What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

রুবেন দারিওর দেশে (1 Viewer)

Bergamo

Forum God
Elite Leader
Joined
Mar 2, 2018
Threads
9,649
Messages
117,051
Credits
1,241,096
Glasses sunglasses
Berry Tart
Statue Of Liberty
Profile Music
Sandwich
রবীন্দ্রনাথ যেখানে চঞ্চল আর সুদূরের পিয়াসী, রুবেন দারিও সেখানে হাঁটতে চেয়েছেন অন্তরে শান্তির স্নিগ্ধতা নিয়ে; সুদূর প্রয়াসী সুরে চেয়েছেন চলতে অজানা দিগন্তে। সেই জনপদে পা রেখে লোকজ উৎসব আর কারুশিল্পের নান্দনিকতায় লেখক খুঁজে ফিরেছেন দারিওর দেশের প্রাণভোমরা।

9JlD8Xv.jpg


প্রায় এক মাস হতে চলল আমি কবি রুবেন দারিওর দেশে। রুবেন দারিওর কবিতায় জীবনভর যে রকম ফিরে ফিরে এসেছে বিষণ্নতা আর ভালোবাসা, আমাকেও খানিকটা বিষণ্নতায় পেয়ে বসেছে এই বিদেশ-বিভুঁইয়ে। প্রথমে নিজের দেশ ছেড়ে ইউরোপে; এরপর আবার ইউরোপ ছেড়ে এই মধ্য আমেরিকার দেশ নিকারাগুয়ায় আসা। সপ্তাহে পাঁচ দিন মানাগুয়ার 'ইউনিভার্সিটি অব সেন্ট্রাল আমেরিকা'তে গবেষণার কাজ করে আমি বেশ হাঁপিয়ে উঠি। আমার এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকর্মী—রেনে। রেনে আর আমি একই কক্ষে অফিস করি। রেনে অবসরে আমার সঙ্গে তার দেশের নানান প্রসিদ্ধ বিষয়ে আলাপ করে।
-রেনেকে বললাম, এ সপ্তাহের ছুটিতে কোথায় যাওয়া যায় বলো তো?
-চলো যাই মাসায়া, রেনে বলল।
নিকারাগুয়ার বিখ্যাত কবি রোবেন দারিওর ভাষায় এটি ফুলের শহর; নিকারাগুয়ার লোককাহিনি এবং কারুশিল্পের আঁতুড়ঘর। শুনেছি, সারা বছর এ শহরে পর্যটকের ভিড় লেগেই থাকে। আমার বেলজিক বন্ধু ক্যাসান্দ্রা রাজি হয়ে গেল। সে যাচ্ছে আমাদের সঙ্গে।
-তোমাদের আপত্তি না থাকলে আমার গার্লফ্রেন্ড আমার সঙ্গে যাবে, রেনে বলল।
-বাহ্ বেশ! আমি বেশ চাঙা হয়ে উঠলাম!

রেনে যেহেতু সঙ্গে আছে, তাই সে দেশের রাস্তাঘাট, যাতায়াত, গাড়িঘোড়া নিয়ে আর গুগল ঘাঁটাঘাঁটি করতে হলো না। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের কাছেই একটা বাসস্টেশন। রেনের কথামতো সেখানে হাজির হলাম আমি আর ক্যাসান্দ্রা। রেনে এল তাঁর প্রেমিকাকে সঙ্গে নিয়ে।

রেনের প্রেমিকাকে দেখে রেনের কাছে জানতে চাইলাম, এ দেশে বিবাহবিচ্ছেদের হার কেমন, রেনে?
-আমাদের দেশে তো নর–নারী তেমন একটা বিয়েই করে না; আমরা বিয়ে না করে একসঙ্গে থাকি, রেনে বলল।

বেশ বোকার মতো প্রশ্ন হয়ে গেল না আমার?
শনিবারের সকাল। অর্থাৎ ছুটির দিনের সকাল। মন ভালো করে দেওয়া মিষ্টি রোদ। চারদিকে ছোট ছোট একতলা-দোতলা ঘরবাড়ি, সুউচ্চ দালান এ দেশে হয় না। কারণ এটি ভূমিকম্পপ্রবণ দেশ। খুবই সাদাসিধে আর গতানুগতিক বাস। মায়েদের পরনের আটপৌরে শাড়ির মতো। আজ রেনে আমাদের দলনেতা। বাংলা ভাষায় দলনেতার আরেকটি আকর্ষণীয় শব্দ আছে, 'পালের গোদা'। যেহেতু তাঁর দেশে আমরা ভিনদেশি, তাই তাঁর দায়িত্ব প্রকাশের মাত্রাও বেশি বেশি। বাসে বারবার পেছন ফিরে ফিরে আমাকে আর ক্যাসান্দ্রাকে দেখছে, আমরা ঠিক আছি কি না।

মাসায়া শহরে পৌঁছাতে এক ঘণ্টাও লাগেনি। বাস থেকে নেমে আমরা চারজন রাস্তা ধরে হাঁটছি, আমাদের গন্তব্য মাসায়া শহরের প্রধান আকর্ষণ 'অপয়ো লেগুন' নামের হ্রদ। কিন্তু পথে হলো দেরি। দেরি এই অর্থে যে পথিমধ্যে এক অনাকাঙ্ক্ষিত স্থানীয় উৎসবের দেখা মিলল স্থানীয় এক বাজারে। স্থানীয় লোকজনের একটি কার্নিভাল। এটি কেবল মাসায়া শহরেই অনুষ্ঠিত হয়। একে স্থানীয়রা নাম দিয়েছেন 'টোরোভেনাদো'। একপ্রকার বার্ষিক শারদোৎসব। এ কার্নিভালের প্রধান আকর্ষণ লোকজ নৃত্য এবং রাস্তায় শোভাযাত্রা। কেউ কেউ এটিকে নৃত্য উৎসবও বলে। নিকারাগুয়ান এই শরৎ উৎসব দুপুর থেকে শুরু হয়ে সূর্যাস্তের পর শেষ হয়। হ্যালোইনের মতো অন্ধবিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে এর আগমন। শোভাযাত্রার জন্য লোকেরা মুখোশ তৈরি করে এবং পরে। এ উৎসবের প্রচলন নিয়ে বেশ কিছু কিংবদন্তি আছে। এ অঞ্চলে একদা স্প্যানিশ উপনিবেশ ছিল। স্প্যানিশদের দ্বারা আরোপিত দাসত্বের দেশীয় প্রতিরোধের চিহ্ন হিসেবে বা সে ইতিহাসকে স্মরণ করতে এটি উদযাপিত হয়ে আসছে বলে মনে করা।

qSHZBGB.jpg


টোরোভেনাদো উৎসবে অংশ নেয়া শিল্পী

কেউ পৌরাণিক নানান চরিত্রের রূপ ধারণ করে। কেউবা আর্ধেক ষাঁড়, আর্ধেক হরিণের বেশ ধরে। টরোভেনাদো সংগ্রাম এবং একতার বহিঃপ্রকাশ। ষাঁড়টি অহংকারী স্প্যানিশের নিষ্ঠুর শক্তিকে উপস্থাপন করে; হরিণ বুদ্ধিমান এবং উদ্যোগী প্রতীকের বহিঃপ্রকাশ। এই জাতীয় কার্নিভালটি প্রায় ষাট বছর আগে থেকে পালিত হয়ে আসছে। উৎসবে অংশগ্রহণকারীরা প্রতিবছর এ সময় গৃহত্যাগী হয়, যা তাদের ঐতিহ্যের অংশ। ১৯৬১ সাল থেকে মাসায়া শহরটি টরোভেনাদোর জন্য জনপ্রিয়। কবি রুবেন দারিও তাঁর কবিতার ছন্দ, মাত্রা ও আবেগের অনুষঙ্গ কি এখান থেকে পেয়েছেন? যদিও তিনি অন্য শহরে জন্মেছেন। নিশিরাতের আঁধারে মোড়া যে রহস্যময়তার কথা বলেছেন তাঁর কবিতায়, তার সঙ্গে কি আছে এর কোনো যোগসূত্র? উত্তর মেলেনি।

যারা এই উৎসবে পারফর্ম করে, তারা সবাই মুখোশ পরে। শহটাই আমার মুখোশের শহর মনে হয়েছে। স্যুভেনির কিনতে যে দোকানেই ঢুকেছি, মুখোশ আর মুখোশ। পারফর্মারদের মাথায় থাকে প্রকাণ্ড গম্বুজ আকৃতির মুকুট। সম্পূর্ণ মুখমণ্ডল মুখোশে আবৃত। পরনের জামা গলা থেকে নেমে গেছে পায়ের পাতা অবদি, সে জামা বেশ ফুলেফেঁপে থাকে। হাত দুটি সম্পূর্ণ কাপড়ের মোজায় আবৃত। পোশাকে সীমার অতীত রঙের খেলা। কড়া সেই রং। আমার ভাবনায় ব্যাঘাত ঘটায় যে রং। বাহ্! শহর পেরোলেই এমনতর তফাত! স্থানীয়দের প্রচলিত ধারণা থেকে জানা যায়, পারফরমারদের একাংশ স্থানীয় এবং জাতীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের বিদ্রূপ করে এই কার্নিভালে। তবে কি এ কারণে তারা মুখোশ পরে? নিজের নিরাপত্তা রক্ষায় কি এই আদল? উত্তর মেলেনি আজও।

7xfX9LZ.jpg


টোরোভেনাদো উৎসবে অংশ নেয়া শিল্পীর সঙ্গে লেখক

আমি ঘোরের মধ্যে! আমি নেশার মধ্যে! কিন্তু আরও খানিক দূর যেতে হবে, 'অপয়ো লেগুন' তো আরও দূরে। ফাঁকে এই উৎসবটি একটা উপরিলাভ। যেতে যেতে যেখানে গিয়ে থামলাম, সেটা বেশ উঁচুতে, বলা যেতে পারে পাহাড়ের উপরিতল। নিচের দিকে তাকালে অপার বিস্ময়, 'অপয়ো লেগুন'।
- কী এর বিশেষত্ব, রেনে?
- রেনে বলল, আমাদের দেশে আগ্নেয়গিরির একটি শৃঙ্খল রয়েছে, যা উত্তর থেকে দক্ষিণে ক্রমাগত গেছে। এই 'লেগুনা দে অপয়ো' দক্ষিণে ভলকানো মম্বাচো এবং উত্তরে ভলকানো ম্যাসায়ার মাঝখানে অবস্থিত। অপয়ো হ্রদটি একটি আগ্নেয়গিরি হ্রদ। এ হ্রদটি তেইশ হাজার বছর আগপর্যন্ত একটি শক্তিশালী আগ্নেয়গিরি ছিল। সে সময় আগ্নেয়গিরির প্রচণ্ড বিস্ফোরণে একটি বিশাল গর্তের সৃষ্টি হয়। ৬ কিলোমিটার (৩.৭ মাইল) ব্যাসের একটি গর্ত এবং বছরের পর বছর ধরে বৃষ্টি এবং ভূগর্ভস্থ পানিতে ভরে যায়। সেটাই ধীরে ধীরে এই হ্রদের রূপ নেয়। কিনারা বা ঢাল গাছপালায় আবৃত হয়ে যায়। এটিকে এখনো একটি ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এটি গভীর।
পাহাড় থেকে নেমে লেগুনার পানি পর্যন্ত পৌঁছানোর সিঁড়ি আছে, আমি সেই সিঁড়ির হাতলের ওপর বসলাম। নিকারাগুয়ার অন্যতম সুন্দর প্রাকৃতিক বিস্ময় আমার সম্মুখে। অভ্যন্তরে স্বচ্ছ নীল পানি। শুধু স্বচ্ছ নয়, স্ফটিক স্বচ্ছ। আমার চোখের বেশ আরাম হচ্ছে। আমি একটি বৃহৎ উষ্ণ পরিষ্কার লেক দেখছি। অবকাশ বা ব্যাকপ্যাকের যাপনের দুর্দান্ত জায়গা। কিছু পর্যটক উষ্ণ নীল জলে সাঁতার কাটছে। দেশজুড়ে অনেকগুলো লেগুনা থাকলেও সেগুলো একটিও যথার্থতায় এর সমকক্ষ নয়, রেনে বলল। কেবল পানি এবং রোদে একদিন কাটাতে এটি অনবদ্য সঙ্গী আমার আজ। লেগুনার পাশের শহরটিও যান্ত্রিক নয়।

snQxPo1.jpg


অপয়ো লেগুন

অপয়ো লেগুনসানস্ক্রিন মেখে পর্যটকদের দৌড়ানোর দৃশ্য বেশ লাগছে। আশপাশে হাতে গোনা কয়েকটি ছোট ছোট রেস্তোঁরা। মাছ এবং নিকারাগুয়ান নিজস্ব খাবার সঙ্গে ঠান্ডা বিয়ার পরিবেশন করে। দু–একজন দর্শনার্থী শরীর ডুবিয়ে বই পড়ছে। কিছু যুগল পানিতে নেমে পানি নিয়ে ব্যস্ত না হয়ে বরং নিজেদের নিয়ে খুব ব্যস্ত। আমার বাঙালি বেহায়া চোখ সেখানে স্থির হয়। আকাশের সূর্যটাও যেন নিজেকে ভিজিয়েছে সেই জলে। লেকের ওপর কিছু মেঘও কি ঘুরে বেড়াচ্ছে? স্যুভেনির বিক্রয়কর্মী এবং গায়কেরা চেষ্টায় রত তাদের পণ্য আর গান বিক্রির। আমার সেদিকে মনোযোগ কম।

অপয়ো লেগুনকে ঘিরে আছে সুউচ্চ পাহাড়। পাহাড়ের ওপর থেকে যেমন দেখা যায়, নিচে নেমেও উপভোগ করা যায় এই হ্রদকে। দৃষ্টি প্রসারিত করলে দেখা যাচ্ছে অপয়োর পেছনে নিকারাগুয়া হ্রদ, তার পেছনে মোম্বাচো আগ্নেয়গিরির সীমানা। পাহাড়ের সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামছি। এই নীলে খানিক দাপাদাপি না করলে আমার জীবন বৃথা।
-এই পানির তাপমাত্রা কেমন হতে পারে, রেনে?
- ২৭ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড থেকে ২৮ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড পর্যন্ত হয়।
১৯৯১ সালে দিঘিটি প্রাকৃতিক রিজার্ভ হিসাবে ঘোষণা করেছে আমাদের সরকার।

xiB03XV.jpg


অপয়ো লেগুন

মোটরযান চলাচল নিষিদ্ধ করেছে এই লেকে, রেনে বলল। পর্যটকেরা পানিতে নামার প্রস্তুতি নিয়েই যায় সেখানে। আমিও নেমে পড়লাম। বাঙালি সংস্কৃতিতে সমুদ্রে নামার জন্য আলাদা কোনো প্রস্তুতি নেই বললেই চলে। আমরা বেশ ফরমাল পোশাকে সমুদ্রের কাছে যাই, তার পানিতে নেই। লাতিনদের সংস্কৃতিতে ব্যাপারটা ভিন্ন। একটা বিষয় আমার বেশ অবাক করল। এখানে ছবি তোলার হিড়িক নেই, আমি কাউকে মোবাইল বের করে ছবি তুলতেই দেখলাম না! হয়তো স্মৃতি সংরক্ষণের চাইতে অনুভব করাকে বেশি গুরুত্ব দেয়!

পড়ন্ত বিকেল, মাসায়ার প্রধান বাসস্ট্যান্ডের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি আমরা। হস্তশিল্পের আড়ত মাসায়া ক্র্যাফট মার্কেট না দেখলে ভ্রমণ নাকি পূর্ণ হয় না। এ অপূর্ণতা নিয়ে ফিরব কেন? হস্তশিল্পের এমন বর্ণময় পর্যটন স্পট আগে কম দেখেছি। আমাদের ঢাকার নিউ মার্কেটের আদলে তৈরি একটি মার্কেট, তবে নিউমার্কেটের মতো বৃহৎ নয় আকারে। এটি নিছক মার্কেট নয়, নিকারাগুয়ান হস্তশিল্পের হৃদয়। বিভিন্ন প্রকারের পণ্যসামগ্রীর সমাবেশ এখানে। হাতে বোনা হাম্পস, যা দেখতে দোলনাসদৃশ বিছানার মতো, যাতে অনায়াসে ঝুলে থাকা যায়, সেটা আমার বেশ মন কেড়েছে। এমব্রয়ডারি করা ব্লাউজ অর্থাৎ শরীরের ঊর্ধ্বাঙ্গের জামা আর কাঠের খোদাই করা গয়না খুব বৈচিত্র্যময়। একটি অংশে বৈদ্যুতিক ডিভাইস, একটি অংশে পোশাক বিক্রি, অন্য একটি অংশে কাঁচা মাংসের জন্য সংরক্ষিত।

ধীরে হাঁটছি। মনে হচ্ছে, আর যদি কোনো দিন আসার সুযোগ না হয় এ প্রান্তরে, তাই প্রাণ ভরে দেখার আকুতি। সন্ধ্যা গড়িয়ে রাতের শুরু। বাসে উঠে বসলাম আমরা চতুষ্টয়। কী যেন লিখেছিলেন রুবেন দারিও? যার ভাষান্তর করেছেন আমাদের মঈনুস সুলতান।
'অন্তরে শান্তির স্নিগ্ধতা নিয়ে
হাঁটো হে পথিক
অজানা দিগন্ত থেকে আছো তুমি এখনো অনেক দূরে
ভেসে উঠছে স্বপ্নে ছাওয়া এক রাজ্যের প্রতীক
মথিত হচ্ছো পথ চলার সুদূর প্রয়াসী সুরে।'

* লেখক: মহুয়া রউফ | গবেষক ও পরিব্রাজক
 

Users who are viewing this thread

Back
Top