What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

বাইরে সুখী দম্পতি, ঘরে কেন অসুখী (1 Viewer)

hMGl1Eb.png


ফেসবুক খুলতেই খুব পরিচিত দম্পতির ছবি। কখনো রেস্তোরাঁয়, কখনো ছাদবাগানে, কখনো ঘরোয়া অনুষ্ঠানে। দারুণ সুখী দুই মুখের ছবি ফেসবুকে দেওয়া হয় নিয়মিত। বয়ে যায় লাইক আর কমেন্টের বন্যা। 'হ্যাপি কাপল', 'উত্তম–সুচিত্রা', 'মেড ফর ইচ আদার', 'দুজনে দুজনার'—একটার পর একটা এমন কমেন্টের নোটিফিকেশন।

হঠাৎ যদি ওই যুগল ছবিগুলোর বিভাজক রেখাটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে? ফিল্ম ক্যামেরার যুগে প্রিন্ট করা ছবিগুলো ছিঁড়ে গেলে আঠা দিয়ে জোড়া লাগানো হতো। জোড়া লাগানোর রেখাটা কিন্তু কিছুতেই আড়াল করা যেত না। ফেসবুকের প্রিয় যুগলের সম্পর্কের এমন চিড় ধরার খবরে নিশ্চয়ই চমকে যাবেন 'মেড ফর ইচ আদার' কমেন্ট করা মানুষেরা। আরও চমকে যাবেন যদি জানতে পারেন, ফাটলটা অনেক দিনের। যদি জানতে পারেন দারুণ প্রিয়, দারুণ সুখী দম্পতির ছবি আর স্ট্যাটাসগুলো ভীষণ মিথ্যে এক প্রেমের গল্পের ফ্রেমে বন্দী ছিল।

ফেসবুক বা মুখবইতে এমন মুখোশ পরা সুখী দাম্পত্যের গল্পের পাঠক বা ছবির দর্শক আমরা অনেকেই। হয়তো এই যুগলের সংসারে ঝগড়া, সন্দেহ, মারামারি, ভাঙচুর নিত্যদিনের। দুজনে এক ছাদের নিচে থাকলেও দুজনের বসবাস দুই ঘরে। চার দেয়ালের বাইরে যাতে সে খবর না পৌঁছায়, সে জন্যই ফেসবুকে লাল-নীল সংসারের গল্প সাজান তাঁরা। বিবাহবার্ষিকী, জন্মদিন, ছুটির দিন, সামাজিক অনুষ্ঠান, সন্তানের স্কুলে প্যারেন্টস মিটিং, নতুন কোনো রান্না, একে অন্যকে দেওয়া উপহার চটজলদি আপলোড হয়ে যায় ফেসবুকে। স্ট্যাটাসে ফিলিং লাভড দিতে ভুল হয় না। মিথ্যে গল্পটা চলতেই থাকে।

গল্প মিথ্যে জেনেও আবার অনেকে ফেসবুক কমেন্টে তাদের মিছেমিছি প্রশংসা করেন। দুই পক্ষের মধ্যেই অদ্ভুত এক মিথ্যের খেলা চলে। যাঁরা কমেন্টের বন্যায় ভাসান, তাঁরাই আড়ালে মেতে ওঠেন পরচর্চায়। পায়রার খোপের মতো গায়ে গায়ে লাগানো ফ্ল্যাট থেকে ভেসে আসা ঝগড়া, কান্না, ভাঙচুর বা মারধরের শব্দের নিখুঁত বর্ণনা দেন।

ZPgqN3A.jpg


দাম্পত্যের এমন ছবি সকলের কাছেই কাম্য

ফেসবুক এখন আমাদের নাগরিক জীবনের গুরুত্বপূর্ণ একটা অংশ। করোনাভাইরাসের সংক্রমণের সময় লকডাউনে ঘরে বসে থাকার বড় একটা সময়ই আমরা পার করে দিই ফেসবুক ও বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) হিসাবে, ২০২০ সালের জানুয়ারির তুলনায় দেশে গত মে মাস শেষে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ১ কোটি ৮১ লাখের মতো বেড়েছে। সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১ কোটি ৭৩ লাখে। এ সময় ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ বেড়েছে ৮৩ শতাংশ। দাঁড়িয়েছে ৯৮ লাখে। বিবিসির এক প্রতিবেদনে জানা যায়, ফেসবুক বলছে, গত বছর যেসব দেশে লকডাউন দেওয়া হয়েছিল, সেসব দেশে ফেসবুক ব্যবহারের হার বেড়েছে ৫০ শতাংশ।

ফেসবুকেই আমরা জেনে যাই কার বাড়িতে কী রান্না হলো, কার জীবনসঙ্গী কী উপহার দিলেন, লকডাউনে ঘরের কাজে জীবনসঙ্গী কতটা সহায়তা করছেন। কোন দম্পতি একসঙ্গে নতুন কোন বই পড়লেন, নতুন কোন সিনেমা দেখলেন। ফেসবুকের সব স্ত্রী বা স্বামীকেই আমরা ভীষণ দায়িত্বশীল, সৎ, কর্তব্যপরায়ণ, আবেগপ্রবণ হিসেবে দেখি। এসব নির্দোষ গল্পে কোনো দোষ নেই। কেউ তাঁর জীবনের কোন গল্প সবার সঙ্গে ভাগ করবেন, সেটাও একান্তই তাঁর নিজের সিদ্ধান্ত।

ফেসবুকে নিজেদের কাটানো সুন্দর সময় নিয়ে ছবি বা স্ট্যাটাস দেওয়ার অভ্যাস অবশ্যই ইতিবাচক। তবে তা যেন মেকি না হয়। কারণ, প্রশ্ন তোলা হয় তখনই, যখন গল্পগুলো সাজানো হয়ে ওঠে। স্ত্রীকে নির্যাতন করেন এমন স্বামী যখন ফেসবুকে স্ত্রীর প্রতি দায়িত্বশীলতা নিয়ে স্ট্যাটাস দেন। অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে যখন কোনো স্বামী বা স্ত্রী সুখী দাম্পত্যের গল্প সাজান। তখন সেটা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে।

tprRDCn.jpg


দুজনের মধ্যে কলহ হলে সেটা নিজেরাই মিটিয়ে নেওয়া ভালো

এ প্রসঙ্গে শোনা যাক বাবুল ও প্রিয়ার (ছদ্মনাম) গল্প। প্রিয়া জানেন, তাঁর স্বামী উদাসীন। সংসারের বাজার, স্ত্রী-সন্তানের প্রতি দায়িত্ব তিনি সব সময় পালন করেন না। বাবুলের আচরণের প্যারামিটার খুব বেশি ওঠানামা করে। হয়তো একদিন তিনি সংসারের সব বাজার ও রান্না করলেন। ১৫ দিন আর কোনো খবর নেই। প্রিয়া এভাবেই নিজেকে অভ্যস্ত করে তুলেছেন। বাবুলকে নিয়ে তাঁর অভিযোগ এক জায়গায়। বাবুল ফেসবুকে নিজের দায়িত্বশীল আচরণের ভাবমূর্তি তুলে ধরেন প্রবলভাবে। সন্তানকে একদিন পড়ালে বা একদিন রান্না করলে ফেসবুকে ভিডিও, ছবি, স্ট্যাটাস চলে যায়। সবাই জানেন, বাবুল পরিবারের প্রতি ভীষণ যত্নশীল। বাবুলের এই অভ্যাস নিয়ে নিয়মিতই ঝগড়া হয় দুজনের।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে মানুষের এমন স্ববিরোধিতাকে সামাজিক সংকট বলে মনে করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সুলতানা মোস্তফা খানম। তাঁর মতে, সমাজে এখন লোক দেখানো বা শো-অফ বিষয়টা অনেক বড় হয়ে উঠেছে। শো-অফের প্রতিযোগিতার কারণে সবাই এখন পাদপ্রদীপের আলোয় থাকতে চায়। হয়তো ফেসবুকে অন্য সুখী দম্পতির ছবি দেখে নিজে সুখী না হলেও সুখের ছবিটা তুলে ধরতে চান। অনেক সময় নিজের সামাজিক মর্যাদা রক্ষা করার জন্যও মানুষ এ রকম অদ্ভুত আচরণ করতে পারে।

এ প্রসঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতার কথাও জানালেন এই সমাজবিদ। তাঁর খুব পরিচিত এক স্বজনের দাম্পত্য জীবনের সংকট নিয়ে নানা গুঞ্জন চলছিল। এরপরই ওই স্বজন নিজের স্ত্রীর সঙ্গে কাটানো সুন্দর সময়ের ছবি বা স্ত্রীকে নিয়ে বিভিন্ন স্ট্যাটাস ফেসবুকে পোস্ট করতে শুরু করেন। সমাজকে বোঝাতে চান, তাঁরা আসলে সুখী দম্পতি। এই সমাজবিদ বলেন, ফেসবুকের ছবি বা স্ট্যাটাস আমরা যেমন গুছিয়ে দিই, তেমনি বাস্তবে নিজেদের জীবনটা সুন্দর করে গোছানোর চেষ্টা করলেই পরিবার ও সমাজ সুন্দর হবে।

আর সে ক্ষেত্রে দরকার কাছের মানুষের ভূমিকা; বিশেষ করে বন্ধুদের বা পরিবারের ভূমিকা জোরালো হওয়া চাই। কোন কারণে এই বহুরূপী মনোভাব, সেটা বুঝে তাদের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টা অনেক সময় সমাধানের পথে নিয়ে যাওয়া যায়।

* শুভা জিনিয়া চৌধুরী, ঢাকা
 

Users who are viewing this thread

Back
Top