ত্বক বা চুল নিয়ে সমস্যায় পড়েন অনেক হবু মাই।যত্ন নিলে সমাধানও পাওয়া যাবে কিছুটা।
সন্তান গর্ভে ধারণের সময় থেকেই মায়ের শরীরে আসে নানা পরিবর্তন। অনাগত সন্তানের কথা ভেবে সব পরিবর্তন মেনে নেন মা। গর্ভাবস্থায় ত্বক আর চুল নিয়েও সমস্যায় পড়তে হয়। এসবই মায়ের সুস্থতার অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাই হবু মায়ের ত্বক কিংবা চুলের ব্যাপারেও হতে হবে যত্নশীল। শারীরিক-মানসিক দিক থেকে হবু মা যাতে সুস্থ থাকেন; মাতৃত্ব যেন হয় নিরাপদ আর পরম সুখের।
ত্বক বা চুল নিয়ে কেমন সমস্যায় পড়েন হবু মায়েরা? কয়েকজন মায়ের কাছেই জেনে নেওয়া যাক।
রাজধানীর বাসিন্দা রিজওয়ানা শারমীন পেশায় চিকিৎসক। তাঁর দ্বিতীয় সন্তানের জন্ম হয়েছে ২০২০ সালের মে মাসে। প্রথমবার গর্ভধারণের সময় ত্বক বা চুল নিয়ে কোনো সমস্যায় পড়েননি তিনি। তবে দ্বিতীয়বারে বেশ কিছু সমস্যায় পড়েছিলেন। ত্বক প্রচণ্ড শুষ্ক আর রুক্ষ হয়ে গিয়েছিল, ত্বকের বেশ কিছু অংশ কালচে হয়ে গিয়েছিল। সন্তান জন্মের পর এই সমস্যাগুলো কমে এসেছে। তবে দেখা দিল অতিরিক্ত চুল পড়ার সমস্যা, ত্বকেও দেখা দিয়েছিল কিছু সমস্যা। ত্বকের সমস্যার জন্য চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হয়েছিল।
ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান ফার্মাশিয়া লিমিটেডের পণ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের ঊর্ধ্বতন পণ্য নির্বাহী কর্মকর্তা তাজরিয়ান ফারিহা মা হয়েছেন সম্প্রতি। গর্ভাবস্থায় ত্বকের রং স্বাভাবিকের চেয়ে কালচে হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যায় পড়েছেন তিনিও। ত্বকে কালচে ছোপও দেখা দিয়েছিল। চুল হয়েছিল রুক্ষ, চুল পড়ছিলও খুব। তবে মার্চে সন্তানের জন্মের পর থেকে তাঁর সমস্যাগুলো কমে এসেছে।
এর বাইরেও হবু মায়েরা নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন। এসব সমস্যাকে সহজভাবে গ্রহণ করে সমাধানের প্রয়াস নিলে জীবনের এই বিশেষ সময়টিতেও আপনি থাকবেন আত্মবিশ্বাসী, লাবণ্যময়ী। হবু মায়ের ত্বক ও চুলের সমস্যা এবং সেগুলোর সমাধান প্রসঙ্গে কথা হলো বিন্দিয়া এক্সক্লুসিভ বিউটি কেয়ারের রূপবিশেষজ্ঞ শারমিন কচির সঙ্গে।
ত্বক ফাটা ও কালচে দাগ (স্ট্রেচ মার্ক)
শরীর স্ফীত হওয়ার সময় ত্বকে কিছু দাগ পড়তে পারে। একবার এমন দাগ হয়ে গেলে তা দূর করা মুশকিল। তাই গর্ভধারণের শুরু থেকেই লিপিড রেপ্লিনিশিং ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। স্ট্রেচ মার্ক ক্রিমও ব্যবহার করা যায়। এ ছাড়া নারকেল তেল, জলপাই তেল, কোকো বাটার ব্যবহার করতে পারেন। যেটিই বেছে নিন না কেন, তা মালিশ করুন চক্রাকার গতিতে, গোসলের পরে আর রাতে ঘুমানোর আগে—পেট, ঊরু ও কোমরে।
ত্বকের কালচে বা বাদামি ছোপ
মুখ, গলা, ঘাড়ের ত্বকে এমন ছোপ হতেই পারে। এটা স্বাভাবিক। সাধারণত সন্তানের জন্মের ২-৩ মাসের মধ্যে এ দাগ চলে যায়। তবে এই সময়ের মধ্যে তা না গেলে চিকিৎসার প্রয়োজন পড়ে। গর্ভাবস্থায় দাগ কমাতে সপ্তাহে ১-২ দিন ২ টেবিল চামচ শসার রস আর মুলতানি মাটির মিশ্রণ লাগিয়ে নিতে পারেন ত্বকের ছোপযুক্ত স্থানে। শুকিয়ে গেলে এক মগ পানিতে ছোট একটা লেবুর রস চিপড়ে নিয়ে সেই পানিতে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
ব্রণের সমস্যা
মুখ, ঘাড় বা হাতে ব্রণ হতে পারে। ব্রণ প্রতিরোধে নিয়মিত ত্বক পরিষ্কার রাখা আবশ্যক। এ ছাড়া গর্ভাবস্থায় সিবাম রেগুলেটর ক্লিনজার বেছে নিন, পানিভিত্তিক বা ওয়াটার বেজড (তেলবিহীন) ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। ব্রণ হলে অ্যালোভেরার নির্যাস বরফ করে নিয়ে ব্রণের স্থানে ঘষতে পারেন। অতিরিক্ত সমস্যা হলে চিকিৎসা নিন।
চুলের পরিবর্তন
চুলের আগা ফেটে যাওয়া, চুল পড়ার মতো সমস্যা হতে পারে গর্ভাবস্থায় এবং সন্তানের জন্মের পর স্তন্যদানের সময়। সুষম খাদ্যাভ্যাসই পারে এমন সমস্যার সমাধান করতে।
যত্নে থাক হবু মা
পুষ্টিকর খাবার, পর্যাপ্ত পানি, বিশ্রাম এবং আপনার জন্য উপযোগী ব্যায়ামের (চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী) পাশাপাশি নিশ্চিত করুন খানিক যত্ন। ঘটা করে রূপচর্চা করার অবস্থায় থাকেন না অনেকেই। বাড়িতেই নিজের একটু যত্ন নিন, ত্বক-চুল সুস্থ থাকবে, মনও থাকবে সতেজ।
মুলতানি মাটি নিন আধা কাপ, সঙ্গে শুকনা কমলা লেবুর খোসার গুঁড়া আধা কাপ, একই পরিমাণে নিন চন্দনগুঁড়া। কাচের পাত্রে রেখে দিন মুখ আটকে, এক-দেড় মাস পর্যন্ত রেখে দিতে পারেন এভাবে। পানি মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে মুখে, গলায় ও ঘাড়ে স্ক্রাব হিসেবে লাগিয়ে নিন। ১৫ মিনিট পর গোসল করে নিন।
· প্রতিদিন গোসলের পর আর রাতে ঘুমানোর আগে মুখ, হাত, পা এবং পেটে ভালো করে ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিন।
· একটা ছোট গাজর কুরিয়ে আধা চা-চামচ মধু মিশিয়ে মুখে লাগান সপ্তাহে ১-২ দিন। ১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এর পরিবর্তে একটা গাজর খেলেও ত্বক সুস্থ থাকবে।
· সপ্তাহে অন্তত এক দিন মাথার ত্বক ও চুলে জলপাই তেল মালিশ করুন। এরপর উষ্ণ তোয়ালে পেঁচিয়ে রাখতে পারেন মিনিট দশেকের জন্য।
· ক্লান্তি দূর করতে হাত-পা মালিশ করাতে পারেন।
যা করা যাবে না
· * শরীরের কোনো অংশে ব্লিচ ব্যবহার করবেন না।
· * ভেজ পিল, গ্যালভানিক, ওজোন ট্রিটমেন্ট থেকে বিরত থাকুন। সৌন্দর্যচর্চায় বৈদ্যুতিক যন্ত্রের ব্যবহার না করে ভালো এই সময়।
· * মাথায় মেহেদি দিলে ১ ঘণ্টার বেশি রাখা যাবে না।
· * চুলে রাসায়নিক ব্যবহার করবেন না।