What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

ই-কমার্সে প্রতারণা ঠেকাতে যা করা যায় (1 Viewer)

qduWZe0.jpg


করোনাকালে তো বটেই, করোনার আগেও ব্রডব্যান্ড টেকনোলজির প্রসার, মোবাইল টেলিকম ও ইন্টারনেটের বিকাশ ও সরকারের পক্ষ থেকে ডিজিটাল খাতকে উৎসাহ দেওয়ার ফলে দেশে ই-কমার্স এমনকি এফ-কমার্সেরও বেশ বিকাশ হয়েছে। ইতিমধ্যে এই বর্ধিঞ্চু ডিজিটাল কমার্স বিশেষ করে ই-কমার্স খাত নিয়ে বেশ সমালোচনাও উঠেছে। পণ্য কিনে ভোক্তাদের ঠকে যাওয়া, বিক্রেতা কর্তৃক নিম্নমানের পণ্য প্রদান, টাকা নিয়ে পণ্য না দেওয়া, পণ্য বিক্রির পরেও গ্রাহক কর্তৃক পণ্য গ্রহণ না করা বা ফিরিয়ে দেওয়াসহ কিছু ই-কমার্স কোম্পানির অনেকটা ব্যাংকের মতো আচরণ করার অভিযোগও পাওয়া গেছে। পণ্য কিনে অনেক ক্রেতার প্রতারিত হওয়ারও অভিযোগ এসেছে।

সেদিকে লক্ষ রেখেই বাংলাদেশ ব্যাংক বিশেষ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ই-কমার্স প্রক্রিয়া সুচারুভাবে পরিচালনার জন্য সম্প্রতি এক নির্দেশিকা জারি করেছে। সরকারের জাতীয় ডিজিটাল কমার্স পলিসি-২০২০-এর আলোকে এ নির্দেশিকা প্রণয়ন করা হয়।

নির্দেশিকা জারির ফলে ই-কমার্স ব্যবস্থাপনা সরকারের আরও নিবিড় পর্যবেক্ষণের মধ্যে এল। ডিজিটাল কমার্স পরিচালনায় স্বচ্ছতা, দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা এই নির্দেশনার উদ্দেশ্য বলে বলা হয়েছে। নির্দেশনায় মার্কেটপ্লেসে বিক্রয়যোগ্য পণ্য ও সেবার তথ্য প্রদর্শন ও ক্রয়-বিক্রয়ের সাধারণ নিয়মাবলি দেশের সংশ্লিষ্ট সব প্রচলিত আইন ডিজিটাল কমার্স পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।

এতে বলা হয়, ডিজিটাল কমার্স বা ই-কমার্সের মাধ্যমে মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) বা নেটওয়ার্ক ব্যবসায় পরিচালনা করা যাবে না। ডিজিটাল মাধ্যমে নেশা সামগ্রী, বিস্ফোরক দ্রব্য বা অন্য কোনো নিষিদ্ধ সামগ্রী বা সেবা ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে না। জুয়া বা অনলাইন বেটিং বা অনলাইন গ্যাম্বলিংয়ের আয়োজন বা অংশগ্রহণ করা যাবে না। ডিজিটাল মাধ্যমে ওষুধ এবং চিকিৎসাসামগ্রী ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের লাইসেন্স গ্রহণ করতে হবে। অনুরূপভাবে কোনো দাহ্য পদার্থ ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রেও বিস্ফোরক অধিদপ্তরের লাইসেন্স গ্রহণ করতে হবে।

বিক্রেতার ওয়েবসাইটে কোনো বিশেষ সফটওয়্যার বা কুকিজ থাকলে তা ক্রেতাকে পূর্বেই অবহিত করতে হবে। ক্রয়-বিক্রয়কালে কোনো ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করার প্রয়োজন হলে কী কী তথ্য সংগ্রহ করা হবে, তথ্য কোথায় সংরক্ষিত থাকবে, পরবর্তী সময়ে কোথায় তা ব্যবহৃত হবে এবং কী প্রক্রিয়ায় তা প্রসেস করা হবে, তা জানিয়ে ক্রেতার পূর্বানুমতি গ্রহণ করতে হবে। ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহের বিষয়ে টার্মস অ্যান্ড কন্ডিশন ক্রেতা দেখেছেন তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য ওয়েবসাইটে চেকবক্স বা সম্মতি গ্রহণের ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে। ডিজিটাল কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারের পূর্বানুমোদন ব্যতীত কোনো ধরনের লটারি বা র‌্যাফল ড্রর আয়োজন করতে পারবে না। এ ক্ষেত্রে পেনাল কোড ১৮৬০-এর ২৯৪ (বি) ধারাও প্রযোজ্য হবে বলে বলা হয়েছে।

সব ধরনের ডিজিটাল ওয়ালেট, গিফট কার্ড, ক্যাশ ভাউচার বা অন্য কোনো মাধ্যম যা অর্থের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে, তা বাংলাদেশ ব্যাংকের বিদ্যমান নীতিমালা অনুসরণ এবং প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি ব্যতিরেকে তৈরি বা প্রণয়ন, ব্যবহার বা ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি ব্যতিরেকে ডিজিটাল মাধ্যমে কোনো ধরনের অর্থ ব্যবসাও পরিচালনা করা যাবে না। ক্রেতাকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কোনো পণ্য বা সেবা ক্রয়ের জন্য বাধ্য করা যাবে না। সব ডিজিটাল কমার্স পরিচালনাকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে ট্রেড লাইসেন্স, ভ্যাট নিবন্ধন, ট্যাক্স আইডেনটিফিকেশন নম্বর (টিআইএন), ইউনিক বিজনেস আইডেনটিফিকেশন (ইউবিআইডি) নম্বর বা পারসোনাল রিটেইল অ্যাকাউন্ট (পিআরএ) নম্বরের অন্তত একটি গ্রহণ করতে হবে এবং তার মার্কেটপ্লেস বা সোশ্যাল মিডিয়া পেজে তা প্রদর্শন করতে হবে।

সব ডিজিটাল কমার্স প্রতিষ্ঠানের জন্য পর্যায়ক্রমে ইউবিআইডি বাধ্যতামূলক করা হবে। স্বচ্ছতার জন্য ব্যবসায় লেনদেনসংক্রান্ত সব তথ্যাদি অন্ততপক্ষে ৬ বছর পর্যন্ত সংরক্ষণ করতে হবে এবং সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত যেকোনো সংস্থা চাহিবামাত্র তা সরবরাহ করতে হবে। মার্কেটপ্লেসের স্বত্বাধিকারী তার তালিকাভুক্ত বিক্রেতার বিক্রয়কৃত পণ্যের দাম বুঝে পাওয়ার সর্বোচ্চ ১০ দিনের মধ্যে প্রযোজ্য কমিশন ও ডেলিভারি চার্জ কেটে রেখে সংশ্লিষ্ট তালিকাভুক্ত বিক্রেতাকে পুরো দাম পরিশোধ করতে হবে। তবে মার্কেটপ্লেসের স্বত্বাধিকারী ও বিক্রেতা বা মার্চেন্টের মধ্যে ভিন্নতর কোনো চুক্তি থাকলে সে অনুযায়ী পাওনা পরিশোধ করা যাবে।

মার্কেটপ্লেসের মালিক নয় এমন বিক্রেতা বা মার্চেন্টের পণ্য বা সেবা বিক্রয়ের জন্য উপস্থাপনের পূর্বে মার্কেটপ্লেস কর্তৃপক্ষ ও বিক্রেতা বা মার্চেন্টের মধ্যে একটি চুক্তি সম্পাদন করতে হবে। চুক্তি সম্পাদনের সময় মার্কেটপ্লেস কর্তৃপক্ষ বিক্রেতা বা তার যোগ্য প্রতিনিধির নাম, ছবি, জাতীয় পরিচয়পত্র, মোবাইল নম্বর, ঠিকানা ইত্যাদিসহ পূর্ণাঙ্গ তথ্য সংরক্ষণ করার ব্যবস্থা নেবে। ডিজিটাল কমার্স মার্কেটপ্লেস বা ফেসবুক পেজে ক্রয়-বিক্রয়, মূল্য ফেরত, পণ্য ফেরত বা পণ্য পরিবর্তন, ডেলিভারি পদ্ধতি, ডেলিভারির সময় এবং অন্যান্য শর্তাবলি বাংলায় লিপিবদ্ধ থাকতে হবে এবং স্পষ্টভাবে তা প্রদর্শন করতে হবে।

শর্তাবলি বাংলা ভাষার পাশাপাশি প্রয়োজনে অন্য ভাষাতেও লিপিবদ্ধ করা যাবে। বাংলাদেশের প্রচলিত আইন বা বিধির সঙ্গে সাংঘর্ষিক কোনো শর্তাবলি মার্কেটপ্লেস সোশ্যাল মিডিয়া পেজে লিপিবদ্ধ করা যাবে না। বিদেশি ডিজিটাল কমার্স প্রতিষ্ঠানকে বাংলাদেশে ব্যবসা করার ক্ষেত্রে অবশ্যই এ দেশে নিবন্ধিত হতে হবে এবং ব্যবসা পরিচালনা করার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিতে হবে। বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান মার্কেটপ্লেসে ঘোষিত পণ্য বা সেবার ঘোষিত মূল্যের চেয়ে অতিরিক্ত অর্থ দাবি করতে পারবে না।

মার্কেটপ্লেসে বিক্রয়যোগ্য পণ্য বা সেবার যথাযথ বিবরণ যেমন, পণ্যের পরিমাপ, উপাদান, রং, আকৃতি, গুণগত মান ইত্যাদি, মূল্য এবং ডেলিভারিসহ অন্যান্য চার্জ যদি থাকে, তা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে। পণ্য বা সেবাকে চিহ্নিত করার জন্য পরিপূর্ণ বর্ণনা, যা পণ্য বা সেবাকে চিহ্নিত করতে সক্ষম, এমন তথ্যাদি প্রদান করতে হবে। স্পষ্টতার জন্য বাস্তবসম্মত হলে পণ্যের ছবি, ভিডিও, রং, আকৃতি, পরিমাপ, ওজন, উপাদান ইত্যাদি এবং সেবার ক্ষেত্রে সেবার ধরন, সেবা প্রদান পদ্ধতি, পরিমাপ যোগ্যতা (যদি থাকে) ইত্যাদি তথ্য প্রদান করতে হবে। পণ্যের বিস্তারিত বিবরণ (ব্র্যান্ড, মডেল, ডেলিভারি সময়, কান্ট্রি অব অরিজিন ইত্যাদি) ক্রেতাদের জন্য দিতে হবে, যাতে ক্রেতা জেনে-বুঝে পণ্য বা সেবা ক্রয় করতে পারে।

পণ্যের ক্ষেত্রে পণ্যের উপাদান ও উপাদানের পরিমাণ, রাসায়নিক গঠন (সম্ভব হলে) ইত্যাদি বিস্তারিত বিবরণ প্রদান করতে হবে। পণ্য ব্যবহারে মানুষ ও প্রাণীর স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর কিছু রয়েছে কি না অথবা শিশুদের জন্য স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে কি না, তা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে। যেসব পণ্যের ক্ষেত্রে কোনো মান নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের সনদ গ্রহণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে, সেসব ক্ষেত্রে পণ্যের বিবরণে মান নিয়ন্ত্রণ সনদের উল্লেখ থাকতে হবে। মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য বা দ্রব্যসামগ্রী বিক্রয় বা সরবরাহ করা যাবে না। মেধাস্বত্ব সংরক্ষণের নিয়ম যথাযথভাবে প্রতিপালন করতে হবে। কোনো নকল বা ভেজাল পণ্য প্রদর্শন বা বিক্রয় করা যাবে না। বিক্রয়ের জন্য প্রদর্শিত পণ্য বিক্রেতা বা তার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণে থাকতে হবে এবং বিজ্ঞপ্তিতে কী পরিমাণ পণ্য স্টকে রয়েছে, তা উল্লেখ করতে হবে এবং প্রতিটি বিক্রয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ওই পণ্যের স্টক হালনাগাদ করতে হবে।

বিক্রয়ের জন্য প্রদর্শিত পণ্য বিক্রেতা বা তার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণে না থাকলে 'স্টকে নেই' বা 'আউট অব স্টক' কথাটি স্পষ্টভাবে পণ্যের পাশে লিপিবদ্ধ থাকতে হবে। নিত্যপণ্য ও খাদ্যসামগ্রীর বা সংখ্যায় প্রকাশ করা যায় না এমন পণ্য বা সেবার ক্ষেত্রে স্টকের পরিমাণের পরিবর্তে 'এভেইল্যাবল ফর ডেলিভারি' কথাটি লেখা থাকতে হবে। অগ্রিম মূল্য আদায়ের ক্ষেত্রে প্রদর্শিত পণ্য অবশ্যই দেশের ভেতরে 'রেডি টু শিপ' (মার্কেটপ্লেসের নিজস্ব নিয়ন্ত্রণে বা মার্কেটপ্লেসে নিবন্ধিত থার্ড পার্টি বিক্রেতার নিয়ন্ত্রণে) পর্যায়ে থাকতে হবে। সম্পূর্ণ মূল্য গ্রহণের পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ডেলিভারি পারসন বা প্রতিষ্ঠানের নিকট হস্তান্তর করার মতো অবস্থায় নেই এমন পণ্যের ক্ষেত্রে পণ্যমূল্যের ১০%-এর বেশি অগ্রিম গ্রহণ করা যাবে না।

তবে বাংলাদেশ ব্যাংক অনুমোদিত এসক্রো সার্ভিসের মাধ্যমে ১০০% পর্যন্ত অগ্রিম গ্রহণ করা যাবে। কোনো ধরনের অফার, ডিসকাউন্ট, ফ্রি ডেলিভারি বা অন্য কোনো সুবিধা থাকলে তা পরিষ্কারভাবে পণ্যের বর্ণনায় থাকতে হবে। কোনো তৃতীয় পক্ষ বা মার্চেন্টের পণ্য বা সেবা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে বিক্রয় হলে বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির নাম ওয়েবসাইটে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকতে হবে। মার্কেটপ্লেস কর্তৃপক্ষ বিক্রেতা বা মার্চেন্টের যোগাযোগের ঠিকানা, ফোন নম্বর, ই-মেইল ইত্যাদি সংরক্ষণ করবে এবং কোনো অভিযোগ বা বিরোধ দেখা দিলে প্রয়োজনে তা সরবরাহ করতে হবে।

বিক্রয়ের জন্য প্রদর্শিত পণ্যের সম্পূর্ণ মূল্য পরিশোধের পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে পণ্য বা পণ্য সামগ্রী ডেলিভারি ম্যান বা ডেলিভারি সংস্থার নিকট হস্তান্তর করতে হবে এবং ক্রেতাকে তা টেলিফোন, ই-মেইল বা এসএমএসের মাধ্যমে জানাতে হবে। এ ক্ষেত্রে ডেলিভারি সংস্থা বা মার্কেটপ্লেস ট্র্যাকিং সিস্টেম ব্যবহার করতে পারে। পণ্যের সম্পূর্ণ মূল্য পরিশোধ করা হয়ে থাকলে ক্রেতা ও বিক্রেতা একই শহরে অবস্থান করলে ক্রয়াদেশ গ্রহণের পরবর্তী সর্বোচ্চ ৫ (পাঁচ) দিন এবং ভিন্ন শহরে বা গ্রামে অবস্থিত হলে সর্বোচ্চ ১০ (দশ) দিনের মধ্যে পণ্য ডেলিভারি প্রদান করতে হবে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের ক্ষেত্রে ডেলিভারির সময় আরও সংক্ষিপ্ত হবে এবং ক্রেতাকে তা ক্রয়াদেশ গ্রহণের সময় সুস্পষ্টভাবে অবহিত করতে হবে।

কোনো একটি পারচেজ অর্ডারে একাধিক পণ্য থাকলে আলাদা আলাদা পণ্যের জন্য সাধারণত আলাদা আলাদা ডেলিভারি চার্জ আরোপ করা যাবে না। তবে মার্কেটপ্লেসে পণ্যে আলাদা আলাদা ডেলিভারি প্রদান করা হলে আলাদা আলাদা চার্জ গ্রহণ করা যাবে। এ ক্ষেত্রে ক্রেতাকে ক্রয়াদেশ নিশ্চিত করার সময় বা ইনভয়েসে পূর্বেই অবহিত করতে হবে। পণ্য বিক্রয় ও সরবরাহের ক্ষেত্রে মার্কেটপ্লেসে প্রদর্শিত পণ্যের মান ও সঠিকতা মার্কেটপ্লেসের স্বত্বাধিকারীকে নিশ্চিত করতে হবে। তবে বিক্রেতা বা মার্চেন্টের সঙ্গে ভিন্নতর চুক্তি থাকলে সে মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। সময়মতো ডেলিভারি প্রদান এবং মালামালের সুরক্ষার জন্য বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান ডেলিভারি প্রতিষ্ঠান বা ডেলিভারি পারসনের সঙ্গে প্রয়োজনীয় চুক্তি সম্পাদন করবে। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ইনস্যুরেন্সও গ্রহণ করা যেতে পারে।

পণ্য সরবরাহের সময় মুদ্রিত বিল প্রদান করতে হবে, যাতে প্রদেয় বা প্রদত্ত ভ্যাট ও আয়কর (যদি থাকে) উল্লেখ থাকবে। যেসব পণ্যের ওয়ারেন্টি বা গ্যারান্টি আছে, তার জন্য ওয়ারেন্টি বা গ্যারান্টি পিরিয়ড ও সেবা প্রাপ্তির স্থান ও যোগাযোগের বিস্তারিত ঠিকানাসহ অন্যান্য শর্ত সংবলিত কার্ড বা ডিজিটাল কার্ড পণ্যের সঙ্গে সরবরাহ করতে হবে। পচনশীল দ্রব্য দ্রুততম সময়ে ডেলিভারি দেওয়ার ব্যবস্থা নিতে হবে এবং ডেলিভারির সময় যাতে পণ্যের কোনো ক্ষতি না হয়, সে জন্য মার্কেটপ্লেস কর্তৃপক্ষ যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

পণ্য ও সেবার বিষয়ে অভিযোগের জন্য মার্কেটপ্লেস কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। অভিযোগ গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় অ্যাপ বা প্ল্যাটফর্মে ফোন নম্বর, ই-মেইল বা অন্যান্য যোগাযোগের মাধ্যম স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে। প্রতিটি ডিজিটাল কমার্স প্রতিষ্ঠানে একজন কমপ্লায়েন্স অফিসার নিয়োগ দিতে হবে, যিনি ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরসহ অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় সাধন করতে পারেন। কোনো পণ্যের বা সেবা প্রদান বিষয়ে ক্রেতার অভিযোগ রেকর্ডের যথাযথ ব্যবস্থা রাখতে হবে এবং যেকোনো অভিযোগ প্রাপ্তির ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সমাধানের ব্যবস্থা করে ক্রেতাকে ফোন, ই-মেইল বা এসএমএসের মাধ্যমে তা জানাতে হবে। পণ্যের বা সেবার বিষয়ে ক্রেতা বা অন্য কারও রেটিং এবং মতামত জানানোর ব্যবস্থা ওয়েবসাইট, অ্যাপ কিংবা প্ল্যাটফর্মে রাখতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে ক্রেতারা পণ্যের ব্যাপারে অন্য ক্রেতাদের মতামত বা রিভিউ দেখে ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান (মার্কেটপ্লেস বা মার্চেন্ট) বা এর কোনো স্টাফ বা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান বা মার্চেন্টের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কেউ রিভিউ বা রেটিংয়ে অংশগ্রহণ করতে পারবে না। এ রিভিউ মুছে ফেলা যাবে না। সম্পূর্ণ মূল্য পরিশোধের পর মানুষের নিয়ন্ত্রণ বহির্ভূত কোনো কারণে (ফোর্স মেজার) ক্রেতার চাহিদা মোতাবেক পণ্য সরবরাহ করা সম্ভব না হলে, অর্ডার দেওয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ক্রেতাকে তা ফোন, এসএমএস, ই-মেইল বা অন্যান্য মাধ্যমে জানাতে হবে। এ ক্ষেত্রে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সম্পূর্ণ অর্থ ফেরত দিতে হবে এবং অন্য কোনো পণ্য ক্রয় করার জন্য প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে বাধ্য করা যাবে না।

এ নির্দেশিকার বিধান প্রতিপালনে ব্যর্থ হলে কর্তৃপক্ষ বিক্রেতা বা মার্কেটপ্লেসের ট্রেড লাইসেন্স, কোম্পানি রেজিস্ট্রেশন, ভ্যাট নিবন্ধন ইত্যাদি বাতিল করাসহ সংশ্লিষ্ট মার্কেটপ্লেস নিষিদ্ধকরণসহ অন্যান্য আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে বা যথাযথ কর্তৃপক্ষ বরাবর প্রতিকারের জন্য প্রেরণ করতে পারবে। এ নির্দেশিকা প্রতিপালনে ব্যর্থ হলে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি বা ক্রেতা বা কোনো সরকারি বা বেসরকারি সংস্থা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরসহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট আদালতে আইনানুগ প্রতিকারের জন্য অভিযোগ দায়ের করতে পারবে। ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সুষ্ঠুভাবে ডিজিটাল কমার্স পরিচালনা বিষয়ে সহযোগিতা প্রদান করবে।

ক্রেতা কোনো মাধ্যমে (ডেবিট, ক্রেডিট কার্ড, ব্যাংক ট্রান্সফার, মোবাইল ব্যাংকিং, অন্যান্য) অগ্রিম মূল্য পরিশোধ করলে এবং বিক্রেতা কোনো কারণে নির্ধারিত সময়ে সে পণ্য সরবরাহ করতে ব্যর্থ হলে মূল্য পরিশোধের সর্বোচ্চ ১০ দিনের (সংশ্লিষ্ট অর্থ প্রদানকারী মাধ্যমের ব্যবহৃত সময় ব্যতীত) মধ্যে ক্রেতার পরিশোধিত সম্পূর্ণ অর্থ যে মাধ্যমে ক্রেতা অর্থ পরিশোধ করেছেন, সেই একই মাধ্যমে (ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ব্যাংক ট্রান্সফার, মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস ইত্যাদি) ফেরত দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে কোনো চার্জ থাকলে মার্কেটপ্লেস বা বিক্রেতাকে তা বহন করতে হবে।

মূল্য ফেরতের বিষয়ে ক্রেতাকে ই-মেইল, এসএমএস, ফোন বা অন্য মাধ্যমে অবহিত করতে হবে। তবে এ ক্ষেত্রে ক্রেতার পরিশোধিত মূল্যের অতিরিক্ত অর্থ প্রদান করা যাবে না। ক্রেতা যথাসময়ে পণ্য বা সেবা গ্রহণে ব্যর্থ হলে এ সময়সীমা শিথিল করা যাবে। যেকোনো ধরনের ঘোষিত ডিসকাউন্ট বিক্রয় কার্যক্রমের সঙ্গে সঙ্গে কার্যকর করতে হবে। ক্যাশব্যাক অফার মূল্য পরিশোধের পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে কার্যকর হতে হবে। ক্যাশব্যাক অফার বা মূল্য ছাড় অফারের ঘোষিত অর্থ সংশ্লিষ্ট পণ্য বা সেবা বিক্রয় সম্পন্ন হওয়ার পর কোনো ডিজিটাল কমার্স প্রতিষ্ঠানের ওয়ালেটে জমা রাখা যাবে না। ডিজিটাল কমার্সে লেনদেনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক অনুমোদিত 'এসক্রো সার্ভিস' গ্রহণ করা যেতে পারে।

দেশে ই-কমার্স নিয়ে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বৈঠকটি ছিল বহুপক্ষীয়। এতে ক্রেতা-বিক্রেতা-সরকার সব মহলের অংশগ্রহণ ছিল। এ সময় সিদ্ধান্ত হয়, আগে পণ্য দিতে হবে, পরে টাকা নিতে হবে (ক্যাশ অন ডেলিভারি)। অগ্রিম অর্থ নেওয়ার পাঁচ দিনের মধ্যে পণ্য সরবরাহ করতে হবে। আনন্দের বিষয় বাংলাদেশ ব্যাংকও ইতিমধ্যে ই-কমার্স পেমেন্টের নীতিমালা ঘোষণা করেছে। ই-কমার্স বিকাশ ও ভোক্তাস্বার্থ রক্ষায় উভয় উদ্যোগকেই আমরা স্বাগত জানাই। সেই সঙ্গে দ্রুত এর বাস্তবায়নও প্রয়োজন।

আমরা দেখেছি ই-কমার্সে সবচেয়ে বড় বিষয় হলো গ্রাহকের আস্থা। তা রক্ষা করা না গেলে তাতে দু-একটি প্রতিষ্ঠান নয়, গোটা শিল্পের ওপরই মানুষ আস্থা হারাবে। সে জন্য যেসব অভিযোগ আসছে, প্রশাসনিকভাবেই সেগুলো দ্রুত খতিয়ে দেখা দরকার। কেবল ভোক্তার স্বার্থেই নয়, বরং ই-কমার্স খাতের শৃঙ্খলা আনয়নে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। দু-একটি প্রতিষ্ঠানের জন্য ই-কমার্স খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তা কারও কাম্য নয়। ভোক্তা যাতে প্রতারিত না হন, বাজারে যাতে প্রতিযোগিতা থাকে বা সব প্রতিষ্ঠানের জন্য সমান সুযোগ থাকে, সে জন্য এ খাতে স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর বা যথাযথ পরিচালন নীতিমালা দ্রুত বাস্তবায়ন প্রয়োজন।

ই-কমার্স খাতকে সরকারিভাবে কঠোর নিয়ন্ত্রণের পক্ষপাতী নন অনেকেই। তাঁদের মতে, ভুলভাবে বা কড়াকড়িভাবে খাতটি নিয়ন্ত্রণ করা হলে তা নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। গত কয়েক বছরে ই-কমার্স খাতটি যেভাবে বড় হচ্ছে, যে হারে প্রবৃদ্ধি হচ্ছে, নতুন নতুন উদ্যোক্তা তৈরি হচ্ছে, রেগুলেশন করা হলে এসব বিষয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলেও অনেকের ধারণা। এখন যদি সরকার রেগুলেশন করে ই-কমার্স খাতের ব্যবসায়ীদের লাইসেন্স গ্রহণ বাধ্যতামূলক করে দেয়, তাহলে এখন যে হারে খাতটিতে উদ্যোক্তা তৈরি হচ্ছে, তাতে ভাটা পড়বে। অন্যদিকে অনেকে আবার বলছেন, এ কথার আন্তর্জাতিক ভিত্তি খুঁজে পাওয়া যায় না। চীন, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড যেসব দেশে ই-কমার্স বিকাশ লাভ করেছে, সেখানেই শক্তিশালী আইনি কাঠামো রয়েছে। বাংলাদেশের মতো স্বল্প শিক্ষিত মানুষের দেশে শুধু ভোক্তা সচেতন করে ই-কমার্সের প্রতারণা রোধ করা যাবে না। এ জন্য চাই শক্তিশালী আইনি কাঠামো ও তার সুষ্ঠু প্রয়োগ।

ভোগান্তি এড়াতে অনলাইন বাজার ব্যবস্থা অর্থাৎ ই-কমার্স সহায়ক উপযুক্ত পরিচালন নীতিমালা দ্রুত বাস্তবায়ন প্রয়োজন। এ জন্য চাই সুনির্দিষ্ট রূপরেখা। আর্থিক লেনদেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং ইন্টারনেটের গতি বাড়ানো। আস্থাশীল ই-কমার্স পরিবেশ সৃষ্টি করাও দরকার।

* মামুন রশীদ | অর্থনীতি বিশ্লেষক।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top