What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

আম জানা-চেনা-কেনা (1 Viewer)

JsJ8dly.jpg


আম পাওয়া ও খাওয়ার একটা সরল হিসাব আছে। ঠিক সময়ে সেই জাতের আম কিনলে ভালো আম পাওয়া ও খাওয়ার একটা নিশ্চয়তা থাকে।

'নির্জন আমের ডালে দুলে যায়—দুলে যায়—বাতাসের সঙ্গে বহুক্ষণ শুধু কথা নয়, গান নয়—নীরবতা রচিতেছে আমাদের সবার জীবন' জীবনানন্দ দাশের কবিতার মতো জ্যৈষ্ঠের খরতাপে যেন ডালে ডালে বাতাসে দুলছে আমগুলো। কাঁচা সবুজ আমগুলোর রং ধীরে ধীরে ফিকে হচ্ছে, কোনো কোনোটায় ধরছে হলদে বা কমলা রঙের ছোপ। আবার কোনো কোনো আম থেকে বাতাসে ভেসে আসছে সুঘ্রাণ। ডাসা-পাকা ঝুড়িভর্তি আম আসছে বাজারে-বাড়িতে। পাকা সেসব আমের মধুর রসে সিক্ত গ্রীষ্মকাল। এমনই কাব্যিক বাংলার আমময় গ্রীষ্মঋতু। এ সময় আমের এই নীরব রসাস্বাদন, মোহময় সৌন্দর্য ও মধুরেণু সুঘ্রাণ সবার জীবনে বছরের এই একটা সময়ে এনে দেয় এক বিশেষ অনুভূতি। নানা রকম আমের সেই অনুভূতিও হয় ভিন্ন ভিন্ন।

বৈশাখ থেকে আশ্বিন পর্যন্ত এখন আমের প্রাপ্তিযোগ থাকলেও মহাযোগ হলো জ্যৈষ্ঠ মাস। এ দেশে একসময় প্রায় দেড় হাজার জাতের আমের দেখা মিলত। এর প্রায় সবই ছিল দেশি জাতের আম। এখন বাণিজ্যিকভাবে আম চাষের প্রসার বাড়ায় দেশি অনেক জাত হারিয়ে গেছে। সাকল্যে শ খানেক জাতের আম এখন চাষ করা হচ্ছে। সেটাও–বা কম কী?

r6REuwE.jpg


আম্রপালি

শত জাতের মধ্যে কোন জাতের আম কখন কিনব আর খাব, আম ভালো হবে তো? এসব নিয়ে আমরসিকদের মধ্যে চলে নানা রকম হিসাব-নিকাশ। বিভিন্ন সময়ে আম পাওয়া ও খাওয়ার একটা সরল হিসাব আছে। সেই সরল সূত্র মেনে ঠিক সে সময়ে সেই জাতের আম কিনলে ভালো আম পাওয়া ও খাওয়ার একটা সম্ভাবনা বা নিশ্চয়তা থাকে। যেমন সবচেয়ে আগে ওঠে গোপালভোগ, গোবিন্দভোগ ও লক্ষ্মণভোগ। এরপর ওঠে গোলাপ খাস, তারপর নামে হিমসাগর বা ক্ষীরশাপাতি। এর পরপরই ওঠে ল্যাংড়া। ল্যাংড়া শেষ হতেই ওঠে হাঁড়িভাঙা, আম্রপালি ও ব্যানানা ম্যাংগো, এরপর ফজলি ও শেষে আশ্বিনা।

সম্প্রতি বেশ কিছু আধুনিক জাতের আম আসায় নাবি জাত হিসেবে বারি আম-৪ ও গৌরমতি বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। নাবি জাত হিসেবে ঠাকুরগাঁওয়ের সূর্যপুরী মন্দ না। অমৌসুমে আমের জন্য খ্যাতি পেয়েছে বারি আম-১১ ও থাইল্যান্ডের কাটিমন জাতের আম। এ দুটি জাতের আম বছরে তিনবার ধরে। কেউ যদি মে মাসের শেষে বা জুনের প্রথমে এসে আপনাকে আম্রপালি আম গছাতে চায়, নিশ্চিত জানবেন তা আবাত্তি, খেতে তা ভালো হবে না।

K3RcNJc.jpg


রাঙ্গুয়াই

গোবিন্দভোগ ও গোপালভোগ আম সংগ্রহ করার উপযুক্ত সময় এলাকাভেদে ১০ থেকে ২৯ মের মধ্যে। গোবিন্দভোগ আম বেশি হয় সাতক্ষীরা জেলায়। তবে সব জাতের মধ্যে প্রায় সবারই প্রথম পছন্দের আম হলো ক্ষীরশাপাতি ওরফে ক্ষীরশা। অঞ্চলভেদে এই জাতের আম হিমসাগর নামেও পরিচিত। আমের জগতে এ জাতটিই সেরা হিসেবে বিবেচিত। খোসা পুরু হলেও পাকা আমের আঁশবিহীন সুঘ্রাণযুক্ত সুমিষ্ট রসাল স্বাদ মন ভরিয়ে দেয়। এ জাতের আম দেখতে গোলগাল, মাথার দিক কিছুটা চাপা, পাকলে রং হয় হলুদাভ সবুজ, চারটি আমের ওজন হয় প্রায় এক কেজি। বিদেশেও এ আম এখন রপ্তানি করা হচ্ছে। এ আমের সেরা স্বাদ পেতে হলে অবশ্যই গাছ থেকে সংগ্রহ করা বাত্তি আম পাকিয়ে খেতে হবে। কিন্তু কখন পাওয়া যাবে তা? বাত্তি ও সুপরিপক্ব ক্ষীরশাপাতি জাতের আম পাওয়ার জন্য আম বিশেষজ্ঞরা অঞ্চলভেদে গাছ থেকে এ জাতের আম পাড়ার একটা সময় বেঁধে দিয়েছেন। যেমন: সাতক্ষীরা, খুলনা ও খাগড়াছড়ি জেলায় এ জাতের আম পাড়া শুরু হয় ২০ মে থেকে; যশোর, মেহেরপুর, ঝিনাইদহ, দর্শনা, চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়া জেলায় শুরু হয় ২৫ মে থেকে। পাবনা, নাটোর, নওগাঁ, টাঙ্গাইল ও রাজশাহী জেলায় হিমসাগর পাড়া শুরু হয় ৩০ মে থেকে, চাঁপাইনবাবগঞ্জে শুরু হয় ৪ জুন থেকে; রংপুর, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড় জেলায় শুরু হয় ৭ জুন থেকে। তাই নির্ধারিত এ সময়ের পর কিনলে তা ভালো হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

xW3koow.jpg


সিন্দুরী

ismaGDJ.jpg


তোতাপুরী

তেমনি লক্ষ্মণভোগ ও ল্যাংড়া জাতের আম পাড়া শুরু করারও সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। যেমন: সাতক্ষীরা, খুলনা ও খাগড়াছড়ি জেলায় এ জাতের আম পাড়া শুরু হয় ২৮ মে থেকে; যশোর, মেহেরপুর, ঝিনাইদহ, দর্শনা, চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়া জেলায় শুরু হয় ৩ জুন থেকে। পাবনা, নাটোর, নওগাঁ, টাঙ্গাইল ও রাজশাহী জেলায় শুরু হয় ৭ জুন থেকে। চাঁপাইনবাবগঞ্জে শুরু হয় ১২ জুন থেকে। রংপুর, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড় জেলায় শুরু হয় ১৪ জুন থেকে। লক্ষ্মণভোগের আকর্ষণীয় রং দেখে মুগ্ধ হলেও ল্যাংড়ার স্বাদ ও ঘ্রাণ অতুলনীয়। লক্ষ্মণভোগ আম পাকলে লালচে আভাযুক্ত উজ্জ্বল হলুদ বা কমলা রঙের হয়, কিন্তু ল্যাংড়া আম পাকার পরও হলুদ হয় না, রং হয় হলুদাভ সবুজ, খোসা কাগজের মতো পাতলা। কেজিতে ৪-৫টি আম হয়।

হাঁড়িভাঙা রংপুর অঞ্চলের একটি বিশেষ জাতের আম। বর্তমানে দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড় জেলায়ও হাঁড়িভাঙা জাতের আম চাষ হচ্ছে। পাকা আম আঁশবিহীন, সুমিষ্ট ও সুস্বাদু, এ জাতের আম কেটে খাওয়ার জন্য উপযুক্ত। তবে গাছে পাকিয়ে বা বেশি পাকিয়ে খেতে গেলে আঁটির কাছের শাঁস নরম হয়ে স্বাদ হারায়। হাঁড়িভাঙা আম পাড়া শুরু হয় ১৫ জুন থেকে।

আম্রপালি আমের পোশাকি নাম বারি আম-৩। এ জাতের আমের আকার ছোট থেকে মাঝারি, অগ্রভাগ কিছুটা সরু। সব আমের মধ্যে আম্রপালি সবচেয়ে মিষ্টি আম, পাকা আমের শাঁস কমলা ও আঁশবিহীন, খোসা ও আঁটি পাতলা। গাছে প্রচুর আম ধরে। পাকা আম বেশ কিছুদিন ধরে ঘরে রেখে খাওয়া যায়। কেটে খাওয়ার জন্য চমৎকার আম।

পার্বত্য চট্টগ্রামে যথেষ্ট পরিমাণে এখন আম্রপালি আম উৎপাদিত হচ্ছে। পাহাড়ে আর এক জাতের আম চাষ হয়, তার নাম রাঙ্গোয়াই। স্থানীয় ভাষায় রাঙ্গোয়াই নামের অর্থ বুক সেলাই আম। এ জাতের আমের বুকে লম্বালম্বিভাবে একটি গভীর রেখা রয়েছে। বান্দরবান ও রাঙামাটিতে জুন মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে আম্রপালি ও রাঙ্গোয়াই জাতের আম সংগ্রহ শুরু হয়।

ফজলি আম নাবি জাতের ও আকারে বেশ বড়। একটি আমের গড় ওজন ৬১০ গ্রাম হলেও কখনো কখনো ১ কেজি ওজনের ফজলি আমও দেখা যায়। আঁশবিহীন এ জাতের আম পাকলে স্বাদে হয় হালকা টকযুক্ত মিষ্টি বা মিষ্টি। আশ্বিনার চেয়ে ফজলি বেশি মিষ্টি। ফজলি আছে কয়েক রকম, যেমন নাক ফজলি, চিনি ফজলি, সুরমা ফজলি ইত্যাদি। ফজলি ও আশ্বিনা আম সবচেয়ে বেশি হয় চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায়। এলাকাভেদে ফজলি আম সংগ্রহের উপযুক্ত সময় ১২ জুন থেকে ২২ জুনের মধ্যে। তবে এরপরও কিছুদিন ফজলি আম থাকে। আশ্বিনা জাতের আম সংগ্রহ শুরু হয় ২০ জুলাই থেকে।

নাবি জাত হিসেবে আশ্বিনার পর বা একই সময়ে ঝিনুক আমও বাজারে পাওয়া যায়। নওগাঁ জেলায় ঝিনুক আম সংগ্রহ শুরু হয় ৮ জুলাই থেকে। নওগাঁয় বারি আম ৪ জাতের সংগ্রহও শুরু হয় এ সময় থেকে। রাজশাহী জেলায় এ জাতের আম জুনের শেষ সপ্তাহ থেকে শুরু হয়। তবে সব জাতের আমেরই আবহাওয়ার তারতম্যে পাকার সময় কিছুটা হেরফের হতে পারে।

ভালো জাতের আম পেতে ও খেতে হলে প্রথমে চিনতে হবে নানা জাতের আম। সেটা অভিজ্ঞতা না থাকলে হবে না। এ জন্য অভিজ্ঞ কারও সাহায্য নেওয়া যেতে পারে অথবা বিশ্বস্ত বিক্রেতা বা বাগানির কাছ থেকে আম কেনা যেতে পারে। সেসব স্থান থেকে ফোনে যোগাযোগ করে বিশ্বস্ত কারও কাছ থেকে বা মাধ্যমে আম কিনে তা ঘরে বসে কুরিয়ারে আনা যায়। করোনাকালে এভাবে কেনা মন্দ না। তবে প্রয়োজনে কেনার সময় স্বাদ পরীক্ষা করেও দোকান থেকে কেনা যেতে পারে।

বাড়িতে ভালো জাতের আম এলেও অনেকের কপালে সেই ভালো আম খাওয়া জোটে না। দুদিন পরই বোঁটার কাছে কালো হয়ে পাকা আম পচতে শুরু করে। পাকা আম কয়েক দিন ঘরে রেখে না পচিয়ে খেতে চাইলে পাকার আগেই আমগুলোকে একটা কাপড়ে বা গামছায় পুঁটুলি বেঁধে হাতে সহ্য হয় এমন গরম পানিতে পাঁচ মিনিট ডুবিয়ে রেখে তুলে ছায়ায় শুকিয়ে নিতে হবে।

S0mkIQr.jpg


পালমার আম

* লেখক: মৃত্যুঞ্জয় রায় | কৃষিবিদ, ঢাকা
 

Users who are viewing this thread

Back
Top