What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

ফরাসি সুবাসের পিছুটানে ৩ (1 Viewer)

Bergamo

Forum God
Elite Leader
Joined
Mar 2, 2018
Threads
9,649
Messages
117,051
Credits
1,241,096
Glasses sunglasses
Berry Tart
Statue Of Liberty
Profile Music
Sandwich
fUVT9ft.jpg


পদুচেরিতে তৃতীয় দিন।

সকালে গেলাম ফ্রেঞ্চ ব্রেকফাস্ট করতে 'ডেইলি ব্রেড' নামের ফ্রেঞ্চ রেস্তোরাঁয়। ফ্রেঞ্চ বাগেত অর্ডার করলাম, সঙ্গে লার্জ ক্যাফে লাতে। পরিমাণে এতটাই বেশি ছিল যে শেষ করতে পারছিলাম না। দামও পকেট ফ্রেন্ডলি। এখানে আসার উদ্দেশ্য ছিল ফরাসি বংশদ্ভূত কারও দেখা পাওয়া। বন্ধুবান্ধব বলেছে, এই রেস্তোরাঁয় তুলনামূলকভাবে বাইরের ট্যুরিস্ট কম আসেন। তবে সময় কাটাতে আসেন ফরাসি ভাষাভাষী স্থানীয় মানুষ।

S5iVrpB.jpg


ফ্রেডরিক ও তার মেয়ে

সেখানেই এক ফরাসি বৃদ্ধকে দেখলাম কফি খেতে খেতে পেপার পড়ছেন আমার পাশের টেবিলে। বয়স ৮০ ছাড়িয়ে গেছে, লাঠিতে ভর করে চলাফেরা করতে হয়। মুখের চামড়ার ভাঁজ মনে করিয়ে দেয় বয়সের অভিজ্ঞতা। তাঁর চামড়ার ভাঁজগুলোও আমার কাছে রোমাঞ্চকর মনে হয়েছে, কত না ইতিহাস লুকানো রয়েছে সেখানে। হালকা নীলরঙা ফুলহাতা শার্ট আর অফ হোয়াইট প্যান্টে তাঁকে খুব সুন্দর দেখাচ্ছিল। আমি সাহস করে নিজের টেবিল থেকে এগিয়ে গিয়ে কথা বলতে গেলাম।

ভারত যখন স্বাধীন হয়, তখন তাঁর বয়স বারো। আর পদুচেরি যখন ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়, তখন তিনি ইউনিভার্সিটির ছাত্র, টগবগে তরুণ। বাবা কাজ করতেন রেভিনিউ ডিপার্টমেন্টে। মা–বাবা দুজনই ছিলেন ফ্রান্সের ছোট এক শহরের বাসিন্দা। কর্মসূত্রে ভারতে এসে থেকে গিয়েছেন নিজের দেশ ভেবে।

ভদ্রলোকের নাম ফ্রেডরিক, ভারতীয় নারী বিয়ে করেছেন। কথা বলতে বলতে তাঁর কন্যা এসে বসলেন উল্টো পাশের চেয়ারে, দেখতে আর দশজন সাধারণ ভারতীয় নারীর মতোই, গায়ের রং, পোশাক তো তা–ই বলে। সমানে তাঁর বাবার সঙ্গে মধুর ঝগড়া করে যাচ্ছিলেন পুরোটা সময়। শেষমেশ বৃদ্ধ কিছুটা বিরক্ত হয়ে যখন উঠে গেলেন, তখন হন্তদন্ত হয়ে কন্যা ছুটলেন পেছন পেছন বাবার লাঠি নিয়ে। পুরো কথোপকথন ইংরেজিতে হচ্ছিল, তাই আমার বুঝতে কোনো অসুবিধা হচ্ছিল না।

বিকেলে প্যারাডাইস বিচে গেলাম। চারদিকে ভারতীয় ট্যুরিস্টের ছড়াছড়ি। সব ট্যুরিস্ট স্পটই আমার হাঁটা দূরত্বের মধ্যে।

GGjJzwY.jpg


প্যারাডাইস বিচ

একটা নীল রঙের গাউন পরা, সাদা স্কার্ফ কাঁধে ঝুলিয়ে ফরাসিকন্যা যেন এ সাগর। ফ্রেঞ্চ টাউনের ভূত এখন আমার মাথায় পুরোপুরি ভর করেছে। আগামী কয়েক দিন এ ভূত নামবে না।

মূল হোয়াইট টাউনের চেয়ে এই সমুদ্রসৈকত আমার কাছে আরও দ্রবীভূত আর কোমল নীল লাগছে। হোক না জনারণ্য, তবুও কেমন আশ্চর্য এক মসলিনি জাল বুনে বুনে একেকটা ঢেউ আছড়ে পড়ছে তটে।

পদুচেরিতে আমার শেষ দিন।

সকালে চলে গেলাম বেসিলিকা অব সেকরেড হার্ট দেখতে। এটা পদুচেরিতে নির্মিত প্রথম গির্জা। তামিলনাড়ুতে ষষ্ঠ, ভারতে কুড়িতম এবং এশিয়ায় পঞ্চদশতম। লাল–সাদা রঙের মিশেলে দুই পাশে দুটি পিলার আর মাঝখানে ত্রিকোণ ছাদের বিশাল এক গির্জা।

moLl79b.jpg


বেসিলিকা অব সেকরেড হার্ট

cixot80.jpg


ভেতরে অপ্সরাদের দল

ভেতরে ঢুকতেই একদল অপ্সরার দেখা পেলাম। সবাই মিনি স্কার্ট পরে আমার সামনে যাওয়ার পথ রোধ করে রেখেছে, সামনে দাঁড়িয়ে থাকা যিশুখ্রিষ্টকে দেখছে। কলকল করছে প্রবহমান কথার বেগে। ভারতে উপাসনালয়ে প্রবেশের পোশাকের নিয়মকানুন কড়াকড়ি কিন্তু এই গির্জায় নয়। দেখে আপ্লুত হলাম। ভেতরের দেয়াল গোলাপি রং করা। অন্যান্য গির্জার মতো গোলাকার ছাদ, তবে এই গির্জার আলাদা একটা বৈশিষ্ট্য আছে, দরজার উপরে ও জানালায় রঙিন কাচে চিত্র আঁকা, দরজা–জানালা বন্ধ থাকার কারণে কাচ ভেদ করে রঙিন আলোয় ভরে গিয়েছে গির্জার ভেতর মহল।

SUHBMZu.jpg


গির্জার ভেতরের দৃশ্য

এখন একে আর গির্জা বলে মনে হচ্ছে না, মনে হচ্ছে স্বপ্নের রাজপ্রাসাদ। লাল–নীল আলোর হাত ধরে চলে যাওয়া যাবে বিভিন্ন রঙিন নগরে, যেখানে কোনো বন্দরে ফরাসি সুবাসের মাতামাতি বা কোনে নগরে ফরাসি খাবারের লোভ সামলানো দায়, কোনো অরণ্যের ফলবাগান থেকে বের হতে গেলে সেখানকার পরি অভিমান বুঝি করে ফেলে!
এই রঙিন দেশের ভেতরেই কেউ কেউ প্রার্থনার জন্য এসেছেন। একটি ভারতীয় স্থানীয় মেয়ে দুহাত জোড় করে চোখ বন্ধ করে, স্কুলের ইউনিফর্মে ঈশ্বরের কাছে বিড়বিড় করে পরীক্ষার সফলতা চাইছে, একজন মা হাঁটু গেড়ে বসে, মাথায় আঁচল দিয়ে কামনা করলেন সন্তানের আরোগ্য। পেছনের বেঞ্চে এসব বসে দেখছেন ফ্রান্স থেকে আগত একদল পর্যটক।

ফেরার পথে মুসলিম কোয়ার্টার দেখতে দেখতে এলাম। আসলে এ পাড়া ছিল আদি ফরাসিদের। অনেক বাড়ি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। কোনো কোনো বাড়ির টানা বারান্দার সামনে ভক্সওয়াগন গাড়ি দাঁড়িয়ে, ধুলো আর পাতার আস্তরণ দেখলে বোঝা যায় বহুকাল কেউ আসেনি এদের সঙ্গে দেখা করতে।

JIoUmwI.jpg


মুসলিম কোয়ার্টারের পরিত্যক্ত বাড়ি

এই রূপ–অরূপের খেলা দেখতে দেখতে ফরাসি রেস্তোরাঁ খুঁজে পেতে বেশি সময় লাগল না৷ এবারের আইটেম স্যুপ আ লনিও বা পেঁয়াজের স্যুপ। খুবই অদ্ভুত খাবার মনে হয় পেঁয়াজের স্যুপ। তবে এক চামচ খাবার পর এক অদৃশ্য আনন্দ আমার রসনাজুড়ে ঝমঝম করতে লাগল, আরও চাই। পেঁয়াজ আর চিজের এত অসাধারণ মেলবন্ধন আর কোথাও নেই। এক বাটি স্যুপেই পেট ভরে গেল। এরপর এল 'লেসকারগো শোকোলা পিসতাস' বা সাধারণ ভাষায় চকলেট–পেস্তাবাদাম কেক। আমার আর ফ্রান্সে গিয়ে কী কাজ, এখানেই স্বাদ, বরণ, গন্ধ সবই পেয়ে বসে আছি।

খেয়েদেয়ে খানিক এগিয়ে চোখে পড়ল ঊনবিংশ শতকের বৃদ্ধাশ্রম দেখলাম। সব ভবনই ছবির মতো সুন্দর। এই ভবনটি হলুদ রঙের, আশপাশে একটি মানুষ নেই, ঝাঁকড়া ঝাঁকড়া গাছ মাথা নিচু করে হাওয়া বইয়ে দিচ্ছে দালানের গায়ে, কোথাও একটুও শব্দ না করে পথঘাট বয়ে চলছে, কেমন আজানা এক আনাগোনা! কিন্তু বৃদ্ধাশ্রমে আমাকে ঢুকতে দিল না। কী সব নিয়মকানুন আছে। আমি একটুও মুখ বেজার না করে ফিরে এলাম। কারণ, এক দিনে যা দেখেছি, তাতে মন অনেকখানি ভরে গেছে।

R0HRa3f.jpg


উনবিংশ শতাব্দীর বৃদ্ধাশ্রম

সব গন্তব্যই হাঁটাপথের দূরত্ব। যে পথ হেঁটে উপভোগ করা যায়, সে পথ, অটোরিকশা, সাইকেলরিকশা, সাইকেল বা মোটরবাইক বা ট্যাক্সিতে চড়ে তেমন উপভোগ্য নয়।
পা দুটোকে ভরসা করেছি সেই প্রথমবারের ভ্রমণ থেকে। তাই হেঁটে আরেকবার দেখে নিলাম পুরো শহরটা।

রক বিচে এই বিকেলে বহু লোকের সমাবেশ—কেউ এসেছেন নাটকের শুটিং করতে, কেউ হাওয়া খেতে, কেউবা একটুখানি মন দেওয়া–নেওয়া করতে।

সূর্যাস্ত হলো পদুচেরিতে, রক বিচে। তবে ফরাসিরা এখানে তেমন আসেন না। তারা তাদের নিজস্ব পছন্দসই রেস্তোরাঁ বা ক্লাবে চলে যান সন্ধ্যার আড্ডা জমাতে।

awNniex.jpg


রক বিচ

সন্ধ্যা জমাট বেঁধে আসার আগে দিনের আলো একেকটা সুর পরখ করতে করতে হাসতে হাসতে বিদায় নেয়। আর সমুদ্রসৈকতের সঙ্গে রাতের ভাবসাব একটু বেশি বলে হাওয়া খুব ছুঁয়ে ছুঁয়ে যায় বালিয়াড়ি।

আমার শেষ দিন এই রোমাঞ্চকর শহরে, যেখানে প্রতিটি সড়কে প্রতিটি স্তম্ভে, প্রতিটি ভবনে লুকিয়ে রয়েছে ইতিহাস। এই শহরে আবিরত ডাক আসে মাতিসের আঁকা কোনো রঙিন ছবির মতো বা বোদলেয়ার রেখে যান সেই বিখ্যাত স্মৃতিফলক, যার জন্য এখনো ভারতবর্ষের এক কোনায় হারিয়ে না যাওয়া ফরাসি শহর ছেড়ে যায় না অচেনা পথিককে।

* লেখক: ফাতিমা জাহান
 

Users who are viewing this thread

Back
Top