ঈদুল আজহা চলেই এল। কোরবানির সময় কত রকম কাজ। মাংস কাটাকুটি, বিলিবণ্টন, রান্নাবান্না আর খাওয়াদাওয়া ছাড়াও বড় একটা সময় যাবে পরিচ্ছন্নতার পেছনে। পরিবারের সবার সঙ্গে সময় কাটানো তো ঈদের অনবদ্য আনন্দ। তবে যত দ্রুত সম্ভব রক্ত, বর্জ্য পরিষ্কার করে নেওয়া উচিত অবশ্যই। নিজের বাড়ি তো বটেই, আশপাশের পরিবেশ যাতে দূষিত না হয়, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। এ ছাড়া মাংস নাড়াচাড়া করার ফলে ঘরের মেঝে বা রান্নাঘর অপরিচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। তাই সেসব জায়গা দ্রুত জীবাণুমুক্ত করে নেওয়া দরকার।
যেখানে কোরবানি করা হয়, চলে প্রাথমিক কাটাকুটির কাজ সেই জায়গা পরিষ্কার রাখা সামাজিক দায়বদ্ধতা। স্থানীয় সরকারি ব্যবস্থাপনার সহায়তায় এসব স্থান পরিষ্কার করুন চটজলদি। ব্লিচিং পাউডার ও প্রবহমান পানিতে পরিষ্কার করে কিছুটা ব্লিচিং পাউডার ছড়িয়ে দিন। বাসায় মাংস নিয়ে আসার সময় সিঁড়িতে বা লিফটে রক্ত চুইয়ে পড়ল কি না, খেয়াল রাখুন। আর পড়লে তা পরিষ্কার করা নিয়ে যেন 'ঠেলাঠেলি' বা দায়িত্ব এড়ানোর প্রবণতা সৃষ্টি না হয়, সেটাও খেয়াল রাখতে হবে সবাইকেই। কোরবানির আত্মত্যাগের শিক্ষা প্রতিফলিত হোক প্রতিবেশীদের প্রতি আচরণেও। সবাই মিলেমিশে ঘরের বাইরেরটা তো বটেই, ভেতরটাও কীভাবে পরিষ্কার, জীবাণুমুক্ত আর সতেজ রাখা যায়, সে বিষয়ে এমন নানান পরামর্শ দিলেন ঢাকার গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তাসমিয়া জান্নাত
ঘরের বাইরে ঘর
l কোরবানির কাজে ব্যবহৃত সামগ্রী, যা পরে আর কাজে লাগানো যাবে না, তা স্থানীয় ব্যবস্থা অনুসারে যথাস্থানে ফেলতে হবে।
l সিঁড়ি বা লিফটে রক্ত পড়লে সাবান-পানি দিয়ে পরিষ্কার করুন।
l ঘরের বাইরের পরিচ্ছন্নতা প্রতিটি পরিবারের পক্ষ থেকেই তদারক করতে হবে, যাঁরা ওই একই দালানের বাসিন্দা। নির্দিষ্ট কাউকে এর দায়িত্ব দিলেও সবারই খেয়াল রাখতে হবে, দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি কাজগুলো সঠিকভাবে সম্পাদন করছেন কি না।
l পশুপালনে ব্যবহৃত পানি বা খাবারের পাত্র পরবর্তী বছর ব্যবহার করবেন মনে করলে তা সাবান-পানি দিয়ে পরিষ্কার করুন। সংরক্ষণ করার আগে সম্ভব হলে রোদে দিন।
সুস্থ-সতেজ থাকুন আপন অন্দরে
l মেঝেতে রক্ত পড়লে প্রথমে সাবান-পানি (প্রথম দফায় কুসুম গরম পানি নেওয়া ভালো) দিয়ে পরিষ্কার করে এরপর জীবাণুনাশক দ্রবণ দিয়ে পুনরায় মুছে নিন।
l যেখানে খাবার জিনিস রাখা হয়, সেখানে রক্ত পড়লে সাবান-পানি দিয়ে পরিষ্কার করার পর দুর্গন্ধ দূর করে সতেজতা আনতে লেবুর রস বা সিরকা মিশ্রিত পানি দিয়ে পুনরায় মুছে নিন।
l মাংসের পাত্রের জন্য অধিক ক্ষারযুক্ত সাবান বেছে নিন। সঙ্গে যোগ করতে পারেন ছাই। তবে ধোয়ার আগেই চর্বি চেঁছে ফেলে দিতে চেষ্টা করুন, তাহলে পরবর্তীকালে পানি নির্গমন নল বা পাইপে চর্বি আটকে যাওয়ার আশঙ্কা কমে। পাত্র, এমনকি হাত ধোয়ার জন্য কুসুম গরম পানিও ভালো।
l কাটাকুটির কাজে ব্যবহৃত সরঞ্জামও একই পদ্ধতিতে পরিষ্কার করে শুকিয়ে রাখুন। দীর্ঘ সময়ের জন্য সংরক্ষণ করতে চাইলে ছোট কাপড় বা তুলায় তেল নিয়ে সেগুলোতে ঘষে এরপর শুকনা কাপড়ে মুড়িয়ে রাখুন।
l ঘরে সুগন্ধি ফুল রাখতে পারেন ঈদের সময়টায়। এতে কোনো ধরনের বাজে গন্ধ এড়িয়ে চলা সহজ হবে।
আরও যা
l ময়লার বালতিতে মাত্র একবার ব্যবহারোপযোগী পলিব্যাগ বিছিয়ে রাখলে বালতির গায়ে ময়লা আটকে রইবে না।
l ফ্রিজের পানি নির্গমন অংশ বা কাছাকাছি মেঝেতে পানি জমছে কি না, খেয়াল রাখুন ঈদের পরের কয়েকটা দিনও। পানি জমলে দ্রুত পরিষ্কার করুন, নইলে মশা জন্মাতে পারে। মেঝে পরিষ্কার করতে তেমন পদ্ধতিই অবলম্বন করুন, মেঝেতে রক্ত পড়লে যেমনটা করেছিলেন।
* রাফিয়া আলম, ঢাকা