What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

লকডাউনে দুলছে মন (1 Viewer)

sZtuau0.jpg


ছেলেটি ঢাকায় থাকেন। মা–বাবা সুদূর মফস্বলে। ধরা যাক, নাহিন নামের ছেলেটি ঢাকায় চাকরি করেন একটি কাচঘেরা করপোরেট অফিসে। যদিও লকডাউন, তবু জরুরি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন বলে এই সময়েও নিয়মিত অফিসে আসতে হয় তাঁকে। হঠাৎই খবর এল, নাহিনের বাবার জ্বর। দুদিন ধরে।

'জ্বর' শুনলেই তো এখন শঙ্কা দুলে ওঠে মনে, তাহলে কি করোনা!

ঝমঝম শব্দে মহানগরীকে ভাসিয়ে দিচ্ছে আষাঢ়ে বর্ষা, প্রকৃতিতে 'এমন দিনে তারে বলা যায়' আবহ। কিন্তু নাহিন বলে ডাকা হচ্ছে যাঁকে, বর্ষণের রোমান্টিসিজম তাঁকে কি স্পর্শ করছে এখন? কাচঘেরা ঘরে বসে অবিরল আষাঢ়স্য বাদলধারা ঝরতে দেখে তাঁর মনেও মুষলধারে বৃষ্টি নেমেছে, ঝরঝর সে বৃষ্টি তাঁর দূরে থাকা বাবার জন্য। বাবার করোনা হলে কী করবে? যদি অক্সিজেন দরকার হয়, পাওয়া যাবে তো?

লকডাউনের স্থবিরতায় নাহিন তো এ সময় ছুটে গিয়ে ছুঁতেও পারবেন না বয়োবৃদ্ধ বাবাকে। 'এখন তিনি পরাজিত, কেউ দেখে না একলা মানুষ'—আবুল হাসানের কবিতার পঙ্‌ক্তির মতো কী এক ব্যথাতুর অনুভূতি নীরবে ঘাই মারে মনে! আকাশের মেঘ মনের নানান শঙ্কার সঙ্গে যেন আরেকটু দুলে দুলে ওঠে।

লকডাউনে এমন দুলে ওঠা অনুভূতির মুখোমুখি সবাই-ই। নাহিন যেমন ভাবছেন নিজের বাবাকে নিয়ে, তেমনি আকাশে মুখকালো মেঘের গুমোট আনাগোনায়, ফেসবুকজুড়ে মেঘলা আমেজে একের পর এক বর্ষাসিক্ত ছবি ভেসে উঠতে দেখেন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী অনিতা। আনমনে যদি বলে ওঠেন, 'আহা, ক্যাম্পাস খোলা থাকলে নির্ঘাত বৃষ্টিতে ভিজতাম', তখন তাঁর মন বেঁধে রাখে সাধ্য কার! এমনিতে তো ক্রমাগত অনলাইনে ক্লাস আর অ্যাসাইনমেন্ট তাঁর জীবনে এখন চরম বাস্তবতা। চতুর্থ শ্রেণিপড়ুয়া তাঁর ছোট ভাই অনলাইনে ক্লাসে অভ্যস্ত হলেও মাঝেমধ্যে হাঁসফাঁস করে। 'বাইরে চলো, বাইরে চলো' বলে শোরগোল তোলে। কখনোবা কিছু না করতে পেরে চেয়ে থাকে চুপচাপ। তাঁর মাও এখন ত্যক্ত। সংসারে খুটখাট গেলেই আছে। আর অনিতা?

কত দিন মেঘ কেটে রোদেলা স্বাভাবিক সকাল দেখা হয়নি তাঁর!

নাহিনের মতো অনিতাও ছদ্মনাম। তবে তাঁদের গল্পগুলো নির্জলা সত্যি। বছর দেড়েক হতে চলল হয় লকডাউন, না হয় সীমিত পরিসরে চলাফেরা—এই তো আমাদের জীবনছবির ফ্রেম। এই ফ্রেমে আবদ্ধ হয়ে ঘরের জানালার গ্রিলের ফাঁক গলে হাত বাড়িয়ে বৃষ্টির ছাট ছুঁতে ছুঁতে এখন খানিকটা স্মৃতির ভেলায় ভাসতেই পারেন অনিতা। কিন্তু ফেসবুক মেসেঞ্জারের শব্দ তাঁকে ফিরিয়ে আনল বাস্তবের মাটিতে। চট্টগ্রাম থেকে তাঁর এক বন্ধু লিখেছে, 'সুইসাইডাল হয়ে আছি।'

এ শুধু এক টুকরো কথা নয়, তা উপলব্ধি করেই পাল্টা মেসেজে অনিতা লিখল, 'কেন?'

বন্ধুর জবাব, 'মেন্টালি ব্রোকেন। ডাউন ফিল করতে করতে তলানিতে এসে ঠেকেছি।'

এবার আরেকটু সবিস্তারে জানতে চাইল অনিতা। উত্তরে বন্ধুটি যা বলল, তা হয়তো এখন অনেকেরই বাস্তবতা, 'ছোটখাটো ব্যবসা শুরু করেছিলাম। কিছুদিন পরপর লকডাউন। ঘাটতি আর টানতে পারছি না। সংসার খরচ কমাতে হয়েছে। এ থেকেই পারিবারিক ও ব্যক্তিগত ঝামেলার শুরু। একটার সঙ্গে একটার লিংক। অবস্থা এমন যে কেউ কাউকে বোঝার উপায় নেই।'

6KhwM58.jpg


সময় কাটুক গানে গানে

কাউকে বোঝো না তুমি, তোমাকে বোঝে না কেউ—সময়টাই কি এমন?

'কাউকে চেনো না তুমি তোমাকে চেনে না কেউ সেই তো ভালো'—মহীনের ঘোড়াগুলির বিখ্যাত এই গান যতই ভালো হোক—কেউ কাউকে না বোঝা, মনের গুমোট মেঘকে ঝরাতে না পারা—সে যে ততোধিক কালো। আমাদের গল্পের নাহিন বা অনিতা আজকাল হঠাৎ হঠাৎই নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে উঠে অকারণ খেপে যায়, তা কি এ কারণেই?

উন্নত-অনুন্নতসহ গোটা বিশ্বেই মানসিক স্বাস্থ্যের অবস্থা এখন নাজুক। করোনাকালে দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর বেশ কিছু গবেষণা হয়েছে। অনলাইনভিত্তিক ছোটখাটো এসব গবেষণার ফল বলছে, এ সময়ে মানুষের মধ্যে উদ্বেগ ও বিষণ্নতার পারদের উচ্চতা অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি।

পৃথিবীতে এসেছে 'নিউ নরমাল' দিন। লকডাউন আজ নিরেট বাস্তবতা। তবু 'পরানের গহিন ভিতর' থেকে কবির ভাষায় করোনাকে উদ্দেশ করে যদি বলা যায়, 'আমি কার কাছে গিয়া জিগামু সে দুঃখ দ্যায় ক্যান?'

হয়তো রবীন্দ্রনাথের শেষ লেখার মতোই বলতে হবে, 'মেলেনি উত্তর...পেল না উত্তর'।

উত্তরের আশায় না থেকে আরও কিছু পাত্রপাত্রীর কথা তবে বলে ফেলি। আর তাঁদের ডাকা যাক মনীষা ও তূর্য নামে। নাম যেহেতু কাল্পনিক, তাই নামগুলো নিজের মতো আপনিও বসিয়ে নিতে পারেন। কিন্তু যে ঘটনাগুলোর কথা এখানে বলা হচ্ছে তা মোটেই বানোয়াট নয়, বরং জীবন থেকে নেওয়া।

দুবছর আগে মনীষার জন্মদিনে তাঁকে শুভেচ্ছা জানিয়ে নির্মলেন্দু গ‌ুণের কবিতা উদ্ধৃত করে ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছিলেন তূর্য, 'হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে,/ মন বাড়িয়ে ছুঁই...'।

দিন কয়েক আগে ফেসবুক মেমোরির কল্যাণে যখন আবার মনীষার সামনে ওই চরণ দুটি এল, মুহূর্তেই স্মৃতির পসরা মেলে ধরল তাঁর মন! নিরিবিলি কফিশপে খুনসুটি অথবা শহরের ব্যস্ত রাস্তায়ও দুজনে 'কোথাও আমার হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা' হয়ে যাওয়া, আরও কত অম্লমধুর সৌরভ!

হাতে হাত রেখে স্পর্শ নেওয়ার দিন এখন নয়। তবে ভিডিও চ্যাটে মন বাড়িয়ে কত আর ছোঁয়া যায়। প্রিয়জনের সঙ্গে দেখাসাক্ষাৎবিহীন জীবনে এ জন্য কখনো 'পাগল পাগল'ও লাগে।

এ প্রেক্ষাপটে চার দিন আগে ফেসবুকে জানতে চেয়েছিলাম, করোনার অবরোধকাল কার মনে কী প্রভাব রাখছে?

মন্তব্যের ঘরে ও ইনবক্সে জবাব এসেছে হরেক রকম। অনেকেই বলেছেন, সামনের দিনগুলো কী হবে, সে বিষয়ে চিন্তাই করা যাচ্ছে না। স্বাভাবিক জীবনের ছন্দ বিঘ্নিত হওয়ায় দীর্ঘ সময় কিছুতে আর মনোযোগ রাখতে পারছি না। কারও কথা, মন মারা যাচ্ছে। বেদিশা বেদিশা লাগে। কোনো কোনো কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক স্বীকার করলেন, কলেজ কাজ দিচ্ছে অনলাইনভিত্তিক—মেলা কাজ। সুযোগ নেই মন বিবশের। মেডিকেলের এক শিক্ষার্থীর বক্তব্য, মাঝেমধ্যে মনে হয় খুব ভালো সময় কাটাচ্ছি, মাঝেমধ্যে দমবন্ধ। আর খারাপ দিক বলতে গেলে নিজের ছাত্রত্ব ভুলে যাচ্ছি।

আবার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক বললেন, 'অনলাইনে নিয়মিত শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিই। অনেক সময়ই তাঁদের ছবিও দেখতে পাই না, তখন মনে হয় আমি একটা আইকনের সঙ্গে কথা বলছি। এতে মনে চাপ পড়ে খুব।'

এর মধ্যে অন্য রকম একটি মন্তব্যও পাওয়া গেল। যিনি বললেন, তাঁর কথাটি এমন, 'অভ্যাস হয়ে গেছে। পুরোনো লাইফে ব্যাক করতে গেলে উল্টো সমস্যায় পড়ব বলে মনে হচ্ছে।'

তবু এই বর্ষায় কেন জানি সাদাই মেঘ থম থম করে মনে। করোনাকালের অমানিশায় দুলে ওঠে মন। আর লকডাউনে মন যখন উচাটন, সে সময় অফলাইন বা অনলাইনে পরস্পর 'আয় আরও বেঁধে বেঁধে থাকি'—এই বার্তা দিয়ে পারিবারিক সংহতি বাড়ানোর কথা বলছেন মনোবিদেরা। জানাচ্ছেন, শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশি সব সময় যত্ন নিতে হবে মনের। নিয়মিত ঘরের কাজ করা, ব্যায়াম, ইয়োগাচর্চা এবং যেকোনো উপায়ে নিজের কাজ ঠিকঠাকভাবে সেরে ফেলা—মন ভালো রাখতে এসবই প্রাথমিক দাওয়াই। এ ক্ষেত্রে বড় যে নিদান তাঁরা বাতলেছেন, তা হলো 'পরিস্থিতি বুঝে নিজেকে খাপ খাওয়াতে হবে পরিবর্তিত বাস্তবতার সঙ্গে। চিন্তা করতে হবে পজিটিভভাবে।'

এক মনের মধ্যে বহুবর্ণিল কত আঁকিবুঁকি, অনেক মনের দুলুনি। লকডাউনে যখন স্তব্ধ সব, তখন পারাপারের সাঁকোর মতো মনের ঘড়িটি কেন দোলে, বেয়াড়া মন—কেন যে সে দোলা দিয়ে যায়!

* আলতাফ শাহনেওয়াজ, ঢাকা
 

Users who are viewing this thread

Back
Top