শিশুদের দুধদাঁত পড়ে স্থায়ী দাঁত ওঠার প্রক্রিয়াটি স্বাভাবিক। কিন্তু স্থায়ী দাঁত নড়ে যাওয়ার বিষয়টি স্বাভাবিক নয়। কারণ ছাড়া স্থায়ী দাঁত নড়ে বা পড়ে যায় না। মুখের সঠিক যত্ন নিলে দাঁতের এ অনাকাঙ্ক্ষিত সমস্যা এড়ানো যায়। আর দাঁত সুস্থ থাকলে শরীর ও মন সুস্থ থাকে।
দাঁত নড়া বা পড়ে যাওয়ার নানা কারণ রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম কয়েকটি হলো:
আঘাত: দুর্ঘটনায় মুখে আঘাত পেলে দাঁত নড়ে যেতে পারে। বিশেষ করে সড়ক দুর্ঘটনা, অন্য কোনোভাবে আঘাত অথবা খেলাধুলার সময় কিংবা পড়ে গিয়ে আঘাত লেগে দাঁত নড়ে যেতে পারে। জোরে শক্ত কোনো কিছু কামড় দিলে দাঁত নড়তে পারে। অপচিকিৎসায়ও দাঁত নড়ে যেতে পারে।
দাঁতের ধারক কলায় প্রদাহ: প্রতিটি দাঁত মাড়ি ও চোয়ালের হাড়ের সাহায্যে বিশেষ ঝিল্লির মাধ্যমে নিজ অবস্থানে দৃঢ়ভাবে আটকে থাকে। সঠিক উপায়ে নিয়মিত দাঁত পরিষ্কার না করলে অথবা দাঁতের ফাঁকে খাবার আটকে থাকলে দাঁত ও মাড়ির মধ্যকার স্থানে জীবাণুর সংক্রমণে প্লাক ও পরে পাথর হতে পারে। এর থেকে ব্যাকেরিয়া ও তাদের তৈরি ক্ষতিকারক পদার্থ ক্রমান্বয়ে মাড়ি ও হাড় থেকে দাঁতের বন্ধন নষ্ট করে দাঁত দুর্বল করে দেয়। আবার আক্রান্ত দাঁতের সংক্রমণে দাঁতের মধ্যকার মজ্জা নষ্ট করে চোয়ালের হাড়ের মধ্যে প্রদাহ হতে পারে। এর থেকে সিস্ট বা টিউমার হতে পারে। এতে ধারক কলা নষ্ট হয়ে দাঁত নড়ে যেতে পারে।
হরমোনের প্রভাব: নারীদের ক্ষেত্রে প্রোজেস্টেরন ও ইস্ট্রোজেন হরমোনের আধিক্যের প্রভাবে গর্ভাবস্থায় ও মেনোপজের সময় চোয়ালের হাড় ক্ষয় হয়ে দাঁত নড়ে যেতে পারে।
অসম কামড়: দাঁতে দাঁত ঘষা বা দাঁত কামড়ানোর অভ্যাসের কারণে দাঁত নড়তে পারে। আবার অনেকের দাঁত এলোমেলো, উঁচু–নিচু। এসব দাঁত পরিষ্কার রাখা কষ্টসাধ্য। এসব ক্ষেত্রে কোনো কোনো দাঁতে অতিরিক্ত চাপ পড়ে। ফলে দাঁত নড়ে যেতে পারে।
হাড় ক্ষয় রোগ: ক্যালসিয়াম কিংবা ভিটামিন ডি–স্বল্পতার কারণে অস্টিওপোরোসিস বা হাড়ের ঘনত্ব কমে হাড় ক্ষয় রোগ হয়। এ রোগে চোয়ালের হাড় ক্ষয় হয়ে দাঁত নড়ে যেতে পারে।
অপচিকিৎসা: অনেকেই অননুমোদিত ব্যক্তির কাছে গিয়ে দাঁতের চিকিৎসা নেন। এতে অপচিকিৎসার শিকার হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি। বিশেষ করে অর্থোডন্টিক চিকিৎসা, ফিলিং বা ক্যাপের সঙ্গে স্বাভাবিক কামড় না মিললে অথবা পাশের দাঁতের সঙ্গে সংযোগ যথাযথ না হলে দাঁত নড়ে যেতে পারে।
কারণ যা–ই হোক না কেন, দাঁত নড়ে যাওয়া কারও কাম্য নয়। কাজেই নিয়মিত দাঁতের যথাযথ যত্ন নিতে হবে, দন্ত বিশেষজ্ঞের পরামর্শে দাঁতের যেকোনো চিকিৎসা নিতে হবে। আর দাঁত যদি নড়েই যায়, যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
* ডা. মো. আসাফুজ্জোহা, সদস্যসচিব, বাংলাদেশ ফেডারেশন অব ডেন্টাল সায়েন্স