্যাপ থেকে বোল্টের ট্যাক্সি ভাড়া নিয়ে সরাসরি ব্রাতিস্লাভার সেন্ট্রাল বাসস্টেশন থেকে প্রায় ১১ মাইল দূরত্বের সেই প্রাসাদে পৌঁছে যাই মাত্র ২০ মিনিটে। রওনা হই। মাত্র ১১ ইউরো ভাড়া মিটিয়ে আমার মনে হয়েছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত অন্যান্য শহরের তুলনায় ব্রাতিস্লাভাতে পরিবহন ব্যয় কম।

S74NQu3.jpg


দুর্গ থেকে দেখা ছবির মতো গ্রাম

ক্যাসেলের ভেতরে প্রবেশ করতে হলে গুনতে হয় পাঁচ ইউরো দর্শনী। তবে স্টুডেন্ট আইডি কার্ড থাকায় মাত্র আড়াই ইউরো দর্শনী দিয়েই ঢুকে পড়ি দুর্গের ভেতর।
মূল ক্যাসেলের ভেতরে প্রবেশ করে চোখ ছানাবড়া হয়ে যায়। কিছুক্ষণের জন্য আমি ফিরে যাই সেই অতীতে। ক্যাসেল থেকে আশপাশের গ্রামগুলোকে ছবির মতো সুন্দর মনে হচ্ছিল। পাহাড়ের ঢাল বেয়ে নেমে আসা গ্রামগুলোর দিকে তাকিয়ে বন্দে আলী মিয়ার সেই বিখ্যাত কবিতার কথা মনে পড়ে যায়:
'আমাদের ছোট গাঁয়ে ছোট ছোট ঘর, /থাকি সেথা সবে মিলে নাহি কেহ পর।/ পাড়ার সকল ছেলে মোরা ভাই ভাই, /এক সাথে খেলি আর পাঠশালে যাই।'

কাউন্টার থেকে টিকিট কেনার সময় ট্রাভেল ব্রোশিওর চেয়ে নিয়েছিলাম। ক্যাসেলে প্রবেশের পর তাই কয়েকবার তার ওপর চোখ বুলিয়ে নিই।

4V5RmBr.jpg


ডেভিন ক্যাসেল

ঠিক কবে এ ক্যাসেল নির্মিত হয়েছিল, সে বিষয়ে এখনো প্রত্নতাত্ত্বিকেরা চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারেননি। তবে ৮৬৪ সালে ফ্রান্সিয়ার রাজা প্রথম লুইয়ের শাসনামলে এক লিখিত বিবরণীতে প্রথম এ দুর্গের বর্ণনা পাওয়া যায়। ঐতিহাসিক সূত্র অনুযায়ী, দানিয়ুব ও মোরাভা নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা বাণিজ্যিক পথের ওপর নজরদারির জন্য স্থানীয় অধিবাসীরা নাকি এই দুর্গ নির্মাণ করেছিলেন। পাশাপাশি বহিঃশত্রুর আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য এটি স্থানীয় জনসাধারণের মধ্যে নিরাপত্তাবেষ্টনী হিসেবে কাজ করত। অবশ্য প্রত্নতত্ত্ববিদদের মতে, নিওলিথিক যুগ থেকেই ডেভিন ক্যাসেলসহ আশপাশের বিভিন্ন স্থানে জনবসতি গড়ে উঠেছিল। এ জন্য তাঁরা ডেভিন ক্যাসেলকে নব্য প্রস্তর যুগের অন্যতম নিদর্শন হিসেবে বিবেচনা করতে চান।

পাথরের তৈরি ডেভিন ক্যাসেল বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পর্যটকদের আকর্ষণ করে। অবশ্য প্রত্নতত্ত্ববিদদের মতে, প্রথম দিকে কাঠ দ্বারা এ ক্যাসেলের মূল কাঠামো নির্মাণ করা হয়েছিল। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ক্যাসেলের বেশ কিছুটা অংশ ক্ষয়প্রাপ্ত হয়েছে।
ডেভিন ক্যাসেলকে আমার কাছে এক আশ্চর্য জাদুপাড়া মনে হয়েছে, যার পরতে পরতে রয়েছে ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সৌরভ। সেখানে দাঁড়িয়ে ক্ষণিকের জন্য নিজেকে মনে হচ্ছিল কোনো পৌরাণিক চলচ্চিত্রের দৃশ্যপটের অংশ। একসময় এখানে মানুষের পদচারণ ছিল। ক্যাসেলের ভেতর ছড়িয়ে–ছিটিয়ে থাকা ধ্বংসাবশেষগুলো যেনও অতীত দিনের সেসব স্মৃতিকে স্মরণ করিয়ে দেয়। আজও ক্যাসেলের ভেতরে আদিম যুগে ব্যবহৃত কুয়ার দেখা মেলে। মোটামুটিভাবে বলাই যায় যে ডেভিন ক্যাসেলকে ঘিরে সেই প্রাচীনকাল থেকে ছোট এক জনপদ গড়ে উঠেছিল। মানুষের বসতির সঙ্গে সঙ্গে তাই সেখানে ধর্মীয় উপাসনালয়সহ বিভিন্ন ধরনের সামাজিক প্রতিষ্ঠানও তৈরি হয়েছিল। ক্যাসেলের অভ্যন্তরের জাদুঘরে সাজানো আছে প্রাচীনকালে এ অঞ্চলের অধিবাসীদের বিভিন্ন নিদর্শন।

নিসর্গপ্রেমীদের জন্য ডেভিন ক্যাসেলে বাড়তি পাওনা হিসেবে রয়েছে ক্যাসলের গা ঘেঁষে বয়ে চলা দানিয়ুব নদীর অপার সৌন্দর্য। এ ক্যাসলের খুব কাছেই দানিয়ুব ও মোরাভা মিলিত হয়েছে। নদীর বয়ে চলার শব্দ কিছুক্ষণের জন্য যে কাউকেই মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখবে। মাঝেমধ্যে রিভার ক্রুজও দেখা যাবে। এসব ক্রুজে রোমানিয়া কিংবা ইউক্রেন থেকে যাত্রা করে স্লোভাকিয়া হয়ে অস্ট্রিয়াতে যাওয়া যায়। নদীর দুধারে রয়েছে ছোট ছোট বন। শরৎ আসায় এখানকার বেশির ভাগ গাছের পাতা হলুদ কিংবা উজ্জ্বল লাল বর্ণ ধারণ করে।

NL3ZAWm.jpg


বয়ে চলেছে দানিয়ুব

কমিউনিস্ট শাসন থেকে বাঁচার জন্য স্লোভাকিয়ার অনেক নাগরিক এই নদী পাড়ি দিয়ে অস্ট্রিয়াতে পৌঁছানোর চেষ্টা করেছে। অনেকে পেরেছেন; আবার অনেকের সলিল সমাধি হয়েছে। এসবেরই সাক্ষী হয়ে আজও বয়ে চলেছে দানিয়ুব।

sbHx8Il.jpg


ভেড়াকে ঘাস খাওয়াচ্ছেন লেখক

ক্যাসেল থেকে বের হতে না হতেই একপাল নাদুসনুদুস ভেড়ার দেখা মেলে। স্থানীয় গ্রামবাসী পরম যত্নে এসব ভেড়াকে লালন–পালন করেন। আমাকে দেখামাত্র সাদামাটা পোশাক পরিহিত এক গ্রামবাসী আমার হাতে কিছু ঘাস ধরিয়ে দিলেন। ভেড়ার পালের দিকে হাত বাড়াতেই একটি ভেড়া এসে আমার হাত থেকে সম্পূর্ণ ঘাস মুখে পুরে নিল। গ্রামবাসী আমার দিকে তাকিয়ে হাসতে লাগলেন।

দুর্গ থেকে বের হয়ে আশপাশের কয়েকটি গ্রাম দেখার সিদ্ধান্ত নিই। স্লোভাক লোকশিল্পের সমঝদার। তাদের গ্রামগুলোতে ঘুরে বিষয়টি স্পষ্ট হয়। গ্রামের বেশির ভাগ বাড়ি কাঠ দিয়ে তৈরি। প্রাচীন বেশ কিছু বাড়িতে কাঠের দারুণ সব নকশা দেখা যায়। এসব বাড়ির বাইরের দিকটা কালো কিংবা বাদামি রঙের। তার ওপর সাদা রঙের নানা আকৃতির নকশা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।

4Z4sDRf.jpg


নকশা আঁকা কাঠের বাড়ি

জীবনে দেখা সবচেয়ে সুন্দর ক্যাসেলগুলোর মধ্যে ডেভিন ক্যাসেল একটি। ব্রাতিস্লাভা ভ্রমণে আসা বেশির ভাগ পর্যটকই এই শহরকে সাদামাটাই বলে থাকেন। আমারও সেটা মনে হয়েছে। তবে এই সাধারণের মধ্যে অসাধারণ হলো ডেভিন ক্যাসেল। মাঝে মাঝে সেই ভ্রমণ আমাকে স্মৃতিমেদুর করে। ভাবি, অতীতের সেই দিনগুলোতে সেখানকার মানুষের জীবন কতই না সুন্দর ছিল।

* লেখক: রাকিব হাসান | শিক্ষার্থী, দ্বিতীয় বর্ষ, ব্যাচেলর অব সায়েন্স ইন ফিজিকস অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজিকস, ইউনিভার্সিটি অব নোভা গোরিছা, স্লোভেনিয়া।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top