What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

সম্পর্কের অবনতি থেকে খুনখারাবি কেন (1 Viewer)

o9vTGMx.jpg


বিয়ে মানেই স্বপ্নমাখা আর আবেগে জড়ানো একটি সম্পর্কের সূর্যোদয়। যার মাধ্যমে শুরু হয় নবদম্পতির সুখের সংসার। কিন্তু যত্নে গড়া সেই সংসারেও হঠাৎ ফাটল ধরতে পারে। স্বপ্নের আড়ালে কীভাবে চলে স্বপ্নভঙ্গের নানা ধরনের কূটকৌশল?

যাঁর সঙ্গে সারা জীবন কাটানোর অঙ্গীকার নিয়ে যাত্রা, হঠাৎ কোনো ঝড়ে এলোমেলো হতে পারে সেই সংসার। স্বামী–স্ত্রীর একান্ত আপন জায়গায় তৃতীয় কারও আনাগোনা আজকাল কান পাতলেই শোনা যায়। শহর কী গ্রাম—পরকীয়া সম্পর্ক যেন শেষ করে দিচ্ছে সংসারের প্রচলিত ধারণা।

সম্প্রতি আমাদের সমাজের বেশ কয়েকটি আলোচিত ঘটনায় দেখা যাচ্ছে, স্বামী বা স্ত্রী নতুন কারও সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছেন। আর সেই ঘটনার রেশ ধরে একজন আরেকজনকে খুন করে লাশ পুঁতে ফেলছেন, টুকরো করে লুকিয়ে রাখছেন সেপটিক ট্যাংকে বা প্রকাশ্যে গুলি করে মেরে ফেলতেও দ্বিধা করছেন না। বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের জেরে এক নিমেষেই ভেঙে যাচ্ছে সামাজিক মাধ্যমে দেখা সুখী পরিবারের ছবি। ঘটে যাচ্ছে নৃশংস হত্যাকাণ্ড, ভয়ঙ্কর অপরাধ।

কেন ভেঙে যায় মন

কী এমন কারণ থাকতে পারে, যার জন্য প্রিয় মানুষকে একপর্যায়ে নিজের জীবন থেকে সরিয়ে দেন? ভেঙে যায় সম্পর্ক, সংসার, স্বপ্ন? স্বামী- স্ত্রীর মধ্যে চরম অপ্রীতিকর পরিণামের পেছনে রয়েছে যে কারণ, তা পরকীয়া সম্পর্ক ও অনিয়ন্ত্রিত ইগো।

এখন আমরা একটি জটিল সমাজ বা কমপ্লেক্স সোসাইটিতে বসবাস করছি। যে সমাজের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এখানে নানা ধরনের, নানা পেশার মানুষ থাকবেন, ঘরের বাইরে বিচরণের জন্য থাকবে অবারিত সুযোগ। চাকরির প্রয়োজনে যেতে হচ্ছে বাইরে, চাকরি থেকে ক্লাব, দেশ-বিদেশ ভ্রমণে। এভাবেই আধুনিক সমাজে মানুষের পরিচয় ও গতিবিধির ঘটেছে অবাধ তরলীকরণ। পরিবারের বাইরে নতুন পরিবেশে গিয়ে পরিচয় হয় নতুন মানুষের সঙ্গে। কখনো হয়তো ভালো লাগে তাঁর হাসি, চেহারা, কথা বলা ও আচার-ব্যবহার। তখন স্বাভাবিকভাবেই তুলনা চলে নিজের সঙ্গীর সঙ্গে। একসময় এই ভালো লাগা জন্ম দেয় নতুন সম্পর্কের। এই সময়ে দাঁড়িয়ে সুযোগও আছে প্রচুর সেই সম্পর্ককে টিকিয়ে রাখার।

এই ঘর এই সংসার

এখন বেশির ভাগ ছোট পরিবার। যৌথ পরিবার ভেঙে একক পরিবার গড়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে কমছে পরিবারের সদস্যদের নজরদারি বা তত্ত্বাবধানের সুযোগ। পরিবারের প্রায় সবাই আজকাল নিজ নিজ কাজে ব্যস্ত থাকার কারণে পরস্পরের সুখ-দুঃখ ভাগ করার সুযোগও কমে গেছে। স্বামী বা স্ত্রী কে কোথায় কখন কার সঙ্গে বাইরে যাচ্ছেন, বাসায় ফিরতে কেন দেরি হচ্ছে, সেসব বিষয়ে নজরদারির সুযোগও কম একক পরিবারে।

স্বামী-স্ত্রী দুজনেই 'ক্যারিয়ার-ওরিয়েন্টেড' হওয়ায় অনেক সময় দুজন দুজনের খেয়াল রাখতে পারেন না। সময় দিতে পারেন না সংসারে, সঙ্গীকে। এতে অপরজনের মধ্যে একটু একটু করে গড়ে উঠতে থাকে দুঃখ, কষ্ট ও ক্ষোভের পাহাড়। এরপর একসময় তিনি জড়িয়ে পড়েন অন্য সম্পর্কে। অন্যদিকে জীবন ও জীবিকার সন্ধানে পরিবার-পরিজন রেখে একদল লোক শহরে পাড়ি জমান। শহরে এসে থাকতে হয় মেস, সাবলেট অথবা ভাড়া বাসায়। বিভিন্ন ধরনের মানুষের সঙ্গে হয় জানাশোনা। একাকিত্বের মধ্যে সুখ খুঁজতে গিয়ে অনেকে জড়িয়ে পড়েন অবৈধ সম্পর্কে। এ ছাড়া বৈবাহিক জীবনের বিভিন্ন শারীরিক–মানসিক অসন্তোষ থেকেও নতুন সম্পর্ক গড়ে উঠতে পারে। তখন সংসারে মন টানে না, প্রিয়জন হয়ে ওঠেন অপ্রিয়। নতুন এক মোহ আচ্ছন্ন করে ফেলে তাঁকে।

অবশ্য আধুনিক প্রযুক্তিও এর পেছনে কম দায়ী নয়। মোবাইল ফোন, স্যাটেলাইট টিভি, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, ইন্টারনেট ইত্যাদি আমাদের নতুন নতুন সম্পর্কের দিকে নিয়ে যায়। পাশাপাশি কোভিডের কারণে বেড়ে যাচ্ছে অবসর সময়। কাজের জন্য স্বামী-স্ত্রী দীর্ঘ সময় ধরে একে অন্যের থেকে দূরে অবস্থান করছেন। অধিক সম্পদ ও খ্যাতির প্রতি আকাঙ্ক্ষা মানুষকে বিভিন্ন ধরনের সম্পর্কের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। একটা পর্যায়ে গিয়ে তিনি নিজের থেকেই বিচ্ছিন্ন করে ফেলেন নিজেকে। তখন ঘটে অপ্রত্যাশিত ও পৈশাচিক বিভিন্ন ঘটনা।

হত্যা কোনো সমাধান নয়

একেকজন হয়তো একেক ধরনের চাহিদা থেকে নতুন সম্পর্কে জড়ান। কিন্তু স্বামী–স্ত্রীর সম্পর্কের টানাপোড়েন বন্ধ করার জন্য একজন আরেকজনকে হত্যা করে ফেলা তো কোনো সমাধান নয়। সঙ্গীর নতুন সম্পর্কের কথা জেনে রেগে তাঁকে জীবন থেকে সরিয়ে না দিয়ে আমরা প্রথমত ভাবতে পারি বিকল্প পথগুলো নিয়ে। দুজনের মধ্যে বোঝাপড়া বা সমঝোতার সম্পর্ক বৃদ্ধি করার দিকে আরও মনোযোগী হওয়া যেতে পারে। পরিবারকে আরও বেশি সময় দিলে ঘটনার মোড় ঘুরে যেতে সময় লাগবে না। নিজেদের সমস্যা বা দ্বন্দ্বগুলো একজন আরেকজনের থেকে লুকিয়ে না রেখে খোলামেলা আলোচনা করা জরুরি। নিজের কষ্টগুলো সঙ্গীকে শেয়ার করতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে ইগো (অহংবোধ) থেকে দূরত্ব বাড়ে স্বামী–স্ত্রীর মধ্যে। যা মানুষকে খুনের মতো ঘটনা ঘটাতেও দ্বিধায় ফেলে না। কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে নিজের অবদমিত ইগোকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা যেতে পারে।

সম্পর্কের মধ্যে টানাপোড়েন থাকতে পারে। কিন্তু রাগ নিয়ন্ত্রণে আনতে না পেরে একজন আরেক জনকে খুন করে ফেলা কোনোভাবেই সমস্যার সমাধান হতে পারে না। এভাবে বরং আরও সমস্যা তৈরি হয়। বিয়ের পর স্ত্রী বা স্বামী যদি বুঝতে পারেন যে তাঁদের মধ্যে একজন অন্য আরেকটি প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছেন, তখন অন্যজন সেটি সহজে মেনে নেবেন না, সেটিই স্বাভাবিক। কিন্তু সমস্যা সমাধানের জন্য অবশ্যই গঠনমূলক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। রেগে বা হিংসার বশবর্তী হয়ে তৎক্ষণাৎ কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হবে না।

আবার বিষয়টি চেপে রাখাও ঠিক হবে না। হতে পারে দুজন একসঙ্গে বসে নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া করে নিতে পারেন। সমঝোতার মনমানসিকতা নিয়ে এক বা একাধিকবারও নিজেদের মধ্যে আলোচনা করা যেতে পারে। যদি নিজেরা এভাবে সমাধানের পথে যেতে না পারেন, তবে পরিবারের জ্যেষ্ঠ বা বয়োজ্যেষ্ঠ অথবা নির্ভরযোগ্য এক বা একাধিক সদস্যকে বিষয়টি জানাতে পারেন। দুজনে একসঙ্গে আলোচনায় বসতে পারেন।

দুজনের মধ্যে যিনি নতুন সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছেন, তাঁকে একাধিকবার গভীরভাবে ভাবতে হবে যে তাঁর সঙ্গীর সঙ্গে বিদ্যমান সম্পর্কটির ত্রুটি কোথায় এবং কীভাবে সেটি প্রশমিত করা যায়। ভাবতে হবে নতুন যে সম্পর্কটি গড়ে উঠছে, সেটা টিকিয়ে রাখার আদৌ কোনো যৌক্তিকতা আছে কি না। যদি কোনোভাবেই সমস্যার সমাধান করা না যায়, তবে শেষ পর্যায়ে গিয়ে বিবাহবিচ্ছেদের কথা ভাবা যেতে পারে। কিন্তু জীবননাশ বা ধ্বংসাত্মক কোনো সিদ্ধান্ত কোনোভাবেই নেওয়া যাবে না। সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্পূর্ণভাবেই নিন্দনীয় এবং অযাচিত। মানবতাবিরোধী, সমাজবিদ্বেষী এবং হিংস্র কোনো সিদ্ধান্ত আমরা নিতে পারি না বা নেব না।

* ওয়াসিফা শাম্মা, প্রভাষক, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top