What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

করোনাকালে ফ্লু (1 Viewer)

H6j0WCS.jpg


জ্বর, সর্দি-কাশি তো ফি বছর আর হরহামেশার রোগ। ঋতুবদলের সময়, বৃষ্টি কিংবা শীত মৌসুমে নানান কারণেই এ ধরনের উপসর্গ দেখা দিত, এখনো দেয়। তবে তা এখনকার মতো ভীতিজাগানিয়া পরিস্থিতি সৃষ্টি করত না। এই করোনাকালে জ্বর, ঠান্ডা–কাশি হলেই করোনার আতঙ্কে ভুগছেন মানুষ। কী করবেন, কী করবেন না, তা নিয়ে দেখা দিচ্ছে দ্বিধা। কেউ কেউ তড়িঘড়ি অ্যান্টিবায়োটিক শুরু করে দিচ্ছেন, কেউ আবার স্টেরয়েড পর্যন্তও খেয়ে ফেলছেন। আবার কিছু মানুষ জ্বর-কাশিকে বিন্দুমাত্র গুরুত্ব না দিয়ে দিব্যি চলছেন সর্বত্র। দুটির কোনোটিই কিন্তু বুদ্ধিমানের কাজ নয়।

রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে অবহেলা করার কারণে অনেকেই জটিলতার সম্মুখীন হন এবং পরবর্তী সময়ে বিপর্যস্ত হয় তাঁর পুরো পরিবার। উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে অতিরিক্ত আতঙ্কিত হয়ে পড়া কিংবা বিষয়টিকে একেবারেই গুরুত্ব না দেওয়া—কোনোটাই কাম্য নয়। বরং সচেতন ব্যক্তি হিসেবে নিজের স্বাস্থ্যগত দিকের প্রতি যেমন যত্নশীল হতে হবে, তেমনি আপনার সংস্পর্শে আসা অন্য ব্যক্তিরাও যাতে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে না পড়েন, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। নিতে হবে যুক্তিযুক্ত আর সঠিক সিদ্ধান্ত।

জ্বর-কাশি মানেই কি করোনা

সাধারণভাবে জ্বর হলো সংক্রমণের প্রথম উপসর্গ। এই সংক্রমণ ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়া দিয়ে হতে পারে। ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস (সাধারণভাবে 'ফ্লু' বলা হয়ে থাকে), করোনাভাইরাস বা ডেঙ্গু ভাইরাস—যেকোনোটিই হতে পারে এই সময়ের জ্বরের কারণ। আবার অন্য জীবাণুর সংক্রমণও যে হচ্ছে না, তা–ও নয়। প্রতিটি ক্ষেত্রেই জ্বর, মাথাব্যথা, কাশি, গলাব্যথা, সর্দি—এসব উপসর্গের যেকোনোটি থাকতে পারে। তবে শরীরব্যথা, পাতলা পায়খানা, অত্যধিক শারীরিক দুর্বলতা, স্বাদ গন্ধের পরিবর্তন—এ ধরনের উপসর্গ থাকলে করোনা সন্দেহ করাটা অমূলক নয়।

তবে কেবল উপসর্গ দেখে রোগ নিশ্চিত করা যদিও সম্ভব নয়, তবে করণীয় সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। আর একটা বিষয় হলো করোনাভাইরাসের নতুন নতুন ধরন দিয়ে সংক্রমণ হলে ভিন্ন প্রকৃতির উপসর্গ দেখা দেওয়া কিন্তু খুবই স্বাভাবিক। তাই সচেতনতা আবশ্যক।

জ্বর-সর্দি-কাশি হলে কী করবেন

এমন উপসর্গ দেখা দিলে অবশ্যই একটি আলাদা ঘরে নিজেকে অন্তরীণ করতে হবে (আইসোলেশন)। শিশু বা বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে (যিনি নিজের দেখভাল নিজে করতে সক্ষম নন) সঙ্গে একজন সেবাদানকারীর সাহায্য প্রয়োজন। সেবাদানকারী ব্যক্তিটিও সেই ঘরেই থাকবেন, ঘর থেকে বের হবেন না। আলাদা ঘরে অবস্থান করার সময়টিতে খাওয়া-বিশ্রাম তো আলাদা হচ্ছেই, বাথরুমটিও সুস্থ ব্যক্তিদের থেকে আলাদা হওয়া প্রয়োজন। বাড়িতে কোনো ঘর লাগোয়া বাথরুম থাকলে সেই ঘরটিকেই আইসোলেশনের জন্য নির্ধারণ করা উচিত। মহামারির এই দুঃসময়ে সবার স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তার জন্যই এ ধরনের উপসর্গ হলে সাসপেক্টেড বা সন্দেহভাজন কোভিড-১৯ রোগী হিসেবে এই অন্তরীণ থাকার বিষয়টি জরুরি।

কোভিড-১৯ পরীক্ষা কি করাতেই হবে

জ্বর, কাশি, গলাব্যথা, ঠান্ডা—এ ধরনের উপসর্গ দেখা দেওয়ার দিন থেকে বিগত ১৪ দিনের মধ্যে কোনো কোভিড-১৯ রোগীর সংস্পর্শে এলে, জনসমাগম বা ভিড়ের জায়গায় (যেমন রেস্তোরাঁয় খাওয়া, নিমন্ত্রণ, উৎসব, মার্কেট ইত্যাদি) গিয়ে থাকলে কোভিড ধরে নিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই কর্তব্য। আর যাঁরা কোথাও যাননি, তাঁদের উপসর্গ দেখা দেওয়ার চার থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে উন্নতি না হলে কিংবা এর মধ্যে শারীরিক অবস্থার অবনতি দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন। কোভিড-১৯ পরীক্ষার পাশাপাশি চিকিৎসক প্রয়োজনে ডেঙ্গু জ্বরের পরীক্ষা এবং অন্যান্য পরীক্ষাও করতে দেবেন। আর প্রথম চার থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে উপসর্গের তীব্রতা যাদের ক্ষেত্রে কমে গিয়েছে, তাঁদের জন্য কোভিড-১৯ কিংবা অন্যান্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানো হয়তো অত জরুরি নয়, কিন্তু সতর্কভাবে নিজেকে পর্যবেক্ষণে রাখুন।

ঘরে থেকে চিকিৎসা

চিকিৎসা শুরু হবে উপসর্গ অনুযায়ী। জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল, আর কুসুম গরম পানিতে মাথা ও শরীর মুছে নেওয়া। জ্বর এলে গোসল করা যাবে না—এমন ধারণা কিন্তু একেবারেই ঠিক নয়। বরং কুসুম গরম পানিতে গোসল করে নেওয়াই ভালো। আর প্রয়োজন প্রচুর পানি ও তরল খাবার খাওয়া। গলাব্যথা থাকলে গরম পানীয় (আদা চা, তুলসী চা, লেবু চা প্রভৃতি) কাজে দেবে। সর্দি-কাশির জন্য অ্যান্টিহিস্টামিনজাতীয় ওষুধই যথেষ্ট। তবে হাঁপানি রোগীদের জন্য সব ধরনের অ্যান্টিহিস্টামিন আবার প্রযোজ্য নয়। এই ঘরোয়া চিকিৎসায় ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত ব্যক্তি সুস্থ হয়ে উঠবেন, মৃদু কোভিড সংক্রমণ হয়ে থাকলে সেই রোগীও। তবে সবাইকে ঘরে অন্তরীণ থাকতে হবে সাত দিন। আর কোভিড-১৯ পজিটিভ হলে তো অন্তত ১৪ দিন আলাদা থাকতেই হবে।

আর যদি বাড়িতে অক্সিজেন কমে যেতে থাকে, প্রচণ্ড দুর্বলতা দেখা দেয়, জ্বর বাড়তে থাকে, খাওয়াদাওয়া বন্ধ হওয়ার উপক্রম, ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তি হয়ে থাকেন; তবে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন, দরকার হলে হাসপাতালে ভর্তি হন। নিজে নিজে বা অন্যের কথায় ওষুধ সেবন করবেন না।

প্রতিরোধে করণীয়

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে যেসব স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা প্রয়োজন, ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসকে কিন্তু প্রতিরোধ করবে সেই সু-অভ্যাসগুলোই। মাস্ক পরা, সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা, সাবানপানি দিয়ে হাত ধোয়া, হাত না ধুয়ে চোখ-মুখ-নাক স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকা, যেখানে–সেখানে থুতু না ফেলা—এই নিয়মগুলো আজ সবাই জানেন। এগুলো যেমন নিজে মেনে চলতে হবে, তেমনই অন্যকেও এগুলো মেনে চলতে উৎসাহিত করতে হবে।

করোনাভাইরাস প্রতিরোধের টিকা নিয়ে ফেলুন সুযোগ পেলেই। ফ্লুর টিকা সবার জন্য জরুরি নয়। যাঁদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম (যেমন ক্যানসারে আক্রান্ত ব্যক্তি, কেমোথেরাপি বা এমন কোনো ওষুধ গ্রহণ করছেন, যাতে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে যায়), ১৮ বছরের কম বয়সী যাদের বারবার জ্বর-কাশি হয়, ৬৫ বছরের বেশি বয়সী যাঁরা দীর্ঘমেয়াদি কোনো রোগে ভুগছেন (যেমন ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদ্‌রোগ, কিডনির সমস্যা), তাঁরা ফ্লুর টিকা নিতে পারেন।

টিকা নিয়ে কিছু কথা

করোনাভাইরাস প্রতিরোধের টিকার দ্বিতীয় ডোজ নেওয়া সম্পন্ন করার পরও কিন্তু করোনা সংক্রমণ হতে দেখা যাচ্ছে। টিকা নেওয়া ব্যক্তির সংক্রমণ হলেও তাঁর জটিলতার ঝুঁকি কম, কিন্তু তাঁর কাছ থেকে অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি কিন্তু কম নয়। আর ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসও রূপ বদলায়, তাই টিকা নিতে হয় প্রতিবছরই, আর টিকা নিলেই যে ইনফ্লুয়েঞ্জা হবে না, এমনটাও নয়। তাই সব টিকা নেওয়া হয়ে গিয়ে থাকলেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাটাই সবচেয়ে জরুরি বিষয়।

* ডা. মো. মতলেবুর রহমান | সহযোগী অধ্যাপক, মেডিসিন বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল | অনুলিখন: ডা. রাফিয়া আলম
 

Users who are viewing this thread

Back
Top