What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

মাংস খাওয়া দাঁতের জন্য উপকারী (1 Viewer)

sActAuU.jpg


সুস্বাস্থ্যের জন্য শাকসবজি খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আমরা জানি বা সচরাচর শুনে থাকি, কিন্তু সুস্থ–সবল দাঁতের রহস্য হয়তো লুকিয়ে আছে মাংসে। অনেকের কাছে নতুন লাগলেও বিষয়টি নিয়ে প্রথম গবেষণা হয় প্রায় ১০০ বছর আগে।

আমেরিকান বিজ্ঞানী ড. ফেরনাল্ড ১৯২২ থেকে ১৯৩৬ সাল পর্যন্ত হার্ভার্ড ডেন্টাল স্কুল জাদুঘরের তত্ত্বাবধায়ক থাকাকালে প্রথম এর প্রমাণ পান। তিনি, তীব্র শীতপ্রধান এলাকায় বসবাসকারী এস্কিমোদের দাঁতের ৯০টি ছাপ মডেল সংগ্রহ করে সেসব মডেলের ওপর গবেষণা করে দেখতে পান, মাত্র ৯টি অনুপস্থিত ছাড়া বাকি ৬১৬টি দাঁত বেশ নিখুঁত ও মজবুত আছে।

oZMeMYB.jpg


বরফে ঢাকা এলাকায় বসবাস বলে এস্কিমোরা মূলত শিকার করা পশু–পাখির মাংসের ওপর নির্ভরশীল। পরবর্তী সময়ে ড. ফেরনাল্ড কিছুটা দক্ষিণে অবস্থিত মেক্সিকোর ইউকটানবাসীদের দাঁতের ওপর একই গবেষণা পরিচালনা করেন। ইউকটানে বসবাসকারীরা প্রধানত শাকসবজি খেয়ে জীবনধারণ করেন। গবেষণায় দেখা যায়, তাঁদের খুব অল্প বয়স থেকেই দাঁতে সমস্যা দেখা দেয় এবং মধ্য বয়সে পৌঁছাতে পৌঁছাতে বলতে গেলে কোনো দাঁতই আর অবশিষ্ট থাকে না। ড. ফেরনাল্ড তাঁর গবেষণার উপসংহার টানেন, সবচেয়ে সুস্থ দাঁতের অধিকারী তাঁরাই, যাঁরা বেশি মাংস আহার করেন।

আরেকজন কানাডিয়ান ডেন্টিস্ট ডা.ওয়াটসন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের আদিবাসীদের খাদ্যাভ্যাস ও দাঁতের স্বাস্থ্য নিয়ে গবেষণা করেছিলেন চল্লিশের দশকে। গবেষণার খাতিরে তিনি চষে বেড়ান উত্তর-দক্ষিণ আমেরিকা, ইউরোপ, আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া ও পলিনেশিয়ার বহু দেশে। তিনি মূলত জানতে চাইছিলেন, পশ্চিমা দেশগুলোতে এত সুযোগ–সুবিধা ও পরিচর্যা নেওয়ার ব্যবস্থা থাকার পরও কেন মানুষ দাঁতের নানাবিধ সমস্যায় ভুগছে। আদিবাসীদের খাদ্যাভ্যাস থেকে তিনি জানতে পারেন, তাদের খাদ্যতালিকায় প্রক্রিয়াজাত খাবার থাকে না, বরং মাছ, মাংস, ডিম ইত্যাদি বেশি খায়। তিনি আরও জানতে পারেন, তাদের খাবারে পশ্চিমাদের চাইতে অন্তত চার গুণ বেশি ক্যালসিয়াম ও মিনারেল থাকে, যা তাদের দাঁতের ক্ষয় থেকে রক্ষা করে; সুন্দর–সবল, সারিবদ্ধ দাঁতসহ পরিপাটি চোয়াল গঠনে ভূমিকা রাখে।

upP8rWO.jpg


যদিও অধিকাংশ হৃদ্‌রোগ বিশেষজ্ঞ ও পুষ্টিবিদ মাংস খাওয়া পরিহার করার পরামর্শ দেন, কিন্তু সাম্প্রতিক আরেক গবেষণালব্ধ ফলাফল থেকে মিশিগান ইউনিভার্সিটি ও নিউক্যাসেল ইউনিভার্সিটি বিবৃতি দেয় যে তারা বিভিন্ন পশু–পাখি ও মাছের মাংসে আর্জিনিন নামে একপ্রকার অ্যামিনো অ্যাসিড পেয়েছে, যা দাঁতের ক্ষতি সাধনকারী ব্যাকটেরিয়ার কলোনি ও প্লাক ভেঙে দেয়। দাঁতের গায়ে, দাঁত ও মাড়ির ফাঁকে আটকে থাকা খাবারে ব্যাকটেরিয়া এই প্লাক গঠন করে এবং পরিষ্কার না করা হলে এই প্লাক পরবর্তী সময়ে শক্ত হয়ে পাথরের মতো হয়ে যায়, যাকে টাটার বলা হয়। সাধারণ ব্রাশের মাধ্যমে এই টাটার পরিষ্কার করা যায় না, এ জন্য একজন ডেন্টিস্টের শরণাপন্ন হওয়া জরুরি। দাঁতের গায়ে জমে থাকা টাটার থেকে দন্ত্যক্ষয়, মাড়িতে প্রদাহসহ মুখগহ্বরের নানাবিধ রোগ হতে পারে। মাংসে থাকা আর্জিনিন ব্যাকটেরিয়ার কলোনি ধ্বংসের মাধ্যমে শুরুতেই প্রতিরোধ গড়তে সহায়তা করে।

রেড মিট বা লাল মাংস বলতে যেসব পশুর মাংস দেখতে অনেকটা লাল রঙের তাদেরকে বোঝায়। যেমন গরু, ছাগল, ভেড়া, হরিণ ইত্যাদির মাংস। লাল মাংস ফসফরাস, জিঙ্ক, আয়রনের, ভিটামিন বি১২-এর একটি উৎকৃষ্ট উৎস। জিঙ্ক ও আয়রন শরীরে সেলেনিয়াম নামের অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট তৈরি করে, যা দাঁতের শক্তি বাড়ায় আর ফসফরাস দাঁতের বহিরাবরণ গঠন/ পুনর্গঠনে ভূমিকা রাখে। এ ছাড়া ভিটামিন বি১২ স্নায়ু ও রক্তকোষের জন্য উপকারী।

he7DUgO.jpg


এখন জানা প্রয়োজন ঠিক কী পরিমাণ মাংস খেলে আপনার অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি থাকবে না। যতই পুষ্টিগুণ থাকুক না কেন, স্বাস্থ্যকর খাবারের তালিকায় মাংস কখনোই অপরিহার্য নয়। অতিরিক্ত মাংস খেলে হৃদ্‌রোগ, ডায়াবেটিস, স্ট্রোক ও কিছু ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকছেই। তবে ভারসাম্য বজায় রেখে আপনি নিয়মিত মাংস খেতে পারবেন। বিশ্ব ক্যানসার গবেষণা তহবিলের মতে, সাপ্তাহিক ৩৫০ থেকে ৫০০ গ্রাম মাংস খাওয়া নিরাপদ বলা যায়। যাঁরা ইতিমধ্যে কোনো রোগে আক্রান্ত হয়েছেন বা যাঁদের ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হয়েছিল, তাঁরা কোনোভাবেই ডাক্তারের অনুমতি ছাড়া মাংস আহার করবেন না। দাঁত হারালেও বিকল্প চিকিৎসা নিয়ে আপনি খাওয়া–দাওয়া করে বেঁচে থাকতে পারবেন, কিন্তু হৃদ্‌রোগ, স্ট্রোক, ক্যানসার এসব প্রাণঘাতি হতে পারে। অতএব মাংস খান তবে পরিমিত।

* লেখক: চৌধুরী মিরাজ মাহমুদ ছগীর | ডেন্টাল সার্জন, দ্য ডেন্টাল চেম্বার, উত্তরা
 

Users who are viewing this thread

Back
Top