ইংরেজি ভাষায় দক্ষতার একটি পরীক্ষা হলো আইইএলটিএস। স্পিকিং, লিসেনিং, রাইটিং ও রিডিং—এই চার অংশ মিলিয়ে ৯-এর মধ্যে ৭.৫ পেলেই অধিকাংশ শিক্ষার্থী সন্তুষ্ট হন। সেখানে কাজী মুস্তাবীন নূর পেয়েছেন ৯-এ ৯! আইইএলটিএসে ভালো নম্বর পাওয়ার কৌশল তাঁর কাছ থেকেই জেনে নিন।
যেকোনো ভাষা শেখার প্রধান শর্ত immersion, বাংলায় বলা যায় আকণ্ঠ অবগাহন। আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে যেমন বাংলার রাজ্যে ডুবে থাকি, তেমনি ইংরেজির চর্চায় সাধ্যমতো ডুবে যেতে হবে।
টেবিল-চেয়ারে বসে পড়ার পাশাপাশি প্রতিদিন কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে ইংরেজিতে কথা বলা, কিছু ইংরেজি সিরিজ ও সিনেমা দেখা, দিনে একটি ইংরেজি পত্রিকা পড়ার অভ্যাস ও আপনার দক্ষতা অনুযায়ী প্রচুর বই পড়া এই চর্চার অন্তর্ভুক্ত। তবে হাজার হোক, আইইএলটিএস একটি পরীক্ষা। এখানে পরীক্ষার কিছু কৌশল কাজে লাগালে হাতেনাতে ফল পাওয়া যায় বলেই আমি মনে করি।
লিসেনিং
১. বাক্যগুলোতে কী তথ্য দেওয়া হচ্ছে, লিসেনিং সেকশনে তা কান পেতে শুনতে হবে। বিভিন্ন ধরনের উচ্চারণ শুনে ভয় না পেয়ে দেখুন, কী বলছে বুঝতে পারছেন কি না। বুঝতে পারাটাই অর্ধেক যুদ্ধজয়।
২. কি-ওয়ার্ড বা মূল শব্দগুলো দাগিয়ে ফেলতে হবে। পরীক্ষার সময় যে রেকর্ডিং বাজানো হয়, সেখানে প্রতিটি অংশের প্রশ্নের ওপর চোখ বুলিয়ে নেওয়ার কিছু সময় দেওয়া হয়। সেই সময়টা কাজে লাগিয়ে প্রশ্নে কী চাওয়া হচ্ছে, সে–জাতীয় শব্দ পেনসিল দিয়ে দাগিয়ে নেবেন। তারপর যখন রেকর্ডিংয়ে কথোপকথন শুরু হবে, তখন দেখবেন সেই শব্দগুলোর দিকেই মনোযোগ আকৃষ্ট হবে। তখন চট করে উত্তর লিখে ফেলবেন।
৩. আমার সবচেয়ে অপ্রিয় ছিল ম্যাপের প্রশ্ন, আর সেটির জন্য একটি সহজ টিপ ('টিপস' নয়, সেটি বহুবচন)। ম্যাপের 'স্টার্ট' লেখা তিরচিহ্নিত অংশটি আপনার দিকে ঘুরিয়ে নেবেন, উত্তর-দক্ষিণ-পূর্ব-পশ্চিম-ডান-বাঁ যেন আপনার মোতাবেক হয়।
রিডিং
১. এই অংশে অনেকে প্যাসেজের আগে প্রশ্নগুলো দেখে নিতে পছন্দ করেন। প্রথমে যে প্যাসেজগুলোই পড়তে হবে, এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। আপনি কোন পদ্ধতিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন, তা পরখ করে দেখুন।
২. আবারও বলব, কি-ওয়ার্ড দাগিয়ে নিন। প্রশ্নে দাগিয়ে নিতে পারেন, তখন প্যাসেজে সেই শব্দ বা তার সমার্থক শব্দ পেলেই বুঝবেন এখানে উত্তর লুকিয়ে আছে। আইইএলটিএসের প্যাসেজগুলো আসলে প্যাসেজ নয়, একেকটা এসে (essay)। তাই দ্রুতপঠন ও গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলো পড়তে পারা (স্কিম করা) খুব জরুরি।
৩. ম্যাচিং–জাতীয় প্রশ্ন এলে যে অপশনগুলো ব্যবহার করে ফেলেছেন, তার পাশে উত্তরের নম্বর (সাধারণত রোমান নিউমেরাল) লিখে ফেলুন। অপশনগুলো কেটে দেবেন না, বরং নম্বর লিখলে পরে ভুল হয়ে গেলে রাবার দিয়ে মুছে উত্তর বদলে নেওয়ার সুযোগ থাকে।
রাইটিং
১. লেখার হাত সবার ভালো হবে, এমন কোনো কথা নেই, তবে নিজেকে চ্যালেঞ্জ করার অনেক সুযোগ রয়েছে। আমার বাবা যেভাবে ছোটবেলায় আমাকে দৈনন্দিন বিষয়ে লেখাতেন, আপনিও তেমনটা করতে পারেন। নিয়মিত লেখার অভ্যাস থাকলে গ্রামারের ভুল সংশোধন করে নিলে লেখার মান উন্নত হবেই।
২. আমি বলব, 'পার্ট টু' দিয়ে শুরু করুন ও ৩০ মিনিটে ২৫০ শব্দ লিখতে নিজেকে প্রস্তুত করুন। পরীক্ষার হলে যদিও দ্বিতীয় সেকশনের জন্য ৪০ মিনিট পাবেন, তবু সাবধানের মার নেই। ভূমিকার মধ্যে একটি বাক্যে কী কী যুক্তি দিচ্ছেন, তা পরীক্ষককে জানিয়ে দিন। প্রতিটি যুক্তির জন্য একটি প্যারা লিখুন, মোট চারটির বেশি নয়। শেষে উপসংহারে যুক্তিগুলোর কথা আবার নিয়ে আসুন এবং বলুন যে এই যুক্তিগুলোর কারণে আপনি এমনটা মনে করেন।
৩. প্রথম সেকশনে একটি গ্রাফ বা চার্টের ওপর লিখতে হয়। প্রথমেই দেখবেন কোনো বড় ধরনের উন্নতি বা অবনতি গ্রাফ দেখে বুঝতে পারছেন কি না। প্রথম প্যারাগ্রাফে সেটা লিখুন। তারপর বাকি গ্রাফটি ধীরে ধীরে বুঝিয়ে লিখুন।
স্পিকিং
১. স্পিকিংকে যমের মতো ভয় পাওয়ার কিছু নেই, এমনটা বলছি না। তবে ভয় পেলে চলবে না। মক টেস্ট দেওয়ার সময় স্পিকিং মক দিতে এবং মক পরীক্ষকের পরামর্শ নিতে ভুলবেন না।
২. স্পিকিংয়ের মাঝামাঝি পর্যায়ে এক মিনিট প্রস্তুতি নিয়ে দুই মিনিট উপস্থিত বক্তৃতা অংশটির জন্য আয়নার সামনে, বন্ধুদের সঙ্গে ও আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে চর্চা করলে মানুষের সামনে কথা বলার জড়তা কেটে যাবে।
৩. চেষ্টা করবেন কোনো শব্দ ভুলভাল বলে ফেললে একটু কৌতুকের ছলে সামলে নিতে। আমার পরীক্ষার সময় আমি বেশ ভয় পেয়েছিলাম বুঝতে পেরে হেসে বলেছি, 'I shouldn't be nervous today of all days right?' পরীক্ষকও আমার সঙ্গে হেসে ফেলেন। তাতে আমার স্পিকিং খারাপ হয়নি।