আজ বিশ্ব সাইকেল দিবস। বিশ্বজুড়ে চতুর্থবারের মতো সাইকেলপ্রেমীরা আর পরিবেশবাদীরা আয়োজন করে পালন করছে দিনটি। সেই সব ছবি–ছড়িয়ে পড়ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সাইকেলের দাম বাড়তে পারে, এমন কোনো ইঙ্গিত নেই। করোনাকালে যথাসম্ভব গণপরিবহন এড়িয়ে চলার কথা বলা হচ্ছে। তাই আপনি যদি সাইকেলচালক না হন, তবে স্বাস্থ্য আর পরিবেশের কথা ভেবে চট করে কিনে ফেলতে পারেন একটি সাইকেল। পথচলার সেরা সঙ্গী হতে পারে সাইকেল। সাইকেল চালানোর সুবিধাগুলোর কথায় আসছি। তার আগে চট করে জেনে নেওয়া যাক বিশ্ব সাইকেল দিবসের কথা।
ছবি: দিয়া মির্জার ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডল
প্রাচীন মেসোপটেমিয়াতে চাকার আবিষ্কার নতুন সভ্যতার শুরু করে। প্রায় ২০০ বছর হলো চলছে দুই চাকার সাইকেল। অনেক দেশের অনেকেই দাবি করে, তিনিই প্রথম আবিষ্কার করেছেন সাইকেল। তাই সেই আলাপে গিয়ে সুবিধা করা যাবে না। তবে দুই চাকার বাহন প্রথম জনসমক্ষে আনেন জার্মানির কার্ল ভন ড্যারন। তিনি ১৮১৭ সালে জার্মানিত ম্যানহেইম শহরে ঘটা করে সবাইকে তাঁর বানানো বাহন দেখান। সেটাকে ঠিক সাইকেল বলা যাবে না। বরং বলা চলে সাইকেলের মতো কিছু একটা, সেখান থেকে আধুনিক সাইকেলের ধারণাটা এসেছে। ১৯৮৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রে আধুনিক সাইকেলের ব্যবহার শুরু হয়। তারপর থেকে সাইকেলের কত রকমফের বাজারে এসেছে, তার কোনো ইয়ত্তা নেই।
২০১৮ সালের এপ্রিলে জাতিসংঘের সাধারণ সভায় বিশ্বনেতারা ঠিক করেন, দীর্ঘ সময় ধরে পরিবেশের ক্ষতি না করে, যে পরিবহনটি মানুষের সঙ্গী হয়েছে, সেটিকে উদ্যাপন করা দরকার। যেই ভাবা সেই কাজ। প্রতিবছর ৩ জুন বিশ্ব সাইকেল দিবস পালনের সিদ্ধান্ত হয়। সেই থেকে এবার চতুর্থবারের মতো পালিত হচ্ছে বিশ্ব সাইকেল দিবস। জাতিসংঘের পক্ষ থেকে সাইকেল দিবসের প্রয়োজনীয়তা জানিয়ে বলা হয়েছে, 'বাহন হিসেবে সাইকেল অনন্য। টেকসই আর বৈচিত্র্যময়। সাইকেল চালানো সহজ, অল্প টাকায় কেনা যায়, সমস্ত বৈষম্যের বেড়া পেরিয়ে সবাই ব্যবহার করতে পারেন সাইকেল। সাইকেল বিশ্বস্ত, পরিষ্কার আর পরিবেশের ক্ষতি করে না। স্বাস্থ্যও ভালো রাখে। প্রায় দুই শতক ধরে মানুষের সঙ্গী এই পরিবহন। তাই সাইকেলকে উদযাপনের জন্য একটা দিন দেওয়াই যায়।'
সাইকেলকে কেবল শুধু স্বল্প দূরত্ব পাড়ি দেওয়ার বাহন বললে ভুল হবে, স্বাস্থ্য সুরক্ষার বাহনও বটে। আন্তর্জাতিক বাইসাইকেল দিবসকে এখন স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হচ্ছে। টাইপ এ এবং টাইপ বি ডায়াবেটিস আছে যাঁদের, ডাক্তার তাঁদেরকে সাইকেল চালানোর পরামর্শ দিচ্ছেন। ফিনল্যান্ডের একটি বড় গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন ৩০ মিনিট সাইকেল চালালে ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা ৪০ শতাংশের বেশি কমে যায়। সাইক্লিং শারীরিক গঠন ঠিক রাখে। শরীরে অতিরিক্ত চর্বি জমতে দেয় না। আর শারীরের কার্যক্ষমতা বাড়ায়।
দীর্ঘদিনের অসুস্থতা কিংবা আঘাত থেকে সেরে উঠে স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরার জন্য সাইক্লিং হতে পারে একটি চমৎকার উপায়। সাইকেল চালালে আপনার হৃদয় ভালো থাকবে, রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ে। হাড় মজবুত হয়। এ তো গেল শরীরের উপকারের কথা। এ ছাড়া গবেষণায় বলছে, সাইকেল চালালে মানসিক উদ্বেগ ও বিষণ্নতা হ্রাস পায়। এমনকি নিয়মিত সাইকেল চালালে ধৈর্য বাড়ে।
সবকিছুকে বিবেচনায় নিয়ে ২০৩০ সাল নাগাদ সাইকেলের সংখ্যা যাতে দ্বিগুণ হয়, সে কারণে উদ্যোগ নিয়েছে ইউরোপের ৫৬টি দেশ।
* তথ্যসূত্র: গালফ নিউজ, বেটার হেলথ, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম