সন্তান নেওয়ার আগেই কারও কারও উচ্চ রক্তচাপ ধরা পড়তে পারে। কারণ, আজকাল অপেক্ষাকৃত কম বয়সীদের মধ্যেও উচ্চ রক্তচাপ দেখা দিচ্ছে। অতি লবণযুক্ত ফাস্ট ফুড, প্রক্রিয়াজাত খাবার, ওজন বৃদ্ধি, অতিরিক্ত মানসিক চাপ ও মাদক সেবনের কারণে এই প্রবণতা বেড়েছে। আবার কেউ হয়তো প্রথম গর্ভকালে উচ্চ রক্তচাপে ভুগেছেন, যা পরে আর স্বাভাবিক হয়নি।
সন্তান নেওয়ার পরিকল্পনা করার সময় রক্তচাপ স্বাভাবিক আছে কি না, তা সবারই দেখে নেওয়া উচিত। ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ উচ্চ রক্তচাপেরই কোনো নির্দিষ্ট কারণ নেই। যাঁদের উচ্চ রক্তচাপের নির্দিষ্ট কোনো কারণ নেই, তাঁদের সারা জীবন উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ খেতে হয়। যাঁদের নির্দিষ্ট কারণ পাওয়া যায়, তাঁদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসার পর রক্তচাপ স্বাভাবিক হয়ে আসে। তখন আর ওষুধের দরকার না–ও হতে পারে।
সন্তান নেওয়ার প্রস্তুতিকালে উচ্চ রক্তচাপ ধরা পড়লে অবশ্যই সতর্ক হতে হবে। প্রথমেই দেখতে হবে, উচ্চ রক্তচাপের কোনো নির্দিষ্ট কারণ আছে কি না। এ ক্ষেত্রে কয়েকটি সমস্যার দিকে নজর দেওয়া জরুরি। সেগুলো হলো, বংশগত কিডনি রোগ, কিডনির প্রদাহ, ত্রুটিপূর্ণ কিডনি, কিডনির রক্তনালির সমস্যা বা কিডনির টিউমার ইত্যাদি। জন্মগতভাবে শরীরের প্রধান রক্তনালির সংকোচন, জন্মগত কিছু হৃদ্রোগ, জন্মগত হৃৎযন্ত্রের ভালভের অসুখ উচ্চ রক্তচাপের কারণ। কিছু হরমোনজনিত সমস্যা থেকেও এটা হতে পারে। থাইরয়েড হরমোনজনিত সমস্যা কিশোরী-তরুণীদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। এ ছাড়া মস্তিষ্কের টিউমার বা জন্মগত ত্রুটি, মাদক সেবন, লুপাস, রক্তনালির প্রদাহ ও দীর্ঘদিন স্টেরয়েড–জাতীয় ওষুধ সেবন থেকেও হতে পারে উচ্চ রক্তচাপ। তাই গর্ভধারণের পরিকল্পনার আগে কারও উচ্চ রক্তচাপ ধরা পড়লে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
যাঁরা এসব কারণ ছাড়াই উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন অথবা আগের গর্ভকালীন উচ্চ রক্তচাপ স্বাভাবিক হয়নি, তাঁদেরও সন্তান নেওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। কারণ, অনেক উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ গর্ভকালীন ব্যবহার করা যায় না। তাতে গর্ভের শিশুর ক্ষতি হতে পারে। গর্ভকালীন উচ্চ রক্তচাপের জন্য নির্দিষ্ট নিরাপদ ওষুধ রয়েছে। গর্ভধারণের পরিকল্পনা করলে চিকিৎসক প্রয়োজনমতো ও সময়মতো ওষুধ বদলে দিতে পারেন।
অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় উচ্চ রক্তচাপ মা ও গর্ভস্থ শিশু—উভয়ের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। গর্ভকালীন মায়ের পা ফোলা, শরীরে পানি জমা, মাথাব্যথা, শ্বাসকষ্ট, হার্ট ফেইলিওর, রক্তক্ষরণ, খিঁচুনি ইত্যাদি হতে পারে। প্রি-একলাম্পসিয়া এবং একলাম্পসিয়ার প্রধান কারণ উচ্চ রক্তচাপ। উচ্চ রক্তচাপজনিত গর্ভকালীন জটিলতায় গর্ভের শিশুর বৃদ্ধি ব্যাহত হতে পারে। চিকিৎসকের পরামর্শমতো চললে এবং সঠিক ওষুধ ব্যবহার করে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখলে নিরাপদ গর্ভধারণ সম্ভব হয়। এ সময় নিয়মিত চেকআপে থাকলে গর্ভকালীন অনেক জটিলতাও এড়ানো যায়।
লেখক: ডা. শরদিন্দু শেখর রায়, হৃদ্রোগ বিশেষজ্ঞ