ছোট ছোট পার্টের ব্লকের খেলনাটা দেখেই ভালো লেগেছিল শুভ্রার। মনে হয়েছিল, দুই বছরের মেয়ে সমৃদ্ধি ওটা দিয়ে খেলতে নিশ্চয়ই খুব পছন্দ করবে। কিন্তু কে জানত, সেটা ওর বয়সের জন্য উপযোগী না। প্যাকেটের গায়ে লাগানো স্টিকারও চোখে পড়েনি তাঁর।
আবার তিন বছর বয়সী রামিনের জন্য সাইকেল আনার পর দেখা গেল সে প্যাডেলই করতে পারছে না। কারণ, ছোট পা প্যাডেল পর্যন্ত যাচ্ছেই না। এমন সব ঘটনা ঘটে প্রায়ই। বয়স অনুযায়ী উপযোগী নয়, এমন খেলনা শিশুর হাতে দিলে হিতে বিপরীত হওয়ার আশঙ্কা থাকে খানিকটা। যেমন ছোট ছোট অংশ মেলানো কোনো খেলনা তিন বছরের কম বয়সী শিশুর হাতে দিলে দেখা যায় সে সেগুলো নিয়েই মুখে দিয়ে বসে। ফলে গলায় আটকে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। অনেক খেলনার ছোট অংশ শিশু খুলে ফেলেও মুখে দিতে পারে। শিশু যদি একা একা খেলা করতে থাকে, তখন এ ধরনের সমস্যাগুলো বেশি হয়, এমনটাই বলছিলেন বই এবং শিক্ষামূলক খেলনা নিয়ে কাজ করা টয়োময় অনলাইন পেজের স্বত্বাধিকারী শাহীরা সুলতানা।
আবার দেখা যায়, আলাদা আলাদা বয়সের জন্য আলাদা আলাদা ধরনের সাইকেল বা খেলনা গাড়ি থাকে। তার আগেই যদি শিশুকে বড় বয়সের খেলনা গাড়ি বা সাইকেল দিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে দেখা যাবে শিশু সেসব চালাতে পারবে না বা গতি সামলাতে না পেরে দুর্ঘটনা ঘটাবে। শাহীরা সুলতানা বললেন, খেলনা কিনে দেওয়ার ক্ষেত্রে আরেকটি ভাবনার বিষয় হলো শিশু তা ব্যবহার করতে পারবে কি না। ওর বয়সী শিশুর খেলনা নিয়ে খেলার স্কিল আছে কি না। না থাকলে খেলনা তার উপযোগী হবে না। তবে বড় হয়ে গেলেও যদি ছোট বয়সের খেলনা নিয়ে শিশুর আগ্রহ থাকে, তাহলে শিশু তা নিয়ে খেলতেই পারে।
সে জন্য বয়স অনুযায়ী খেলনা দেওয়ারই পক্ষে বারডেমের শিশু বিভাগের জ্যেষ্ঠ চিকিৎসা কর্মকর্তা ফাহমিদা রহমান। তিনি বলেন, বয়স অনুযায়ী ঠিকঠাক খেলনা পেলেই শিশুর গঠন ঠিকমতো হবে। একেক বয়সে একেক ধরনের উন্নয়ন হয় শিশুর। এক বছরের শিশু যে গাড়ি নিয়ে খেলতে পারবে, সে তার থেকে বড় বয়সীদের জন্য বানানো গাড়ি নিয়ে খেলতে পারবে না। সে তো ওই গাড়ি চালাতেই পারবে না। লেগো সেটেও বয়স লেখা থাকে। একেক বয়সে একেক খেলনা ভালো লাগবে, একেক বয়সে একেক ধরনের রং ভালো লাগবে, শিশুর জন্য সেটাই খুব স্বাভাবিক।
তাই খেলনা কেনার আগে কোন বয়সী শিশুর জন্য উপযোগী, সেই নির্দেশনা জেনে নেওয়াই ভালো।
লেখক: শর্মিলা সিনড্রেলা, ঢাকা