What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Other মান্নার প্রয়াণে প্রযোজকেরা এখনো বড় নিঃশ্বাস ফেলেন (1 Viewer)

GnZwhap.jpg


তার পুরো নাম সৈয়দ মোহাম্মদ আসলাম তালুকদার, পরবর্তীতে মান্না নামে এ দেশের সিনেমা দর্শকদের মনে স্থান করে নিয়েছিলেন।

মান্নার জন্ম ১৯৬৪ সালে ১ জানুয়ারি টাঙ্গাইল জেলার কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গা গ্রামে। পড়াশোনার পাশাপাশি ছোটবেলা থেকেই চলচ্চিত্রের প্রতি আগ্রহ ছিল তার। স্থানীর কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাস করে স্নাতকে ভর্তি হন ঢাকা কলেজে, আর নতুন কোন ছবি মুক্তি পেলেই ছুটে যেতেন পাশের সিনেমা হল বলাকাতে।

XTBvpQD.jpg


অভিনেতাদের অভিনয়ে মগ্ন মান্নার ছোটবেলার ইচ্ছাটা যেন আরও বেগবান হলো। নায়ক হওয়ার প্রবল ইচ্ছা সব সময়েই তার মনে কাজ করতে থাকলো। একদিন বলাকায় সিনেমা দেখতে গিয়ে দেখেন প্রথমবারের মতো 'নতুন মুখের সন্ধানে' নামের একটি কার্যক্রম এফডিসি শুরু করতে যাচ্ছে। সেটা ১৯৮৪ সালের কথা, যেখানে সারা দেশ থেকে নতুন অভিনেতা-অভিনেত্রীদের খোঁজ করা হবে।

বন্ধুদের উৎসাহ ও নিজের প্রবল ইচ্ছায় সেখানে ইন্টারভিউ দেন মান্না এবং সুযোগও পেয়ে যান। প্রায় ছয় ফুট উচ্চতার নৃত্যে পারদর্শী স্মার্ট টগবগে যুবক মান্না প্রথমেই বিচারকদের মন কেড়ে নেন।

বিচারক প্যানেলে ছিলেন সুভাষ দত্ত, আমজাদ হোসেন, কাজী জহির, শিবলী সাদিক এবং নায়ক রাজ রাজ্জাকদের মতো বাঘা বাঘা সব মহারথীরা। যে রাজ্জাকের সিনেমা দেখতে মান্না ছুটে যেতেন সেই রাজ্জাক অভিনীত ভূমিকায় অভিনয় দেখিয়েই মুগ্ধ করেন বিচারকদের। নতুন মুখ হিসেবে নির্বাচিতও হন। সে বছর একই ব্যাচে ছিলেন দিতি, সোহেল চৌধুরী, সুব্রত, সাত্তার, শেলী কাদের, খালেদা আক্তার কল্পনাসহ আরও অনেকে, পরবর্তীতে সহকর্মী শেলী কাদেরের সঙ্গেই বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন তিনি।

মান্না প্রথম সুযোগ পান রাজ্জাকের অনুপ্রেরণায় আজহারুল ইসলামের পরিচালনায় 'তওবা' ছবিতে ছোট্ট একটি চরিত্রে অভিনয়ে। প্রধান নায়ক চরিত্রে ছিলেন রাজ্জাক নিজেই, সঙ্গে আরও ছিলেন ববিতা. ইলিয়াস কাঞ্চন, দোয়েলের মতো তারকারা। শুটিং চলাকালীন সময়ে এফডিসিতে আয়োজিত নতুন মুখের নির্বাচিত শিল্পীদের নিয়ে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে মান্নার পরিচয় হয় পরিচালক কাজী হায়াতের সঙ্গে। অনুষ্ঠানে মান্নার একটি পারফর্ম দেখেই 'পাগলী' ছবিতে দ্বিতীয় নায়কের চরিত্রে সুযোগ দেন তাকে। প্রধান নায়ক চরিত্রে ছিলেন নতুন মুখ থেকে উঠে আসা সাত্তার।

OTXVWlL.jpg


এফডিসি আয়োজিত প্রতিযোগিতায় মান্নার অভিনয় দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন রাজ্জাক

'তওবা' প্রথম ছবি হিসেবে মুক্তি পাওয়ার কথা থাকলেও মুক্তি পায় 'পাগলী' (০৯/০৮/১৯৮৫)। মুক্তির দিক থেকে দ্বিতীয় ছবি হলো আবুল খায়ের বুলবুলের পরিচালনায় 'জারকা' (০৬/০৬/১৯৮৬) ও তৃতীয় ছবি 'তওবা' (১৩/০৬/১৯৮৬)। কাজী হায়াতের 'পাগলী'র মাধ্যমেই মান্না দর্শকদের কাছে পরিচিতি পান, সে হিসেবে মান্নার অভিনয় জীবন শুরুই হয়েছিল কাজী হায়াতের হাত ধরে।

প্রথম ছবি করেই কিন্তু হায়াৎ সাহেব মান্নাকে ছেড়ে দেননি। তিনি যেন মান্নার মধ্যে দেখেছিলেন আমাদের পুরো চলচ্চিত্রটাকে, যাকে সব ধরনের চরিত্র দিয়েই সিনেমা বানানো যায়। তাই তো পরবর্তীতে তিনি মান্নাকে ঘষে মেজে একজন পূর্ণ নায়কে পরিণত করেছিলেন, সে ইতিহাস সবারই জানা। দুজনের কম্বিনেশনে যন্ত্রণা, দাঙ্গা, ত্রাস, সিপাহী, দেশ প্রেমিক, তেজী, কষ্ট, লুটতরাজ, আম্মাজানের মতো চলচ্চিত্রগুলো লেখা থাকবে ইতিহাসের পাতায়।

দীর্ঘ চলচ্চিত্র ক্যারিয়ারে ষাটের বেশি নায়িকা ও একশ'র বেশি পরিচালকের সঙ্গে কাজ করেছেন মান্না, যদি ভুল না হয় সম্ভবত এটি একটি রেকর্ডও।

মান্নার প্রথম ছয়টি বছর কাটে দ্বিতীয় নায়ক হয়ে, তত দিনে করে ফেলেছিলেন ১৯টির মতো চলচ্চিত্র। একক নায়ক হিসেবে তাকে প্রথম সুযোগ দেন গুণী নির্মাতা মোস্তফা আনোয়ার 'কাশেম মালার প্রেম' ছবিটিতে। ১৯৯১ সালে নির্মিত ছবিটিতে তার বিপরীতে ছিলেন চম্পা। চম্পা ছিলেন সে সময়ের প্রথম সারির অভিনেত্রী। একদিকে জনপ্রিয় অভিনেত্রী, আরেক দিকে বড় বাজেটের ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ বেশ ভালোভাবেই কাজে লাগান মান্না। ফোক ঘরানার ছবিটি সুপার হিট ব্যবসা করেছিল, সঙ্গে একক নায়ক হিসেবে মান্নার ভাগ্যের চাকাও খুলে গিয়েছিল। যার প্রেক্ষিতে তার হাতে আসতে থাকে একের পর এক ছবির কাজ, সবগুলোই ছিল একক নায়ক কেন্দ্রিক। মূলত 'কাশেম মালার প্রেম' থেকেই শুরু মান্নার চলচ্চিত্রে সফলগাঁথা অধ্যায়, যা তার মৃত্যুর আগ পর্যন্তও ছিল সমান জনপ্রিয়তায়।

Oob47yv.jpg


চম্পার বিপরীতে একক নায়ক হিসেবে প্রথম সাফল্য পান মান্না

মান্না তার অভিনয় ক্যারিয়ারে দাঙ্গা, গরম হাওয়া, ত্রাস, অন্ধ প্রেম, প্রেম দিওয়ানা, সাক্ষাৎ, সিপাহী, ডিসকো ড্যান্সার, দেশ প্রেমিক, বাবার আদেশ, আন্দোলন, শেষ সংগ্রাম, রাজ পথের রাজা, রুটি, খলনায়ক, বশীরা, মহা সম্মেলন, ক্ষুধার জ্বালা, দেশদ্রোহী, লুটতরাজ, এতিম রাজা, কান্দো কেন মন, রাজা, তেজী, মরণ কামড়, শান্ত কেন মাস্তান, খবর আছে, লাল বাদশা, এতিম রাজা, গুন্ডা নম্বর ওয়ান, কুখ্যাত খুনি, ওরা ভয়ংকর, বাবা মাস্তান, ধর, বর্তমান, সুলতান, কষ্ট, মাস্তানের ওপর মাস্তান, সমাজকে বদলে দাও, ঈমানদার মাস্তান, ভিলেন, বাস্তব, ভেজা বিড়াল, রুস্তম, ভাইয়া, স্বামী স্ত্রীর যুদ্ধ, দুই বধূ এক স্বামী, মনের সাথে যুদ্ধ ও আম্মাজানের মতো অসংখ্য সফল ছবি উপহার দিয়েছেন।

সময় এমন ছিল যে… বুকিং এজেন্ট থেকে প্রযোজক, পরিচালক ও হল মালিকদের একমাত্র ভরসার নায়ক ছিলেন তিনি, মৃত্যুর আগ পর্যন্তও। একটা সময় যখন চলচ্চিত্রে অশ্লীলতার প্রভাবে রুচিশীল দর্শকেরা প্রেক্ষাগৃহ বিমুখ হচ্ছিল, মান্না সব সময় এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছেন। তিনি চাইতেন ঢাকায় ভালো ভালো ছবি নির্মাণ হবে, সব শ্রেণির মানুষ মনের আনন্দ নিয়ে প্রেক্ষাগৃহে ছবি দেখবে। এ জন্য শুধু অন্যের ওপর নির্ভর করেননি তিনি, নিজেও এক সময় ছবির প্রযোজক হয়েছেন। কৃতাঞ্জলি চলচ্চিত্র থেকে বানিয়েছেন আব্বাজান, দুই বধূ এক স্বামী, আমি জেল থেকে বলছি, লুটতরাজ, লাল বাদশা, মনের সাথে যুদ্ধ, পিতা-মাতার আমানত, স্বামী স্ত্রীর যুদ্ধ'র মতো সফল ছবি চলচ্চিত্র।

প্রযোজনা নিয়ে এক জায়গায় বলেছিলেন, 'বিশ্বের বিভিন্ন ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে উন্নতি হচ্ছে, অথচ আমাদের এখানে বিপরীত। এখানে কে কত কম খরচে, কম বাজেটে ছবি রিলিজ করাবে সেই চিন্তায় ব্যাকুল থাকে। ফলে চলচ্চিত্রে কোয়ালিটির চেয়ে কোয়ান্টিটি বাড়ছে। চলচ্চিত্রের ওপর থেকে দর্শকের আকর্ষণ কমে যাচ্ছে। এসব দিক চিন্তা করে আমার কৃতাঞ্জলি প্রোডাকশন থেকে বানিয়েছি জেল থেকে বলছি, দুই বধূ এক স্বামী, স্বামী স্ত্রীর যুদ্ধসহ আরও কয়েকটি ছবি। যার প্রতিটিই যুগোপযোগী, যে জন্য ছবিগুলো সুপারহিট। প্রতিটি ছবি বক্স অফিসের কাছে যেমন আদরে গ্রহণীয়, তেমনি দর্শকের কাছে সর্বাধিক জনপ্রিয়!'

FbTirCG.jpg


মৌসুমী ও শাবনূরের সঙ্গে মান্না

মান্না চলচ্চিত্রের প্রথম দিকে ফারজানা ববি, সুচরিতা, অরুণা বিশ্বাস, সুনেত্রা, নিপা মোনালিসা, রানি, বনশ্রী প্রমুখের বিপরীতে অভিনয় করেন, পরবর্তীতে চম্পা, দিতি, শাহনাজ, মৌসুমীর বিপরীতে বেশি কাজ করেছেন। শাবনূর, পূর্ণিমারাও ছিলেন তার ছবির নায়িকা। আড়াই শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করা মান্না তার কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে 'বীর সৈনিক' (২০০৩) ছবিতে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে সম্মানিত হন। এ ছাড়া 'আম্মাজান' (১৯৯৯) ছবিতে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে বাচসাস পুরস্কার পান। শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র অভিনেতা হিসেবে দুইবার 'মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কারে' সম্মানিত হন তিনি৷

২০০৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি হঠাৎ করেই মান্না আমাদের ছেড়ে চলে যান না ফেরার দেশে। তার এ মৃত্যুতে ঢাকা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির এক অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যায়, যার রেশ এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি। মান্না ছিলেন তার সময়ের শ্রেষ্ঠ নায়ক— ছিলেন বাণিজ্যিক ছবির একজন দাপুটে অভিনেতাও। নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস, ধৈর্য, কাজের প্রতি নিষ্ঠা ও কঠোর পরিশ্রমের বিনিময়ে একসময় তিনি অভিনয় দিয়ে রাজত্ব করেছিলেন আমাদের বাংলা চলচ্চিত্রে। অভিনেতা হিসেবে নিজেকে নিয়ে গিয়েছিলেন অনন্য উচ্চতায়। ছিলেন তার সময়ে সুপারস্টার, যার নামেই দর্শকেরা ছুটে যেতেন ছবিঘরে। তার অকালে চলে যাওয়া নিয়ে বড় বাজেটের প্রযোজকেরা এখনো নিঃশ্বাস ফেলেন।

লেখক: লিখেছেন: আরিফুল হাসান
 

Users who are viewing this thread

Back
Top