হাঁটু হলো আমাদের শরীরের বড় ও গুরুত্বপূর্ণ অস্থিসন্ধিগুলোর একটি। এ অস্থিসন্ধি আমাদের শরীরের সামগ্রিক ওজন বহন করে; স্বাভাবিকভাবে হাঁটতে ও সোজা হয়ে দাঁড়াতে এবং দৌড়াতে ও বসতে সাহায্য করে। হঠাৎ চোট বা আঘাত থেকে লিগামেন্ট বা কার্টিলেজ ছিঁড়ে যাওয়া, হাঁটুর সন্ধিক্ষয়, সন্ধিপ্রদাহ যেমন রিউমাটএড আর্থ্রাইটিস বা স্পনডাইলো আর্থ্রাইটিস, ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বৃদ্ধি বা গেঁটেবাত, অতিরিক্ত ওজন ইত্যাদি হাঁটুব্যথার অন্যতম কারণ।
আজ আমরা হাঁটুব্যথার অন্যতম কারণ অস্টিওআর্থ্রাইটিস নিয়ে আলোচনা করব।
হাঁটুর অস্থি ও তরুণাস্থির ক্ষয়ের কারণে গঠনগত পরিবর্তন হয়ে যে রোগ হয়, তাকেই বলে হাঁটুর বয়সজনিত ক্ষয়বাত বা হাঁটুর অস্টিওআর্থ্রাইটিস বলে। এর কারণে বয়স্কদের হাঁটুব্যথা ও হাঁটাচলায় কষ্ট হয়। চেয়ারে বসে নামাজ আদায় বা চেয়ারে বসে রান্নার কাটাকুটি করার দরকার হয়। সাধারণত এটি ৫০ বছর বা এর চেয়ে বেশি বয়সী লোকদের মধ্যে দেখা যায়।
এ রোগে প্রাথমিক পর্যায়ে যা হয়
- রোগী দীর্ঘক্ষণ হাঁটলে বা চেয়ার থেকে উঠতে গিয়ে ব্যথা অনুভব করেন
- সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামার সময় ব্যথা অনুভব করেন
- পায়খানায় বসার সময় বা নামাজ আদায়ের সময় কষ্ট হয়
- হাঁটাচলায় হাঁটুর ভেতরে কটকট শব্দ অনুভূত হয়
- আক্রান্ত হাঁটু ফুলে এর তাপমাত্রা বেড়ে যেতে পারে
- ব্যথার কারণে রোগী খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটেন
- হাঁটু পুরোপুরি সোজা করা বা ভাঁজ করা সম্ভব হয় না
- কখনো কখনো হাঁটু বেঁকে যেতে পারে
যেভাবে রোগ নির্ণয় করা হয়
রোগের ইতিহাস জানা ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক কর্তৃক হাতে হাঁটু পরীক্ষা করা জরুরি। এর সঙ্গে অন্য রোগ থেকে আলাদা করার জন্য আরও কিছু পরীক্ষা প্রয়োজন। যেমন রক্ত পরীক্ষা, হাঁটুর এক্স-রে, হাঁটুর আলট্রাসনোগ্রাম ইত্যাদি।
সাধারণত তিন ধাপে চিকিৎসা
১. জীবনধারা পরিবর্তন করতে হবে। অতিরিক্ত ওজন ঝেড়ে ফেলতে হবে। গরম সেঁক, বরফ সেঁক, আলট্রাসাউন্ড থেরাপি, টেন্স, আইএফটি কাজে আসতে পারে।
ব্যায়াম—হাঁটুর অস্টিওআর্থ্রাইটিস সাধারণত ঊরুর পেশিকে দুর্বল করে দেয়। তাই ঊরুর পেশি মজবুত করা প্রয়োজন। কারণ, এই পেশি হাঁটুর গাঁটের কিছুটা চাপ নেয় এবং হাঁটুকে ক্ষতির হাত থেকে বাঁচায়। পেশি মজবুত করার জন্য কিছু ব্যায়াম অবশ্যই করতে হবে।
এ ছাড়া ব্যথার ওষুধ, যেমন প্যারাসিটামল, NSAID হাঁটুর ব্যথা কমাতে সেবন করা যায়।
২. স্টেরয়েড ইনজেকশন, হায়ালোরনিক অ্যাসিড বা সায়নোভিয়াল ফ্লুইড হাঁটুতে ইনজেকশন দেওয়া হয়। এটি হাঁটুর জয়েন্টকে লুব্রিকেট করে। ফলে ঘর্ষণজনিত ক্ষয় কমে যায় ও ব্যথা কম হয়। এ ছাড়া আজকাল পিআরপি, স্টেমসেল বা মাতৃকোষ, স্নায়ু বা নার্ভ ব্লক ইত্যাদি চিকিৎসাও করা হচ্ছে।
৩. কিছু রোগীর ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন পড়ে। যেসব রোগীর হাঁটুর অস্টিওআর্থ্রাইটিস মারাত্মক হয়ে যায়, তাঁদের জন্য এটি শেষ বিকল্প।
* ডা. মো. জাহিদুল ইসলাম :অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, ফিজিক্যাল মেডিসিন ও রিহ্যাবিলিটেশন বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ।