What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Collected নিজাম সাহেবের ভূত (ছোট গল্প) (1 Viewer)

Kaptan Jacksparoow

Community Team
Elite Leader
Joined
Apr 6, 2019
Threads
328
Messages
5,981
Credits
45,360
T-Shirt
Profile Music
Recipe sushi
Rocket
Euro Banknote
Butterfly
নিজাম সাহেবের ভূত- হুমায়ুন আহাম্মেদ


পলিথিনের ব্যাগে পাঁচটা শিং মাছ নিয়ে নিজাম সাহেব বাড়ি ফিরছেন। মাছগুলি যেন মরে না যায় সে জন্যে বুদ্ধি করে ব্যাগে খানিকটা পানি নিয়েছিলেন। এখন মনে হচ্ছে ব্যাগে পানি নেয়াটা চূড়ান্ত বোকামি হয়েছে। পানি টুইয়ে চুইয়ে পড়ছে। তার প্যান্ট ইতিমধ্যেই মাখামাখি হয়ে গেছে। নিজাম সাহেব লন করেছেন, তার ৪১ বছরের জীবনে তিনি বুদ্ধি করে যে কটা কাজ করেছেন সব কটাই চূড়ান্ত নির্বুদ্ধিতা বলে পরবর্তী সময়ে প্রমাণিত হয়েছে। আসলে বুদ্ধি খাটিয়ে তার কিছু করাই ঠিক না।

পাঁচটা শিং মাছের দাম নিয়েছে চল্লিশ টাকা। ঠকেছেন বলে মনে হচ্ছে। প্রতিটি শিং মাছের দাম পড়েছে আট টাকা। শিং মাছ সস্তা ধরনের মাছ–সাপের মত কিলবিল করে। এই মাছ আট টাকা পিস হতেই পারে না। বাড়ি ফিরলে স্ত্রীর কাছে প্রচণ্ড ধমক খেতে হবে। নিজাম সাহেবের স্ত্রী ফরিদা–সুপারি গাছের মত সরু। তার বুদ্ধিও সরু। তেজ ভয়াবহ। ফরিদার সরু বুদ্ধি এবং ভয়াবহ তেজের কাছে নিজাম সাহেব কেঁচোর মত হয়ে থাকেন। মাঝে মাঝে মনে হয় মাপ মত গর্ত পেলে গর্তে ঢুকে যেতেন।

বাজার দেখে, ফরিদা কি বলতে পারে তা নিজাম সাহেব কলপনা করতে করতে যাচ্ছেন। কল্পনা করতে ভাল লাগছে না। কিন্তু উপায় নেই, অন্য কিছু মাথায় আসছে না। প্রথমেই ফবিদা বরফ-শীতল গলায় বলবে–মাছ আর তরকারি আলাদা এনেছ তো? ঐ দিনের মত মাছ-তরকারি-পান-সুপারি সব এক সাথে আননি তো?

না, সেই ভুল নিজাম সাহেব করেননি। মাছ আলাদা আছে।

কাঁচা সুপারি আনতে বলেছিলাম, এনেছ? না ভুলে বসে আছ? যেটা বলা হয়। সেটা তো মনে থাকে না।

আজ মনে আছে। বাজারে ঢুকেই প্রথম কাঁচা সুপারি কিনেছেন।

শিং মাছ আনতে বলেছিলাম, এনেছ? না রাক্ষুসী মাগুরের বাচ্চা নিয়ে এসেছ? তুমি কচি খোকা তো, যে যা বলে তাই বিশ্বাস কর। আশ্চর্য মানুষ! কত করে নিয়েছে মাছ?

পঁচিশ টাকা নিয়েছে। পাঁচ টাকা পিস।

(নিজাম সাহেব মিথ্যা বলতে পারেন না। মিথ্যা কথা তার গলার ফুটো দিয়ে বের হয় না। তার ধারণা তার গলার ফুটো খুব সরু বলে এই সমস্যা হয়। তবে আজ বাধ্য হয়ে মিথ্যা বলতে হবে।)।

পঁচটা মাছ পঁচিশ টাকা নিল? বাড়িতে কি টাকার গাছ পুঁতে রেখেছ? না তুমি বাংলাদেশের মন্ত্রী-মিনিস্টার? একটা দাম বলবে আর হুট করে দিয়ে দিবে? নাকি মেছো হাটায় গিয়ে বড়লোকি চাল দেখাও? দরদাম করতে ভাল লাগে না? পাঁচ টাকা পিস শিং মাছ কি মনে করে কিনলে? এই শিং মাছগুলির শিং কি সোনা দিয়ে বাধানো?

ফরিদার এই সব কথা তাকে মাথা নিচু করে শুনতে হবে। কোন উপায় নেই। তিনি যদি বলেন মাছ পনেরো টাকা হয়েছে, তিন টাকা করে পিস। তারপরেও কথা শুনতে হবে।

ঝিনুকের চুন আনতে বলেছিলাম, এনেছ?

নিজাম সাহেব চমকে উঠলেন। ঝিনুকের চুন আনা হয়নি। কি সর্বনাশ! ভেবে রেখেছিলেন সব বাজার শেষ হলে চুনটা কিনবেন। এইটাই ভুল হয়েছে। কাঁচা সুপারি কেনার সময়ই চুনটা কেনা উচিত ছিল। চুন ছাড়া বাড়িতে যাওয়াই যাবে না। তিনি দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললেন। তার উচিত ছিল পেছন ফিরে যে দিক থেকে এসেছেন। সেদিক রওনা হওয়া–তা না করে তিনি ঠিক করলেন রাস্তা পার হবেন। প্রাচীন একটা কুসংস্কার আছে–যে রাস্তায় আসবে সে রাস্তায় ফেরত যাবে না।

রাস্তা বদল করতে গিয়েই দুর্ঘটনাটা ঘটল। দশ টনি এক ট্রাক তার গায়ের উপর এসে পড়ল। তাকে চাপা দিয়ে উদ্ধার গতিতে পার হয়ে গেল। অ্যাকসিডেন্টের পর। ট্রাকওয়ালারা খুব সাবধান থাকে। ট্রাক থামায় না। ট্রাক থামালে পাবলিকের হাতে ধরা খেতে হবে। এটা হতে দেয়া যায় না।

দশ টন মাল বোঝাই একটা ট্রাক নিজাম সাহেবের উপর দিয়ে চলে গেছে, তারপরেও তিনি খুবই বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করলেন, তিনি তেমন ব্যথা পাননি। ইনজেকশনের সূচ ফোটার মত ব্যথা–যা মোটেই ধর্তব্য নয়। ট্রাকচাপা পড়লে ব্যথা পাওয়া যায় না–এই সত্য আবিষ্কারের আনন্দ নিয়ে তিনি উঠে দাঁড়ালেন। হাতের তরকারির ব্যাগ এবং মাছের ব্যাগ ছিটকে পড়ে গিয়েছিল। মাছের ব্যাগ থেকে মাছগুলি বের হয়ে এঁকে বেঁকে যাচ্ছে। নর্দমার মধ্যে পড়লে এদের আর পাওয়া যাবে না। নিজাম সাহেব অতি ব্যস্ত হয়ে মাছগুলির কাছে ছুটে গেলেন। বাড়িতে শিং মাছ না নিয়ে গেলে ভূমিকম্প হয়ে যাবে। তিনি ট্রাক চাপা পড়েছেন এই ঘটনা শুনেও ফরিদা তাকে রেহাই দেবে না।

নিজাম সাহেব উবু হয়ে বসলেন, মাছ ধরতে গেলেন, ধরতে পারলেন না। আঙুলের ফাঁক দিয়ে অদ্ভুত উপায়ে মাছগুলি বের হয়ে যাচ্ছে। কি আশ্চর্য ব্যাপার! ঘটনা কি? এর মধ্যে প্রচুর হৈ চৈ শুরু হয়েছে। রাস্তার উপর শত শত লোক জমে গেছে। মনে হচ্ছে ভয়ঙ্কর কিছু ঘটেছে। নিজাম সাহেব উঠে দাঁড়ালেন। কৌতূহলী হয়ে উঁকি দিয়ে দেখেন–রক্তে রাস্তা ভেসে যাচ্ছে। সেই রক্তে মাখামাখি হয়ে যে শুয়ে আছে সে আর কেউ না, তিনি নিজে।

এই দৃশ্য দেখার পরেও তার বুঝতে কিছু সময় লাগল যে তিনি আসলে মারা গেছেন। অপঘাতে মৃত্যুর পর মানুষ ভূত হয়। তিনিও তাই হয়েছেন। ভূত হয়েছেন। বলেই কেউ তাকে দেখতে পারছে না–তবে তিনি নিজে নিজেকে পরিষ্কার দেখতে পারছেন। যদিও তার শরীরগত কিছু পরিবর্তন হয়েছে তিনি শিং মাছ ধরতে পারছেন না। মাছগুলি হাতের আঙুল ভেদ করে বের হয়ে যাচ্ছে।

মৃত্যুর আগে তার গায়ে যে পোশাক ছিল, ভূত হিসেবেও তার গায়ে একই পোশাক। এমনকি শিং মাছের পানি লেগে প্যান্ট ভিজে গিয়েছিল–এখনও প্যান্টটা ভেজা। ভেজা প্যান্ট থেকে আঁশটে গন্ধ আসছে। ভূতরা তাহলে গন্ধ পায়? এই রহস্যময় ব্যাপারটার মানে কি কে জানে। তবে কোন রহস্যময় ব্যাপার নিয়ে আপাতত তার মাথা ঘামাতে ইচ্ছা করছে না। মাথা ভো ভো করে ঘুরছে। ধাতস্থ হতে সময় লাগবে। সিগারেট খেতে পারলে হত। ভূতরা সিগারেট খায় কি না তিনি জানেন না।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top