দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও মৃত্যু বেড়েই চলেছে। করোনা সংক্রমিত হয়ে সুস্থ হওয়ার হারও আশাব্যঞ্জক। কেউ দ্রুত সুস্থ হচ্ছেন, কেউ একটু দেরিতে। অসুস্থতার এই সময়ে রোগীদের দৃশ্যত পরিবার ও সমাজবিচ্ছিন্ন অবস্থায় থাকতে হচ্ছে। কারও কারও হাসপাতালেও চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। অফিস থেকে দীর্ঘ ছুটি নিতে হচ্ছে। কিন্তু অনেকেই সেরে ওঠার সময়টাতে বারবার পরীক্ষা করে দেখে নিতে চান, তিনি করোনা সংক্রমণমুক্ত হয়েছেন কি না। কারও কারও ক্ষেত্রে দুই বা ততোধিকবার পরীক্ষার পরও করোনা পজিটিভ আসে। এতে অনেকেই মুষড়ে পড়েন।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, করোনা থেকে সেরে ওঠা বা আইসোলেশন পিরিয়ড শেষ করার জন্য করোনা পরীক্ষা করানো জরুরি কি না।
করোনা সংক্রমণের উপসর্গ হিসেবে যদি কারও জ্বর থাকে, তাহলে সেটি সেরে যাওয়ার পর কোনো ধরনের ওষুধ সেবন ছাড়া পরপর তিন দিন সুস্থ বোধ করলে এবং এর মধ্যে নতুন করে কোনো উপসর্গ দেখা না দিলে ধরে নিতে হবে তিনি সেরে উঠছেন। যদি অন্য কোনো দীর্ঘমেয়াদি রোগ যেমন শ্বাসতন্ত্রের রোগ, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদ্রোগ, কিডনির সমস্যা, ক্যানসার ও শরীরের কোনো অঙ্গ প্রতিস্থাপন করা না হয়ে থাকলে এবং উপসর্গ না থাকলে সংক্রমণমুক্তির বিষয়ে রোগী নিশ্চিত হতে পারেন।
মনে রাখতে হবে, করোনা সংক্রমিত হওয়ার পর জ্বর নেমে যাওয়ার তিন দিন পর থেকেই সংক্রমণমুক্ত হওয়া শুরু হয়। উপসর্গের দিন থেকে ১৪ দিন পার হলেই আইসোলেশন থেকে মুক্ত হওয়া যায়। কোনো উপসর্গ না থাকলে এ ক্ষেত্রে আরটি–পিসিআর টেস্ট করার প্রয়োজন নেই।
তবে উপসর্গ থাকুক বা না থাকুক, কারও কারও ক্ষেত্রে সংক্রমিত হওয়ার পর এক মাস, এমনকি ছয় মাস পরও পরীক্ষার ফলাফল পজিটিভ আসতে পারে। এর কারণ হলো, ভাইরাস মারা গেলেও তার দেহাবশেষ নাকে–গলায় রয়ে যেতে পারে এবং সেই ভগ্নাংশগুলোর উপস্থিতির কারণেই বারবার পরীক্ষার ফল পজিটিভ আসে। কারও কারও ক্ষেত্রে তো এমন পরিস্থিতিতে পরীক্ষার ফল একবার পজিটিভ আসে, তারপর নেগেটিভ, আবার পজিটিভ আসতে থাকে। এতে বিভ্রান্তি আর আতঙ্ক বাড়ে।
তাই কর্মক্ষেত্রে যোগদান কিংবা বিদেশ ভ্রমণ ব্যতিরেকে করোনা পরীক্ষার নেগেটিভ সনদ প্রয়োজন না হলে সংক্রমণমুক্ত হয়েছেন কি না, তা জানতে পরীক্ষা করা খুব একটা জরুরি নয়।
লেখক: ডা. মোহাম্মদ আজিজুর রহমান | মেডিসিন ও বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ